ঢাকা, শনিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ৭ পৌষ ১৪৩১

ইসতিসকার নামাজ পড়া ও দোয়া করার নিয়ম

২০২৪ এপ্রিল ২৭ ০৯:৩৫:৫৩
ইসতিসকার নামাজ পড়া ও দোয়া করার নিয়ম

ইসতিসকা হলো আরবি শব্দ। অর্থ হলো, বৃষ্টি কামনা করা, পানি চাওয়া। সালাতুল ইসতিসকার অর্থ হলো, বৃষ্টির জন্য নামাজ আদায় করা। অনাবৃষ্টি ও প্রচণ্ড রোদের তাপমাত্রা বেড়ে গেলে ওই নামাজ আদায় করে দোয়ার করার কথা হাদিস শরিফে এসেছে।

হুজুর সাল্লাল্লাহু তায়ালা আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজেও সাহাবাদের নিয়ে ইসতিসকা নামাজ আদায় করে বৃষ্টির জন্য আল্লাহ তায়ালার কাছে দোয়া করেতেন এবং সাহাবারা নামাজের স্থান থেকে ভিজে ভিজে বাড়ি ফিরতেন।

ইসতিসকার নামাজ আদায়ের তরিকা যেমন অন্যান্য নামাজ থেকে ভিন্ন তেমন দোয়ার তরিকাও অন্যান্য দোয়ার তরিকা থেকে ভিন্ন। দোয়ার ক্ষেত্রে সাধারণত সুন্নত তরিকা হলো, উভয় হাত আসমানের দিকে উঠিয়ে দোয়া করা। হুজুর সাল্লাল্লাহু তায়ালা আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে একাধিক ধারাবাহিকসূত্রে ওই বিষয়টি বর্ণিত। এ ছাড়াও দোয়ার বিষয়বস্তু ও প্রেক্ষাপটের ভিন্নতার ক্ষেত্রে বিভিন্ন তরিকার মাধ্যমে দোয়া করার বিষয়টিও হুজুর সাল্লাল্লাহু তায়ালা আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণিত।

কোনো কিছু চাওয়া-পাওয়া ইত্যাদি দোয়ার ক্ষেত্রে হুজুর সাল্লাল্লাহু তায়ালা আলাইহি ওয়া সাল্লাম উভয় হাত আসমানের দিকে উঠিয়ে দোয়া করতেন। এই অবস্থায় হাতের তালু আসমানের দিকে থাকতো আর হাতের পিঠ জমিনের দিকে থাকতো।

বিপদ-আপদ, ব্যাপক মসিবত ইত্যাদি দোয়ার ক্ষেত্রে হুজুর সাল্লাল্লাহু তায়ালা আলাইহি ওয়া সাল্লাম হাত উল্টিয়ে দোয়া করতেন। এই অবস্থায় হাতের তালুর দিক জমিনের দিকে থাকতো আর হাতের পিঠ আসমানের দিকে থাকতো।

ইসতিসকার দোয়াও দ্বিতীয় প্রকার দোয়ার অন্তর্ভুক্ত। হুজুর সাল্লাল্লাহু তায়ালা আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইসতিসকার পর হাত উল্টিয়ে দোয়া করেছেন মর্মে হাদিসে উল্লেখ আছে। হজরত আনাস বিন মালিক রাজিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, ‘নবি সাল্লাল্লাহু তায়ালা আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইসতিসকার দোয়া করেছেন। এবং দোয়ার সময় তিনি উভয় হাতের পিঠ দ্বারা আসমানের দিকে ইশারা করেছেন।’ (মুসলিম শরিফ: হাদিস- ২১১২)

এ হাদিসের ব্যাখ্যায় ইমাম নববি রাহিমাহুল্লাহু তায়ালা বলেন, ‘প্রত্যেক বিপদ-আপদ ইত্যাদি দূর করার দোয়ার ক্ষেত্রে সুন্নত হলো, হাত উল্টিয়ে দোয়া করা। অর্থাৎ হাতের পিঠ আসমানের দিকে রেখে তালুর দিক জমিনের দিকে রেখে দোয়া করা। আর প্রত্যেক চাওয়া-পাওয়ার দোয়ার ক্ষেত্রে সুন্নত হলো, হাতের তালু আসমানের দিকে রেখে দোয়া করা।’

আল্লামা সুয়ুতি রাহিমাহুল্লাহু তায়ালা হজরত ইবনে মারদুয়াহ রাহিমাহুল্লাহু তায়ালার সূত্রে হজরত জাবের বিন আবদুল্লাহ রাজিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা কর্তৃক হাদিস উল্লেখ করেছেন।

এ হাদিসে হুজুর সাল্লাল্লাহু তায়ালা আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে দোয়ার পদ্ধতি জানতে চাওয়া হয়। হাদিসের ব্যাখ্যায় তিনি বলেন, আল্লাহ তায়ালার কাছে চাওয়া-পাওয়ার আশা নিয়ে যে দোয়া করা হবে সেই দোয়ায় হাতের তালু আসমানের দিকে থাকবে আর ভয়-ভীতি ও বিপদ-আপদ দূর হওয়ার জন্য যে দোয়া করা হবে সেই দোয়ায় হাতের পিঠ আসমানের দিকে থাকবে। (আদ-দুররুল মানছুর: খ. ৫, পৃ. ৬৭০-৭১)

বিপদ-আপদ ও ভয়-ভীতি দূর হওয়ার দোয়ার ক্ষেত্রে হাত উল্টিয়ে দোয়া করা সুন্নত এই বিষয়ে অনেক ফুকাহা থেকে অভিমত পাওয়া যায়।

আল্লমা শাওকানি রাহিমাহুল্লাহু তায়ালা এই বিষয়ে বিস্তর আলোচনা করেছেন। (ফাতহুল কাদির: খ. ৩, পৃ. ৫০২) হানাফি মাজহাবের প্রসিদ্ধ ইমাম, আল্লামা সারাখসি রাহিমাহুল্লাহু তায়ালা এই বিষয়ে আরো বিস্তর আলোচনা করেছেন। ইমাম আবু ইউসুফ রাহিমাহুল্লাহু তায়ালাও তাঁর কথার স্বীকৃতি প্রদান করেছেন। (আল-মাবসুত: খ. ১, পৃ. ১৬৬)

ইমাম মালিক রাহিমাহুল্লাহু তায়ালার কাছে ইসতিসকার দোয়া কীভাবে করা হবে জানতে চাওয়া হলে তিনিও হাত উল্টিয়ে দোয়া করার কথা বলেছেন। এমনকি মুসলমানদের ব্যাপক পেরেশানি ও বিপদ-আপদের ক্ষেত্রে হাত উল্টিয়ে দোয়া করার পরামর্শ দিয়েছেন এবং তিনি নিজেও জুমার নামাজের পর মুসলমানদের এমন সংকটের সময়ে এভাবে দোয়া করেছেন। (আল-মুদাওয়ানা: খ. ১, পৃ. ৪২০) শাফি মাজহাবের প্রসিদ্ধ হাদিস বিশারদ ও ফকিহ, শায়খুল ইসলাম জাকারিয়া আনসারি রাহিমাহুল্লাহু তায়ালা তিনিও বিপদ-আপদ দূর করার দোয়ার ক্ষেত্রে হাত উল্টিয়ে দোয়া করার অভিমত ব্যক্ত করেছেন। (আসনাল মাতালিব: খ. ১, পৃ. ১৬০) হানবলি মাজহাবের প্রসিদ্ধ হাদিস বিশরাদ আল্লামা ইবনে মুফলিহ রাহিমাহুল্লাহু তায়ালা তিনি হজরত আনাস রাজিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে এভাবে হাত উল্টিয়ে হুজুর সাল্লাল্লাহু তায়ালা আলাইহি ওয়া সাল্লাম মাঝেমধ্যে দোয়া করতেন মর্মে হাদিস উল্লেখ করেছেন। হাদিসটি বিশুদ্ধ বলে তিনি দাবিও করেছেন। (আল-ফুরু‘: খ. ২, পৃ. ২৩৫) হানবলি মাজহাবের আরেকজন প্রসিদ্ধ হাদিস বিশারদ ও আধ্যাত্মিক বহুগ্রন্থ প্রণেতা আল্লামা ইবনে রজব হানবলি রাহিমাহুল্লাহু তিনিও হাত উল্টিয়ে দোয়া করার কথা বলেছেন। (ফাতহুল বারি: খ. ৯, পৃ. ২২৪, জামিউল উলুমি ওয়াল হিকাম: খ. ১, পৃ. ২৯০-১৯১) হানবলি মাজহাবের প্রসিদ্ধ ফকিহ আল্লামা আবদুল গণি লাবাদি রাহিমাহুল্লাহু বলেন, ‘আলেমগণ বলেছেন, দোয়ার সুন্নত তরিকা হলো, যখন কেউ কোনো বিপদ দূর করার জন্য দোয়া করবে তখন সে হাতের পিঠ আসমানের দিকে করে দোয়া করবে। হাতের এই অবস্থা দ্বারা যেনো সে নিজের উপর আসা বিপদ উঠিয়ে নেওয়ার দিকে ইঙ্গিত করছে বুঝা যায়।

আর যখন কেউ কোনো কিছু চাওয়া-পাওয়ার জন্য দোয়া করবে তখন সে হাতের তালুর দিক আসমানের দিকে করে দোয়া করবে। হাতের এই অবস্থা দ্বারা যেনো সে উপর থেকে কোনো কিছু গ্রহণ করার দিকে ইঙ্গিত করছে বুঝা যায়।’ (নায়লুল মায়ারিব: খ. ১, পৃ. ১০০)

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ



রে