ঢাকা, রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১

আল্লামা শাহ মুফতি আব্দুল হালীম বোখারীর ইন্তেকাল করেছেন

২০২২ জুন ২২ ১১:৫৪:১৭
আল্লামা শাহ মুফতি আব্দুল হালীম বোখারীর ইন্তেকাল করেছেন

আল্লামা আব্দুল হালীম বোখারী শুধু একজন আলেম ছিলেন না; তিনি ছিলেন তাফসির, হাদিস, ফিকহসহ সমকালীন নানা বিষয়ের বিদগ্ধ পণ্ডিত ব্যক্তিত্ব। সারা জীবন নানা বিষয়ে শিক্ষকতার পাশাপাশি ছিলেন বহু ভাষায় পারদর্শী। রচনা, সম্পাদনা, কাব্যচর্চাসহ সাংস্কৃতিক অঙ্গনে ছিলেন অতুলনীয়। পরিচালনা, নেতৃত্ব চর্চা, আধ্যাত্মিকতা ছাড়াও ওয়াজ মাহফিলে ছিলেন সরব।

দেশের শীর্ষ এ ইসলামী চিন্তাবিদের মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এক শোক বার্তায় তিনি মরহুমের আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান। এদিকে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ গভীর সমবেদনা জানিয়ে বলেন, দেশবাসী একজন নিবেদিত প্রাণ আলেমে দ্বীনকে হারালো। আব্দুল হালিম বোখারী দেশব্যাপী ইসলাম প্রচার ও দ্বীনি শিক্ষা বিস্তারে অনন্য ভূমিকা রেখেছেন।

জন্ম ও পড়াশোনা : আল্লামা আব্দুল হালীম বোখারী ১৯৪৫ সালে চট্টগ্রামের লোহাগাড়া থানার রাজঘাটা (তৎকালীন সাতকানিয়ার অন্তর্গত) গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবা আব্দুল গণী বোখারী। তাঁর পরদাদা সৈয়দ আহমদ বুখারী উজবেকিস্তানের বোখারার বাসিন্দা ছিলেন। নিজ গ্রামের রাজঘাটা হোসাইনিয়া আজিজুল উলুম মাদরাসায় প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে পড়াশোনা করেন। ১৯৬৪ সালে আল-জামিয়া আল-ইসলামিয়া পটিয়া থেকে দাওরায়ে হাদিস সম্পন্ন করেন। ১৯৬৫ সালে সেখানে উচ্চতর বাংলা সাহিত্য ও গবেষণা বিভাগে অধ্যয়ন করেন। এরপর টাঙ্গাইল আলিয়া মাদরাসা থেকে আলিম ও কামিল এবং গোপালপুর মাদরাসা থেকে ফাজিল পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হন। পাশাপাশি ১৯৬৯ সালে টাঙ্গাইল কাগমারী কলেজ থেকে এইচএসসি ও ১৯৭৫ সালে বিএ পাস করেন। পাশাপাশি তিনি লাহোর ডন হোমিওপ্যাথিক কলেজে বায়োকেমিকের ওপর দুই বছর মেয়াদি কোর্স সম্পন্ন করেন।

বর্ণাঢ্য কর্মজীবন : আল্লামা আব্দুল হালীম বোখারী শিক্ষকতার মাধ্যমে কর্মজীবন শুরু করেন। ১৯৬৭-৬৮ সাল পর্যন্ত তিনি টাঙ্গাইল দারুল উলুম আলিয়া মাদরাসার আরবি প্রভাষক ছিলেন। ১৯৬৮-৭২ সাল পর্যন্ত তিনি সাতকানিয়া মাহমুদুল উলুম আলিয়া মাদরাসায় শিক্ষকতা করেন। এরপর ১৯৮২ সাল পর্যন্ত টাঙ্গাইল দারুল উলুম আলিয়া মাদরাসায় মুহাদ্দিস ও শায়খুল হাদিস হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৮২ সাল থেকে আল-জামিয়া আল-ইসলামিয়া, পটিয়ায় হাদিসের পাঠদান শুরু করেন। সেখানে ২০০৩ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত সহকারী পরিচালক এবং ২০০৮ সালে মহাপরিচালকের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৮২ থেকে পটিয়া মাদরাসার মুখপত্র মাসিক আত-তাওহীদের প্রধান সম্পাদক ছিলেন।

বিভিন্ন সংস্থার দায়িত্ব পালন : ১৯৮৩ থেকে দেশের অন্যতম কওমি মাদরাসা শিক্ষা বোর্ড আঞ্জুমানে ইত্তেহাদুল মাদারিস বাংলাদেশের মহাসচিবের দায়িত্ব পালন করেছেন। এ ছাড়া বাংলাদেশ তাহফিজুল কুরআন সংস্থার সভাপতি ছিলেন। ১৯৮৬ সালে প্রতিষ্ঠিত ইসলামী সম্মেলন সংস্থা বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। ২০১৫ সালে ইসলামিক রিসার্চ সেন্টারের মহাপরিচালক মুফতি আবদুর রহমানের মৃত্যুর পর তিনি সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০১৮ সালে কওমি মাদরাসার দাওরায়ে হাদিসের সনদকে মাস্টার্সের স্বীকৃতি দানের পর আল হাইআতুল উলইয়া গঠিত হয়। আঞ্জুমানে ইত্তেহাদুল মাদারিস বাংলাদেশের মহাসচিব হিসেবে পদাধিকারবলে তিনি এর স্থায়ী কমিটির সদস্য মনোনীত হন।

তাসাউফ চর্চা : আল্লামা আব্দুল হালীম বোখারী পটিয়া মাদরাসার প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক মুফতি আজিজুল হক (রহ.)-এর খলিফা জামিয়া ইসলামিয়া দারুস সুন্নাহ হ্নীলার সাবেক শায়খুল হাদিস মাওলানা শাহ মুহাম্মদ ইসহাক (রহ.)-এর কাছে বাইয়াত গ্রহণ করেন এবং খেলাফত লাভ করেন।

পারিবারিক জীবন : পারিবারিক জীবনে তিনি চার ছেলে ও তিন মেয়ের বাবা। তাঁর স্ত্রী ছিলেন মাওলানা ইরশাদের কন্যা খালেসা বেগম।

উল্লেখযোগ্য রচনাবলি : তাসহিলুত ত্বহাভি, তাসহিলুল উসুল, তাসহিলুত তিরমিজী ইত্যাদি।

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ



রে