ঢাকা, রবিবার, ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

টিউশনি করে ছয় সদস্যের পরিবার চালানো সেই মেয়েটি করোনায় আক্রান্ত

জাতীয় ডেস্ক . ২৪আপডেট নিউজ
২০২০ এপ্রিল ২০ ২১:৪৫:০৭
টিউশনি করে ছয় সদস্যের পরিবার চালানো সেই মেয়েটি করোনায় আক্রান্ত

লড়াইয়ের। ছয় সদস্যের পরিবার চলে তার টিউশনির টাকায়। এর মধ্যে করোনা আতঙ্কে সবার মতো তিনিও চলে যান লকডাউনে। টিউশনি বন্ধ; তাই অভাবের সংসারে সঙ্কট আরও বেড়ে যায়।

আফরিন নিয়মিত রক্তদাতা। গত ৩ এপ্রিল একজন মুমূর্ষু রোগীকে রক্ত দিতে চলে যান ডেল্টা হাসপাতালে। কয়েকদিন পর নিজের মধ্যে করোনার উপসর্গ বুঝতে পেরে গত বৃহস্পতিবার ঢাকার একটি হাসপাতালে পরীক্ষা করান। রিপোর্টে করোনা পজিটিভ আসে তার।

ওই দিন হাসপাতালে যাওয়ার রিকশা ভাড়া ছিল না তার। পাশের বাসার একজনের কাছ থেকে ভাড়ার টাকা ধার নিয়েছিলেন। করোনা পজিটিভ আসায় গত শুক্রবার কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালে ভর্তি হন তিনি।

কিন্তু করোনার সঙ্গে লড়াই করা অবস্থায় পরিবারের চিন্তায় অস্থির হয়ে উঠেছেন আফরিন। পরিচিত জনদের মোবাইল করে হাসপাতালের বিছানা থেকে পরিবারের জন্য সাহায্য চেয়ে কাঁদছেন।

জানা গেছে, আফরিন পুরান ঢাকার নারিন্দার বাসিন্দা। তার বাবা মারা গেছেন আট বছর আগে। বড় ভাই কিছু দিন প্রবাসে ছিলেন। বিদেশে ঋণগ্রস্ত হয়ে ২০১৮ সালে দেশে ফিরে বেকার হয়ে পড়েন তিনি।

এরপর পরিবার চলে আফরিনের টিউশনির টাকায়। পরিবারে মা, ছোট বোন, ভাই-ভাবি এবং ভাতিজি রয়েছে তার। মুন্সিগঞ্জের লৌজজং উপজেলায় একসময় প্রচুর সম্পত্তি ছিল তাদের। কিন্তু নদীভাঙনে সব শেষ।

কবি নজরুল সরকারি কলেজ সাংবাদিক সমিতির সভাপতি মাঈন উদ্দিন আরিফ জাগো নিউজকে বলেন, বিষয়টি জানার পর আমি নিজে তার সঙ্গে কথা বলেছি। তিনি মেধাবী এবং টিউশনি করে সংসার চালান। এ অবস্থায় পরিবারের জন্য তিনি খুবই চিন্তিত। আমরা যতটা পারছি তাকে সহায়তা করছি। তিনি সুস্থ হয়ে ফিরে আসবেন; সেই প্রত্যাশা করছি। তার একটা ভালো চাকরি দরকার। বর্তমানে তিনি ঠিকমতো কথা বলতে পারছেন না। কিন্তু মানসিকভাবে খুবই শক্ত। বার বার পরিবারকে সহায়তার কথা বলেছেন আফরিন।

আফরিনের বড় ভাই জাগো নিউজকে বলেন, সে স্বেচ্ছায় মানুষকে রক্ত দিতে ভালোবাসে। ৩ এপ্রিল ডেল্টা হাসপাতালে রক্ত দিতে গিয়েছিল আফরিন। এর আগে-পরে ঘরেই ছিল। কাউকে দোষ দিচ্ছি না। তবে ধারণা করছি এখানে থেকেই করোনায় আক্রান্ত হয়েছে আফরিন।

তিনি বলেন, আমি অনেকদিন সৌদিতে ছিলাম। সেখানে ব্যবসা দিয়ে ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়ি। পরে দেশে আসি। ৭-৮ লাখ টাকা ঋণগ্রস্ত আমি। দেশে এসে কাপড়ের হকারি করে যে টাকা পাই তাতে কিছুই হয় না। আফরিন টিউশনি করে সংসার চালায়। আত্মীয়-স্বজন বড় লোক হলেও কাছে ঘেঁষতে পারি না। বোন মেধাবী তবুও একটা চাকরি হয়নি।

আফরিনের বড় ভাই আরও বলেন, আমার বোন আমাদের সংসারের সব। সবকিছু বন্ধ হওয়ায় ঘরে খাবার নেই। আমার বোন দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠুক এটাই চাই। প্রথমে মহানগর হাসপাতালে ছিল। এরপর অবস্থা অবনতি হলে কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালে নেয়া হয়। ফোনে কথা বলছিলাম, সে ঠিকমতো কথা বলতে পারছে না।

আফরিনের মা জাগো নিউজকে বলেন, আমি সারাজীবন না খেয়ে থাকব। তবুও আল্লাহ যেন আমার মেয়েকে সুস্থ করে দেন। আমার মেয়ে আমার সব। আমার মেয়ের কারণে আমরা বেঁচে আছি। অভাবের সংসারে মেয়ে টাকা দিলে খাই, না দিলে না খেয়ে দিন কাটাই। এমন কঠিন সময়ে আমার মেয়েটা অসুস্থ হলো। সে যেন দ্রুত সুস্থ হয়ে ওঠে সবাই দোয়া করবেন।

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



রে