ঢাকা, রবিবার, ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

কার ভুলের মাশুল দিলো বোবা শিশুটি

জাতীয় ডেস্ক . ২৪আপডেট নিউজ
২০২০ এপ্রিল ১৩ ১৯:২৫:৫৭
কার ভুলের মাশুল দিলো বোবা শিশুটি

দৌড়ে বেড়িয়েছে, সে শিশুটার ছোট্ট দেহটুকুন আজ নিথর-নিস্তব্ধ। মা-বাবাসহ পুরো পরিবারকে শোকের সাগরে ভাসিয়ে রোববার (১২ এপ্রিল) রাত ৩টায় সে চলে গেছে পরপারে। যেতে যেতে হয়তো ওই বোবামুখ একটা প্রশ্ন ছুড়ে গেছে, কার ভুলের মাশুল দিলো সে?

রোববার (১২ এপ্রিল) ফৌজদারহাটের বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজেসে (বিআইটিআইডি) ৯৬ জনের নমুনা পরীক্ষায় চট্টগ্রামের পাঁচজনসহ ছয়জনকে করোনা পজেটিভ হিসেবে শনাক্ত করা হয়। সেই পাঁচজনের একজন ছিল পটিয়ার বাক প্রতিবন্ধী শিশুটি।

করোনা পজিটিভ হওয়ার খবর পৌঁছাতেই শিশুটিকে চট্টগ্রামে নিয়ে আসার প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছিল। রাত আড়াইটায় ওই শিশুকে চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে আনা হয়। কিন্তু ৩টার দিকে তার মৃত্যু হয়।

দেশে করোনায় আক্রান্ত হয়ে শিশু মৃত্যুর ঘটনা এটিই প্রথম। তাই চট্টগ্রামের স্বাস্থ্য বিভাগ বিষয়টিকে গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছে। চুলচেরা বিশ্লেষণে বের করার চেষ্টা হচ্ছে ‘ওই শিশুর দেহে কার মাধ্যমে গেলো করোনার বিষ?’

চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন সেখ ফজলে রাব্বি জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমরা জেনেছি ওই শিশুর এক চাচা দুইমাস আগে ওমান থেকে ফিরেছেন। কিন্তু সে হিসেবে তার কোয়ারেন্টাইনের সময় পার হয়ে গেছে।’

তবে জাগো নিউজের অনুসন্ধানে জানা গেছে, ‘শিশুটির চাচা নয়, খোদ বাবাই ওমানফেরত। তবে তিনি দেশে ফিরেছেন আড়াই থেকে তিন মাস আগে, যখন করোনার প্রদুর্ভাব দেশে শুরু হয়নি। বর্তমানে তিনি স্থানীয়ভাবে ছোটখাট ব্যবসা করছেন।’

এমন আশঙ্কাজনক তথ্যও মিলেছে যে, সপ্তাহখানেক আগে শিশুটির এক চাচা ঢাকা থেকে গ্রামের বাড়িতে এসেছেন। তিনি একটি বেসরকারি ব্যাংকে ঢাকার নবাবপুর শাখায় কর্মরত। এছাড়া একই সম্পর্কের এক প্রতিবেশী সম্প্রতি ওমান থেকে ফিরেছেন। স্থানীয়রা আশঙ্কা করছেন, এদের কারও মাধ্যমে অবুঝ শিশুটি করোনায় আক্রান্ত হয়েছে।

পটিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফারজানা জাহান উপমা জাগো নিউজকে বলেন, ‘বিদেশ ও ঢাকাফেরত এ দুই ব্যক্তিকে নিজে গিয়ে সতর্ক করেছি। কিন্তু তারা নির্দেশ না মেনে বাইরে ঘোরাঘুরি করছিলেন। তবে কিভাবে ও কার সংস্পর্শে শিশুটির মাঝে এ ভাইরাস ছড়িয়েছে তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। শিশুটির মৃত্যুর পর সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে তার বাড়ি সংলগ্ন এলাকা লকডাউন ঘোষণা করেছে প্রশাসন।’

পটিয়ার বাসিন্দা ও সাংবাদিক রবিউল হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, ‘শুধু এ দুই ব্যক্তি নয়, সম্প্রতি করোনার ক্লাস্টার জোন ঘোষিত নারায়ণগঞ্জ থেকে অনেকেই এলাকায় ফিরেছেন। তারা প্রশাসনের নির্দেশ না মেনে যত্রতত্র যাচ্ছেন। এর মধ্যে উপজেলা প্রশাসন থেকে পাওয়া তথ্য থেকে জানা গেছে, উপজেলার কচুয়ায় ৩ জন, কুসুমপুরে ২ জন, পৌর সদরের ৪ নং ও ৮ নং ওয়ার্ডে নারায়ণগঞ্জ থেকে একজন করে ব্যক্তি ফিরেছেন। এদের অধিকাংশই নারায়ণগঞ্জে লকডাউন শুরুর পর এসেছেন।’

তিনি বলেন, ‘একদিকে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ ফেরত লোকজন ঘুরছে। যতটুকু খবর আছে ছোট্ট শিশুটি প্রায়ই এলাকায় ঘুরাঘুরি করতো, বিভিন্নজনের সঙ্গে যেতো, সবাই তাকে স্নেহ করতো, এমনও হতে পারে কারও স্নেহের পরশই তার জীবনে কাল হলো!’

চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন সেখ ফজলে রাব্বি জানান, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী গত ১১ এপ্রিল শিশুটিকে গায়ে জ্বরসহ পটিয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। বাচ্চাটির শ্বাসকষ্ট থাকায় চিকিৎসক নমুনা সংগ্রহ করে বিআইটিআইডিতে পাঠায়। রোববার তার নমুনা সংগ্রহ করে ফৌজদারহাটস্থ ল্যাবে পাঠানো হয়। নমুনা পরীক্ষার প্রতিবেদনে প্রতিবন্ধী শিশুটির করোনা আক্রান্তের বিষয় জেনেই তাকে চট্টগ্রামে নিয়ে আসার উদ্যোগ নেওয়া হয়। কিন্তু হাসপাতালে পৌছানোর আধঘণ্টা পরেই তার মৃত্যু হয়।

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



রে