ঢাকা, সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

হাদিসের যেসব উপদেশেই রয়েছে করোনার চিকিৎসা

২০২০ এপ্রিল ১১ ২০:১২:৫৪
হাদিসের যেসব উপদেশেই রয়েছে করোনার চিকিৎসা

যে কোনো মহামারিতে উম্মতের সুস্থতার জন্য দেড় হাজার বছর আগে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জন্য এ সব নিয়মনীতি ঘোষণা করে গেছেন। আর তাহলো-

>> কোয়ারেন্টাইনরাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ কোয়ারেন্টাইন পদ্ধতির আবিষ্কারক। তিনি মহামারি দেখা দিলে নিজেদের অবস্থান ত্যাগ করে ঘরের বাইরে না যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছন। চিকিৎসকরা মহামারি করোনার প্রতিরোধ ও চিকিৎসায় এ হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকার পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন। হাদিসে এসেছে-‘তোমরা যখন কোনো এলাকায় মহামারি প্লেগের বিস্তারের কথা শুনো, তখন সেখানে প্রবেশ করো না। আর যদি কোনো এলাকায় এর প্রাদুর্ভাব নেমে আসে, আর তোমরা সেখানে থাকো, তাহলে সেখান থেকে বেরিয়েও যেও না।’ (বুখারি)

>> আইসোলেশনমহামারির ভয়াবহতায় ধৈর্যধারণ করে নির্ধারিত তথা নিজ নিজ অবস্থানে থাকার পরামর্শ ও তাতে অবস্থানের ফজিলত বর্ণনা করেছেন বিশ্বনবি। যাতে নিজেদের থেকে অন্য কেউ সংক্রমণ হতে না পারে।

করোনার প্রাদুর্ভাবের এ সময়ে করোনায় আক্রান্ত ব্যক্তির জন্য আইসোলেশনে অবস্থানই একমাত্র চিকিৎসা। হাদিসে এসেছে-রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘কোনো বান্দা যদি মহামারি আক্রান্ত এলাকায় অবস্থান করে। আর নিজ বাড়িতে ধৈর্য সহকারে সাওয়াবের নিয়তে এ বিশ্বাস নিয়ে (ঘরে) অবস্থান করে যে, আল্লাহ তাআলা তাকদিরে যা চূড়ান্ত করে রেখেছেন, তার বাইরে কোনো কিছু তাকে আক্রান্ত করবে না, তাহলে তার জন্য রয়েছে একজন শহীদের সমান সাওয়াব।’ (মুসনাদে আহমদ)

>> হাত ধোয়াভালোভাবে উভয় হাত ধোয়া। ঘুম থেকে ওঠার পর উভয় হাত ধোয়া ছাড়া কোনো কিছু ধরতেও নিষেধ করেছেন বিশ্বনবি। আবার খাবার আগে উভয় হাত কব্জি পর্যন্ত ধোয়ার কথা বলেছেন। কেননা মানুষ অধিকাংশ কাজেই উভয় হাত দ্বারা কাজকরে থাকে।

করোনাভাইাসের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়ার পর চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা ঘন ঘন উভয় হাত সাবান পানি দ্বারা ভালোভাবে ধোয়ার কথা বলে যাচ্ছেন। হাত পরিষ্কার করা ছাড়া নাক মুখ ও চোখ স্পর্শ করার জন্য নিষেধ করছেন।

সুতরাং করোনার পাদুর্ভাবের এ সময়ে চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের সাবান পানি দিয়ে হাত ধোয়ার ব্যাপারে তাগিদ দেয়া নতুন কিছু নয়। বরং বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দেড় হাজার বছর আগে বলে গেছেন-- ‘তোমরা প্রতিদিন ঘুম থেকে উঠে সর্বপ্রথম উভয় হাত ভালোভাবে ধুয়ে নেবে।’আবার দিনের বিভিন্ন সময়ে যেমন খাবার গ্রহেণের আগে ও পরে এবং ওজুর সময় উভয় হাত কব্জি পর্যন্ত ধোয়াকে সুন্নাত মনোনীত করেছেন। এক হাদিসে বলেছে-‘খাওয়ার আগে এবং পরে হাত ধোয়ার মধ্যে বরকত রয়েছে।’ তাই হাত ধোয়ার বিষয়টি সুন্নাত হিসেবে মেনে চললে মানুষের জন্য তা দুই থেকে কল্যাণ ও বরকতের হবে। একটি হলো সুন্নাত পালনের সাওয়াব অন্যটি হলো সুস্থ জীবন লাভ।

>> পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতামহামারি করোনাভাইরাস প্রতিরোধের অন্যতম উপায় হচ্ছে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকা। পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার সবচেয়ে বড় উপাদান হচ্ছে ওজু। একজন মুমিন দৈনিক ন্যূনতম পাঁচ বার ওজু করে। হাদিসের নির্দেশনা হচ্ছে যখনই কারো ওজু ছুটে যাবে সে যেন ওজু করে নেয়। অর্থাৎ সব সময় ওজু করে পবিত্র অবস্থায় থাকে।

করোনাভাইরাস মুক্ত থাকতে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার বিকল্প নেই। প্রসিদ্ধ হাদিসের আলোকে এ কথ প্রণিধানযোগ্য যে, ‘পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ঈমানের অঙ্গ’।রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কথা দেড় হাজার বছর আগে বলে গেছেন। আর তাতে লুকিয়ে আছে মহামারি করোনাসহ অনেক ভাইরাসের শেফা।

>> হাঁচি বা কাশির সময় মুখ ঢাকাহাঁচি-কাশি দেয়ার সময় মুখ ঢেকে রাখা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুন্নাত। তিনি হাঁচি কাশি দেয়ার সময় মুখ ঢেকে রাখার কথা বলেছেন। হাঁচি-কাশির সময় সংবরণ হতে বলেছেন।

করোনাভাইরাস থেকে নিজে বাঁচতে এবং অন্যকে বাঁচাতে হাঁচি-কাশির ক্ষেত্রে মুখ ঢেকে রাখতে জোর তাগিদ দিয়ে আসছেন চিকিৎসকরা। আর তা ছিল বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নির্দেশ ও অন্যতম সুন্নাত।

এ ছাড়াও মহামারি করোনা থেকে মুক্তি লাভে এ আমলগুলো খুবই জরুরি। আর তাতে মহান আল্লাহ তাআলা মহামারি করোনাসহ যে কোনো ভয়াবহ রোগ-ব্যধি থেকে বান্দাকে মুক্তি দেবেন। আর তাহলো-

>> নামাজ আদায়আল্লাহর রহমত লাভ নামাজের বিকল্প নেই। আর আল্লাহর রহমত ছাড়া করোনাভাইরাস থেকে মুক্তি লাভের কোনো উপায় নেই। তাই নামাজে আল্লাহর রহমত লাভের মাধ্যমেই মিলতে পারে করোনাভাইরাস থেকে মুক্তি।

>> দান সাদকাঅসহায়কে দান করলে বালা-মুসিবত দূর হয়। এ কথা বলেছেন বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। বর্তমান সময়ের মহামারি করোনাভাইরাস চেয়ে বড় কোনো মুসিবত মানুষর নেই। তাই দান সাদকায় মনোযাগী হয়ে করোনা থেকে মুক্তি লাভ করা সম্ভব।

>> দোয়া ইউনুছ পড়াযে দোয়া পড়ে নবি হজরত ইউনুছ আলাইহি ওয়া সাল্লাম মাছের পেট থেকে মুক্তি পেয়েছিলেন। বিশ্বনবি বিপদে আপদে এ দোয়াটি পড়তে বলেছন। আর তাহলো-لَااِلَهَ اِلَّا اَنْتَ سُبْحَانَكَ اِنِّيْ كُنْتُ مِنَ الظَّالِمِيْنউচ্চারণ : ‘লা ইলাহা ইল্লা আন্তা সুবহানাকা ইন্নি কুনতু মিনাজ জ্বালিমিন।’

>> সকাল-সন্ধ্যায় এ দোয়াগুলো পড়া‘প্রতিদিন ভোরে ও প্রতি রাতের সন্ধ্যায় যে কোনো বান্দা এ দোয়াটি ৩ বার পাঠ করবে, কোনো কিছুই তার অনিষ্ট/ক্ষতি করতে পারবে না-بِسْمِ اللَّهِ الَّذِي لاَ يَضُرُّ مَعَ اسْمِهِ شَيْءٌ فِي الأَرْضِ وَلاَ فِي السَّمَاءِ وَهُوَ السَّمِيعُ الْعَلِيمُউচ্চারণ : বিসমিল্লাহিল্লাজি লা ইয়াদুররু মাআসমিহি শাইয়্যুন ফিল আরদ্বি ওয়ালা ফিস্সামায়ি ওয়া হুয়াস্‌সামিউল আলিম।’ (তিরমিজি)অর্থ : ‘ওই আল্লাহ তাআলার নামে, যাঁর নামের বরকতে আসমান ও জমিনের কোনো কিছুই কোনো অনিষ্ট করতে পারে না। তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞানী।’

>> মহামারি থেকে বাঁচতে বেশি বেশি বিশ্বনবির এ দোয়া পড়া-اَللَّهُمَّ اِنِّىْ اَعُوْذُ بِكَ مِنَ الْبَرَصِ وَ الْجُنُوْنِ وَ الْجُذَامِ وَمِنْ سَىِّءِ الْاَسْقَامِউচ্চারণ : আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিনাল বারাচি ওয়াল জুনুনি ওয়াল ঝুজামি ওয়া মিন সায়্যিয়িল আসক্বাম।’ (আবু দাউদ, তিরমিজি)অর্থ : ‘হে আল্লাহ! আপনার কাছে আমি শ্বেত রোগ থেকে আশ্রয় চাই। মাতাল হয়ে যাওয়া থেকে আশ্রয় চাই। কুষ্ঠু রোগে আক্রান্ত হওয়া থেকে আশ্রয় চাই। আর দুরারোগ্য ব্যাধি (যেগুলোর নাম জানিনা) থেকে আপনার আশ্রয় চাই।

>> নতুন সৃষ্ট সংক্রামক ব্যাধি ও অশ্লীলতা থেকে মুক্তি লাভে এ দোয়া পড়া-اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنْ مُنْكَرَاتِ الأَخْلاَقِ وَالأَعْمَالِ وَالأَهْوَاءِ وَ الْاَدْوَاءِউচ্চারণ : ‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিন মুনকারাতিল আখলাক্বি ওয়াল আ’মালি ওয়াল আহওয়ায়ি, ওয়াল আদওয়ায়ি।’অর্থ : হে আল্লাহ! নিশ্চয় আমি তোমার কাছে খারাপ (নষ্ট-বাজে) চরিত্র, অন্যায় কাজ ও কুপ্রবৃত্তির অনিষ্টতা এবং বাজে অসুস্থতা ও নতুন সৃষ্ট রোগ বালাই থেকে আশ্রয় চাই।’ (তিরমিজি)

>> সকাল-সন্ধ্যা ৩ বার এ দোয়া পড়া-أَعُوذُ بِكَلِمَاتِ اللَّهِ التَّامَّاتِ مِنْ شَرِّ مَا خَلَقَউচ্চারণ : আউজু বিকালিমাতিল্লাহিত তাম্মাতি মিন সার্রি মা খালাকা।

>> اَللَّهمَّ اِنِّيْ اَسْاَلكَ الْعَافِيَةَ فِي الدُّنْيَا وَالآخِرَةِউচ্চারণ : আল্লাহুম্মা ইন্নি আস্‌আলুকাল আ-ফিয়াতা ফিদ-দুন্‌ইয়া ওয়াল আখিরাহ।' (তিরমিজি)অর্থ : হে আল্লাহ! নিশ্চয় আমি আপনার কাছে দুনিয়া এবং পরকালের সার্বিক নিরাপত্তা ও প্রশান্তি প্রার্থনা করছি।উল্লেখিত বিষয়গুলো মেনে চলে কুরআন-সুন্নায় উল্লেখিত দোয়াগুলো যথাযথ আমল করলেই মহামারি করোনাভাইরাসসহ যাবতীয় রোগ-ব্যাধি ও বিপদ-আপদ থেকে হেফাজত থাকা সম্ভব।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহক মহামারি করোনাভাইরাসের এ প্রকোপের সময় তার রহমত ও দয়া এবং সুন্নাতের যথাযথ অনুসরণ ও অনুকরণে তা থেকে মুক্ত থাকার তাওফিক দান করুন। আমিন। সুত্রঃ জাগোনিউজ২৪

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



রে