ময়লা ফেলার ব্যাগ মাথায় দিয়ে চিকিৎসা দিচ্ছে ব্রিটেনের চিকিৎসকরা

মূলতঃ নিবিড় পরিচর্যা সেবা (আইসিইউ) বাড়াতেই এই উদ্যোগ। কিন্তু তাদের অভিযোগ যথাযথ সাপোর্ট বা সরঞ্জাম তারা পাচ্ছেন না। বিবিসিকে দেয়া সাক্ষাৎকারে তারা যে বিষয়টিতে জোর দিয়েছেন তা হলো সরঞ্জামের অভাব।
তাদের গণমাধ্যমে কথা বলতেও নিষেধ করা হয়েছে। শেষ পর্যন্ত যুক্তরাজ্যের একজন কর্মরত চিকিৎসক বিবিসির সাথে কথা বলতে রাজি হয় নাম প্রকাশ না করার শর্তে। আমরা তার নাম পরিবর্তন করে দিয়েছি এখানে।
ড. রবার্টস, খাদের কিনারায় থাকা একটি হাসপাতালের কথা বলছেন। এই হাসপাতালের আইসিইউ এখন কোভিড-১৯ রোগীতে পরিপূর্ণ। যা যা মনে করা হচ্ছে অপ্রয়োজনীয় তার সব বন্ধ করে দেয়া হয়েছে, এমনকি তার মধ্যে আছে ক্যান্সার ক্লিনিক।
এই হাসপাতালে কর্মীর অভাব আছে, সংকটময় রোগীর জন্য বিছানার অভাব আছে, একদম সাধারাণ এন্টিবায়োটিক ও ভেন্টিলেটরের অভাব আছে। ধারণা করা হচ্ছে- যুক্তরাজ্যে করোনাভাইরাস ১৪ থেকে ১৫ এপ্রিলের মধ্যে বড় আঘাত হানবে, বিশ্লেষকদের ভাষায় যেটাকে বলা হচ্ছে পিক টাইম।
কর্মীরা এখনই অনুভব করছে কী পরিমাণ সংকটময় সময় আসছে সামনে। চূড়ান্তভাবে আক্রান্ত রোগীদের সেবা দিচ্ছেন এমন ডাক্তাররা এখন ১৩ ঘণ্টা করে কাজ করছে প্রতিদিন। ভয়াবহ ব্যাপার হচ্ছে পিপিই- ব্যক্তিগত সুরক্ষা দেয়া সরঞ্জামের অভাব প্রকট, এমনও হয়েছে যে পিপিইর অভাবে ময়লা ফেলার পলিথিন, প্লাস্টিকের অ্যাপ্রোন ও স্কিইং করার চশমা পরে কাজ চালিয়ে নিচ্ছেন তারা।
যথাযথ সুরক্ষা ব্যবস্থা ছাড়াই করোনাভাইরাস আক্রান্ত হতে পারেন এমন ব্যক্তির থেকে ২০ সেন্টিমিটারের মতো দূরত্বে থেকে কাজ করছেন ডাক্তাররা, যেখানে সাধারণ মানুষকে বলা হচ্ছে ২ মিটার হতে হবে ন্যূনতম দূরত্ব।
রবার্টস বলছেন, যে মারাত্মক প্রভাব পড়তে পারে তাদের জীবনে সেটা এখনই ভাবাচ্ছে, তারা এখন ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে পড়ছেন এবং নিজেদের পিপিই নিজেরাই তৈরি করছেন।
তিনি বলেন, এটা বাস্তব চিন্তা, নিবিড় চিকিৎসা যেসব নার্স দিচ্ছেন তাদের এটা এখনই প্রয়োজন। তারা যেখানে কাজ করছেন সেখানে ভাইরাস অ্যারোসলের মতো করে ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তাদের বলা হচ্ছে খুব সাধারণ টুপি পরতে যেটায় ছিদ্র আছে। যেটা কোনো সুরক্ষাই দিচ্ছে না।
এটা প্রচন্ড রকমের ঝুঁকিপূর্ণ। তাই কর্মীরা বিনের ব্যাগ ও অ্যাপ্রোন পরে কাজ চালিয়ে নিচ্ছেন। যুক্তরাজ্যের সরকার সরঞ্জাম বিতরণ নিয়ে যে ঝামেলা হচ্ছে সেটা স্বীকার করেছেন। এখন এই কাজের সাথে যুক্ত হয়েছে সশস্ত্রবাহিনী।
সরঞ্জাম জায়গা মতো পৌঁছাতে কাজ করে যাচ্ছেন তারা। ১ এপ্রিল ১০ লাখ শ্বাসযন্ত্র রক্ষাকারী মাস্ক দিয়েছে বলে জানিয়েছে যুক্তরাজ্যের জাতীয় স্বাস্থ্যসেবা সংস্থা (এনএইচএস)।
তবে সেখানে মাথার সুরক্ষা ও গাউনের কথা বলা হয়নি। রবার্টস যেখানে কাজ করছেন সেই হাসপাতালে কোনো সরকারি সামগ্রী পৌঁছায়নি বলছেন তিনি।
'এখন আমরা যে মাস্ক দিয়ে কাজ করছি সেটা নতুন করে তারিখ বসানো হয়েছে। আমি তিনটি স্টিকার দেখেছি যেখানে লেখা মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ার তারিখ ২০০৯, ২০১৩ ও একটিতে ২০২১।'
ইংল্যান্ডের পাবলিক হেলথ বলছে, যেগুলোতে মেয়াদের তারিখ শেষ হয়ে গেছে সেগুলো তারা পরীক্ষা করে দেখে যে ব্যবহার করা যাবে, কিন্তু বিবিসি যে চিকিৎসকের সাথে কথা বলেছে তিনি বলছেন, তিনি এ বিষয়ে আশ্বস্ত হতে পারছেন না।
এই মুহূর্তে রবার্টসের তিনজন সহকর্মী ভেন্টিলেশনে আছেন যারা করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। যারা আক্রান্ত হয়েছে তাদের একজন কোভিড ওয়ার্ডে কাজ করতেন। বাকি দুজন কোভিড ওয়ার্ডে কাজ করতেন না, তাই তাদের পিপিই ছিল না।
রবার্টস মনে করছেন এই দুজনেরও কর্মক্ষেত্রেই সংক্রমণ হয়েছে। সহকর্মীরা দেখা সাক্ষাৎ করতে পারছেন। কিন্তু কোনো আত্মীয়কে সেখানে ঢুকতে দেয়া হচ্ছে না। চিকিৎসক রবার্টস সবচেয়ে কঠিন যে পরিস্থিতির কথা বলেন, পরিবারগুলোকে আমাদের বলতে হচ্ছে যে, আপনার রোগী মারা যাচ্ছে, তারা দেখতেও আসতে পারছে না।
তিনি বলেন, এমনি সময়ে তো কেউ না কেউ পাশে থাকে, যাকে আমরা সান্ত্বনা দেই যে আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো।
'আমরা সেরা ভেন্টিলেটর সেবা দিতে পারছি না। আমরা নার্সিং কেয়ার সর্বোচ্চ দিতে পারছি না, আমাদের সেরা নার্সদের এতো কাজ করানো হচ্ছে যে সেটা অমানবিক। আমাদের এন্টিবায়োটিক শেষের পথে আমি তাদের সকল সেবার নিশ্চয়তা দিতে পারছি না।'
ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিস বলছে, তাদের কাছে স্বাস্থ্যসেবায় নিয়োজিতরা করোনাভাইরাসে কর্মক্ষেত্রে সংক্রমিত হচ্ছে কি না সে বিষয়ে কোনো তথ্য নেই। ইউরোপে যে দুটি দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ও এর ফলে মৃত্যুর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি তাদের মধ্যে একটি স্পেন যেখানে সরকারি হিসেবে ২৭ মার্চ পর্যন্ত ৯ হাজার ৪০০ স্বাস্থ্যকর্মীর করোনাভাইরাস পজিটিভ নিশ্চিত।
৩০ মার্চ পর্যন্ত ইতালিতে সংক্রমিত স্বাস্থ্যকর্মীর সংখ্যা ৬ হাজার ৪১৪ জন। যুক্তরাজ্যে কয়েকজন স্বাস্থ্যকর্মী মারা গেছেন। পশ্চিম মিডল্যান্ডের একজন নার্স আরিমা নাসরিন মারা গেছেন করোনাভাইরাসে।
পূর্ব লন্ডনের হেলথ কেয়ার সহকারী থমাস হারভে, সেন্ট্রাল লন্ডনের প্রফেসর মোহাম্মদ সামি সৌশা, দক্ষিণের ড. হাবিব জাইদি, পশ্চিম লন্ডনের ড. আদিল এল তাইয়ার এবং লেস্টারের ড. আমজেদ এল হাওরানি মারা গেছেন।
বিশ্বজুড়ে বর্তমানে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা ১২ লাখ ৫ হাজার ৮০১ ও মৃত্যু হয়েছে ৬৪ হাজার ৯৭৩ জনের। এছাড়া চিকিৎসা শেষে সুস্থ হয়েছেন ২ লাখ ৪৭ হাজার ৯৬১ জন। বিবিসি বাংলা। সুত্রঃ জাগোনিউজ২৪
বিশ্ব - এর সব খবর
আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ
- আছিয়ার শেষ স্বীকারোক্তি: আছিয়া নিজে বলে গেছে ধ/র্ষণ করেছে কে (ভিডিওসহ)
- আ.লীগকে ৭৫% মানুষ সমর্থন করছে জাতিসংঘের জরিপ, জানা গেল সত্যতা
- শেয়ারবাজারে কারসাজি: বিএসইসি'র কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে তদন্তে সামনে এলো গুরুত্বপূর্ণ নাম
- আছিয়ার ধ/র্ষক দুলাভাই কে নিয়ে তথ্য দিলেন তার শ্রেণী শিক্ষক মাহফুজ
- মাগুরার আছিয়ার বোনের বক্তব্য: শোনেন আসল সত্যিটা (ভিডিওসহ)
- বাড়লো সৌদি রিয়াল রেট বিনিময় হার (১৩ মার্চ ২০২৫)
- শেয়ারহোল্ডারদের জন্য নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা
- শিশু আছিয়া ধ/র্ষণ ও হ/ত্যা মামলার প্রধান আসামী হিটু শেখের আদালতে স্বীকারোক্তি
- বিনিয়োগকারীদের মাঝে আতঙ্ক, জরুরি পদক্ষেপ নিলেন ডিএসই চেয়ারম্যান
- স্বাস্থ্য খাতে বড় সংস্কার: ২৬ মেডিকেল কলেজ বন্ধের সিদ্ধান্ত
- আইপিএলে তাসকিনকে দলে নিবে কি না জানিয়ে দিলো লখনৌ
- বাড়লো সৌদি রিয়াল রেট বিনিময় হার
- দুই কোটি নয় মুস্তাফিজকে দলে নিতে কলকাতাকে গুনতে হবে ৬.৫ কোটি রুপি
- মুস্তাফিজ নাকি তাসকিন আইপিএল খেলার জন্য কাকে এনওসি দিবে বিসিবি
- শেখ হাসিনার দেশে ফিরে আসা নিয়ে ট্রাম্পের পোস্ট জানা গেল সত্যতা