ভুল ফলাফল দেয় চীনের র‍্যাপিড টেস্টিং কিট— অভিযোগ দেশে দেশে

গেল সপ্তাহে স্পেন জানায়, চীনের পাঠানো প্রায় ৯ হাজার র‍্যাপিড টেস্ট কিট ভুল ফলাফল দিচ্ছে। স্পেনের সোসাইটি অব ইনফেকশাস ডিজিসেস অ্যান্ড ক্লিনিকাল মাইক্রোবায়োলজি তাদের ওয়েবসাইটে জানায়, চীন থেকে আসা নোভেল করোনাভাইরাসের র‍্যাপিড টেস্টিং কিটের ৭০ শতাংশের বেশি ‘ত্রুটিপূর্ণ’। এসব টেস্ট কিট চীনে ফেরত পাঠানো হবে বলে জানায় স্পেন।

উল্লেখ্য, কোভিড-১৯ মোকাবিলায় স্পেন সম্প্রতি চীন থেকে প্রায় ৪৭ কোটি ডলারের চিকিৎসা সরঞ্জাম ক্রয়ের সিদ্ধান্ত নেয়। এ সংক্রান্ত এক ক্রয়াদেশের আওতায় ভেন্টিলেটর, টেস্ট কিট ও ডিসপোসেবল গ্লোভস স্পেনে সরবরাহ করে চীনের চিকিৎসা সরঞ্জাম উৎপাদক প্রতিষ্ঠান। তবে স্পেনে অবস্থিত চীনের দূতাবাস দাবি করেছে দেশটিতে পাঠানো এসব টেস্ট কিট ওই ক্রয়াদেশের আওয়াতায় নয়।

এদিকে চীনের স্থানীয় কিছু গণমাধ্যমের খবরে র‍্যাপিড টেস্টিং কিটের উৎপাদক প্রতিষ্ঠান শেনজেন বায়োইজি বায়োটেকনলজিকে দায়ী করা হয়েছে। খবরে বলা হয়, এ প্রতিষ্ঠানটির উৎপাদিত টেস্টিং কিটগুলো মাত্র ৩০ শতাংশ ক্ষেত্রে সঠিক ফলাফল দিচ্ছে অর্থাৎ ৭০ শতাংশই ত্রুটিপূর্ণ।

তবে স্পেনের অভিযোগের পর বায়োইজি তাদের এক বার্তায় প্রতিষ্ঠানটির পণ্যের সাফাই গেয়ে দাবি করে, স্পেনের হাসপাতালগুলো হয়ত এসব টেস্ট কিটের সঙ্গে নির্দেশিকা অনুসরণ করছে না। এসব টেস্ট কিট ব্যবহারের ক্ষেত্রে নমুনা সংগ্রহের সময় আমাদের নির্দেশিকা কঠোরভাবে অনুসরণ করতে হবে। একইসঙ্গে প্রতিষ্ঠানটি স্পেনে ব্যর্থ হওয়া টেস্ট কিটগুলো ফিরিয়ে নিয়ে নতুন টেস্ট কিট পাঠানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।

এদিকে শেনজেন স্টক এক্সচেঞ্জ ইতিমধ্যে প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করেছে। তবে বায়োইজি তাদের পণ্যকে নির্ভুল বলে দাবি করে বলেছে—এসব পণ্য যথাযথ কর্তৃপক্ষের ছাড়পত্র নিয়েই ইউরোপে পাঠানো হয়েছে।

এমন চিত্র অবশ্য স্পেনেই শুধু নয়। মালয়েশিয়া এবং চেক প্রজাতন্ত্রও সম্প্রতি চীনের টেস্ট কিট নিয়ে তাদের অভিযোগ জানিয়েছে। এসব টেস্ট কিটের ফলাফলের সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে দেশ দুটি।

শুক্রবার মালয়েশিয়ার স্বাস্থ্যমন্ত্রী নূর হিশাম আব্দুল্লাহ তার দেশের সংবাদমাধ্যমগুলোকে বলেন, 'টেস্ট কিটগুলো তত নিখুঁত নয়।' মালয়েশিয়া চীনের পরিবর্তে সিংগাপুর ও দক্ষিণ কোরিয়া থেকে টেস্ট কিট কেনার কথা ভাবছে বলে খবর প্রকাশ করে দেশটির সংবাদমাধ্যমগুলো।

এছাড়া গত শুক্রবার তুরস্কের সরকার জানিয়েছে, চীনের র‍্যাপিড টেস্ট কিট ভুল ফলাফল দিচ্ছে। ফলে চীনের ওই টেস্ট কিটগুলো না কেনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। মিডিল ইস্ট নিউজ সেদেশের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তার বরাত দিয়ে জানায়, চীনের কিছু টেস্ট কিটের স্যাম্পল ব্যবহার করেছে তুরস্কের স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ। তবে সেগুলো ভুল ফলাফল দিচ্ছে। ফলে এসব টেস্ট কিট আর ব্যবহারের পরিকল্পনা নেই সরকারের।

গেল ডিসেম্বরে চীনে করোনাভাইরাসের উৎপত্তির পর দেশটি তাদের অভিজ্ঞতা ও ভাইরাসটির সম্পর্কে তথ্য বাকি বিশ্বের সঙ্গে আদান-প্রদানের সিদ্ধান্ত নেয়। সম্প্রতি সেই প্রতিশ্রুতি ফের ব্যক্ত করে জি-২০ দেশগুলোর এক বৈঠকে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং বলেন, চীন ভাইরাসটির সম্পর্কে যে কোন তথ্য, গবেষণা এবং ওষুধ ও ভ্যাকসিন আবিষ্কারের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় সহায়তা সবার সঙ্গে শেয়ার করতে প্রস্তুত।

উল্লেখ্য, প্রায় দুই মাস করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের পর চীনে এখন ভাইরাসটির প্রাদুর্ভাব প্রায় শূন্যের কাছাকাছি। এ ভাইরাসটি মোকাবিলায় বিশ্বের অন্যান্য দেশে নানা ধরণের সহায়তা দিচ্ছে চীন। চীন ইতিমধ্যেই করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে বা হুমকির মুখে রয়েছে এমন কয়েকটি দেশে টেস্ট কিট, মাস্ক সহ চিকিৎসা সরঞ্জাম অনুদান হিসেবে পাঠিয়েছে। এছাড়া তাদের উৎপাদিত টেস্ট কিট, মাস্ক ও ভেন্টিলেটরও বিক্রি করছে কয়েকটি দেশে।

উল্লেখ্য, গত শুক্রবার চীন ২৩টি কোম্পানিকে টেস্ট কিট বিক্রয়ের জরুরী অনুমোদন দেয়। যা গত জানুয়ারিতে ছিল মাত্র চারটি প্রতিষ্ঠানের অধীনে। সুত্রঃ সারাবাংলা

গুগল নিউজে ফলো করুন