ঢাকা, শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

কিট ছাড়াই শনাক্ত হবে কোভিড-১৯

২০২০ মার্চ ২৯ ১৭:২৯:৩২
কিট ছাড়াই শনাক্ত হবে কোভিড-১৯

এ দলের সদস্যরা হলেন ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির অ্যালাইড হেলথ সায়েন্স অনুষদের সহযোগী ডিন অধ্যাপক ডা. আবু নাসের জাফর উল্লাহ, পাবলিক হেলথ বিভাগের প্রধান ড. এ বি এম আলাউদ্দিন চৌধুরী, মো. লিয়াকত আলী, মো. হাবিবুর রহমান, মো. নাসের ও মো. মেহেদী হাসান।

গবেষকদের দাবি অনুযায়ী, ফুসফুসের বিভিন্ন জটিল রোগ নির্ণয়ে রেডিওলোজি একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। কোভিড-১৯ নির্ণয়েও রেডিওলোজি তথা ‘চেস্ট রেডিওলোজি’ মডেল এবং কৃত্রিম বৃদ্ধিমত্তা প্রযুক্তি ব্যবহার করা সম্ভব। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তি ব্যবহার করে ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি এমন একটি সফটওয়্যার তৈরি করেছেন যে সফটওয়্যারটি রোগীর বুকের এক্স-রে এবং ফুসফুসের সিটি স্ক্যানের ছবি বিশ্লেষণের মাধ্যমে ‘কোভিড-১৯’ শনাক্ত করতে সাহায্য করবে। এই ক্ষেত্রে কোভিড-১৯ আক্রান্ত ব্যক্তি শনাক্ত করতে তাদের পদ্ধতি প্রায় সঠিকভাবেই কাজ করবে বলে দাবি করছেন গবেষকরা।

গবেষক দলের একজন ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির অ্যালাইড হেলথ সায়েন্স অনুষদের সহযোগী ডিন অধ্যাপক ডা. আবু নাসের জাফর উল্লাহ। নেদারল্যান্ডে থাকাকালীন যুক্ত ছিলেন বিভিন্ন গবেষণা কাজে। ১ জানুয়ারি থেকে যোগ দেন ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়ে।

পদ্ধতি সম্পর্কে অধ্যাপক ডা. আবু নাসের জাফর উল্লাহ সারাবাংলাকে বলেন, ‘কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা টেকনোলজি ব্যবহার করে আমরা একটি সফটওয়ার ডেভেলপ করেছি যা দিয়ে বুকের এক্স-রে পরীক্ষা করে কোভিড-১৯ এবং নিউমোনিয়া রোগ শনাক্ত করতে সক্ষম হবো। এটিই হচ্ছে আমাদের পদ্ধতির মূল মডেল। একটি এলগরিদম বেইস সফটওয়ার দিয়ে এই রোগ শনাক্তকরণ সম্ভব। এক্ষেত্রে কোনো আক্রান্ত ব্যক্তি যদি ল্যাবরেটরি, ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও হাসপাতালে গিয়ে এক্স-রে করে তবে সেই এক্স-রে রিপোর্টের মাধ্যমে আমরা তার মধ্যে কোভিড-১৯ সংক্রমণ বা কোনো নিউমোনিয়ার সংক্রমণ আছে কি না তা পরীক্ষা করতে পারব। এক্ষেত্রে এক্স-রে রিপোর্ট দেখে সফটওয়ারই সঙ্গে সঙ্গে জানিয়ে দেবে আক্রান্ত হওয়ার বিষয়টি।’

শ্বাসতন্ত্রজনিত সকল সমস্যার সমাধান দিতে না পারলেও নিউমোনিয়া ও কোভিড-১৯ শনাক্তে এই সফটওয়ার ১০০ ভাগ সফল হতে পারে বলেও জানান অধ্যাপক ডা. আবু নাসের জাফর উল্লাহ।

তিনি বলেন, ‘শ্বাসতন্ত্রজনিত অনেক সমস্যাই মানুষের হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে সকল উপসর্গগুলো সফটওয়ার জানবে না। তবে কোভিড-১৯ ও নিউমোনিয়া শ্বাসতন্ত্রজনিত রোগ হলেও এই দুইটার ক্ষেত্রে এই পদ্ধতি কাজ করবে।’

এ পদ্ধতি কীভাবে কাজ করবে তা জানিয়ে অধ্যাপক ডা. আবু নাসের জাফর উল্লাহ সারাবাংলাকে বলেন, ‘যিনি এক্স-রে করবেন তিনি তো নিশ্চয়ই একজন টেকনিশিয়ান হয়ে থাকবেন যার কাছে একটি কম্পিউটার থাকেবে। কেউ যখন একটি ক্লিনিকে যাবে বা একজন চিকিৎসকের কাছে যাবে তখন সেখানে যদি এক্স-রে করা হয়ে থাকে তা আমাদের সফটওয়ারের মাধ্যে সার্ভারে আপলোড করে দিতে পারবে। এক্ষেত্রে যিনি আপলোড করবেন তিনি তার কম্পিউটারেই বসে সঙ্গে সঙ্গে পরীক্ষার ফলাফল দেখে নিতে পারবেন। তখন তিনিই বলে দিতে পারবেন এটা কোভিড-১৯, নিউমোনিয়া নাকি আসলে সেই ব্যক্তির কিছুই হয় নাই। এই তিনটা অপশনই আপাতত আছে আমাদের সফটওয়ারে। আমরা এভাবেই সেই সফটওয়ারটি বানিয়েছি।’

কীভাবে সেই এক্স-রে আপলোড করা হবে জানতে চাইলে তিনি সারাবাংলাকে বলেন, ‘https://helpus.ai/ এই লিংকে আমরা একটি ওয়েবসাইট তৈরি করেছি। এই সাইটে গেলেই প্রথম পেজেই একটা আইকন থাকবে যেখানে Test Covid-19 নামে একটি আলাদা বার থাকবে। সেখানে ক্লিক করলেই একটা ছোট ফরম আসবে।’

এই সময়ে এই সফটওয়ারের সেবা কী সবাই নিতে পারবেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘যিনি এই পরীক্ষাটা নিবেন বা এই সার্ভিস টা নিবেন তাকে একজন চিকিৎসক অথবা একজন স্বাস্থ্য কর্মী হতে হবে। যাতে করে আক্রান্ত ব্যক্তির বিষয়ে তারা পরীক্ষা করতে পারেন।’

এই পদ্ধতিতে কোভিড-১৯ শনাক্তকরণের জন্য কোনো ল্যাব টেস্ট দরকার নেই দাবি করে তিনি বলেন, ‘এ পদ্ধতিতে কোনো ল্যাব টেস্ট দরকার নেই। আবার শনাক্তকরণের জন্য আমাদের কাছেও আসতে হবে না। গুগলে সার্চ দিলে যেমন আমরা ফলাফল পাই ঠিক একই ভাবে এক্স-রে ফাইল দেওয়ার পরে সেই সফটওয়ারেই শনাক্ত করা সম্ভব।’

তিনি বলেন, ‘একটি এক্সরে ফাইল দেখার পরে এই পদ্ধতিতে কোভিড-১৯ সংক্রমণের হারের বিষয়েও বলতে পারবে। যদি সেখানে ১০০ শতাংশ নিশ্চিত করে তার মানে হয়ে দাঁড়ায় যার এক্সরে করা হয়েছে তিনি আক্রান্ত।’

তিনি আরও বলেন,‘আমি প্রায় ২০ বছরের উপরে দেশের বাইরে ছিলাম। সেসময়ে আমি বিভিন্ন গবেষণা কাজে যুক্ত ছিলাম। সেখানে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করা হতো ফুসফুসের ক্যান্সার শনাক্তকরণের জন্য। দেশের বাইরে অনেক স্থানেই এমন গবেষণা হয়ে থাকে। সেটা মাথায় রেখে আমরা কাজ করা শুরু করি। যেহেতু কোভিড-১৯ একটি নতুন রোগ তাই আমরা এখনো জানি না ভবিষ্যতে কী হবে আর সেই চিন্তা থেকেই এই গবেষণা শুরু।’

ডা. আবু নাসের জাফর উল্লাহ সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমরা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কাছ থেকে তথ্য নিয়েই এই গবেষণা শুরু করেছি। সেখান থেকেই সেই এলগোরিদম দিয়ে আমরা সফটওয়ারটা তৈরি করি।’

এ বিষয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে অনুমতি নেওয়া হয়েছে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি সারাবাংলাকে বলে, ‘আমরা ইতোমধ্য আমাদের এই বিষয়টি আইসিটি প্রতিমন্ত্রী কাছে জানিয়েছি। তিনি অনেক উল্লসিত। আমরা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গেও বসার চেষ্টা করেছি। তারা কিছুদিন পরে বৈঠকের বিষয়ে জানিয়েছেন। তবে আমরা যোগাযোগ করে যাচ্ছি।’

তবে স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও রোগ গবেষণা প্রতিষ্ঠানের পরিচালক অধ্যাপক ডা. মিরজাদি সেব্রিনা ফ্লোরা এই পদ্ধতি সম্পর্কে তিনি জানেন না বলে জানান। সুত্রঃ সারাবাংলা

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



রে