যে কারণে কাসেম সোলেইমানিকে সাধারণ সৈনিকের পাশে সমাহিত
![যে কারণে কাসেম সোলেইমানিকে সাধারণ সৈনিকের পাশে সমাহিত](https://www.24updatenews.com/thum/article_images/2020/01/30/kashem.jpg&w=315&h=195)
ইরানের বিখ্যাত ব্যক্তিত্বরাসহ সব মানুষ সাধারণত ইরানের বিখ্যাত কবরস্থানে সমাহিত হতে চায়। একটি হলো মাশহাতে ইমাম রেজার মাজার প্রাঙ্গন ও কোমের হজরত মাসুমার মাজার প্রাঙ্গন। আবার অনেকে রাজধানী তেহরানের ইমাম খোমেনির মাজারের পাশেও সমাহিত হতে চায়। কিন্তু জেনারেল সোলেইমানি এর কোনোটিতেই সমাহিত হতে চাননি।
কাসেম সোলেইমানি রাজধানী তেহরান থেকে ৮০০ কিলোমিটার দূরে কেরমান শহরের অদূরে শহিদদের জন্য নির্ধারিত এক কবরস্থানের সাধারণ এক সৈনিকের পাশে সমাহিত হওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেন। কবরস্থানটিতে ১হাজার ১১১জন শহিদের কবর দেয়া হয়েছিল। সর্বশেষ ১হাজার ১১২তম ব্যক্তি হিসেবে কবরস্থ করা হয়েছে ইরানের ক্ষমতাধর সেনাপতি কাসেম সোলেইমানিকে।
সাধারণ সৈনিকের পাশে সমাহিত হওয়ার নেপথ্যেজেনারেল কাসেম সোলাইমানিকে তার ইচ্ছা অনুযায়ী মোহাম্মাদ হোসেন ইউসুফ এলাহি নামের এক শহীদের কবরের পাশে দাফন করা হয়েছে। সোলাইমানির শহিদ হওয়ার পরপরই এ অসিয়তের কথা আসতে থাকে। তাছাড়া এ কেরমান হলো সোলেইমানির নিজ জন্মশহর।
কাসেম সোলেইমানির সাধারণ সৈনিকের পাশে সমাহিত হওয়ার অসিয়ত নিয়ে রেডিও তেহরানের সিনিয়র সাংবাদিকের অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে উঠে এসেছে সে তথ্য। সহযোদ্ধা মোহাম্মদ হোসেন ইউসুফ এলাহির এমন সব অবিশ্বাস্য তথ্য বেরিয়ে এসেছে যে কাসেম সোলেইমানি মৃত্যু পরবর্তী জীবন তার পাশেই থাকতে চেয়েছেন। আর তাহলো-
মোহাম্মদ হোসেন ইউসুফ এলাহির সব তথ্য একেবারেই আধ্যাত্মিক। ওসিয়ত অনুযায়ী জেনারেল সোলাইমানিকে রাজধানী তেহরান থেকে প্রায় ৮০০ কিলোমিটার দূরে কেরমান শহরের শহিদি কবরস্থানে দাফন করা হয়।ওই কবরস্থানের সদস্য সংখ্যা কিছু দিন আগেও ছিল ১ হাজার ১১ জন। কাসেম সোলাইমানি যুক্ত হওয়ায় এ সংখ্যা দাঁড়ায় ১ হাজার ১২ জন।এদেরই একজন হলেন জেনারেল সোলাইমানির প্রিয় পাত্র মোহাম্মাদ হোসেন ইউসুফ এলাহি। তিনি জাতীয়ভাবে খুব বেশি পরিচিত না হলেও তার সম্পর্কে রয়েছে বই ও নিবন্ধ।
মেহেদি ফারহানির লেখা ফার্সিতে লেখা ‘নাখলে সুখতে’ অর্থাৎ ‘পুড়ে যাওয়া খেজুর গাছ’ রূপক অর্থের একটি বইতে ইউসুফ এলাহি সম্পর্কে রয়েছে অনেক সহযোদ্ধা ও ব্যক্তিদের স্মৃতিচারণ। এ স্মৃতিচারণ যে কউকে তার পাশে সমাহিত হওয়ার আগ্রহ যোগাবে। জেনালে কাসেম সোলেইমানির ক্ষেত্রেও তাই ঘটেছে।
১৯৮৬ সালের ঘটনা। ইরাক-ইরান রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ চলছিল। সে সময় ২৫ বছরের যুবক ছিলেন ইউসুফ এলাহি। সে সময় রাসায়নিক হামলায় আহত হয়ে তেহরানের একটি হাসপাতালে মারা যান এ সৈনিক।
ইরাক সীমান্তে কাসেম সোলাইমানির নেতৃত্বেই এ যোদ্ধা দীর্ঘ দিন যুদ্ধ করেছেন। যুদ্ধক্ষেত্রে একদিন তাদের ঘাঁটিতে রাসায়নিক হামলা করে ইরাক। নিষিদ্ধ রাসায়নিক গ্যাসে আক্রান্ত হওয়ায় ঘাঁটির বাঙ্কারে অবস্থান করা করো পক্ষেই সম্ভব ছিল না। বাধ্য হয়ে তারা বাঙ্কার থেকে বেরিয়ে নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে বাধ্য হয়।
ইউসুফ এলাহি সবাইকে বাঙ্কার থেকে বাইরে পাঠানোর আগে বের হননি। সবাইকে নিরাপদে বাঙ্কার থেকে বের করে সবশেষে নিজে বের হন। আর এতেই অসুস্থ হয়ে পড়েন মোহাম্মদ হোসেন ইউসুফ এলাহি। অসুস্থ অবস্থায় তাকে তেহরানের একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি।
মোহাম্মদ হোসেন ইউসুফ এলাহি ছিলেন আল্লাহভিরু পরহেজগার যোদ্ধা। তার সহযোদ্ধারা তাকে চিনতেন এবং তার আধ্যাত্মিকতার বেশ কিছু বিষয়ও জানতেন। এমনকি জেনারেল কাসেম সোলেইমানিও তাকে নিয়ে স্মৃতি করেছিলেন।
সে আগ্রহ থেকেই কাসেম সোলেইমানি সহযোদ্ধার পাশে সমাহিত হতে চেয়েছিলেন। নিজ নামে পরিচিত না হয়ে সাধারণ সৈনিকের নামে অন্তকাল বেঁচে থাকতে চেয়েছিলেন।
জেনারেল সোলেইমানির স্মৃতিচারণজেনারেল সোলাইমানি নিজে ইউসুফ এলাহি সম্পর্কে স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে বলেছেন-'তখন ইরাক-ইরান যুদ্ধ চলছিল। এলাহিকে নিয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজে যাচ্ছিলাম। হাঁটতে হাঁটতে বললাম গত কয়েকটি অভিযানের একটিতেও সন্তোষজনক সাফল্য পাইনি আমরা। সামনে যে অভিযান এটাতো আরও কঠিন ও জটিল অভিযান। এটাতে সফল হওয়ার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে।এলাহি এ কথা শোনামাত্রই বলল, ঘটনাচক্রে আমরা এই অভিযানেই সফলতা পাবো। কীভাবে সে এতটা নিশ্চিত; সে কথা জানতে চাইলে, ইতস্তত করে বলল- ‘আমি নিশ্চিত হতে পেরেছি। আমি খবর পেয়েছি।'
এ রকম অনেক আগামবার্তা ও ইঙ্গিত আগেও সহযোদ্ধাদের দিতেন মোহাম্মাদ হোসেন ইউসুফ এলাহি। সেবার জেনালে সোলেইমানি তার কথা বিশ্বাস করেন এবং সে অভিযানেও তারা সফল হয়।
ইউসুফ এলাহির ভাইয়ের স্মৃতিচারণমোহাম্মাদ হোসেন ইউসুফ এলাহি নিয়মিত দীর্ঘ সময় তাহাজ্জুদ নামাজ পড়তেন। যুদ্ধ করা ছাড়াও ইউসুফ এলাহি অনেক ইবাদত-বন্দেগি করতেন। তার সম্পর্কে তারই এক ভাই একটি ঘটনা প্রকাশ করেন-মোহাম্মাদ হোসেন ইউসুফ সোলেইমানি রাসায়নিক গ্যাসে আক্রান্ত হয়ে যখন তেহরানের ‘লাব্বাফি নেজাদ হাসপাতাল’-এ চিকিৎসাধীন। সে হাসপাতালের উদ্দেশ্যে কেরমান থেকে রওনা হয়ে সবে তেহরানে পৌঁছেছি। হাসপাতালের ভেতরে ঢুকতেই এক যুবক এগিয়ে এসে বলল-আপনি কি ইউসুফ এলাহির ভাই?বললাম-জ্বি হ্যাঁ।সে বলল- আমার সঙ্গে চলুন। ইউসুফ এলাহি আপনাকে নিতে আমাকে পাঠিয়েছেন।সে বলেন- আমি ও আমার সঙ্গে থাকা আরেক ভাই অবাক হয়ে তার সঙ্গে গেলাম।
হাসপাতালের রুমে ঢুকেই ইউসুফ এলাহিকে জিজ্ঞেস করলাম- তুমি কিভাবে জানলে আমরা আসছি।তখন ইউসুফ এলাহি জানালো- আপনারা যখন কেরমান থেকে গাড়িতে উঠেছেন তখন থেকেই আমি আপনাদেরকে দেখতে পাচ্ছিলাম।সে জানায়- ইউসুফ এলাহি আমাদের রওয়ানা হওয়ার সময়, গাড়ির বর্ণনা সবই একে একে বলে দিল।
সহকর্মীর স্মৃতিচারণইউসুফ এলাহির এক সহযোদ্ধা জানিয়েছেন, 'একবার তাদের ব্রিগেডের দুই সেনা সীমান্তবর্তী নদীতে শত্রুর ওপর নজর রাখতে গিয়ে নিখোঁজ হয়ে যায়। খোঁজাখুঁজির পরও তাদের পাওয়া যাচ্ছিল না। আমরা এই খবর ইউসুফ এলাহিকে জানাই। এলাহি কমান্ডার কাসেম সোলাইমানিকে অবহিত করে।কমান্ডার সোলাইমানি দ্রুত খবরটি ঘাঁটির সবাইকে জানাতে বলেন। সোলাইমানি বলেছিলেন, হয়তো ইরাকি সেনারা তাদের দুই জনকে আটক করেছে। এর ফলে আমাদের পরবর্তী অভিযানের খবর তারা জেনে যাবে। তাই বিষয়টি সম্পর্কে সবাইকে সতর্ক করতে হবে।ইউসুফ এলাহি কমান্ডার সোলেইমানির অনুমতি চেয়ে বলল, আজ রাতটা যাক। আমি সকালেই জানাতে পারব ওদের ভাগ্যে কী ঘটেছে। কমান্ডার অনুমতি দিলেন।
সকালে ইউসুফ এলাহি জানাল-ওরা বন্দী হয়নি, ওরা দুই জনই শহিদ হয়ে গেছে। ওদের দুই জনের একজনের নাম ছিল আকবার মুসায়িপুর, অপর জনের নাম হোসেন সাদেকি।
ইউসুফ এলাহি বলল- আমি ওদের সঙ্গে কথা বলেছি। তারা ধরা পড়েনি, শহিদ হয়ে গেছে। তারপর সে জানায় যে, জানাল নদীর তীরে ওদের মরদেহ পড়ে আছে। আমরা নদীর ধারে প্রথমে আকবার মুসায়িপুর ও পরে হোসেন সাদেকির মরদেহ খুঁজে পাই এবং নিয়ে আসি।’
জেনারেল সোলেইমানি তার এক সহযোদ্ধা সৈনিকের পাশে পরবর্তী জীবন অতিবাহিত করতেই শহিদি কবরস্থান ও তার পাশে সমাহিত হতে চেয়েছিলেন।
শুধু তাই নয়, হামলা আক্রান্ত হওয়ার ১১ মাস আগেও জেনারেল কাসেম সোলেইমানি ওই কবরস্থানে গিয়েছিলেন। ওই সময় সেখানে কেরমান প্রদেশের শহিদ ফাউন্ডেশনের সাবেক প্রধান মোহাম্মাদ রেজা হাসান সাদির সঙ্গে তার সাক্ষাৎ হয়।
মোহাম্মাদ রেজা হাসান সাদি সে সময় সোলেইমানিকে জিজ্ঞাসা করেন যে-শুনেছি, আপনি নাকি ইউসুফ এলাহির পাশে যাতে কবর দেওয়ার সুযোগ পান সেজন্য আবেদন করেছেন, তাই না? জবাবে জেনারেল সোলেইমানি বলেছিলেন, হ্যাঁ। তবে ওর একেবারে পাশের জায়গাটা খালি না থাকলে ওর কবরের আশেপাশে হলেও চলবে।
এমন আরও অনেক ঘটনাই তার সহযোদ্ধারা বর্ণনা করেছেন যা থেকে এটা স্পষ্ট, ইউসুফ এলাহি ছিলেন একজন বড় মাপের আরেফ। ইউসুফ এলাহি এবাদত-বন্দেগি ও সৎকর্মের মাধ্যমে এতো উচ্চ মর্যাদায় পৌঁছেছিলেন যে, স্বপ্নে আগাম বার্তা পেয়ে যেতেন। ইউসুফ এলাহির সরাসরি কমান্ডার হিসেবে এসব তথ্য সবার চেয়ে বেশি জানতেন কাসেম সোলাইমানি। এমন আধ্যাত্মিক ব্যক্তিকে স্বচক্ষে দেখাও অনেক বড় সৌভাগ্যের বিষয়। এ কারণেই হয়তো এমন আধ্যাত্মিক ব্যক্তিত্বের চিরদিনের প্রতিবেশী হওয়ার সুযোগ হাতছাড়া করতে চাননি সোলাইমানি। তিনি স্ত্রীকে লেখা চিঠিতে বলে যান, তাঁর (ইউসুফ এলাহি) পাশে কবর পাওয়ার ইচ্ছা আমার।'
সোলেইমানির ২টি অসিয়ত পূরণইউসুফ এলাহির একেবারে পাশে কবর পাওয়ার ইচ্ছাটা পূরণ হয়েছে কাসেম সোলাইমানির। তারা উভয়ে পাশাপাশিই শুয়ে আছেন এখন।দ্বিতীয় ইচ্ছেটা ছিল- তার কবরের নেমপ্লেটে যেন নামের সঙ্গে কোনো পদবি লাগানো না হয়। সেটিও লাগানো হয়। নেমপ্লেটের জায়গাটা এখনও খালি আছে আছে বলেও জানা যায়।
সোলেইমানির কবর জিয়ারতসে কারণে মানুষ সোলেইমানির কবর জিয়ারত করতে গেলে প্রথমেই চলে যান বা খোঁজ করেন শহিদ মোহাম্মাদ হোসেন ইউসুফ এলাহির কবর। কেননা তার পাশে নেমপ্লেটবিহীন শুয়ে আছেন ইরানের সর্বোচ্চ সামরিক খেতাব ‘জুলফিকার’ পাওয়া সেনা কমান্ডার জেনারেল কাসেম সোলেইমানি।
এ যেন সহযোদ্ধা মোহাম্মাদ হোসেন ইউসুফ এলাহির পরিচিয়ে পরিচিত হতে যান। আজীবন প্রচার-বিমুখ সোলাইমানি মৃত্যুর পরও যেন নিজেকে লুকিয়ে রাখার চেষ্টা করলেন।
আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ
- এক নজরে দেখেনিন কে কত টাকা পুরস্কার পেলেন
- বিপিএল মাতিয়ে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির স্কোয়াডে আসছেন দুই জন
- বিসিবির কেন্দ্রীয় চুক্তিতে থাকা ক্রিকেটারদের তালিকা
- ১৪৪ ধারা জারি
- বাংলাদেশের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির দলে যুক্ত হচ্ছে আরও ৪ ক্রিকেটার
- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় আহত সারজিস আলম
- বাংলাদেশের ১৫ সদস্যের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির স্কোয়াড ঘোষণা করলো বিসিবি
- সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানের কথায় নতুন বার্তা
- আজকের ১৮ ক্যারেট, ২১ ক্যারেট, ২২ ক্যারেট সোনা ও রুপার দাম
- বিপিএল শেষ, বাংলাদেশের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির স্কোয়াডে আসছে দুই পরিবর্তন
- ধানমন্ডির ৩২ নম্বর ও দেশজুড়ে ভাঙচুরের পর আজহারী স্ট্যাটাস
- গণধোলাইয়ের পর পুলিশের হাতে সোপর্দ সাকিব
- ভিসা বন্ধ ঘোষণা
- লাখ টাকা পারিশ্রমিক নিলেন জেমি নিশাম
- বিপিএল ফাইনাল ম্যাচের সময় সূচি