ঢাকা, শনিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

অবৈধদের ফেরত না পাঠানোর লিখিত আশ্বাস চায় বাংলাদেশ

জাতীয় ডেস্ক . ২৪আপডেট নিউজ
২০১৯ ডিসেম্বর ৩১ ১৮:০০:১৪
অবৈধদের ফেরত না পাঠানোর লিখিত আশ্বাস চায় বাংলাদেশ

একাধিক সূত্রের বরাত দিয়ে প্রিন্ট বলছে, ভারতের জাতীয় নাগরিক পঞ্জিকা (এনআরসি) ইস্যুতে নয়াদিল্লির প্রতি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার “নমনীয়” অবস্থান ঘিরে সমালোচনার মাঝে এই পদেক্ষেপ নেয়া হয়েছে।

কূটনৈতিক সূত্রগুলো দ্য প্রিন্টকে বলেছে, আসামের জাতীয় নাগরিক পঞ্জিকা বাস্তবায়নের পর গত অক্টোবরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যখন ভারত সফরে যান, তখনই বাংলাদেশ সরকার একই ধরনের একটি দাবি জানিয়েছিল।

সূত্র বলছে, সেই সময় বাংলাদেশকে ভারত মৌখিকভাবে আশ্বাস দিয়েছিল যে, আসামে এনআরসি বাস্তবায়নের পর যারা বিদেশি হিসেবে শনাক্ত হয়েছেন তাদের বাংলাদেশে পাঠানো হবে না। তবে লিখিত আশ্বাস দিতে অস্বীকৃতি জানিয়ে নয়াদিল্লি বলে, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী আসামে এনআরসি বাস্তবায়ন করা হয়েছে।

চলতি মাসে ভারতের পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষে নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন পাস হওয়ার পর বাংলাদেশের রাজনৈতিক নেতাদের মাঝে নতুন করে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে যে, আইনে অবৈধ হিসেবে চিহ্নিত মুসলিম অভিবাসীদের বাংলাদেশ সীমান্তে পুশ ইন করতে পারে ভারত।

আইনটি পাস হয়ে যাওয়ার পর কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, বর্তমানে ভারতের ক্ষমতাসীন সরকারের ওপর আদালতের কোনো বাধ্যবাধকতা নেই, যে কারণে লিখিত আশ্বাস দেয়া কঠিন হবে না। তবে তারা বলছেন, এ ধরনের সার্বভৌম নিশ্চয়তা দিয়ে কোনো ধরনের আশ্বাস নয়াদিল্লি ঢাকাকে দিয়েছে বলে মনে হচ্ছে না।

ভারতের ক্ষমতাসীন হিন্দুত্ববাদী সরকার গত ১১ ডিসেম্বর পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ রাজ্যসভায় বিতর্কিত নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন পাসের পর দেশটিতে বিক্ষোভ শুরু হয়। ২০১৪ সালে দেশটিতে ক্ষমতায় আসার পর এমন তীব্র বিক্ষোভ এবং বিরোধিতার মুখে প্রথমবারের মতো পড়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।

আইনে বলা হয়েছে, ২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বরের আগে প্রতিবেশী বাংলাদেশ, পাকিস্তান এবং আফগানিস্তান থেকে ভারতে যাওয়া হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান, পার্সি এবং জৈন সম্প্রদায়ের সদস্যরা সে দেশের নাগরিকত্ব পাবেন। তবে এ আইনে মুসলিম শরণার্থীদের ব্যাপারে একই ধরনের বিধান রাখা হয়নি।

সমালোচকরা বলেছেন, ক্ষমতাসীন হিন্দুত্ববাদী বিজেপি সরকার ধর্মনিরপেক্ষ প্রজাতন্ত্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত ভারতে বিভাজন তৈরি করতে এ নতুন নাগরিকত্ব আইন তৈরি করেছে; যা ভারতের ধর্মনিরপেক্ষতার ভিত্তিকে দুর্বল করে দিয়েছে।

বিতর্কিত এ আইনে মুসলিম শরণার্থীদের নাগরিকত্বের ব্যাপারে কিছু না বলায় ভারতজুড়ে তীব্র প্রতিবাদ-বিক্ষোভ শুরু হয়েছে। তবে বিক্ষোভের দাবানল বেশি ছড়িয়ে পড়েছে দেশটির সরকারি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মাঝে। বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে এখন পর্যন্ত অন্তত ২৫ জনের প্রাণহানি ঘটেছে।

অভ্যন্তরীণ বিষয়

গত রোববার বাংলাদেশ সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিজিবি) প্রধান শাফিনুল ইসলাম বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তরক্ষীবাহিনী ডিজি পর্যায়ের বৈঠকে অংশ নিতে বিজিবির একটি প্রতিনিধিদল-সহ ভারতে যান। সেখানে বৈঠকের পর সংবাদ সম্মেলনে বিজিবির প্রধান বলেন, এনআরসি ভারত সরকারের অভ্যন্তরীণ বিষয়। তবে সংবাদ সম্মেলনে ভারতের নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন নিয়ে মন্তব্য করতে রাজি হননি তিনি।

এদিকে, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে সুসম্পর্ক থাকলেও নয়াদিল্লির কাছ থেকে দৃঢ় আশ্বাস না পাওয়ার ব্যর্থতায় দেশের ভেতরে বিরোধীদের তীব্র সমালোচনার মুখে রয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নেতৃত্বাধীন সরকার।

বাংলাদেশ সরকারের জন্য এই পরিস্থিতি খারাপ থেকে আরও খারাপের দিকে গেছে গত নভেম্বরে। ওই মাসে বেঙ্গালুরু থেকে ৬০ অবৈধ বাংলাদেশিকে আটকের পর ঢাকায় পাঠানোর জন্য কলকাতায় নেয়া হয়। এছাড়া গত পাঁচ বছরে অবৈধভাবে বসবাসের অভিযোগে ভারতের পশ্চিমাঞ্চলীয় প্রদেশ মহারাষ্ট্র থেকে অন্তত ১ হাজার ৪৭১ বাংলাদেশিকে ফেরত পাঠানো হয়েছে।

চলতি মাসের শুরুর দিকে আসামের গুয়াহাটিতে নাগরিকত্ব আইনবিরোধী বিক্ষোভের সময় বাংলাদেশের জ্যেষ্ঠ এক কূটনীতিকের ওপর হামলা হয়। নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন ঘিরে উত্তেজনা বাড়তে থাকায় বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ. কে. আব্দুল মোমেন এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ভারত সফর বাতিল করেছেন। তবে দুই মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়, ভারতের সঙ্গে বৈঠক স্থগিতে এনআরসি কিংবা সিএএর কোনো সম্পর্ক নেই। সুত্রঃ জাগোনিউজ২৪

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



রে