ঢাকা, শনিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি নির্বাচন: দু’দলের মেয়র প্রার্থী চূড়ান্ত

জাতীয় ডেস্ক . ২৪আপডেট নিউজ
২০১৯ ডিসেম্বর ২৯ ১৩:০২:৫৪
ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি নির্বাচন: দু’দলের মেয়র প্রার্থী চূড়ান্ত

অন্যদিকে আওয়ামী লীগ আনুষ্ঠানিকভাবে মেয়র পদে নাম ঘোষণা না করলেও প্রার্থী চূড়ান্ত করেছে দলটির স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ড। এদিন রাতে গণভবনে অনুষ্ঠিত বোর্ড সভা চলাকালে সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের জানান, আগামীকাল (আজ) সকালে আওয়ামী লীগ সভাপতির ধানমণ্ডির কার্যালয়ে প্রেস ব্রিফিংয়ের মাধ্যমে দলীয় প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করা হবে।

তবে আওয়ামী লীগের একাধিক নীতিনির্ধারক আভাস দিয়েছেন, উত্তরে বর্তমান মেয়র আতিকুল ইসলাম ফের দলীয় মনোনয়ন পেতে যাচ্ছেন। তবে চমক থাকতে পারে দক্ষিণে। বর্তমান মেয়র সাঈদ খোকনের পরিবর্তে ফজলে নূর তাপসকেই দলীয় মনোনয়ন দেয়ার বিষয়টি প্রায় চূড়ান্ত।

দুই সিটিতে মেয়র পদে আওয়ামী লীগে ২০ ও বিএনপিতে ৩ জন দলীয় মনোনয়ন ফরম জমা দেন। এদিকে প্রতিটি ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে একক প্রার্থী চূড়ান্ত করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে দু’দলকেই। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ আজ একক প্রার্থী ঘোষণা করবে। আর বিএনপির কাউন্সিলর পদে মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সাক্ষাৎকার নেয়া হবে আজ। এ লক্ষ্যে তিনটি বাছাই কমিটি করা হয়েছে। আগামীকাল চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করা হতে পারে।

৩০ জানুয়ারি এ দুই সিটিতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ৩১ ডিসেম্বর মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার শেষ দিন। ২ জানুয়ারি যাচাই-বাছাই এবং ৯ জানুয়ারি প্রত্যাহারের শেষদিন। পরের দিন (১০ জানুয়ারি) প্রার্থীদের মধ্যে প্রতীক বরাদ্দ করা হবে। এরপরই শুরু হবে আনুষ্ঠানিক প্রচার।

দলীয় মেয়র পদে প্রার্থী চূড়ান্ত ও কাউন্সিলরদের সমর্থন চূড়ান্ত করতে শনিবার সন্ধ্যায় গণভবনে আওয়ামী লীগের স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ডের সভা অনুষ্ঠিত হয়। আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন- ওবায়দুল কাদের, আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, শ্রী রমেশ চন্দ্র সেন, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, ড. আবদুর রাজ্জাক, মাহবুবউল আলম হানিফ, আবদুস সোবহান গোলাপ প্রমুখ।

বোর্ড সদস্যরা সম্ভাব্য প্রার্থীদের নিয়ে মতামত দেন। বৈঠকে সম্ভাব্য মেয়র প্রার্থীদের ডাকা হয়। তবে দক্ষিণের বর্তমান মেয়র সাঈদ খোকন দলীয় মনোনয়ন ফরম জমা দিলেও নির্ধারিত সময়ে গণভবনে যাননি। পরে ফোন করে তাকে ডেকে আনা হয়। গণভবনে মঞ্চের পাশে একটি চেয়ারে দীর্ঘক্ষণ বসে থাকেন তিনি।

পরে তাকে মনোনয়ন বোর্ডের সভায় ডাকা হয়। সেখান থেকে বের হওয়ার সময় সাংবাদিকদের সঙ্গে কোনো কথা বলেননি। এ সময় তার চেহারায় মলিনতা লক্ষ্য করা যায়। অন্যদিকে আতিক ও তাপসকে বেশ ফুরফুরে মেজাজে দেখা যায়। সবার সঙ্গে বসে গল্পও করেন। এ সময় উপস্থিত নেতাকর্মী ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা তাদের সঙ্গে সেলফিও তোলেন। এ সময় তাপস তাপস বলে স্লোগান দেন উপস্থিত নেতাকর্মীরা।

বোর্ডের একাধিক সদস্য জানান, প্রধানমন্ত্রী মেয়র পদে প্রত্যেক প্রার্থীর আলাদা করে সাক্ষাৎকার নেন। এ সময় তিনি বলেন, দল থেকে যাকে মনোনয়ন দেয়া হবে তার পক্ষে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে।

বৈঠক থেকে বেরিয়ে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের উপস্থিত মেয়র ও কাউন্সিলর পদের সম্ভাব্য প্রার্থী এবং সাংবাদিকদের বলেন, ‘দুই সিটিতে মেয়র ও কাউন্সিলর পদে দলীয় মনোনয়নের জন্য যারা আবেদন করেছিলেন, সবার আবেদন যাচাই-বাছাই ও বিচার-বিশ্লেষণ করছি। আমাদের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তিনি নিজেও পর্যবেক্ষণ করছেন। গোয়েন্দা সংস্থার রিপোর্টও তার হাতে রয়েছে। সবকিছু মিলে যাচাই-বাছাই, বিচার-বিশ্লেষণ ও পর্যবেক্ষণ শেষে রোববার (আজ) বেলা ১১টায় প্রেস ব্রিফিংয়ে মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করা হবে।’

এর আগে বুধবার সকাল থেকে মেয়র পদে ফরম বিক্রি ও জমা দেয়ার কার্যক্রম শুরু করে আওয়ামী লীগ। চলে শুক্রবার বিকাল ৫টা পর্যন্ত। ৩ দিনে মেয়র পদে ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে ৮ জন এবং উত্তরে ১২ জন নৌকা পেতে মনোনয়ন ফরম জমা দিয়েছিলেন। অন্যদিকে দুই সিটির ১২৯ ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে ১২৯৩ জন আওয়ামী লীগের ফরম জমা দিয়েছেন।

কাউন্সিলর পদে যারা আওয়ামী লীগের আবেদন ফরম কিনেছিলেন শনিবার বিকালে তাদের ডাকা হয়েছিল প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে। ফলে শনিবার বিকালে গণভবন পরিণত হয়েছিল রাজধানীর বিভিন্ন ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের মিলনমেলায়। তাদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে উঠে গণভবন মাঠ। মাঠের সবুজ লনে শামিয়ানা টাঙিয়ে চেয়ার পেতে তৃণমূল নেতাকর্মীদের জন্য বসার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। ব্যবস্থা ছিল রাতের খাবারেরও।

জানতে চাইলে উত্তর সিটির আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য মেয়র প্রার্থী ও বর্তমান মেয়র আতিকুল ইসলাম শনিবার রাতে যুগান্তরকে বলেন, স্মার্ট সিটি গড়ার কাজ শুরু হয়েছে। ঢাকাকে ক্লিন, গ্রিন এবং স্মার্ট সিটি করাই আমার লক্ষ্য। মানুষ যেন ঘরে বসেই ভার্চুয়াল প্রক্রিয়ায় ট্যাক্স প্রদান করতে পারে সেদিকেও লক্ষ্য রেখে কাজ করব।

কারণ ট্যাক্স প্রদান প্রক্রিয়া যত সহজ হবে, ট্যাক্স নেয়ার উদ্দেশ্যও ততটাই সফল হবে। তিনি আরও বলেন, আমি চাই নগরবাসী আরও সচেতন হোক। নগরবাসী সচেতন হলে নগরকে সুন্দর ও পরিচ্ছন্ন হিসেবে গড়ে তোলা অনেকটাই সহজ হয়ে যায়। আমি সবাইকে নিয়ে বাসযোগ্য ঢাকা গড়ে তুলতে চাই; যা হবে আধুনিক, পরিচ্ছন্ন ও পরিকল্পিত।

আওয়ামী লীগের দক্ষিণ সিটির সম্ভাব্য মেয়র প্রার্থী ও ঢাকা-১০ আসনের সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার ফজলে নূর তাপস তার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার বিষয়ে বলেন, আমি বিশ্বাস করি যে, আন্তরিকতা, নিষ্ঠা ও সততার সঙ্গে কাজ করলে সবই সম্ভব। একটা মহাপরিকল্পনা প্রণয়ন করে ঐতিহ্যবাহী ঢাকার স্বকীয়তা, বৈশিষ্ট্য আর স্বমহিমায় যে সৌন্দর্য ছিল সেটাকে আবার পুনরুদ্ধার করা এবং প্রস্ফুটিত করা।

এখন চিন্তা করলে মনে হবে এটা খুব কঠিন কাজ, অবশ্যই এটা কঠিন কাজ। তবে এই নজির আমাদের ঢাকা উত্তরের প্রয়াত মেয়র আনিসুল হক সাহেব দেখিয়েছেন যে- অল্প সময়ের মধ্যে চাইলে পরিবর্তন আনা যায়। আমি মনে করি, সবার সমর্থন পেলে আমিও সেটা করতে সক্ষম হব।

২০১৫ সালের ২৮ এপ্রিল ঢাকার দুই সিটি নির্বাচন একযোগে অনুষ্ঠিত হয়েছিল। সাঈদ খোকন দক্ষিণের মেয়র এবং আনিসুল হক উত্তরের মেয়র নির্বাচিত হন। আনিসুল হক মারা গেলে উপনির্বাচন হয়েছিল চলতি বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি। ওই নির্বাচনে মো. আতিকুল ইসলাম মেয়র নির্বাচিত হন।

এদিকে মেয়র পদে দলীয় প্রার্থী চূড়ান্ত করতে শনিবার বিকালে বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশান কার্র্যালয়ে পার্লামেন্টারি বোর্ডের বৈঠক করে দলটি। বৈঠকে স্কাইপে সভাপতিত্ব করেন দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। বৈঠকে পার্লামেন্টারি বোর্ডের সদস্য ও বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সেলিমা রহমান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে সম্ভাব্য প্রার্থী ড. আসাদুজ্জামান রিপন, তাবিথ আউয়াল ও ইশরাক হোসেনের সাক্ষাৎকার নেয়া হয়।

পার্লামেন্টারি বোর্ডের বৈঠক শেষে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সংবাদ সম্মেলনে দুই সিটির দলীয় প্রার্থীর নাম ঘোষণা করে বলেন, নির্বাচন সুষ্ঠু হবে বলে আমরা মনে করি না। তারপরও আন্দোলনের অংশ হিসেবে আমরা দুই সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে অংশ নিচ্ছি। আমরা মনে করি, এ নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের কাছে পৌঁছতে সক্ষম হব। জনগণের কাছে যাওয়ার একটি সুযোগ পাব। যদিও ৩০ ডিসেম্বর জাতীয় নির্বাচনে নির্বাচন কমিশন ও সরকার আমাদের সেই সুযোগ দেয়নি।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের প্রার্থী ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেনের একটি পরিচয় রয়েছে, তিনি আমাদের সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার ছেলে। এছাড়াও আমরা মনে করছি নতুনদের মধ্যে তার একটি বড় আকর্ষণ থাকবে। একই সঙ্গে তিনি উচ্চশিক্ষিত।

এ সময় তিনি ঢাকা মহানগর উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মনোনয়নপ্রাপ্ত তাবিথ আউয়াল সম্পর্কে বলেন, তাবিথ একজন যোগ্য প্রার্থী, এর প্রমাণ তিনি ইতিপূর্বে দিয়েছেন। তাই আমরা দলীয়ভাবে মনে করেছি তারা নির্বাচনের জন্য যোগ্য প্রার্থী। মনোনয়ন পাওয়ার পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় তাবিথ আউয়াল বলেন, নির্বাচিত হলে ‘বাসযোগ্য আধুনিক ঢাকা’ গড়ে তোলা হবে। আর ‘নগর সরকার’ আদলে ঢাকাকে সাজানোর অঙ্গীকার করেন ইশরাক হোসেন।

মনোনয়ন দেয়ার জন্য বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, নেতাকর্মী-সমর্থকদের প্রতি ধন্যবাদ জানান তারা। নগর ও দেশবাসীর কাছে দোয়াও চান। মনোনয়ন পাওয়ার পর তাদের হাস্যোজ্জ্বল দেখাচ্ছিল। নেতাকর্মীদের তাদের পাশে দাঁড়িয়ে সেলফি তুলতেও দেখা গেছে।

বিজয়ী হলে কী করবেন? এমন প্রশ্নের জবাবে তাবিথ বলেন, গণতন্ত্র ও ভোটারদের অধিকার রক্ষার অংশ হিসেবেই আমরা এ নির্বাচনে অংশ নিচ্ছি। মানুষের যে ন্যূনতম অধিকার আছে সেগুলো রক্ষা করতে হবে। তার পাশাপাশি ঢাকাকে উন্নত নগরী হিসেবে গড়তে হবে। জনকল্যাণে জনগণের জন্য আমরা প্রস্তুত হচ্ছি।

ইশরাক হোসেন বলেন, ক্ষমতার ভারসাম্য অনুপস্থিতির কারণেই; কিন্তু আমাদের ঢাকা আজকে বিশ্বের সবচেয়ে অবসবাসযোগ্য নগরীর মধ্যে অন্যতম। যদি মেয়র নির্বাচিত হই প্রথমে ঢাকাকে ন্যূনতম বসবাসযোগ্য নগরীতে পরিণত করব। ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের যে অথরিটি দেয়া আছে সেটা দিয়ে ঢাকার সমস্যার সমাধান এবং উন্নত নগরী করা সম্ভব নয়। ঢাকাকে অবশ্যই একটি মেট্রোপলিটন গভর্নমেন্ট অথবা নগর সরকারের আদলে সাজাতে হবে।

এদিকে দুই সিটির সাধারণ ও সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদে ১৭২ ওয়ার্ডের বিপরীতে ৪৭৬ জন বিএনপির মনোনয়ন ফরম জমা দিয়েছেন। ঢাকা উত্তরে সাধারণ (১ থেকে ২৫নং ওয়ার্ড) ও দুই সিটির সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদে সম্ভাব্য প্রার্থীদের সাক্ষাৎকার আজ সকাল ৯টা থেকে গুলশান কার্যালয়ে নেয়া হবে। আর ঢাকা দক্ষিণে সম্ভাব্য প্রার্থীদের সাক্ষাৎকার অনুষ্ঠিত হবে নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে। সুত্রঃ যুগান্তর

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



রে