ঢাকা, শনিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

আপাতত মুক্তি মিলছে না খালেদা জিয়ার

জাতীয় ডেস্ক . ২৪আপডেট নিউজ
২০১৯ ডিসেম্বর ১২ ১৮:৩৯:০৫
আপাতত মুক্তি মিলছে না খালেদা জিয়ার

বিএনপির আইনজীবীরা মনে করছেন, আইনি প্রক্রিয়া মোকাবিলা ছাড়া সামনে আর কোনো পথ খোলা নেই। তবে প্যারোলে মুক্তির বিষয়টি নীতি-নির্ধারকরা বিবেচনা করতে পারেন বলেও তারা জানান।

বৃহস্পতিবার (১২ ডিসেম্বর) প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন ছয় বিচারপতির আপিল বেঞ্চ খালেদা জিয়ার জামিন আবেদন খারিজ করে দেন। এর ফলে জামিনে আপাতত মুক্তি মিলছে না খালেদা জিয়ার। কারাগারেই থাকতে হচ্ছে তাকে।

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান খন্দকার মাহবুব হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, ‘বেগম খালেদা জিয়াকে জেলে নেওয়া হয়েছে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে। আমি প্রথম থেকেই বলছি, সরকারের সদিচ্ছা ছাড়া সাধারণ আইনি প্রক্রিয়ায় খালেদা জিয়াকে মুক্ত করা সম্ভব না। তখন অনেকেই আমার সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেছেন। বিভিন্নভাবে ম্যাডামকে আশ্বস্থ করেছেন সাতদিন, ১৫ দিন, ২০ দিন বলে।’

তিনি বলেন, ‘প্রায় এক বছর আগে আমি ম্যাডামের স্বাস্থ্যের দিকে তাকিয়ে বলেছিলাম, যেহেতু আইনি প্রক্রিয়ায় তার বের হতে সময় লাগবে। তাই তাকে প্যারোলে মুক্তি দিয়ে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা দরকার। আমার এই বক্তব্যের পরে সরকার পক্ষ থেকেও একটি স্ক্রল করা হয়েছিল, প্যারোলে মুক্তি চাওয়া হলে তার মুক্তির বিষয়টি দেখবে। তখন কিন্তু সরকার এত শক্তিশালী ছিল না। তখনও বলা হলো, প্যারোল অর্থ হলো আত্মসমর্পণ করা। অথচ বর্তমান প্রধানমন্ত্রীও কিন্তু এখনও প্যারোলে আছেন। ওয়ান ইলেভেনের সময় প্যারোলে বিদেশে গিয়ে চিকিৎসা করিয়েছেন। আমাদের বর্তমান ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সাহেবও কিন্তু প্যারোলে মুক্তি পেয়ে বিদেশে গিয়েছেন। সেটিও তারা মানলেন না। ফলে দীর্ঘদিন বিনা চিকিৎসায় ম্যাডাম এখন মৃত্যু পথযাত্রী।’

খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, ‘আজকে যে মেডিকেল রিপোর্ট এসেছে তারপরেও আদালত খালেদা জিয়াকে জামিন দেননি। যেখানে সাত বছর সাজার মধ্যে দেড় বছর খাটা হয়ে গেছে। এমন অবস্থায় জামিন হয়নি, এমনটি আমার জানা নেই। এসব মামলায় সাধারণত দেখা গেছে, আপিল যে দিন শুনানির জন্য গ্রহণ করা হয়, সেই দিনই জামিন দেওয়া হয়।’

‘জামিনের সময় কিন্তু মামলার মেরিট বিবেচনা করা হয় না। দেখা হয় কী ধরনের অপরাধ হয়েছে। আসামির পালানোর আশঙ্কা আছে কিনা? আমাদের দুর্ভাগ্য এখানেও আপিল বিভাগ আমাদের জামিন দিলেন না। আমি মনে করি, এটি এ উপমহাদেশে একটি বিরল ঘটনা। ইতিহাসে এটি একটি কলঙ্কজনক অধ্যায় হিসেবে থাকবে’ বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

আজকের খারিজাদেশের পর কোন প্রক্রিয়ায় এগুবেন জানতে চাইলে সিনিয়র এই আইনজীবী বলেন, ‘আমরা আইনজীবী। আইনের বাইরে আমাদের কিছু করা সম্ভব না। আদালতে এখন আমাদের আপিল পেন্ডিং আছে। আমরা আশাবাদী, আইনি প্রক্রিয়ায় একদিন তাকে বের করতে আনতে পারব।’

বিএনপির আরেক আইনজীবী আইনজীবী জয়নুল আবেদীন সারাবাংলাকে বলেন, ‘সরকার বিচার-ব্যবস্থার ওপর সবসময় প্রভাব বিস্তার করে। তারপরও আমাদের আইনগতভাবেই মোকাবিলা করতে হবে। এর বাইরে আমাদের কোনো পথ নেই।’

তিনি বলেন, ‘আমরা তো আর যুদ্ধ করতে পারি না। আইনজীবী হিসেবে, আমরা আইনগতভাবেই মোকাবিলা করতেই হবে। একবার খারিজ হলে আবার যাব। এটিই আইনজীবীদের কাজ।’

বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে প্রায় দেড় ডজন মামলা থাকলেও অধিকাংশতেই তিনি জামিনে আছেন। এর মধ্যে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলা এবং আজকের জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় তিনি জামিনে নেই। ফলে এ দুটি মামলায় তিনি জামিন না পেলে সহসা তার মুক্তি সম্ভব নয়।

গত বছরের ২৯ অক্টোবর জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলার রায় ঘোষণা করেন পুরান ঢাকার নাজিমুদ্দিন রোডের পুরোনো কেন্দ্রীয় কারাগারে স্থাপিত ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৫-এর বিচারক ড. মো. আকতারুজ্জামান। রায়ে খালেদা জিয়া ছাড়া অপর তিন আসামিকেও সাত বছর করে কারাদণ্ড দেওয়া হয়। প্রত্যেককে ১০ লাখ টাকা করে অর্থদণ্ড দেওয়া হয়। এই রায়ের বিরুদ্ধে খালেদা জিয়া আপিল করলে ৩০ এপ্রিল তা শুনানির জন্য গ্রহণ করে অর্থদণ্ড স্থগিত করেন হাইকোর্ট।

চলতি বছরের ৩১ জুলাই জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়ার জামিন আবেদন খারিজ করে দেন বিচারপতি ওবায়দুল হাসান ও বিচারপতি এস এম কুদ্দুস জামানের হাইকোর্ট বেঞ্চ। এ আদেশের বিরুদ্ধে আপিলে আবেদন করেন খালেদা জিয়া।

গত ৫ ডিসেম্বর সেই আবেদনের শুনানিকে কেন্দ্র করে আপিল বিভাগে হট্টগোল হয়। আইনজীবীদের হট্টগোলের কারণে বন্ধ থাকে বিচার কাজ। আইনজীবীদের এ ধরনের আচরণ বিচার বিভাগের ইতিহাসে নজিরবিহীন বলেও ওই সময় উল্লেখ করেন প্রধান বিচারপতি।

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



রে