ঢাকা, সোমবার, ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২৮ মাঘ ১৪৩১

হুরুব ঝুঁকিতে রয়েছে সৌদি প্রবাসী বাংলাদেশীরা

বিশ্ব ডেস্ক . ২৪আপডেট নিউজ
২০১৯ নভেম্বর ২২ ০০:০৩:৫৭
হুরুব ঝুঁকিতে রয়েছে সৌদি প্রবাসী বাংলাদেশীরা

জানা গেছে, সৌদি আরব থেকে শ্রমিকদের ফিরে আসার সবচেয়ে বড় কারণ তথাকথিত ফ্রি ভিসার নামে সেখানে গিয়ে অবৈধ হয়ে পড়া। একজন শ্রমিক ৬ থেকে ৮ লাখ টাকা খরচ করে সৌদি আরবে যান। কিন্তু সেখানে গিয়ে তারা দেখতে পান, যে প্রতিষ্ঠানের চাকরি নিয়ে গেছেন, সেই বেতনে অভিবাসন খরচ উঠছে না। ফলে বাধ্য হয়ে অনেকে কর্মক্ষেত্র পরিবর্তন করে ফেলেন। পরবর্তী সময়ে নিয়োগকর্তা ওই কর্মীকে হুরুব ঘোষণা করে দিচ্ছেন।

সৌদি আরবের আইন অনুযায়ী, কোনো কর্মী ছুটি না নিয়ে কোথাও চলে গেলে নিয়োগকর্তা তাকে হুরুব বলে রিপোর্ট করেন। নিয়োগকর্তা এ রিপোর্ট ইমিগ্রেশন অফিসে গিয়ে করতে পারেন, আবার অনলাইনেও হুরুব ঘোষণা করতে পারেন। হুরুব ঘোষণা করার ২০ দিনের মধ্যে যদি ওই কর্মী কাজে ফিরে আসেন, তাহলে নিয়োগকর্তা হুরুব উঠিয়ে নিতে পারেন। আর ২০ দিনের মধ্যে না ফিরলে ওই কর্মী সৌদি আরবে অবৈধ হিসেবে বিবেচিত হন এবং জোরপূর্বক দেশে ফিরতে বাধ্য হন।

সম্প্রতি সৌদি আরব থেকে ফেরত আসা কর্মীদের অনেকেই বলছেন, বৈধ ইকামা থাকা সত্ত্বেও তাদের জোরপূর্বক ফেরত পাঠানো হচ্ছে। তারা মূলত ফিরতে বাধ্য হয়েছেন নিয়োগকর্তা কর্তৃক হুরুব ঘোষিত হওয়ার কারণে।

জেদ্দার বাংলাদেশ দূতাবাস বলছে, বাংলাদেশী শ্রমিকদের ইকামায় যে পেশা ও নিয়োগদাতার নাম উল্লেখ করা আছে, সেখানে কাজ না করে অন্য স্থানে বা অন্য কোনো পেশায় কাজ করছেন এমন প্রবাসী শ্রমিকদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিচ্ছে সৌদি সরকার, যার প্রথম ধাপ নিয়োগকর্তা কর্তৃক হুরুব ঘোষণা।

সৌদি আরব থেকে বৈধ বাংলাদেশী কর্মীদের ফেরত পাঠানোর বিষয়টি জানিয়ে গত মাসে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠায় জেদ্দার শ্রম কল্যাণ উইং। জেদ্দায় বাংলাদেশ কনস্যুলেটের শ্রমকল্যাণ উইংয়ের কাউন্সিলর আমিনুল ইসলাম স্বাক্ষরিত ওই চিঠিতে বলা হয়, সৌদি আরবের প্রচলিত শ্রম আইন অনুযায়ী কোনো প্রবাসীর বৈধ ইকামা থাকলে তাকে জোরপূর্বক স্বদেশে পাঠানোর সুযোগ নেই, যদি না তার বিরুদ্ধে অন্য কোনো অপরাধে বাধ্যতামূলক দেশে প্রত্যাবর্তনের কোনো আদেশ থাকে। কফিলের (নিয়োগকর্তা) সঙ্গে চুক্তির মেয়াদের মধ্যে কফিল কর্তৃক ইকামা নবায়ন না করারও কোনো সুযোগ নেই। কারণ ইকামা নবায়ন না করলে কফিলের বিরুদ্ধে অর্থ জরিমানার আদেশ হয়। অন্যদিকে কফিলের সঙ্গে সম্পাদিত চুক্তির মেয়াদে কোনো প্রবাসী কর্মী কফিলের অধীনে না থেকে পলাতক হলে কফিল ওই কর্মীর বিরুদ্ধে হুরুব ঘোষণা করেন।

চিঠিতে বলা হয়েছে, হুরুবপ্রাপ্তির ২০ দিনের মধ্যে কফিলের বিরুদ্ধে হুরুব বাতিলের জন্য শ্রম আদালতে সংশ্লিষ্ট প্রবাসীর মামলা করার সুযোগ আছে। তবে হুরুবপ্রাপ্তির ২০ দিন পার হলে সৌদি আইন অনুযায়ী ওই প্রবাসী অবৈধ ঘোষিত হন। সেক্ষেত্রে সৌদি আইন অনুযায়ী পুলিশ গ্রেফতার করলেই তাকে স্বদেশে পাঠিয়ে দিতে পারে। আবার চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই কফিল চাইলে তার অধীন যেকোনো কর্মীর ইকামা বাতিল করে একতরফাভাবে ফাইনাল এক্সিট দিতে পারেন। আর ফাইনাল এক্সিট পাওয়ার ৬০ দিনের মধ্যে ওই প্রবাসী কর্মীকে বাধ্যতামূলকভাবে নিজ দেশে ফেরত পাঠানো হয়।

এ প্রসঙ্গে জেদ্দায় বাংলাদেশ কনস্যুলেটের শ্রমকল্যাণ উইংয়ের কাউন্সিলর আমিনুল ইসলাম বণিক বার্তাকে জানান, সৌদি আরবে অবস্থানরত প্রত্যেক প্রবাসী বাংলাদেশী কর্মীর অধিকার রক্ষায় জেদ্দা কনস্যুলেট সজাগ রয়েছে। হুরুবপ্রাপ্ত কর্মীকে কনস্যুলেট থেকে প্রয়োজনীয় আইনি সহযোগিতা ও পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। অনেক প্রবাসী হুরুবের বিষয়ে সঠিক তথ্যের অভাবে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে আইনি প্রক্রিয়ার না গিয়ে অবৈধ হয়ে পড়ছেন। এ বিষয়ে সচেতনতা বাড়ানোর জন্য নিয়মিতই মতবিনিময় সভা, ক্যাম্প ভিজিট, ইমো, হোয়াটসঅ্যাপসহ বিভিন্ন মধ্যমে প্রবাসীদের সৌদি আইন সম্পর্কে অবহিত করা হচ্ছে।

সৌদির বাংলাদেশ দূতাবাস বলছে, গত পাঁচ বছরে ৯৪ হাজার ১২৮ জন প্রবাসী বাংলাদেশীকে আউটপাস দিয়ে দেশে ফেরত পাঠানোর ব্যবস্থা করেছে বাংলাদেশ কনস্যুলেট জেনারেল, জেদ্দা। এর মধ্যে চলতি বছর (৩০ অক্টোবর পর্যন্ত) আউটপাস ইস্যু হয়েছে ১৮ হাজার ২২০ জনের। ২০১৮ সালে এ সংখ্যা ছিল ২৬ হাজার ৭৭১, ২০১৭ সালে ১২ হাজার ৪৯৬, ২০১৬ সালে ১৪ হাজার ৫৯৩ ও ২০১৫ সালে ২২ হাজার ৪৮।

এ প্রসঙ্গে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকতা জানান, আত্মীয়-স্বজন কিংবা রিক্রুটিং এজেন্সির মাধ্যমে অনেক শ্রমিক সৌদি আরবে যান। অনেক ক্ষেত্রে রিক্রুটিং এজেন্সি সৌদি আরবের এমন একটি ছোট প্রতিষ্ঠানের চাহিদাপত্র নিয়ে আসে, যাদের আসলে প্রবাসী শ্রমিক নিয়োগের সক্ষমতা নেই। কিন্তু অসাধু রিক্রুটিং এজেন্সি ওই প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে কয়েকজন লোকের চাকরির অনুমোদন নেয়। তখন তার নামে শ্রমিকদের জন্য ভিসা ইস্যু হয়। এরপর ওই ব্যক্তির কাছ থেকে ইকামা নিয়ে শ্রমিকরা অন্য জায়গায় কাজ করে,। যারা আবার কয়েক মাসের মধ্যেই হুরুব ঘোষিত হয়ে যান।

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ



রে