ঢাকা, শনিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

দেখে নিন ঘূর্ণিঝড় বুলবুলে কোন এলাকায় কত নম্বর বিপদ সংকেত

জাতীয় ডেস্ক . ২৪আপডেট নিউজ
২০১৯ নভেম্বর ০৯ ১৬:৪৫:২৯
দেখে নিন ঘূর্ণিঝড় বুলবুলে কোন এলাকায় কত নম্বর বিপদ সংকেত

মংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরে ১০ নম্বর মহাবিপদ সঙ্কেত এবং চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দরে ৯ নম্বর মহাবিপদ সঙ্কেত দেখাতে বলা হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় আঘাতের সময় এবং তার আগে-পরে প্রবল বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। সেই সাথে ৫-৭ ফুট উঁচু জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে দেশের চর উপকূল দ্বীপাঞ্চল। উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরে যেতে বলা হয়েছে।

সবচেয়ে ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে খুলনা ও বরিশাল জেলার উপকূলীয় অঞ্চল। বুলবুলের প্রভাবে গতকাল সন্ধ্যার পর থেকে খুলনা, বরিশাল, পটুয়াখালী, পিরোজপুর, সাতক্ষীরা, চট্টগ্রাম, কক্সবাজারসহ সারাদেশে গুড়িগুড়ি বৃষ্টি শুরু হয়। উপকূলীয় এলাকায় বইছে দমকা হাওয়া। ১০ বছর পর এই প্রথম কোনও ঘূর্ণিঝড়ের বাংলাদেশ উপকূলে আছড়ে পড়ার আশংকা তৈরি হয়েছে।

শনিবার (৯ নভেম্বর) সকাল থেকে দেশের উপকূলীয় ৯ জেলায় ১০ নম্বর ‘মহাবিপদ’ সংকেত জারির পর থেকেই উপকূলবর্তী এলাকায় মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরে যেতে ব্যাপক প্রচারণা চালাচ্ছে স্থানীয় প্রশাসন। তবে এতে আশানুরূপ সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না। অনেকেই ঘরবাড়ি ছেড়ে যেতে অনীহা দেখাচ্ছেন। বেলা বাড়তে থাকায় কয়েকটি এলাকায় প্রশাসনকে বলপ্রয়োগ করে মানুষকে আশ্রয়কেন্দ্রে নিতে হচ্ছে।

ঘূর্ণিঝড় আছড়ে পড়ার ফোকাস পয়েন্টে রয়েছে খুলনা। জেলার সাতটি উপজেলায় ৩৪৯টি আশ্রয়কেন্দ্রে ২ লাখ ৩৮ হাজার ৯৫০ জন মানুষের থাকার ব্যবস্থা রয়েছে। কিন্তু সাত উপজেলার বিপদাপন্ন মানুষের সংখ্যা ৫ লাখ ১৭ হাজার ২৩৫ জন। ফলে ২ লাখ ৭৮ হাজার ২৮৫ জন মানুষ আশ্রয়হীন থাকার শঙ্কা রয়েছে। তাদের জন্য বিভিন্ন স্কুল, কলেজসহ উঁচু স্থাপনাকে অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্র করে সেখানে নিয়ে যাওয়ার জন্য জেলা প্রশাসক নির্দেশ দিয়েছেন।

ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের কারণে খুলনায় ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত জারির পরও আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে চাচ্ছেন না লোকজন। নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে বারবার মাইকিং করা হলেও শনিবার সকাল ১২টা পর্যন্ত স্বল্পসংখ্যক মানুষই আশ্রয়কেন্দ্রে এসেছেন। আশ্রয়কেন্দ্রের বেশিরভাগ অংশই ফাঁকা পড়ে আছে।

পটুয়াখালীর পায়রা বন্দরে ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত জারির পর শনিবার সকাল থেকে আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়া শুরু করেছেন লোকজন। সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে ও আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে জেলার বিভিন্ন এলাকায় মাইকিং ও প্রচারণা চালাচ্ছেন জনপ্রতিনিধি, বিভিন্ন সংগঠন ও সংস্থার স্বেচ্ছাসেবকরা। বিপদের সম্ভাবনা থাকলেও এ এলাকার কিছু মানুষ বসতভিটা ছেড়ে যেতে চাইছেন না। এ অবস্থায় প্রশাসন অনেকটা জোর করেই তাদের আশ্রয় কেন্দ্রে পাঠাচ্ছেন। ঘূণিঝড় মোকাবেলায় জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সর্বাত্মক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।

ঘূর্ণিঝড় বুলবুল এগিয়ে আসায় ভোলা জেলার সর্বত্রস্বেচ্ছাসেবকদের প্রচার-প্রচারণা ও মাইকিং চলছে। চরাঞ্চলের লোকদের কাছের আশ্রয়কেন্দ্রে নেওয়া হচ্ছে। শুরুতে অনেকে আশ্রয়কেন্দ্রে আসতে না চাইলেও ১০ নম্বর বিপদ সংকেত ঘোষণার পর আসতে শুরু করেছেন। জেলায় ৬৬৮টি আশ্রয়কেন্দ্র ও ১২ হাজার স্বেচ্ছাসেবী প্রস্তুত রয়েছেন বলে জেলা প্রশাসন জানিয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে পুরো ভোলা জেলায় হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টিপাত হচ্ছে। ভোলা সংলগ্ন মেঘনা-তেতুলয়া নদী উত্তাল, সেই সঙ্গে বেড়েছে পানির উচ্চতা।

বরিশালে যারা আশ্রয় কেন্দ্রে যেতে চাচ্ছেন না বিভাগীয় কমিশনারের নির্দেশে তাদের জোর করেই প্রশাসন আশ্রয় কেন্দ্রে পাঠাচ্ছে। । ঘূর্ণিঝড় বুলবুল মোকাবিলায় শনিবার বেলা সাড়ে ১২টায় বরিশাল সার্কিট হাউজে বিভাগীয় পর্যায়ের জরুরি সভায় এই নির্দেশ দেন তিনি। এ সময় বরিশাল, পটুয়াখালী, বরগুনা, ভোলা, পিরোজপুর, ঝালকাঠিতে দুর্যোগকালীন বাসাবাড়িতে অবস্থানরতদের সাইক্লোন শেল্টারসহ বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আশ্রয় দিতে বলা হয়।

এদিকে আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে উপকূলের কাছাকাছি অবস্থানরত ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুল’ মোংলা বন্দরের ২৮০ কিলোমিটার ও পায়রা বন্দরের ৩১৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থান করছে। অন্যদিকে চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ঘূর্ণিঝড়টির অবস্থান ৪৭৫ কিলোমিটার পশ্চিম-দক্ষিণপশ্চিমে এবং কক্সবাজার থেকে ৪৭০ কিলোমিটার পশ্চিম-দক্ষিণপশ্চিমে।

শনিবার (৯ নভেম্বর) দুপুরে আবহাওয়া অধিদপ্তরের বিশেষ বুলেটিনে) এ তথ্য জানানো হয়েছে।

বুলেটিনে বলা হয়, দেশের ৯ নদীবন্দরে ৪ নম্বর সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। এগুলো হলো- খুলনা, ফরিদপুর, মাদারীপুর, বরিশাল, পটুয়াখালী, নোয়াখালী, চাঁদপুর, কুমিল্লা ও চট্টগ্রাম নদীবন্দর।

এতে আরও বলা হয়, মোংলা ও পায়রা বন্দর এবং উপকূলীয় জেলা ভোলা, বরগুনা, পটুয়াখালী, বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বাগেরহাট, খুলনা ও সাতক্ষীরাসহ এর আশপাশের দ্বীপ এবং চরাঞ্চলগুলোতে ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত বহাল রাখতে বলা হয়েছে।

অন্যদিকে চট্টগ্রাম বন্দর এবং উপকূলীয় জেলা চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী ও চাঁদপুরসহ এর আশপাশের দ্বীপ এবং চরাঞ্চলগুলোতে ৯ নম্বর মহাবিপদ সংকেত বহাল রাখতে বলা হয়েছে। এছাড়া ৪ নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সংকেত বহাল রয়েছে কক্সবাজার সমুদ্রবন্দরে।

বুলেটিনে আরও জানানো হয়, শনিবার সন্ধ্যা নাগাদ ভারতের পশ্চিমবঙ্গ-খুলনা উপকূল (সুন্দরবনের কাছ দিয়ে) অতিক্রম করতে পারে ঘূর্ণিঝড়টি। এটি অতিক্রমকালে ভারী বর্ষণ হতে পারে চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, চাঁদপুর, ভোলা, বরগুনা, পটুয়াখালী, বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বাগেরহাট, খুলনা ও সাতক্ষীরাসহ এর আশপাশের দ্বীপ ও চরাঞ্চলগুলোতে। সেসময় বাতাসের গতিবেগ থাকতে পারে ঘণ্টায় ১৩০ কিলোমিটার। যা সর্বোচ্চ ১৫০ কিলোমিটার পর্যন্তও হতে পারে।

একইসঙ্গে ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে এসব এলাকার নিম্বাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৫-৭ ফুটের অধিক উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে। উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত সব মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ দেওয়ার আগ পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে।

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



রে