ঢাকা, সোমবার, ১৮ নভেম্বর ২০২৪, ৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

সৌদি থেকে ফেরত আসছে বাংলাদেশি শ্রমিক, চিন্তিত দূতাবাস

বিশ্ব ডেস্ক . ২৪আপডেট নিউজ
২০১৯ অক্টোবর ২৯ ০০:৪১:৪১
সৌদি থেকে ফেরত আসছে বাংলাদেশি শ্রমিক, চিন্তিত দূতাবাস

সৌদি আরবের বাংলাদেশ দূতাবাস বলছে, বিষয়টি নিয়ে কর্মকর্তারা চিন্তিত এবং সৌদি সরকারের সঙ্গে এ নিয়ে তারা কথা বলছেন। সৌদি আরব থেকে শুক্রবার ২০০জন প্রবাসী শ্রমিককে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে। পরদিন শনিবার ফেরত পাঠানো হয়েছে আরো ১৬০ জনকে।

বাংলাদেশের প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সংস্থা ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের সহযোগিতায় কেবল অক্টোবর মাসেই ৮০৪ জন শ্রমিক দেশে ফেরত এসেছেন। খবর বিবিসি বাংলার।ফেরত আসাদের একজন সিরাজগঞ্জের শহীদুল ইসলাম। যিনি এ বছরের জানুয়ারিতে জেদ্দায় একটি শিল্প প্রতিষ্ঠানের কর্মী হিসেবে নিয়োগপত্র নিয়ে গিয়েছিলেন। এখনো তার ভিসার মেয়াদ আছে আরো তিন মাস।

তিনি বলেন, ‘আমি মার্কেটে গেছিলাম, সেখান থেকে বের হবার পরই পুলিশ আমাকে গ্রেপ্তার করে। সাতদিন সেখানকার জেলে থাকার পর দেশে ফেরত পাঠিয়ে দিয়েছে। কোন কথা শুনে নাই। কিন্তু আমার আকামার মেয়াদ আছে সামনের (২০২০ সালের) জানুয়ারির ৩০ তারিখ পর্যন্ত।’

শুক্রবারে ফেরত আসা চট্টগ্রামের আব্দুল্লাহ আল নোমানের কাজের বৈধ অনুমোদন বা আকামা শেষ হতে আরো কয়েক মাস বাকি।তার মা ফেরদৌস আরা বেগম বলেন, আকামার মেয়াদ শেষ হবার আগেই তার ছেলেকে কপর্দকশূন্য অবস্থায় দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে। তিনি বলেন, আমার ছেলের আকামার মেয়াদ শেষ হতে সময় বাকি আছে। কিন্তু তার মালিক কাগজপত্র বৈধ করে দেবার কথা বলে ঘুরাচ্ছে, করে দিচ্ছে না। এদিকে ছেলে হঠাৎ করে গ্রেপ্তার হয়ে চারদিন জেল খেটে দেশে ফেরত আসছে, কিছু নিয়া আসতে পারে নাই।

বসরকারি সংস্থা ব্র্যাক বলছে, ২০১৯ সালে সৌদি আরব থেকে ১৮ হাজার শ্রমিক দেশে ফিরেছেন, এদের মধ্যে এক হাজারের বেশি নারী শ্রমিকও রয়েছেন।কী বলছে সৌদি আরবে বাংলাদেশ দূতাবাস

সৌদি আরবে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত গোলাম মসিহ বলেন, বিষয়টি নিয়ে তারা চিন্তিত এবং দেশটির সরকারের সঙ্গে এ নিয়ে তারা কথা বলছেন।তিনি বলেন, যাদের ফেরত পাঠানো হয়েছে, তারা যেসব কোম্পানিতে কাজ করতেন সেসব প্রতিষ্ঠানের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা দূতাবাসকে জানিয়েছে এদের অনেকে আকামার আইন ভেঙেছেন, অর্থাৎ এক প্রতিষ্ঠানে কাজের অনুমতিপত্র নিয়ে অন্য প্রতিষ্ঠানে কাজ করেছেন। আবার কেউ নিয়োগকৃত প্রতিষ্ঠান থেকে পালিয়ে অন্যত্র চলে গেছেন। বিষয়টি নিয়ে আমরা চিন্তিত এবং উদ্বিগ্ন। কিন্তু এর আগে আমরা বেশ কয়েকবারই সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ করে দেখেছি, সৌদি আরবের আইনে পরিষ্কার করে বলা আছে সৌদি আরবে যে ভিসাতে আসবেন ঠিক সেই প্রতিষ্ঠানে কাজ করতে হবে। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই নিজের কাজের বাইরে অন্য জায়গায় কাজ করছে বা অবস্থান করছে। সেসব তারা প্রমাণসহ আমাদের দেখিয়েছে।

ঢাকায় পররাষ্ট্র ও প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনা করে এখন এ সমস্যা নিরসনের চেষ্টা করা হচ্ছে বলেও জানিয়েছেন তিনি।এদিকে, ফেরত আসা শ্রমিকদের কয়েকজন অভিযোগ করেছেন, তাদের যে কাজের কথা বলে নেয়া হয়েছিল, তার চেয়ে বেশি কাজ করানো হত। কারো অভিযোগ তাদের নিয়মিত বেতন দেয়া হতো না।

নির্যাতনের অভিযোগ

শ্রমিকদের ওপর নির্যাতন ও নিপীড়ন চালানোর অভিযোগও শোনা গেছে এর আগে। সে বিষয়ে গোলাম মসিহ বলেন, এসব সমস্যার ক্ষেত্রে একজন শ্রমিকদের উচিত সবার আগে বিষয়টি দূতাবাসকে জানানো। সৌদি আরবের শ্রম আইন খুবই শক্ত, নিয়োগদাতা এবং কর্মী উভয়ের জন্যই। ধরুন, নির্ধারিত সময়ের বাইরে যদি কাজ করানো হয়, সেজন্য আইন আছে। আমাদের সাথে যোগাযোগ করলে আমরা পদক্ষেপ নেই, লেবার কোর্টে যাই। তাদের ফাইন (জরিমানা) করা হয়, এবং ওদের জেলও হয়। সমস্যা হলে আমাদের জানাতে হবে, কিন্তু তা না করে এক কোম্পানি ছেড়ে অন্য কোম্পানিতে যাওয়াটা তো পুরোপুরি বেআইনি।

সৌদি আরবে কাজ করতে যাবার আগে একজন শ্রমিককে যদি সংশ্লিষ্ট দেশের আইন সম্পর্কে ঠিকমত জানানোর ব্যবস্থা করা যায়, তাহলে এ সমস্যা অনেকটাই সমাধান করা যাবে বলে তিনি মনে করেন।ব্র্যাকের অভিবাসন কর্মসূচির প্রধান শরিফুল হাসান বলেন, বিদেশে যাবার আগে অনেক শ্রমিকই প্রতারণার শিকার হন। এক প্রতিষ্ঠান ছেড়ে অন্য প্রতিষ্ঠানে যাওয়া কিংবা বৈধ কাগজপত্রের মেয়াদ শেষের পরেও সেদেশে থেকে যাওয়ার চেষ্টা—এগুলো প্রতারণার শিকার হবার কারণেও ঘটে বলে তিনি মনে করেন।

তিনি উদাহরণ দিয়ে বলেন, অনেক শ্রমিককে বলা হয়েছে, ফ্রি ভিসার কথা, মানে তারা যেখানে খুশি কাজ করতে পারবে। কিন্তু সৌদি আরবে তো আইন হচ্ছে যে যে প্রতিষ্ঠানে চাকরি নিয়ে গেছে, তাকে সেখানেই কাজ করতে হবে। ফলে যে জানতো না সে কোন কারণে এক নিয়োগকর্তার বদলে আরেক জায়গায় কাজ করতে গিয়ে ধরা পড়ে ফেরত আসে। অনেককে যাবার কয়েক মাসের মধ্যেই ফিরতে হচ্ছে, খরচের টাকাও তুলতে পারেননি তারা। আরেকটা কারণ হলো, অনেক বেশি অর্থ ব্যয় করে গেছে একজন, কিন্তু তার মেয়াদ হয়ত দুই বা তিন বছর। এই সময়ে সে যে টাকা খরচ করে গেছে, তা তুলতে পারে না। ফলে আকামার মেয়াদ শেষেও সে থেকে যাবার চেষ্টা করে। এভাবেও সে ঐ দেশে গ্রেপ্তার হয়, পরে দেশে ফেরত পাঠানো হয় তাকে।

শরিফুল হাসান বলেন, এক্ষেত্রে সরকারকে উদ্যোগ নিয়ে এসব অনিয়ম বন্ধ করতে হবে।বাংলাদেশি প্রবাসী শ্রমিকদের বড় অংশটি কাজ করেন মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সৌদি আরবে। কিন্তু শ্রমিক ফেরত পাঠানোর ক্ষেত্রেও সৌদি আরব এ বছর শীর্ষে রয়েছে। এ বছর বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে নানা কারণে মোট ৩৫ হাজার শ্রমিককে দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে, যার অর্ধেকের বেশি ফেরত এসেছে সৌদি আরব থেকে

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ



রে