ঢাকা, শনিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

কারা ডিআইজি বজলুর রশীদ গ্রেফতার: ৩ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদের মামলা

জাতীয় ডেস্ক . ২৪আপডেট নিউজ
২০১৯ অক্টোবর ২১ ০১:১৫:৫৯
কারা ডিআইজি বজলুর রশীদ গ্রেফতার: ৩ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদের মামলা

এর আগে তার বিরুদ্ধে দুদকের ঢাকা জেলা সমন্বিত কার্যালয়ে মামলা দায়ের করেন দুদকের উপপরিচালক মো. সালাহউদ্দিন। বজলুর রশীদকে আদালতে হাজির করা হলে তার জামিন আবেদন নাকচ করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন বিচারক।

কুরিয়ার সার্ভিসে কোটি কোটি টাকা ঘুষ নেয়া ডিআইজি প্রিজন বজলুর রশীদের বিরুদ্ধে ৬ অক্টোবর দৈনিক যুগান্তরে রিপোর্ট প্রকাশের পর অনুসন্ধানে নামে দুদক। এতে তার বিরুদ্ধে ঘুষ গ্রহণের মাধ্যমে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ পাওয়া যায়। এর পরিপ্রেক্ষিতেই মামলা দায়ের করা হয়। জানা গেছে, সরকারি কোনো কর্মকর্তাকে সম্পদের নোটিশ না দিয়ে দুদকের দায়ের করা এটাই প্রথম মামলা। দুদক সাধারণত অনুসন্ধানকালে যে কাউকে জিজ্ঞাসাবাদ করে।

পরে সম্পদের নোটিশ দেয়। দুদকের অনুসন্ধানের তথ্য ও যাকে নোটিশ দেয়া হয়েছে তার সম্পদ বিবরণী যাচাই করে অসঙ্গতি পেলে বা সম্পদ গোপন করলে দুদক মামলা করে। তবে এই নোটিশ জারির বিষয়ে কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। দুদকের সংশোধিত বিধিমালা ২০১৯ অনুযায়ী যে কারও বিরুদ্ধে দুর্নীতির সুনির্দিষ্ট তথ্য প্রমাণ সাপেক্ষে তার বিরুদ্ধে সরাসরি মামলা করা যাবে।

রোববার বেলা ১১টা থেকে বজলুর রশীদ ও তার স্ত্রী রাজ্জাকুন নাহারকে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে দুদক। অবৈধভাবে উপার্জিত অর্থ কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে পাঠানোর অভিযোগে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। সেখানেই তার অবৈধ সম্পদ অর্জনের বিষয়টি কর্মকর্তাদের নজরে আসে। জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে প্রশ্নের জবাব দিতে ব্যর্থ হন বজলুর রশীদ। বজলুর রশীদকে গ্রেফতার করা হলেও জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তার স্ত্রী রাজ্জাকুনকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে।

দুদক সচিব মুহাম্মদ দিলোয়ার বখত সাংবাদিকদের জানান, ঘুষ লেনদেনের অভিযোগে সেগুনবাগিচার কার্যালয়ে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে রোববার দুপুরে তাকে গ্রেফতার দেখানো হয়। তিনি বলেন, অবৈধ সম্পদের অর্থ থেকে রাজধানীর সিদ্ধেশ্বরীর রূপায়ন বিল্ডার্সে তিন কোটি আট লাখ টাকার একটি ফ্ল্যাট আছে বজলুর রশীদের নামে। মামলায় বলা হয়, রূপায়ন হাউজিং এস্টেট কর্তৃক ৫৫/১ (পুরাতন), ৫৬/৫৭ (নতুন), সিদ্ধেশ্বরী রোড, রমনায় বাস্তবায়নাধীন রূপায়ন স্বপ্ন নিলয় প্রকল্প ২নং ভবনের ২য় তলায় ২ হাজার ৯৮১ বর্গফুট আয়তনের অ্যাপার্টমেন্ট ক্রয় করেন বজলুর রশীদ। এর জন্য ২০১৮ সালের ২৪ এপ্রিল রূপায়ন হাউজিং এস্টেটের সঙ্গে চুক্তিনামা সম্পাদন করেন। চুক্তিনামা অনুযায়ী অ্যাপার্টমেন্টটির মূল্য মোট ৩ কোটি ৯ লাখ টাকা। তিনি ইতিমধ্যে রূপায়ন হাউজিং এস্টেটকে ওই টাকাও পরিশোধ করে দিয়েছেন।

অনুসন্ধানকালে ওই অ্যাপার্টমেন্টের ক্রয় মূল্য বাবদ মো. বজলুর রশীদের পরিশোধিত ৩ কোটি ৮ লাখ টাকার সপক্ষে কোনো বৈধ উৎস প্রদর্শন করতে পারেননি বলেও মামলায় উল্লেখ করা হয়। এমনকি তিনি বর্ণিত অ্যাপার্টমেন্টটি ক্রয় সংক্রান্ত কোনো তথ্য তার আয়কর নথিতে প্রদর্শন করেননি।

কারা ক্যাডারের ১৯৯৩ ব্যাচের কর্মকর্তা বজলুর রশীদ এখন ঢাকায় কারা সদর দফতরে দায়িত্ব পালন করছেন। ডিআইজি হিসেবে এর আগে সর্বশেষ রাজশাহীতে ছিলেন।

জেল সুপার পদে বরগুনায় কর্মজীবন শুরু করে সিরাজগঞ্জ, কুষ্টিয়া, কক্সবাজার ও খাগড়াছড়ি এবং জ্যেষ্ঠ জেল সুপার হিসেবে চট্টগ্রাম, কুমিল্লা ও যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারে কর্মরত ছিলেন তিনি।

৬ অক্টোবর যুগান্তরে বজলুর রশীদের ঘুষ-দুর্নীতি সংক্রান্ত রিপোর্ট প্রকাশের পর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও কারা অধিদফতরে পৃথক বৈঠক হয়। এরপর বিকালে আইজি প্রিজন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোস্তফা কামাল পাশা বজলুর রশীদকে শোকজ করেন। যুগান্তরে প্রকাশিত প্রতিবেদনের বিষয়ে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তাকে জবাব দিতে বলা হয়।

দুদকের মামলায় বলা হয়, ঘুষের টাকা লেনদেন করতে বজলুর রশীদ নিজের ঠিকানা গোপন করে স্ত্রীর নামে মোবাইল ফোনের সিম কেনেন। সরাসরি নয়, ঘুষ চ্যানেলের মাধ্যমে তিনি টাকার আদান-প্রদান করতেন। এসএ পরিবহনের মাধ্যমে প্রায় কোটি টাকা কুরিয়ার করার ২৪টি রসিদের কথা উল্লেখ করা হয়েছে দুদকের মামলায়।

মামলায় বলা হয়, বজলুর রশীদ অসাধু উপায়ে জ্ঞাত আয়ের উৎসের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণভাবে ৩ কোটি ৮ লাখ টাকা মূল্যের সম্পদের মালিকানা অর্জন করে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪-এর ২৭(১) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন।

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



রে