বাংলাদেশে ২০টি রাডার বসিয়ে বঙ্গোপসাগরে নজরদারি বাড়াচ্ছে ভারত
বাংলাদেশে নতুন এই উপকূলীয় নজরদারি রাডার সিস্টেমের সহায়তা পাবে ভারত। সমুদ্রপথ পাড়ি দিয়ে দেশটির পূর্বাঞ্চলীয় উপকূল হয়ে ভারতে সন্ত্রাসীদের হামলা তৎপরতা শনাক্ত করতে পারবে এই রাডার। এমনকি প্রতিবেশি চীনের সমুদ্র অঞ্চলেও গভীর পর্যবেক্ষণ চালাতে পারবে নয়াদিল্লি; যেখানে গত কয়েক দশক ধরেই চীনের পিপলস লিবারেশন আর্মির যুদ্ধজাহাজ প্রায়ই মোতায়েন করা হয়।
শনিবার নয়াদিল্লিতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে বৈঠক করেছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বৈঠকে দুই দেশের মাঝে সাতটি চুক্তি সই ও ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে তিনটি প্রকল্পের উদ্বোধন করা হয়। এর মধ্যে রয়েছে উপকূলে সার্বক্ষণিক মনিটরিং ব্যবস্থার (কোয়েস্টাল সারভাইল্যান্স সিস্টেম-সিএসএস) বিষয়ে সমঝোতা স্মারক।
চুক্তি অনুযায়ী, বঙ্গোপসাগরে ভারতের নজরদারির অংশ হিসেবে বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলে ২০টি রাডার সিস্টেমের একটি নেটওয়ার্ক বসাবে ভারত। ডেকান হেরাল্ডের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারত মহাসাগরের অন্যান্য দেশগুলোতেও উপকূলীয় নজরদারির এই নেটওয়ার্ক স্থাপন করছে নয়াদিল্লি। এই তালিকায় রয়েছে মৌরিশাস, শ্রীলঙ্কা, সিচিলিস ও মালদ্বীপ।
এছাড়া চট্টগ্রাম ও মোংলা সমুদ্র বন্দর দিয়ে ভারতীয় পণ্য পরিবহনেও একটি স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউর (এসওপি) সই হয়েছে; এই চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশের এ দুই বন্দর ব্যবহার করে দেশটির পূর্বাঞ্চল ও উত্তরপূর্বাঞ্চলে অবাধে পণ্য পরিবহণ করতে পারবে ভারত।
বৈঠকে এ দুই নেতা আরো বেশ কিছু কানেক্টিভিটি প্রকল্পের ব্যাপারে আলোচনা করেছেন। এই কানেক্টিভিটি শুধুমাত্র ভারত-বাংলাদেশের সঙ্গে স্থাপন নয়; বরং প্রতিবেশি নেপাল এবং ভূটানকে সংশ্লিষ্ট করা নিয়েও আলোচনা হয়। ২০১৫ সালের ১৫ জুন স্বাক্ষরিত বাংলাদেশ-ভূটান-ভারত-নেপাল (বিবিআইএন) মোটর যান চুক্তির প্রস্তাবনা বাস্তবায়নের ব্যাপারে যৌথ উদ্যোগ নিতে দুই দেশ একমত হয়েছে। ভূটানের জাতীয় পরিষদ এই চুক্তির বিরোধীতা করায় এখনো সেটি কার্যকর করা যায়নি।
তবে চার দেশের মোটর যান চুক্তি বাস্তবায়ন করা না গেলে বিকল্প উপায়ের ব্যাপারে কথা বলেছেন মোদি-হাসিনা। বিকল্প হিসেবে চার দেশকে সংযুক্ত করার পরিকল্পনা বাদ দিয়ে নতুন করে ভারত-বাংলাদেশ মোটর যান চুক্তি শিগগিরই বাস্তবায়ন করা হতে পারে।
শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠকের পর নরেন্দ্র মোদি বলেছেন, বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ককে সর্বাধিক অগ্রাধিকার দেয় ভারত। বাংলাদেশ ও ভারতের ক্রমবর্ধমান সহযোগিতা পুরো বিশ্বের জন্য প্রতিবেশীর সম্পর্কের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।
বৈঠকের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, গত এক দশকে আমাদের দুই দেশের মধ্যে বিভিন্ন প্রথাগত সহযোগিতা বৃদ্ধি পেয়েছে। এছাড়া ব্লু ইকোনমি, মেরিটাইম, পরমাণু শক্তির শান্তিপূর্ণ ব্যবহার, মহাকাশ গবেষণা, ইন্টারনেট ব্যান্ডউইডথ রফতানি ও সাইবার সিকিউরিটিসহ বিভিন্ন খাতে উভয় দেশ সহযোগিতা সম্প্রসারিত করেছে।
নয়াদিল্লি উপকূলে সার্বক্ষণিক মনিটরিং ব্যবস্থার (কোয়েস্টাল সারভাইল্যান্স সিস্টেম-সিএসএস) জন্য বাংলাদেশের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষরের প্রস্তাব করে ২০১৫ সালে। কিন্তু নয়াদল্লির এই প্রস্তাবে রাজি হতে সতর্কতা অবলম্বন করে বাংলাদেশ; কারণ ভারতের সঙ্গে এই চুক্তি স্বাক্ষরিত হলে বেইজিংয়ের সঙ্গে সম্পর্কে জটিলতা তৈরির শঙ্কা নিয়ে দুশ্চিন্তায় ছিল ঢাকা।
ভারতের স্থাপিত এসব রাডার সিস্টেম বাংলাদেশের বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের নিরাপত্তায় কাজ করবে বলে বলা হচ্ছে। তবে এই নেটওয়ার্ক ভারতের জন্য কৌশলগত সম্পদ এবং ভারতীয় নৌবাহিনীর জন্য হবে সহায়ক। ভারতীয় নৌবাহিনী দেশটির জাতীয় নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্বের প্রতি যেকোনো ধরনের সামুদ্রিক সন্ত্রাসী হুমকি সনাক্তের পর তার জবাব দিতে সক্ষম হবে।
গত মাসে ভারতীয় নৌবাহিনীর গোয়েন্দা বিমান ভারত মহাসাগরের আশপাশে চাইনিজ লিবারেশন আর্মি নেভির (পিএলএএন) সাতটি যুদ্ধজাহাজ মোতায়েন রয়েছে বলে সনাক্ত করে। গত বছর ভারত মহাসাগরে পিএলএএনের টাইপ ০৩৯এ ইউয়ান ক্লাসের একটি সাবমেরিন সনাক্ত করে ভারতীয় নৌবাহিনী।
ভূটানের পশ্চিমাঞ্চলের বিতর্কিত ডোকলাম সীমান্তে ২০১৭ সালের জুন থেকে আগস্ট পর্যন্ত ভারত এবং চীনের সেনাবাহিনীর মধ্যে দীর্ঘ অচলাবস্থা তৈরি হয়। ওই সময় দুই দেশের সামরিক বাহিনী ডোকলামে মুখোমুখি অবস্থানে যায়। এ ঘটনার পর প্রথমবারের মতো ভারত মহাসাগরে পিএলএএনের সাবমেরিন সনাক্ত করে ভারত। সেই সময় দুই দেশের সেনাবাহিনীর মাঝে ৭২ দিনের অচলাবস্থা দেখা দেয়; এই সময় পর্যন্ত ভারত মহাসাগরে চীনা নৌবাহিনী ১৪টি যুদ্ধজাহাজ মোতায়েন রাখে।
চীনের পিপলস লিবারেশন আর্মি নেভি ভারত মহাসাগরে প্রথমবারের মতো যুদ্ধজাহাজ মোতায়েন করে ২০১৩ সালে। সেই সময় অ্যাডেন উপসাগরে জলদস্যুবিরোধী অপারেশনের অংশ হিসেবে এসব যুদ্ধজাহাজ মোতায়েন রয়েছে।ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চল ও ভারতের আশপাশে চীন কৌশলগত স্ট্রিং অব পার্লস সম্পদ গড়ে তোলায় নয়াদিল্লি উদ্বিগ্ন।
গত বছরের ডিসেম্বরে টানা তৃতীয়বারের মতো বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হওয়ার পর বৃহস্পতিবার চারদিনের সফরে ভারতে যান শেখ হাসিনা। চলতি বছরের এপ্রিল-মে মাসে অনুষ্ঠিত ভারতের নির্বাচনে দেশটির ক্ষমতায় ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) ভূমিধস জয়ের পর প্রধানমন্ত্রী মোদির সঙ্গে শেখ হাসিনার এটি দ্বিতীয় বৈঠক। গত ২৭ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৭৪তম অধিবেশনের ফাঁকে ভারতের এই প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে বসেছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
সূত্র : ডেকান হেরাল্ড, টিএনএন।
আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ
- বিপিএল মাতিয়ে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির স্কোয়াডে আসছেন দুই জন
- এক নজরে দেখেনিন কে কত টাকা পুরস্কার পেলেন
- ১৪৪ ধারা জারি
- সমন্বয়ক সারজিস আলমের পরিবারে শোকের ছায়া
- এক ম্যাচের জন্য যত টাকা নিলেন রাসেল-জেমস ভিন্স-টিম ডেভিড
- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় আহত সারজিস আলম
- বিপিএলের ৮ ম্যাচে ফিক্সিং সন্দেহ, ফিক্সিংয়ে সন্দেহভাজন ক্রিকেটারদের তালিকা প্রকাশ
- ফরচুন বরিশালের একাদশ
- ধানমন্ডির ৩২ নম্বর ও দেশজুড়ে ভাঙচুরের পর আজহারী স্ট্যাটাস
- বিপিএল ফাইনাল ম্যাচের সময় সূচি
- ফাইনাল ম্যাচের জন্য ফরচুন বরিশালের একাদশ
- বাড়লো আজকের সৌদি রিয়াল রেট
- গণধোলাইয়ের পর পুলিশের হাতে সোপর্দ সাকিব
- কোয়ালিফায়ার ম্যাচের জন্য খুলনা টাইগার্সের সম্ভাব্য সেরা একাদশ
- ঢাকার মোহাম্মদপুর এলাকা থেকে ডিপজল গ্রেপ্তার