ঢাকা, সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১

যে অপরাধে বাবাকে খুন করেছিল তিন বোন

বিশ্ব ডেস্ক . ২৪আপডেট নিউজ
২০১৯ আগস্ট ২২ ১৭:৪৪:০৭
যে অপরাধে বাবাকে খুন করেছিল তিন বোন

রাশিয়ার পাশাপাশি গোটা বিশ্বে আলোড়ন তোলে। অনেকেরই ধারণা ছিল না, ঠিক কি কারণে তিন বোন মিলে বাবাকে খু’ন করেছিল। শুরু হয় তদন্ত। ধীরে ধীরে বেরিয়ে আসে খু’নের আসল কারণ। খবর : বিবিসি বাংলার।

হ’ত্যাকাণ্ডের সময় তিন মেয়ে ক্রিস্টিনা, অ্যাঞ্জেলিনা এবং মারিয়ার বয়স ছিল যথাক্রমে ১৯, ১৮ ও ১৭ বছর। তিন বোন পুলিশকে জানায়, ঘটনার দিন তাদের বাবা তিন বোনকে একে একে তার ঘরে ডেকে নেন। এরপর ঘর পরিষ্কার না করায় প্রচণ্ড বকাঝকা করেন এবং তাদের মুখে পেপার গ্যাসের স্প্রে করেন।

এই ঘটনার কিছুক্ষণ পর তিন বোন ঘুমন্ত বাবার ওপর ছু’রি, হাতুড়ি এবং পেপার স্প্রে নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে। তিনজন মিলে বাবার মাথা, ঘাড় ও বুকে কমপক্ষে ৩০ টি আঘাত করে তাকে হ’ত্যা করে। এরপরই তারা পুলিশকে খবর দেয়।

শুধুমাত্র বকাঝকা করার জন্য বাবাকে এভাবে কেউ হ’ত্যা করতে পারে এটা মানতে পারছিলেন না তদন্তকারী কর্মকর্তারা। এরপরই তারা তদন্তে নামেন। তদন্তে তারা ওই পরিবারের পরিবারের পারিবারিক সহিংসতার দীর্ঘ ইতিহাস জানতে পারেন। তাদের তদন্তে ওঠে আসে টানা তিন বছর ধরে মেয়েদের বাবা কিভাবে তাদেরকে মা’রধর করতেন, কয়েদির মতো আটকে রাখতেন এবং নিয়মিত তাদের ওপর যৌ’ন অ’ত্যাচার চালাতেন সেই সব ঘটনা।

হ’ত্যাকাণ্ডের পেছনের কারণ জানার পর রাশিয়ার বেশিরভাগ মানুষই ওই তিন বোনের পক্ষ নেন। মামলাটি দ্রুত আলোচিত হয়ে ওঠে রাশিয়ায়। মানবাধিকার কর্মীরা সোচ্চার হয়ে ওঠেন। তারা বলেন, তিন বোন অপরাধী নয়, তারা ঘটনার শিকার মাত্র। কারণ অ’ত্যাচারী বাবার যৌ’ন নি’র্যাতনের হাত থেকে রক্ষা পেতেই তারা এমন ঘটনা ঘটিয়েছে। তাদের মুক্তির জন্য ওই সময় অনলাইনে ৩ লাখেরও বেশি মানুষ স্বাক্ষর করেন।

এমনিতে রাশিয়ায় পারিবারিক সহিংসতা রোধে কোন আইন নেই বলে জানা গেছে। ২০১৭ সালে অবশ্য একটা আইন করা হয়। সেখানে বলা হয়, পরিবারের সদস্যকে মা’রধর করেছেন কিন্তু তাদের হাসপাতালে যাওয়ার মতো খারাপ অবস্থা করেননি- এমন অপরাধ করলে জরিমানা বা সর্বোচ্চ দুই সপ্তাহ শাস্তি হতে পারে।

পারিবারিক সহিংসতাকে রাশিয়ায় পারিবারিক বিষয় ভাবা হয়। এ কারণে পুলিশ সেখানে কোনও হস্তক্ষেপ করে না।

ওই তিন মেয়ের মা অওরেলিয়া ডানডুকও নিহত মিখাইলের হাতে নি’র্যাতিত হতেন বলেন জানা গেছে। তিনি কয়েক বছর আগে স্বামীর বিরুদ্ধে মামলাও করতে গিয়েছিলেন্। কিন্তু কোনও সাক্ষ্য প্রমাণ না থাকায় পুলিশ ওই সময় তাকে কোনও সহায়তা করেনি।

নিহত মিখাইল মা’রধর করে তার স্ত্রী অওরেলিয়াকে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছিলেন। ওই সময় তিনি মেয়েদের সঙ্গে নিতে চাইলেও মিখাইল দেননি। তিন বোন মিলে যখন তাদের বাবাকে হ’ত্যা করে তখন মেয়েদের মা তাদের সঙ্গে থাকতেন না। মা চলে যাওয়ার পর তার সঙ্গে তিন বোনকে যোগাযোগ করতেও নিষেধ করেছিলেন তাদের বাবা।

আলোচিত এই হ’ত্যাকাণ্ডটির মামলা খুব ধীরগতিতে চলছে। হ’ত্যাকাণ্ডের দায়ে অভিযুক্ত তিন বোনকে কারাগারে থাকতে হয় না। কিন্তু তারা কড়া নজরদাড়িতে থাকেন। তারা কোনও সাংবাদিক বা অন্য কারও সঙ্গে কথা বলতে পারেন না। মনোবিজ্ঞানীদের তত্ত্বাবধানে তিন বোনের চিকিৎসাও চলছে।

মামলাটি নিয়ে এখনও তর্ক-বিতর্ক চলছেই। বাদীপক্ষের আইনজীবীরা জোর দিয়ে বলছেন, মিখাইল হ’ত্যাকাণ্ড পূর্ব পরিকল্পিত। কারণ তিনি ঘুমিয়ে ছিলেন এবং তিন বোন ছু’রি হাতে তার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। তারা যুক্তি দেখিয়ে বলেছিলেন, তিন বোনের উদ্দেশ্যই ছিল প্রতিশোধ নেওয়া।

অন্যদিকে আসামী পক্ষের আইনজীবীরা বলছেন, নিজেদের বাঁচাতেই তারা এ ঘটনা ঘটিয়েছে। রাশিয়ার আইনে নিজেকে বাঁচাতে তাৎক্ষণিক ‘আত্মরক্ষা’ আইন ছাড়াও ধারাবাহিকভাবে নি’র্যাতনের ক্ষেত্রে ‘আত্মরক্ষা’ আইন প্রচলিত আছে।

আসামী পক্ষের আইনজীবীরা বলেছেন, তিন বোন দীর্ঘদিন ধরে নি’র্যাতনের শিকার হয়েছে। এ কারণে তাদের মুক্তি দেওয়া হোক। তারা আশা করছেন, আত্মরক্ষা আইনে তিনবোন শিগগিরই মুক্তি পাবে।

অন্যদিকে তিন বোনের বিরুদ্ধে আনা হ’ত্যাকাণ্ডের অভিযোগ যদি প্রমাণিত হয় তাহলে তাদের সর্বোচ্চ ২০ বছরের সাজা হতে পারে ।

দেশটির সাধারণ মানুষ ও মানবাধিকার কর্মীদের অনেকেই চাইছেন পারিবারিক সহিংসতা রোধে বিদ্যমান আইনটির পরিবর্তন হোক।

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ



রে