ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪, ১ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১

‘আহা মেয়েটি বেশ মেধাবী আর সুন্দর ছিল’

জাতীয় ডেস্ক . ২৪আপডেট নিউজ
২০১৯ আগস্ট ২২ ০০:৪৭:০৩
‘আহা মেয়েটি বেশ মেধাবী আর সুন্দর ছিল’

এসময় আসমা খাতুনের পরিবারসহ গোটা শিংপাড়া এলাকায় শো**কের ছায়া নেমে আসে। পরিবারের সদস্য, আত্মীয় স্বজন ও প্রতিবেশীদের মধ্যে কান্নার রোল পড়ে যায়।

নি**হত আসমা খাতুন পঞ্চগড় জেলা সদরের শিংপাড়া গ্রামের দিনমুজুর আব্দুর রাজ্জাকের মেয়ে। এবার স্থানীয় খানবাহাদুর মাদরাসা থেকে এবার জিপিএ-৪.৩ পেয়ে দাখিল পাস করেছিল। তিন বোন এবং এক ভাইয়ের মধ্যে সে দ্বিতীয়।পরিবারের আর্থিক অনটনে তাকে আর কলেজে ভর্তি করা হয়নি।

নামাজে জানাজায় পঞ্চগড়-১ আসনের সংসদ সদস্য মজাহারুল হক প্রধান, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আনোয়ার সাদাত সম্রাট, নেজারত ডেপুটি কালেক্টর (এনডিসি) মো. ইকবাল

হোসেন, জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আব্বাস আলী, স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ সর্বস্তরের মানুষ অংশ নেন।দা**ফন শেষে জেলা প্রশাসক সাবিনা ইয়াসমিনের প্রতিনিধি হিসেবে এনডিসি ইকবাল হোসেন নি**হতের পরিবারকে নগদ আর্থিক সহায়তা ছাড়াও চাল, ডাল, তেলসহ শুকনা খাবার প্রদান করেন।

নি**হত আসমার পরিবার জানায়, রোববার সকালে আসমা খাতুনের বাবা দৈনন্দিন কাজে বাড়ি থেকে বের হলে একটি কাপড়ের ব্যাগ নিয়ে আসমা বাড়ি থেকে বের হন। এরপর আত্মীয়-স্বজনের বাড়িসহ বিভিন্নভাবে খোঁজ করেও তাকে পাওয়া যায়নি।

সোমবার সকালে কমলাপুর রেল স্টেশনে ময়মনসিংহ-ঢাকার বলাকা কমিউটার ট্রেনের একটি পরি**ত্যক্ত বগি থেকে গলায় ওড়না পেঁচানো তার ম**র’দেহ উদ্ধার করে রেল পুলিশ। এ সময় তার ব্যাগে থাকা মোবাইল ফোন এবং জন্মসনদ দেখে পরিচয় সনাক্ত করে পুলিশ আসমার বাড়িতে খবর দেন।

মর’দেহ উদ্ধারের পর প্রাথমিক সুরতহালে তার শরীরের বিভিন্নস্থানে আ*’ঘাতের চিহ্ন এবং র’*ক্তের দাগ পাওয়া যায়।মর’*দেহের ময়নাতদন্তে তাকে শ্বা*সরো*ধে হ’ত্যাসহ ধ’র্ষণের আলামতও পাওয়া যায়। এ ঘটনায় ঢাকায় অবস্থানরত আসমা খাতুনের চাচা বাদী হয়ে ঢাকা রেলওয়ে থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। মামলায় বাঁধন নামে তার এক সহপাঠি তরুণকে আসামি করা হয়। সর্বশেষ পাওয়া তথ্য মতে, বাঁধনকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ।

মঙ্গলবার দুপুরে সরেজমিনে আসমার গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, পঞ্চগড়-১ আসনের সংসদ সদস্য মজাহারুল হক প্রধান, জেলা প্রশাসক সাবিনা ইয়াসমিন, পুলিশ সুপার মো. ইউসুফ আলীসহ প্রশাসনের কর্মকর্তারা নি**হত আসমার বাড়ি পরিদর্শন করেন। তারা নি**হতের পরিবারের খোঁজ খবর নেন এবং তাদের প্রতি সমবেদনা জানান। দিনমুজুর এ পরিবারে আসমা খাতুন যেন ছিল গোবরে পদ্মফুল। ভালো ফলাফলে এসএসসি পাস করলে সংসারে অভাবের কারণে তাকে আর কলেজে ভর্তি করা হয়নি। মেধাবী মেয়ের এমন মর্মান্তিক মৃ’ত্যু**র খবরে হতবাক তারা বাবা-মা। চোখের পানি শুকিয়ে গেছে তাদের।

কোনো কিছু জিজ্ঞেস করায় কথা বলতে শুরু করলে বলতেই থাকেন। স্থানীয়রা তাদের দিকেই তাকিয়ে থাকেন আর আফসোস করে বলেন, আহা ! মেয়েটি বেশ মেধাবী আর দেখতে সুন্দর ছিল। নি*হতের বাবা মায়ের দাবি, আসমার বাড়ির পাশে হেলিপ্যাড সিতাগ্রাম এলাকার হানিফ ইসলামের ছেলে এ মারুফ হাসান বাঁধন। ঘটনার পর জানা গেছে, বাঁধনের সঙ্গে আসমার প্রেমের সম্পর্ক ছিল। রোববার সকাল ১০টার দিকে তারা দুজন প্রায় একই সময়ে পৃথকভাবে তাদের বাড়ি থেকে বের হন।

পরদিন আসমা খাতুনের ম*র*’দেহ উদ্ধারের পর থেকে বাঁধনেরও কোনো হদিস নেই। মারুফ হাসান বাঁধন এবং আসমা খাতুন একই সঙ্গে স্থানীয় খান বাহাদুর দাখিল মাদরাসা থেকে এবার দাখিল (এসএসসি) পাস করেন। আসমার বাড়িতে পাওয়া তার ব্যবহৃত বিভিন্ন পাঠ্যপুস্তক এবং খাতার একাধিক স্থানে বাঁধনের সঙ্গে তার প্রেমের সম্পর্কের নমুনা রয়েছে। সে প্রায় সময় ফোনে বাঁধনের সঙ্গে কথা বলতো। ঘটনার আগের দিন বাড়ি থেকে বের হওয়ার সময় সে ফোনে কথা বলছিল বলে দাবি করেন, আসমা খাতুনের চাচি জুলেখা বেগম।

চাচি জুলেখা বেগম বলেন, আমরা মেয়েকে অনেক খোঁজাখুঁজি করেছি। আমাদের পাশের হেলিপ্যাড সিতাগ্রাম এলাকার বাঁধন তাকে ফুসলিয়ে নিয়ে গেছে। তাকে নি’র্যাতন করে নি’র্ম**মভাবে হ’*ত্যা করা হয়েছে। আমরা এর সঠিক বিচার চাই। অ**পরাধীর ফাঁসি চাই। আসমা খাতুনের সহাপাঠী বান্ধবি মনছুরা বেগম বলেন, আসমা আমার ভালো বান্ধবি ছিল। তার সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে বাঁধনের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। আসমা প্রায় বলতো, সে বাঁধনকে ছাড়া আর কাউকে বিয়ে করবে না। তবে এভাবে কোথাও যাওয়ার ব্যাপারে সে কখনও কিছু বলেনি।

নি*হত আসমা খাতুনের মা শেফালি বেগম বলেন, রোববার সকাল থেকে আসমার কোনো খোঁজ পাইনি। ভেবেছিলাম, সে কোনো ছেলের সঙ্গে কোথাও চলে গেছে। আমি কোথায় খুঁজবো। কোনো উপায় না পেয়ে পরদিন সকালে প্রতিদিনের মতো কাজে বের হই। স্থানীয় ইউপি সদস্যের জমিতে ক্ষেতের কাজ করছিলাম। এ সময় একজন এসে মেয়ের লা’শ উদ্ধারের খবর দেয়। বলছিল, ঢাকার রেল স্টেশনে তার নাকি লা’শ পাওয়া গেছে। সে কীভাবে কার সঙ্গে ঢাকায় গেলো। তাকে কেন মারলো। আমিতো অনেক কষ্ট করে তাদের মানুষ করার চেষ্টা করছিলাম। স্বামী-স্ত্রী দুজনই প্রতিদিন কাজে বের হই। সেদিনও কাজে গিয়েছিলাম। এখন কি হবে, কি করবো?

আসমার বাবা আব্দুর রাজ্জাক বলেন, আমার মেয়ে আসমা বেশ মেধাবী ছিল। এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ ৪.৩ পেয়েছিল। তাকে আর কলেজে ভর্তি করতে পারিনি। সারাদিন বাসায় থাকতো। মাঝেমধ্যে বান্ধবিদের সঙ্গে বাড়ির বাইরে বের হতো। কোনো দিন দূরে কোথাও যায়নি। সম্ভবত বিয়ের কথা বলে আমার অবুঝ মেয়েকে নিয়ে যায় বাঁধন। এরপর তাকে নির্ম’মভাবে **হ*’ত্যা করা হয়। তাকে গ্রেফতার করলে আসল ঘটনা বেরিয়ে আসবে। আমি এর উপযুক্ত বিচার চাই।

তবে অভিযুক্ত মারুফ হাসান বাঁধনের মা বিলকিস বেগম বলেন, আমার ছেলে আর আসমা এক মাদরাসায় পড়েছিল এটা ঠিক। কিন্ত তার সঙ্গে আমার ছেলের কোনো সম্পর্ক ছিল না। আমরা তাদের কখনও এক সঙ্গে দেখিনি। সোমবার সকাল ১০টার দিকে বাঁধনও তার নানা বাড়ি যায়। বাড়ি থেকে বের হওয়ার সময় মিলে যাওয়ায় তাকে সন্দেহ করা হচ্ছে। সোমবার রাতে বাঁধন তার নানা বাড়ি ঠাকুরগাঁওয়ের খোশবাজার এলাকায় ছিল। সে ঢাকা যায়নি। অনেকে তাকে ফোন করায় সে ভয় পেয়েছে। এজন্য হয়তো ফোন বন্ধ করে কোথাও রয়েছে।

পুলিশ সুপার মো. ইউসুফ আলী বলেন, ঘটনাটি আমাদের এলাকার বাইরে। ঢাকার রেল স্টেশনে মর*’দেহটি উদ্ধার হয়। এজন্য সেখানেই রেল পুলিশ মা**মলা নিয়েছে। তবে নি**হতের বাড়ি যেহেতু পঞ্চগড়ে। এজন্য এখানে একজন অফিসারের নেতৃত্বে ছায়া তদন্ত শুরু করা হয়েছে।

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



রে