ঢাকা, সোমবার, ১৮ নভেম্বর ২০২৪, ৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

কাশ্মীরের যে এলাকায় ঢুকতে পারেনি ভারতীয় সেনারা

বিশ্ব ডেস্ক . ২৪আপডেট নিউজ
২০১৯ আগস্ট ২১ ২২:৫৫:১৫
কাশ্মীরের যে এলাকায় ঢুকতে পারেনি ভারতীয় সেনারা

এই পদক্ষেপকে কেন্দ্র করে কাশ্মিরজুড়ে মোতায়েন করা হয়েছে অতিরিক্ত সেনা। সেখানকার বিভিন্ন সশস্ত্র সংগঠনের দাবি, রাজ্য পুলিশসহ সেখানে প্রায় ৭ লাখ নিরাপত্তাবাহিনীর সদস্য মোতায়েন রয়েছে। অথচ সেখানকার জনসংখ্যা মাত্র ৭০ লাখ।

৩৭০ ধারা বাতিলের আগ মুহূর্তে জম্মু-কাশ্মিরে আধাসামরিক বাহিনীর ৩৫ হাজার সদস্য মোতায়েন করা হয়। পরে নতুন করে সেখানে নিয়োজিত হয় আধা-সামরিক বাহিনীর আরও ৮ হাজার সদস্য। তবে এই বিপুল সামরিক উপস্থিতির মধ্যেও ভারতীয় বাহিনীর কোনও সদস্য সেখানকার একটি ছোট শহরে প্রবেশ করতে পারেনি। জম্মু-কাশ্মিরের রাজধানী শ্রীনগরের এক ঘনবসতিপূর্ণ অঞ্চলে অবস্থিত ছোট ওই শহরটির নাম সুরা।

লাখ লাখ সেনাবেষ্টিত উপত্যকার ভেতরে এটি যেন এক মুক্তাঞ্চল। এখনও সেখানে প্রবেশ করতে পারেনি ভারতীয় বাহিনী। সব প্রবেশপথে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছেন সেখানকার তরুণরা। ইট-কাঠ-পাথরকে হাতিয়ার বানিয়ে তারা পালা করে ২৪ ঘণ্টা সেখানে পাহারারত রয়েছেন।

ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ১৫ হাজার মানুষের এই শহরটিই এখন ভারতীয় বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধের কেন্দ্রবিন্দুতে রূপান্তরিত হয়েছে। ভারতীয় বাহিনীর নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা রয়টার্সের কাছে স্বীকারোক্তি দিয়েছেন, সুরার নিয়ন্ত্রণ নিতে তারা মরিয়া, তবে তা সম্ভব হয়ে উঠছে না।

এক সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে সেখানকার তরুণরা অবস্থান করছেন রাজপথে। ১২টির মতো প্রবেশপথের প্রত্যেকটিতেই ইটের ব্যারিকেড, মেটাল শিট, ট্রাংক কিংবা কাঠের পাটাতন দিয়ে পথ আটকে দিয়েছে তারা। এই দেয়ালের পেছনেও দেয়াল হয়ে দাঁড়িয়েছে সেখানকার স্থানীয় তরুণরা। অস্ত্র হিসেবে হাতে তুলে নিয়েছে পাথর। তাদের লক্ষ্য একটাই, কিভাবে ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনী বিশেষ করে আধাসামরিক পুলিশকে ঠেকিয়ে রাখা যায়।

এজাজ নামে ২৫ বছর বয়সী এক কাশ্মিরি রয়টার্সকে বলেন, ‘আমাদের কথা বলতে দেওয়া হয় না। তাই ভেতরে ভেতরে আমরা বিস্ফোরিত হচ্ছি। তার মতো অনেকেই সাক্ষাৎকার দিলেও নাম প্রকাশে রাজি হয়নি। তাদের আশঙ্কা এতে করে গ্রেপ্তার হতে হবে তাদের। তারা বলছেন, ‘বিশ্ব যদি আমাদের কথা না শোনে তবে আমাদের কী করা উচিত? আমরা কি অস্ত্র হাতে তুলে নেব।’ এজাজ বলেন, আমাদের মনে হচ্ছে আমরা নিয়ন্ত্রণরেখা প্রহরায় আছি।

সুরায় প্রায় ১৫ হাজার মানুষের বসবাস। তবে কাশ্মির ইস্যুতে সরকারবিরোধী প্রতিরোধে তারাই এখন মূলকেন্দ্র। ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনীর জন্য তা এখন ‘নো গো জোন’। রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই অঞ্চলই এখন নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বাধীন হিন্দু জাতীয়তাবাদী সরকারের জন্য বড় চালেঞ্জ।

সুরার বাসিন্দারা জানান, যখনই কোনও নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য এলাকায় ঢোকার চেষ্টা করেন, সঙ্গে সঙ্গে তারা মসজিদে গিয়ে সতর্কবাণী বাজান। লাউডস্পিকারে গান বাজাতে থাকেন। ‘অবৈধ দখলদারিত্বে’র বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানানো হয় সেই গানে।

সুরার সরু গলিতেও বাসিন্দারা সেনাবাহিনীকে মোকাবিলায় প্রস্তুত রয়েছেন। তাদের সামনে ইট ও পাথর জমা করা রয়েছে। একটি ব্যারিকেডে বসানো হয়েছে তারকাঁটার বেড়া। ওই এলাকা টহল দেওয়া তরুণরা জানান, ভারতীয় সেনাবাহিনীর কাছ থেকেই চুরি করে আনা হয়েছে ওই তারকাঁটা।

এর আগে ৯ আগস্ট জুমার নামাজের পর ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনীর বিরুদ্ধে বিক্ষোভটি এই সুরাকে কেন্দ্র করেই গড়ে উঠেছিল। আশপাশের বাসিন্দারা এসেও যোগ দেয় তাদের সঙ্গে। প্রতিরোধ গড়ে ওঠে অন্তত ১০ হাজার মানুষের। বেশ কয়েকজন বাসিন্দা জানান, সেদিন নিরাপত্তা বাহিনীর ১৫০ থেকে ২০০ জন সদস্য সুরায় প্রবেশের চেষ্টা করেন। কিন্তু গভীর রাত পর্যন্ত তাদের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যান বাসিন্দারা। একটা সময় ছররা ও টিয়ার গ্যাসও ছুঁড়ে পুলিশ।

ভারত সরকার প্রথমে এই ঘটনার কথা অস্বীকার করে জানায়, সুরায় ২০ জনের বেশি মানুষ জড়ো হয়নি। পরে বিবিসির প্রকাশিত ফুটেজে বিক্ষোভের চিত্র হাজির হলে ভারত সরকার জানায়, এক হাজার থেকে দেড় হাজার মানুষ বিক্ষোভে অংশ নিয়েছিলো।

স্থানীয়রা জানান, এরপর থেকে সুরাতে ছোট ছোট বেশ কয়েকটি বিক্ষোভ হয়েছে। প্রায় প্রতিদিনই নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে ঘটেছে সংঘর্ষের ঘটনা।

ভারতের আধাসামরিক পুলিশও স্বীকার করেছে, তারা ওই স্থানের নিয়ন্ত্রণ নিতে বদ্ধপরিকর। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা বলেন, ‘আমরা সেখানে প্রবেশের চেষ্টা করছি। কিন্তু সেখানে অনেক বাধা।’ আরেক কর্মকর্তার দাবি করেন, ‘ওই এলাকার তরুণরা অনেক উগ্রবাদী। তারা জঙ্গিবাদের আশ্রয় নেওয়ার চেষ্টা করছে।’

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ



রে