ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪, ১ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১

মশার আখড়া ঢামেক হাসপাতাল

জাতীয় ডেস্ক . ২৪আপডেট নিউজ
২০১৯ জুলাই ২৭ ১৫:২৯:২৮
মশার আখড়া ঢামেক হাসপাতাল

রোগীর নাম সুমন আহমেদ (২১) শুক্রবার (২৬ জুলাই) ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তিনি ভর্তি হন। বিছানা না পাওয়ায় তার আশ্রয় হয়েছে বারান্দা।

সুমনের চাচা আব্দুল মাজেদ বলেন, ‘জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে শুক্রবার সুমনের লিখিত পরীক্ষা ছিল। কিন্তু আজ তিনি পরীক্ষা দিতে পারেনি।’

মাজেদ আরও বলেন, ‘হাসপাতালে অনেক রোগী থাকায় আমরা কোনো বিছানা পাইনি। অধিক রোগী আমাদের বিছানার সামনে ছাদের ফাঁকা জায়গায় অনেক ময়লা ও পানি জমে আছে। আমরা এখন আতঙ্কে আছি।’

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, হাসপাতালের কয়েকজন ওয়ার্ড বয়ও ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন। বাদ যাননি হাসপাতালের সেবিকারাও।

হাসপাতালের নিচ তলা থেকে শুরু করে সামনে-পেছনে সব জায়গায় ময়লার ভাগাড়। ঠিক কবে ময়লাগুলো পরিষ্কার করা হয়েছিল তার ঠিক নেই।

হাসপাতালে কর্মরত কয়েকজন পুলিশ সদস্য জানান, এই ময়লা অনেক দিনের। কখনও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করতে দেখি না। পরিচ্ছন্নতাকর্মীরাও কখনো ময়লায় হাত দিয়েছেন বলে জানা নেই।

রোগীর স্বজনরা জানান, হাসপাতালে নিয়োগ পাওয়া চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীদের কাজ হলো পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা করা। কিন্তু তারা একটা কাজেও হাত দেয় না। তারা স্পেশাল ওয়ার্ড বয় হিসেবে কাজ করেন। রোগীর কাছ থেকে টাকা নেওয়ার অপেক্ষায় থাকেন তারা।

ঢামেক হাসপাতালের পুলিশ বক্সের সহকারী ইনচার্জ আব্দুল খান অভিযোগ করে বলেন, ‘আমাদের ক্যাম্পে প্রতিদিন অনেক পানি, ময়লা জমে। ৫/ ৭ দিন বলার পরে সে ময়লা নিয়ে যায়। হাসপাতালর অবস্থা তো আরও বেশি খারাপ।’

গত বুধবার কথা হয় মিজানুর রহমান (২৪) নামে এক যুবকের সঙ্গে। তার বাড়ি চাঁদপুরের মতলব উপজেলায়। গত জুন মাসের ৬ তারিখে তার মা মরিয়ম আক্তার কে হাসপাতালে ভর্তি করে। তার খাদ্যনালীতে টিউমার ছিল। মায়ের সঙ্গে হাসপাতালেই ছিলেন মিজানুর। হাসপাতালে থাকতেই গত ২১ জুলাই জ্বর আসে। জ্বর নিয়ে সেদিনই লালবাগ তার আত্মীয়ের বাসায় যায়। সেখান থেকে ২৩ জুলাই রক্ত পরীক্ষায় ডেঙ্গু ধরা পরে। মিজানুর বলেন, হাসপাতাল থেকেই তাকে এডিস মশা কামড়ায়।

ঢামেক হাসপাতালের দ্বিতীয় তলায় প্যাথলজি বিভাগ। ডেঙ্গু রোগের পরীক্ষাসহ বিভিন্ন রোগের রক্তের নমুনা সংগ্রহ করা হয় সেখানে। পাশেই ব্লাড ব্যাংক। সেখানে গিয়ে দেখা যায়, বারান্দায় কয়েকটি এয়ার কন্ডিশনার বসানো। সেখান থেকে অনবরত পানি পরছে। ময়লারও অভাব নেই।

হাসপাতালের নতুন ভবনের ওয়ার্ড মাস্টার মো. রিয়াজ বলেন, ‘ময়লা পরিষ্কার করার দিনক্ষণ নেই। ময়লা হলেই পরিষ্কার করা হবে। কিন্তু লোকবল কম থাকায় অনেক সময় ময়লা পরিষ্কার করা হয় না। তবে দুই একদিনের মধ্যেই ময়লা পরিষ্কার করা হবে।’

হাসপাতালের পুরনো ভবনেও একই চিত্র চোখে পড়ে। ভবনের দ্বিতীয় তলায় নিউরো সার্জারি ওয়ার্ডের বারান্দায় গিয়ে দেখা যায়, কয়েকটি ময়লার ড্রাম পড়ে আছে। তার মধ্যে পানিও জমে আছে। দেখে মনে হচ্ছে, এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে পরিষ্কার করা হয় না। পাশেই লতাপাতা ঘাসের অভাব নেই। তৃতীয় তলায় কেবিনে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে ময়লার ড্রাম, ভাঙা বেডসহ অসংখ্য সিরিঞ্জ পড়ে আছে। ভাঙ্গা বেডগুলোতে পানি জমে আছে।’

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপ পরিচালক ডা. বিদ্যুৎকান্তি পাল বলেন, ‘ময়লা বা পানি পরিষ্কার করার তো কোনো দিনক্ষণ নেই। পানি কিংবা যে ধরনের ময়লা জমুক না কেন যখনই জমবে তখনই পরিষ্কার করা উচিৎ। অনেক সময় পরিষ্কার করা হলেও একদিন যেতে না যেতেই আবার ময়লা জমে যায়।’

ডা. বিদ্যুৎকান্তি বলেন, ‘হাসপাতালে প্রতিদিন প্রচুর রোগী ভর্তি হয়। রোগীর স্বজনরাো যেখানে সেখানে ময়লা আবর্জনা ফেলে। এটা আমাদের নলেজে আছে।’

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



রে