ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪, ১ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১

মিন্নি নয়, রিফাতের ঘটনার নেপথ্যে কারণ হতে পারে চেয়ারম্যানের স্ত্রী

জাতীয় ডেস্ক . ২৪আপডেট নিউজ
২০১৯ জুলাই ২১ ১৮:১৩:৪৪
মিন্নি নয়, রিফাতের ঘটনার নেপথ্যে কারণ হতে পারে চেয়ারম্যানের স্ত্রী

ছিলেন। আর বড় ভাই রিফাত ফরাজি দা দিয়ে কোপাচ্ছিলেন। বড় ভাইয়ের সেই দায়ের আঘাতে রিশানের হাতও অনেকটা কেটে গিয়েছিল। রিফাত হ.ত্যার প্রধান আসামি ছিলেন নয়ন। নয়ন-রিফাত দ্বন্দ্বের কারণ হিসেবে রিফাতের স্ত্রী মিন্নির সঙ্গে নয়নের পরকীয়াকে দায়ী করা হচ্ছিলো।

ভাবা হচ্ছিলো, মি.ন্নির কারণেই রিফাতের ওপর ক্ষুব্ধ ছিলেন নয়ন। কিন্তু রিফাতকে কোপানোর সময় ফরাজি ভাইরাই কেন সবচেয়ে বেশি নৃশংস হয়ে উঠেছিলেন সেই প্রশ্ন উঠছেই। স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এই ঘটনার পেছনে জড়িয়ে আছে আরেক কাহিনী।

রিফাত ফরাজি ও রিশান ফরাজির বাসা শহরের ধানসিড়ি রোডে হলেও তারা থাকতেন শেখ রাসেল স্কয়ার লাগোয়া জেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের বাসায়। জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি দেলোয়ার হোসেনের স্ত্রী শামসুন্নাহার খুকী তাদের খালা হন। খুকীর একমাত্র প্রতিবন্ধী ছেলে কয়েক বছর আগে পানিতে ডুবে মারা যায়। তখন থেকেই দুই ভাই রিফাত ও রিশান তাদের খালা চেয়ারম্যানের স্ত্রীকে মা বলে ডেকে আসছিলেন। তারা দুই ভাই ওই বাসায়ই থাকতেন। এমনকি চেয়ারম্যানের স্ত্রী তার ভাগ্নেদের সব অপকর্মেই প্রশ্রয় দিতেন বলেও জানা যায়।

রিফাতের বিরুদ্ধে চারটি মামলা রয়েছে। তিনি একাধিকবার গ্রেপ্তারও হয়েছেন। কিন্তু প্রতিবারই তার খালা চেয়ারম্যানের স্ত্রী খুকি প্রভাব খাটিয়ে তাকে জামিনে ছাড়িয়ে আনেন।

দেলোয়ার হোসেনের বাসার সামনেই রয়েছে তার মালিকানাধীন দোকান। সেটি ভাড়া নিয়ে এক ব্যবসায়ী খাবারের হোটেল ‘মাটিয়াল ক্যাফে অ্যান্ড মিনি চায়নিজ’ করেছেন। রিফাতকে কু.পিয়ে হ.ত্যার ঘটনার আগে গত ৫ মে মি..ন্নি তার স্বামীকে নিয়ে ওই ক্যাফেতে গিয়েছিলেন। রিফাত শরীফ তার মোটরসাইকেল চেয়ারম্যানের বাসার একেবারে সামনে সড়কের পাশে রাখার চেষ্টা করেন। তখন সামসুন্নাহার খুকি বাধা দেন। এ নিয়ে খুকির সঙ্গে রিফাতের উত্তপ্ত বাক্যবিনিময় হয়। রিফাত তার সঙ্গে বাজে ব্যবহার করেন। তখন রিফাতকে দেখে নেওয়ার হুমকি দিয়েছিলেন খুকি।

ধারণা করা হচ্ছে, এর জের ধরেই রিফাত শরীফের ওপর ক্ষুব্ধ হয়ে তাকে হ.ত্যার পরিকল্পনা করেছিলেন রিফাত-রিশান।

মি..ন্নি তার সংবাদ সম্মেলনেও এ বিষয়টি জানিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, বরগুনা সরকারি কলেজ ফটকের সামনে তার স্বামীকে রিশান ফরাজি প্রথম পথ রোধ করেছিলেন। রিশান তখন দাবি করেছিলেন, রিফাত শরীফ তার মাকে (খুকি) অকথ্য ভাষায় গালাগাল করেছেন। কেন করেছেন সেটা জানতে চান রিশান। ঠিক একই সময় রিফাত ফরাজী বলেন, ‘তুই (রিফাত) আমার চোখের দিকে তাকাইয়া ক, মাকে কেন তুই গালি দিয়েছো।’ তখন রিফাত-রিশানের সঙ্গে থাকা অন্য আসামিরা রিফাতের কাছে অস্ত্র আছে বলে চিৎকার করে এবং ধর ধর বলে তাকে কিলঘুষি মারতে শুরু করে।

রিফাত হ..ত্যার একটি ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে, তাকে বরগুনা সরকারি কলেজের ফটক থেকে ধরে আনার আগে থেকেই রিফাত ফরাজি কলেজ ফটকে অবস্থান করছিলেন এবং তার সহযোগীদের নানা নির্দেশনা দিচ্ছিলেন।

পুরো বিষয়টি নিয়ে চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেনের সঙ্গে কথা বলতে চাইলে তিনি হ.ত্যার সঙ্গে নিজের এবং শামসুন্নাহার খুকির জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করেন। রিফাতের সঙ্গে তার স্ত্রীর কোনো কথাকাটাকাটির ঘটনা ঘটেনি বলেও জানান তিনি।

এ ব্যাপারে জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেনের সঙ্গে এ প্রতিবেদকের গত শুক্রবার সন্ধ্যার দিকে মোবাইল ফোনে কথা হয়। তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমি ব্যক্তিগত কাজে বাসার বাইরে রয়েছি।’ তার স্ত্রী খুকির সঙ্গে রিফাত শরীফের বাগিবতণ্ডার কথা অস্বীকার করেন তিনি। মাটিয়াল ক্যাফের মালিকের সঙ্গে ভাড়ার চুক্তি বাতিল প্রসঙ্গে চেয়ারম্যান বলেন, ‘দোকানে উঠতি বয়সীদের আড্ডা বসে। তাতে এলাকার পরিবেশ খারাপ হচ্ছিল। তাই হোটেল মালিককে স্টল থেকে নামিয়ে দিয়েছি।’ তিনি আরো বলেন, ‘রিফাত শরীফ হ.ত্যা মামলাটি ভিন্ন খাতে প্রবাহের জন্য সাংবাদিকদের একটি পক্ষ বিভ্রান্তিমূলক তথ্য দিচ্ছে।’ দেলোয়ার হোসেন দাবি করেন, কথা-কাটাকাটি তো দূরের কথা তার স্ত্রীর সঙ্গে রিফাতের কখনো দেখাই হয়নি।

খুকিও গণমাধ্যমের কাছে দাবি করেছেন যে তার সঙ্গে কারোর এমন ঘটনা ঘটেনি।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা বরগুনা থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. হুমায়ুন কবির জানান, রিফাত শরীফ হ.ত্যাকাণ্ডে জড়িত অভিযোগে এখন পর্যন্ত মামলার প্রধান সাক্ষী ও তার স্ত্রী মিন্নিসহ ১৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর মধ্যে ১৪ জন আদালতে ঘটনায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছে।

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



রে