ঢাকা, রবিবার, ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

‘মোবাইল টাওয়ারগুলো খেলনার মতো ভেঙে দিলো’

বিশ্ব ডেস্ক . ২৪আপডেট নিউজ
২০১৯ মে ০৪ ১৩:২২:২০
‘মোবাইল টাওয়ারগুলো খেলনার মতো ভেঙে দিলো’

এমনিতেই কার্যত জনমানবশূন্য ছিল পুরী। রাস্তাঘাট বৃহস্পতিবার থেকেই ফাঁকা। যাঁরা থেকে গিয়েছিলেন নিজেদের হোটেল বা ঘরে বন্দি হয়ে, তারা দেখলেন প্রায় চার ঘণ্টা ধরে চলা তাণ্ডবলীলা! একের পরে এক বিদ্যুতের খুঁটি উপড়ে পড়া, যাবতীয় কাঠ-বাঁশের কাঠামো ভেঙে মাটিতে গুঁড়িয়ে যাওয়া, প্রায় খেলনা ঘরের মতো চেয়ার-টেবিল-চৌকি বাতাসে ভাসতে-ভাসতে বহু দূরে উড়ে যাওয়া, কাচের যাবতীয় দরজা-জানালা ভেঙে চুরমার হওয়া— বাদ গে‌ল না কিছুই। মোবাইলের টাওয়ারগুলো যেন কেউ খেলনার মতো ভেঙে ফেলে দিয়েছে রাস্তাঘাটে। ইটের বড় চাঙড় উড়ে এসে পড়েছে গাড়িতে। সর্বত্র শুধু ধ্বংসস্তূপ!

পুরীর হোটেলে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছেন চঞ্চল সেন। মোবাইলে নেটওয়ার্ক নেই। বাড়িতে জানাতেও পারেননি ঠিক আছেন কি না। বললেন, ‘‘বাড়িতে সকলে খুব চিন্তা করছে জানি! কিন্তু কী করে খবর দেব? এ রকম ঝড়ই তো কোনও দিন দেখিনি।’’ শুধু চঞ্চল নন, পুরীর বাসিন্দাদের অনেকেরই বক্তব্য এটাই! ১৯৯৯ সালে সুপার সাইক্লোন দেখার ইতিহাস রয়েছে পুরীর। তার পরেও একাধিক ঘূর্ণিঝড় হয়েছে। তার ঝাপ্টাও এসেছে। কিন্তু ফণীর ‘ল্যান্ডফল’-ই তো পুরীতে! জগন্নাথদেবের শহরে ঘূর্ণিঝড়ের মূল ভরকেন্দ্র এসে পড়েছে— স্মরণকালে এমন উদাহরণ নেই!শিকাগোর বাসিন্দা টিনা হাজরা চৌধুরী পুরীতে এসেছিলেন মায়ের সঙ্গে জগন্নাথের পুজো দিতে। এখন ঝড়ে আটকে পড়েছেন। টিনা বলছেন, ‘‘ঘূর্ণিঝড় ক্যাটরিনার ধ্বংসলীলা দেখেছিলাম। কিন্তু দেখেছিলাম ঝড়ের পরে, ফ্লরিডায় ঘুরতে গিয়ে। সরাসরি ঝড়ের মধ্যে পড়ার কোনও অভিজ্ঞতাই ছিল না। এ বারই প্রথম হল!’’

হাসপাতালে আইসিইউ-তে ভর্তি ছিলেন ফকিরচন্দ্র মোহান্তি। হাসপাতালের পরিসেবা পুরোপুরি বিপর্যস্ত হয়ে পড়ায় অটোয় করে বাড়ি আনা হয়েছে তাকে।

আবহবিদদের একাংশ আগেই জানিয়েছিলেন, এ দিন সকাল থেকেই ফণীর দাপট বোঝা যাবে। বাস্তবে হলও তাই। বিজ্ঞানীদের একাংশ জানাচ্ছেন, এ দিন ফণী যখন পুরীর উপরে আছড়ে পড়ে, তখন ঘণ্টায় তার গতিবেগ ছিল প্রায় ২২০ কিলোমিটার। সুপার সাইক্লোনের অভিজ্ঞতা থেকেই তারা বলছেন, এই ঝড়ে পুরীতে ধ্বংসের এমন ছবিটাই স্বাভাবিক।

ভোর সাড়ে পাঁচটা থেকে হাওয়া যে বেগবান হয়েছিল, সেই বেগই ক্রমশ বেড়েছে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে। সাড়ে সাতটা পর্যন্ত হাওয়া-বৃষ্টির দাপটের মধ্যেই হাতে গোনা লোকজন তখনও রাস্তায়, গাড়িও যাতায়াত করতে দেখা গিয়েছে। কিন্তু পৌনে আটটা থেকে পুরো ছবিটাই পাল্টে যেতে থাকল যেন। ঠিক আটটা নাগাদ চারদিক লন্ডভন্ড করে দিয়ে পুরো শক্তি নিয়ে পুরীতে আছড়ে পড়ল ফণী। তখন চার দিকে শুধু বৃষ্টি-বালির ঝড়। তিন ফুট দূরত্বেও ঠিকঠাক দেখা যাচ্ছে না, কী হচ্ছে। খড়কুটোর মতো সব কিছু তখন এ দিক-ও দিক হাওয়ায় ভাসছে। উড়ন্ত সব জিনিসকে যেন কোনও অদৃশ্য হাত এখান থেকে ওখানে নিয়ে যাচ্ছে ইচ্ছেমতো। উত্তাল সমুদ্র এসে তটের অস্থায়ী দোকানগুলোকে ভাসিয়ে নিয়ে যাচ্ছে, আর নিজেদের সম্বল বাঁচানোর জন্য তার পিছনে পিছনে দৌড়চ্ছেন দোকানদারেরা। ফণীর বিরুদ্ধে নিজেদের সর্বস্ব বাঁচানোর এ লড়াইয়ে কারও হাতে চোট লেগেছে, কারও পায়ে। এক দোকানদারের কথায়, ‘‘প্রশাসন থেকে বলার পরে আমরা ঢেকে রেখেছিলাম দোকানগুলোকে। ঢেউয়ের থেকে সরিয়েও এনেছিলাম অনেকটা। কিন্তু সমুদ্র যে রাস্তার উপরে চলে আসবে, সেটা বুঝতে পারিনি!’’

এক হোটেল মালিকের কথায়, ‘‘সকাল সওয়া ১০টা নাগাদ যখন কিছুটা গতি কমল হাওয়ার, তখন ভেবেছিলাম এ বার থামল বুঝি! কিন্তু দেখলাম সেটা কিছু ক্ষণের জন্যই। তার পর আবার এমন ঝড়-বৃষ্টি শুরু হল, হোটেলের সব ক’টা কাচের জানলা-দরজা ভেঙে পড়েছে। অবশ্য শুধু আমার হোটেলেই নয়, পুরীর সব হোটেলেই এমন অবস্থা।’’

স্থানীয় এক বাসিন্দার কথায়, ‘‘ঝড়ের সময়ে যা হয়েছে, হয়েছে। ঝড়ের পরে সব শান্ত হলে তখনই আসল বোঝা যাবে, আরও কত ক্ষতি হল!’’

শান্ত হতে হতে অবশ্য দুপুর গড়িয়ে গেল। তার পরে ছোট-ছোট দল বেঁধে স্থানীয় মানুষ, দোকানদারেরা রাস্তায় নেমেছেন যা-যা তখনও অক্ষত রয়েছে, তা গোছানোর জন্য, রাস্তা পরিষ্কারের জন্য। মন্দিরের সামনে বিশাল চওড়া যে গ্র্যান্ড রোড ধরে জগন্নাথ-সুভদ্রা-বলরামের রথ বেরোয়, সেই রাস্তা জুড়েও ছড়িয়ে রয়েছে ছেঁড়া ফ্লেক্স আর কাঠকুটোর টুকরো, ভাঙা টিনের চালা।

সূত্র-আনন্দবাজার

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ



রে