ঢাকা, শনিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ৭ পৌষ ১৪৩১

আগুনের মধ্যে থেকেও নিজের দায়িত্ববোধ ভুললেন যাননি মিঠু

জাতীয় ডেস্ক . ২৪আপডেট নিউজ
২০১৯ মার্চ ২৯ ২৩:৩৩:০০
আগুনের মধ্যে থেকেও নিজের দায়িত্ববোধ ভুললেন যাননি মিঠু

মৃত্যুর আগে বাচাঁর আকুতি জানিয়েছিলেন মিঠু। আগুনের তাপ আর ধোঁয়ায় নিশ্বাস বন্ধ হয়ে আসলে স্ত্রী আশাকে ফোন দিয়ে বলেন-‘আমাকে বাঁচাও, আগুনের মধ্যে থাকতে পারছি না।’ তখন ফোনের ভেতর থেকে বনানীর এফআর টাওয়ারে আটকা পড়া হাজারো মানুষের জীবন বাঁচানোর আকুতি শুনতে পাচ্ছিলেন আশা।

স্ত্রী আশা আর আড়াই বছরের ফুটফুটে ছেলে মিফতাহুল হোসেন মুগ্ধকে নিয়ে ভালোই চলছিল সংসার। তবে সব শেষ হয়ে গেল মুহূর্তেই। এফআর টাওয়ারের আগুন কেড়ে নিল তাদের সেই সুখ। ভবনে আগুন লাগার পর স্ত্রী আশার সঙ্গে বারবার ফোনে কথা বলছিলেন ইখতিয়ার হোসাইন মিঠু। প্রতিবারই ফোন করে স্ত্রীকে বলছিলেন ছেলের দিকে খেয়াল রাখতে। আর কোনোভাবেই যেন বাবা-মাকে তার বিপদের কথা না জানান। নিশ্চিত মৃত্যু জেনেও কতটা সচেতন ছিলেন মিঠু যা তার এ উক্তি থেকে সহজেই বোধগম্য।

বাবা বয়সের ভারে অনেকটা ন্যুব্জ হয়ে পড়েছেন। শারীরিকভাবেও অসুস্থ। ইতোপূর্বে দুইবার স্ট্রোক হয়েছে তার। বাবা ভাইয়ের বিপদের কথা জানতে পেরে হয়তো আবারও স্ট্রোক করলে বড় ধরনের কোনো ক্ষতি হবে। এ বোধ থেকেই স্ত্রীকে ফোনে ছেলের বিপদের কথা বাবাকে জানাতে নিষেধ করছিলেন মিঠু। এমনটাই ধারণা তার ছোট ভাই ইমনের।

কথা হয় তার ছোট ভাই ইমনের সঙ্গে। তিনি রাজধানীর সরকারি তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থী। তিনি জানান, ‘ভাইয়ের শ্বাসকষ্ট ছিল। হয়তো ধোঁয়া আর আগুনের তাপে অবর্ণনীয় কষ্ট সহ্য করে মৃত্যুর কোলে নিজেকে অসহায়ভাবে সঁপে দিয়েছেন।’ তিনি বলেন, ‘এটা নিছক দুর্ঘটনা নয় হত্যাকাণ্ড। এর বিচার চাই।’

তার ঘনিষ্ঠ বন্ধু ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাব বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক কামাল উদ্দিন বলেন, ‘আমার সঙ্গে সর্বশেষ ২টার দিকে তার কথা হয়। এ সময় মিঠু ‘দোয়া করিস বন্ধু খুব বিপদে আছি’-এটুকু বলেই ফোন কেটে দেয়। তারপর আর তার সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারিনি।’

ইখতিয়ার হোসেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে হিসাব বিজ্ঞান ও তথ্য পদ্ধতি বিভাগের ২০০০-২০০১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। লেখাপড়া শেষে নিউরো গ্রুপের প্যাডেক্স নামে একটি কোম্পানির সিনিয়র অ্যাকাউন্টস অফিসার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। এফআর টাওয়ারের ২২ তলায় তার অফিস ছিল। বৃহস্পতিবার (২৮ মার্চ) টাওয়ারে আগুন লাগার আগে লাঞ্চ ব্রেকের সময় তার সহকর্মীরা তাকে ক্যান্টিনে একসঙ্গে লাঞ্চ করার কথা বলে। এ সময় মিঠু ওই ভবনের ১১ তলায় একটু কাজ আছে কাজ শেষে করে আসব বলে জানান সহকর্মীদের। এ সময় টাওয়ারে আগুন লাগলে তিনি আর বের হতে পারেননি।

চার ভাই-বোনের মধ্যে সবার বড় ছিলেন ইখতিয়ার হোসেন মিঠু। ছোট ভাই ইমন পড়ালেখা করেন সরকারি তিতুমীর কলেজে। থাকতেন ঢাকায় বড় ভাইয়ের ফ্লাটেই। মেজো ভাই সংসারের হাল ধরতে পিতার সঙ্গে ব্যবসা করেন। একমাত্র বোন বিবাহিত। তিনিই পরিবারের সবাইকে দেখাশোনা করতেন বলে জানান ছোট ভাই ইমন।

ইখতিয়ার কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার কয়া ইউনিয়নের চরবানিয়া পাড়া গ্রামের ইসহাক প্রামাণিকের ছেলে। তার মায়ের নাম হজেরা খাতুন। বড় ছেলেকে হারিয়ে কান্না থামছে না বাবা-মায়ের।

শুক্রবার বেলা ১১টার দিকে তার মরদেহ গ্রামের বাড়িতে পৌঁছালে পরিবারের সদস্যরা এবং স্বজনরা কান্নায় ভেঙে পড়েন। মরদেহ দেখতে ভিড় করে হাজারো মানুষ। শুক্রবার জুমার নামাজ শেষে তার জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। পরে তার মরদেহ পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ছোট ভাই ইমন।

কয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও কুষ্টিয়া জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক জিয়াউল হক স্বপন বলেন, ‘আমি ব্যক্তিগতভাবে তাকে চিনতাম। খুবই ভদ্র এবং মানবিক ছিল। গ্রামের বেশ কয়েকজন দরিদ্র মেধাবী শিক্ষার্থী তারই খরচে লেখাপড়া করছিল। আমি জানাজায় গিয়ে আবেগ ধরে রাখতে পারিনি। তার পরিবারকে আমার পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছি।’

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ



রে