সৌদি বড় ধ্বস, দেশ ছাড়ছে বিদেশী শ্রমিকরা

সৌদি আরবে শ্রমিকরা এশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ থেকে ঢুকেছেন। দেশটির সরকারের উচ্চাভিলাষী উন্নয়ন পরিকল্পনায় সন্তুষ্ট হয়ে কখনও কখনও তারা স্বল্পমেয়াদি চুক্তিতে এখানে আসেন।
কিন্তু ইকবাল থেকে যান। তিন সন্তানকে এখানে মানুষ করেন। গত কয়েক দশক সৌদিতে তিনি কাজ করেছেন। যদিও দেশটি ইতিমধ্যে নিজের অগ্রাধিকারে পরিবর্তন এনেছে, বিদেশি শ্রমবাজারে কঠোর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করেছে।
সম্প্রতি সৌদি সরকারি নীতিতে আরও পরিবর্তন এসেছে। সব কিছু গুছিয়ে এই ৬০ বছর বয়সে সৌদি ছাড়তে বাধ্য হচ্ছেন তিনি।
দেশটির সরকার প্রবাসী শ্রমিকদের পোষ্যদের করারোপ করেছে। আবার কিছু কিছু খাতে কাজ করার ক্ষেত্রে বিদেশি শ্রমিকদের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়ে রেখেছে। অর্থনীতিকে তেলের ওপর নির্ভরশীলতা থেকে সরিয়ে আনতে সংস্কারের পথ ধরছে সৌদি।
এতে নাগরিকদের জীবনযাত্রার খরচ বেড়ে গেছে। হিমশিম খেতে হচ্ছে নিম্নআয়ের বিদেশি শ্রমিকদের। ফলে দেশটির শ্রমশক্তি থেকে বড়সংখ্যক বিদেশি নিজ দেশে কিংবা অন্য কোথাও চলে যাচ্ছেন।
যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান যখন সৌদি আরবের অর্থনীতি নতুন করে গড়ে তুলতে চেষ্টা করছেন, আকস্মিকভাবে তখন বিদেশি শ্রমিকদের অন্যত্র চলে যাওয়ার প্রবাহ তাকে প্রতিকূলতার মুখে ফেলতে যাচ্ছে।
তার অর্থনৈতিক পরিকল্পনার মূল স্তম্ভই হচ্ছে- বেসরকারি খাতে সৌদি নাগরিকদের জন্য কর্মসংস্থান তৈরি করা। যে খাতটির বেশিরভাগ বর্তমানে বিদেশিদের দখলে।
প্রবাসীরা এসব জায়গা ছেড়ে চলে যাওয়ার পর অল্প সময়ের মধ্যে সৌদি নাগরিকদের দিয়ে তা পূরণ করা সম্ভব হবে না। এতে ব্যবসায়ীদের ওপর নতুন করে চাপ বেড়েছে। অর্থনৈতিক মন্দার সঙ্গে তাদের হাঁসফাঁস করতে হচ্ছে।
সৌদি সরকারের পরিসংখ্যান সংস্থা জানিয়েছে, ২০১৭ সালের শেষ-তৃতীয়াংশ নাগাদ ১১ লাখের বেশি বিদেশি তাদের কর্মসংস্থান ছেড়ে চলে গেছেন। সাম্প্রতিক সময়ে বিদেশিদের সৌদি ছেড়ে চলে যাওয়ার ঢল কেবল এটিই প্রথম না।
২০১৩ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত সৌদি আরব ছেড়ে চলে গেছেন হাজার হাজার বিদেশি শ্রমিক। কিংবা তাদের নিজ দেশে ফেরত পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে।
মূলত চাকরির ভিসা স্পনসরশিপ কর্মসূচি লঙ্ঘনের অভিযোগে লোকজনের ওপর সরকারি ধরপাকড় শুরু হওয়ার পরই শ্রমিকদের সৌদি ছাড়ার ঢল নামতে শুরু করে।
সৌদি নাগরিক এবং বিদেশি শ্রমিকদের মধ্যে বড় ধরনের তকলিফ ও অস্থিরতার কারণে সম্প্রতি বহু শ্রমিক নিজ দেশের উদ্দেশে উড়াল দিয়েছেন।
সৌদি নেতৃবৃন্দ যখন অর্থনৈতিক দুরবস্থা সামলানোর পথ খুঁজছেন, বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণ ও চার মাস আগে সাংবাদিক জামাল খাশোগি হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় রাষ্ট্রের ভাবমর্যাদা ফেরাতে চেষ্টা করছেন এবং তখন শ্রমিকদের অন্যত্র পাড়ি জমানোর ঢল দেশটিতে নতুন করে অস্থিরতা তৈরি করছে।
ব্লুমবার্গ নিউজের খবরে বলা হয়েছে, শ্রমিকদের চলে যাওয়ার এ প্রবণতায় সৌদি কর্মকর্তারা যেন আকাশ থেকে পড়ছেন।
গত বছরের শেষ দিক থেকে প্রবাসী শ্রমিকদের ওপর চাপিয়ে দেয়া ফিগুলো উঠিয়ে নেয়া কিংবা তা আরও হালকা করার কথা ভাবছেন তারা। কারণ এতে সৌদি অর্থনীতি মারাত্মক ক্ষতির মুখে পড়েছে।
কিন্তু সৌদি আরব তার নীতিতে এখনও কোনো পরিবর্তনের কথা বলেনি। প্রবাসীদের ওপর চাপিয়ে দেয় ফিগুলো আগের মতোই বহাল আছে।
ভবিষ্যতের কথা ভাবলে শরণার্থীদের সৌদি ছাড়ার ঢলে দেশটির সরকারের অগ্রাধিকারগুলোর মধ্যে অন্তত একটি হাসিল হয়েছে। ৩০ বছরের বেশি বয়সী অর্ধেকের বেশি যুবকের জন্য কর্মসংস্থানের পথটি সহজ করে দিয়েছে।
এতে আরব দেশগুলোতে তরুণরা যেভাবে বিক্ষোভে ফেটে পড়েছিলেন, সৌদিতে সেই আশঙ্কা অনেকটা কমে গেছে। অর্থাৎ দেশটির এ উদ্যোগ তরুণ সৌদি নাগরিকদের অসন্তোষ লাঘবে সক্ষম হবে। সৌদি নেতৃত্বের অস্থিরতাও দূর করবে।
গত দুই বছরে সৌদি আরবে বেকারত্বের হার উদ্বেগজনকভাবে বাড়ছে। যেটি বর্তমানে সর্বোচ্চ ১২ দশমিক ৯ শতাংশে পৌঁছেছে।
কর্মহীনতার এই হারের কারণে সৌদি সরকার তার স্বল্পমেয়াদি বেকারত্বের লক্ষ্যমাত্রা পুনর্বিবেচনা করতে বাধ্য হয়েছে। এ ছাড়া বিদেশিরা চলে যাওয়ার পর সৌদি কর্মীদের প্রত্যাশা ও চাকরির মধ্যে যে ব্যবধান, সেটি আরও প্রকাশ্যে চলে এসেছে। যেমন কম মজুরির নির্মাণকাজ কিংবা বিভিন্ন ধরনের খুচরা কাজ উল্লেখযোগ্য।
কারেন ইয়ং আমেরিকান এন্টারপ্রাইজ ইনস্টিটিউটের পারস্য উপসাগরীয় দেশগুলোর রাজনৈতিক ও অর্থনীতিবিষয়ক বিশেষজ্ঞ। তিনি বলেন, একটা ভালো খবর হচ্ছে- এখন অনেক সৌদি নাগরিক কর্মশক্তি হিসেবে যুক্ত হচ্ছে। তাদের কেউ কেউ খুবই উচ্চশিক্ষিত হলেও দক্ষতা অনুসারে পেশাগতভাবে উপযুক্ত পদে চাকরি পাচ্ছেন না।
যুবরাজের আগ্রাসী নীতির কারণে সৌদি আরবের ব্যবসায়িক পরিবেশ বেশ বিপর্যয়ের মধ্যে রয়েছে। বিশেষ করে গত বছর দুর্নীতিবিরোধী অভিযানের নামে শত শত ব্যবসায়িক নির্বাহী, সরকারি কর্মকর্তা ও রাজপরিবারের সদস্যদের গ্রেফতার করা হয়েছে।
এ ধরপাকড়ে আন্তর্জাতিক ও স্থানীয় বিনিয়োগকারীদের এক ভুতুড়ে অবস্থায় ফেলে দিয়েছে।
লাইসেন্স ও নিবন্ধন ব্যবসার ক্ষেত্রে নতুন নতুন বাধার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ছাড়া প্রতিষ্ঠানে কর্মীদের নিয়োগের ক্ষেত্রে সৌদি নাগরিকদের নিয়োগে বাধ্যবাধকতা রয়েছে।
বিশ্ব - এর সব খবর
আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ
- আছিয়ার শেষ স্বীকারোক্তি: আছিয়া নিজে বলে গেছে ধ/র্ষণ করেছে কে (ভিডিওসহ)
- আ.লীগকে ৭৫% মানুষ সমর্থন করছে জাতিসংঘের জরিপ, জানা গেল সত্যতা
- শেয়ারবাজারে কারসাজি: বিএসইসি'র কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে তদন্তে সামনে এলো গুরুত্বপূর্ণ নাম
- মেহেদী হাসান মিরাজের নতুন নাম দিল আইসিসি
- মাগুরার আছিয়ার বোনের বক্তব্য: শোনেন আসল সত্যিটা (ভিডিওসহ)
- আছিয়ার ধ/র্ষক দুলাভাই কে নিয়ে তথ্য দিলেন তার শ্রেণী শিক্ষক মাহফুজ
- শেয়ারহোল্ডারদের জন্য নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা
- বিনিয়োগকারীদের মাঝে আতঙ্ক, জরুরি পদক্ষেপ নিলেন ডিএসই চেয়ারম্যান
- স্বাস্থ্য খাতে বড় সংস্কার: ২৬ মেডিকেল কলেজ বন্ধের সিদ্ধান্ত
- শান্ত বাদ, তবে নতুন অধিনায়ক মিরাজ নয়
- দুই কোটি নয় মুস্তাফিজকে দলে নিতে কলকাতাকে গুনতে হবে ৬.৫ কোটি রুপি
- বাড়লো সৌদি রিয়াল রেট বিনিময় হার (১৩ মার্চ ২০২৫)
- বাড়লো সৌদি রিয়াল রেট বিনিময় হার
- আজ সামান্য বাড়লো সৌদি রিয়াল রেট বিনিময় হার
- বাংলাদেশে জনপ্রতি ফিতরার হার ঘোষণা