ঢাকা, রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১

চমক দেখালেন ঐক্যফ্রন্টের সুলতান

রাজনীতি ডেস্ক . ২৪আপডেট নিউজ
২০১৮ ডিসেম্বর ৩১ ২২:৫৫:৪২
চমক দেখালেন ঐক্যফ্রন্টের সুলতান

এ আসনে আওয়ামী লীগ বিএনপি থেকে কেউ নির্বাচন না করলেও নৌকা আর ধানের শীষের মধ্যে মূলত লড়াই হয়। নির্বাচনের পর সাবেক এই দুই এমপিকে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ দেশ বিদেশে চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ। সুলতান মনসুরের সমর্থকরা যদিও বলছে এটা বিএনপির সাফল্য কিন্তু অতীত বলছে ভিন্ন কথা।

এই আসন থেকে এর আগে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে কখনো কেউ জয়ী হতে পারেনি। এমনকি কখনো তৃতীয় থেকে দ্বিতীয় অবস্থানে আসতে পারেনি বিএনপির কোনো প্রার্থী। বরং ১৯৯১ এবং ২০০১ সালে এ আসনে দুইবার জামানত হারায় বিএনপি। এবার এই আসনে ধানের শীষের প্রতীক নিয়ে ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী ডাকসুর সাবেক ভিপি সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমদ জয়ী হয়ে তিনি গড়লেন নতুন এক ইতিহাস। হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ে মোট ৯৩ টি কেন্দ্রের মধ্যে সুলতান মনসুর ধানের শীষ নিয়ে পেয়েছেন ৭৯ হাজার ৭৪২ ভোট, আর নৌকা প্রতীক নিয়ে এম এম শাহীন পেয়েছেন ৭৭ হাজার ১৭০ ভোট।

বঙ্গবন্ধুকে হত্যার প্রতিবাদে কাদের সিদ্দিকীর নেতৃত্বে অস্ত্র হাতে প্রতিরোধ আন্দোলনে যোগ দিয়েছিলেন সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমেদ। এ কারণে জীবনের বড় একটা সময় তাকে কাটাতে হয়েছে ভারতের মেঘালয়ের পাহাড়ে আত্মগোপনে। ১৯৮৯ সালে ডাকসু’র ভিপি পদে তার বিজয় ছিল ’৭৫ পরবর্তী আওয়ামী লীগের প্রথম আনুষ্ঠানিক কোনো জয়। তার নেতৃত্বে ‘৭৫-এর পর প্রথম বঙ্গবন্ধুর ছবি স্থান পায় ডাকসু ভবনে। এবারের নির্বাচনী মাঠে হামলা-মামলায় শত শত কর্মী গ্রেপ্তারের পরও মনোবলে ভাঙন ধরেনি সুলতানের। যে আসনে কখনো জয়ী হতে পারেনি ধানের শীষ সে আসনে ধানের শীষ নিয়ে শেষ হাসি হাসলেন সুলতান মনসুর। ১৯৯৬ সালে সুলতান মনসুর নৌকা প্রতীক নিয়ে এখান থেকে এমপি হয়েছিলেন, যা ছিল নৌকার সর্বশেষ জয়। এরপর কখনো জয় পায়নি নৌকা। কখনো জেতেনি ধানের শীষ।

১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারিতে বিতর্কিত একদলীয় নির্বাচনে ধানের শীষের জয় দেখানো হলেও নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুযায়ী তা স্বীকৃতি পায়নি। কখনো জয় না পাওয়া এ আসনে সুলতান মনসুরের ওপর ভর করে এবার ধানের শীষ চমক দেখিয়েছেন এমনটি বলছেন স্থানীয় ভোটাররা। কারণ, সুলতান মনসুরের ব্যক্তিগত ইমেজের ওপর ভর করে এখানের মানুষ ধানের শীষে ভোট দিয়েছেন। ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন পাননি সুলতান। সে নির্বাচনে সুলতান বিহীন নৌকা পেয়েছিল মাত্র ২ হাজার ভোট।

নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা যায়, ১৯৭৯ সালে প্রথম নির্বাচনে আসে বিএনপি। সে নির্বাচনে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে অংশগ্রহণ করে সৈয়দ আকমল হোসেন তৃতীয় স্থান অর্জন করেন। ১৯৮৬ সালের নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ করেনি। ১৯৯১ সালে এ আসনে বিএনপির প্রার্থী আতাউর রহমান নির্বাচনে আসলেও মাত্র পাঁচ হাজার ভোট পেয়ে জামানত হারান। ১৯৯৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে বিতর্কিত একদলীয় নির্বাচনে ধানের শীষের জয় দেখানো হলেও নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুযায়ী তা স্বীকৃত নয়। ১৯৯৬ সালে সব দলের অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনে এ আসনে বিএনপি থেকে ধানের শীষ নিয়ে নির্বাচনে আসেন এম এম শাহীন। কিন্তু এবারও তৃতীয় হন তিনি।

২০০১ সালের নির্বাচনে এ আসনে চারদলীয় জোট থেকে ড. শফিকুর রহমান নিবার্চন করে জামানত হারান। ২০০৮ সালের নির্বাচনে বিএনপি থেকে ধানের শীষে নির্বাচন করেন অ্যাডভোকেট আবেদ রাজা। সেবারো ধানের শীষ তৃতীয় অবস্থান থেকে উন্নতি করতে পারেনি। ফলে এ আসনে কোনোদিন জয়ের মুখ দেখেনি ধানের শীষ। সর্বশেষ ২০১৪ সালের সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেনি বিএনপি। স্থানীয় ভোটারররা বলছেন, সুলতান মনসুর ক্লিন ইমেজের জাতীয় নেতা। অতীতে আওয়ামী লীগের রাজনীতি করলেও প্রতিপক্ষকে হয়রানি করেননি মনসুর।

আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সম্পৃক্ত থাকা অবস্থায় সংখ্যালঘুদের ভোট বার বার নৌকা প্রতীকে পেয়েছেন সুলতান মনসুর, যার বিশাল একটি অংশ এবার মনসুর পেয়েছেন অসাম্প্রদায়িক ব্যক্তিত্বের কারণে। কুলাউড়া উপজেলার অনেক আওয়ামী লীগের নেতা দিনে নৌকার পাশে থাকলেও রাতে ছিলেন ধানের সাথে।

আজ সোমবার বিকেলে এ বিষয়ে সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমদ কালের কণ্ঠকে বলেন, আমি জনগণের ওপর আস্থাশীল ছিলাম। আমার বিশ্বাস, সব দলের লোক আমাকে ভোট দিয়েছে কারণ, আমি কেমন মানুষ এ এলাকার প্রতিটি মানুষ জানে।

তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর আদর্শে বিশ্বাসী ও একজন অনুসারী, আমি আওয়ামীলীগের কর্মী ছিলাম, থাকবো। মহান জাতীয় সংসদে আপনার দলীয় পরিচয় কি হবে প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, গণফোরামের হয়ে মনোনয়ন জমা দিয়েছি বলে আমি গণফোরামের কর্মী হয়ে যাইনি। আমার দলীয় পরিচয় কি হবে সেটা ভবিষ্যৎই বলে দেবে।

এম এম শাহীনের প্রতীক নৌকার পরাজয়ের ব্যাপারে তাঁর কর্মী সমর্থকরা আওয়ামী লীগের একটি মহলকে দায়ী করে তারা বলেন, এ আসনে উড়ে এসে কেউ জুড়ে বসুক আওয়ামী লীগের একটি মহল কোনো অবস্থাতেই মানতে রাজি ছিলো না। তাই আওয়ামী লীগের একটি অংশের ভোট সুলতান মনসুর পেয়েছেন। অনেক আওয়ামী লীগ নেতা দিনে নৌকা নৌকা বলে গলাবাজী করলেও রাতের আঁধারে ধানের শীষের পক্ষে কাজ করেছেন। তাছাড়া প্রশাসন পরিকল্পিতভাবে নৌকাকে পরাজিত করেছে। ভোটের দিন সকাল থেকে প্রশাসন নৌকার কর্মী সমর্থকদের সাথে বিমাতাসুলভ আচরণ করে। রাতে কন্ট্রোলরুমে কারসাজির মাধ্যমে নৌকাকে পরাজিত করা হয়েছে। ২৫৭২ ভোটে নৌকা পরাজিত হলেও এখানে বাতিল ভোট রাতে দেখানো হয় ২৯২৫ এবং সোমবার দিনে দেখানো হয় ৩৭২৩টি।

উল্লেখ্য, উপজেলার মোট ৯৩টি ভোট কেন্দ্রে ১ লাখ ৬১ হাজার ৭৩৭ জন ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রদান করেন। এ আসনে মোট ভোটার সংখ্যা ছিলো ২ লাখ ৪১ হাজার ১৭০। সুত্রঃ কালের কন্ঠ

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ



রে