ঢাকা, সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১

আপনি কি বেশি বয়সে সন্তাননেয়ার কথা ভাবছেন

স্বাস্থ্য ডেস্ক . ২৪আপডেট নিউজ
২০১৮ ডিসেম্বর ১৫ ২২:০৪:৫৭
আপনি কি বেশি বয়সে সন্তাননেয়ার কথা ভাবছেন

বেশি বয়সে মা হতে চাইলে যে সমস্যাগুলোর মুখোমুখি হতে পারেন তা হলো-

গর্ভধারণে দীর্ঘসূত্রিতা

একজন মেয়ে জন্মের সময় কিছুসংখ্যক ডিম্বাণু নিয়ে জন্মায় যা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে নিঃশেষ হতে থাকে। ৩০ বছরের পর থেকেই ডিম্বানুর সংখ্যা এবং গুণগত মান কমতে থাকে। এতে করে এ সময়ে গর্ভধারণ করার চেষ্টার পরও দিনের পর দিন ব্যর্থ হতে পারে। তাই ৩০ বছরের পর কেউ যদি মা হওয়ার জন্য ছয় মাস চেষ্টা করার পরও ব্যর্থ হন, তবে দেরি না করে অভিজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শে ডিম্বানু উৎপাদক ঔষধ খেতে পারেন।

জেষ্টেশনাল ডায়াবেটিস

গর্ভকালীন সময়ে কোনো কোনো মা ডায়াবেটিসে ভুগে থাকেন, একে বলে জেষ্টেশনাল ডায়াবেটিস। অধিক বয়সে গর্ভধারণ করলে এর সম্ভাবনা আরও বেড়ে যায়। কনসিভ করার আগে থেকেই কিছু মা ডায়াবেটিসে আক্রান্ত থাকতে পারেন। এক্ষেত্রে কনসিভ করার আগে থেকেই তাকে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। মনে রাখতে হবে গর্ভাবস্থায় অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস বাচ্চার বিকলাঙ্গতা, ওজন বৃদ্ধি ও অধিক মৃত্যু-ঝুঁকির কারণ হতে পারে।

উচ্চ রক্তচাপ

গবেষণায় দেখা গেছে বয়স্ক মায়েদের গর্ভকালীন উচ্চ রক্তচাপে ভোগার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। গর্ভকালীন নিয়মিত ব্লাড প্রেসার চেকআপের মাধ্যমে উচ্চ রক্তচাপজনিত জটিলতা এড়ানো যায়। যারা আগে থেকেই উচ্চ রক্তচাপের জন্য ঔষধ খাচ্ছেন তাদের উচিত গর্ভধারণের আগেই ডাক্তারের পরামর্শে বাচ্চার জন্য ক্ষতিকর ঔষধ পরিবর্তন করা।

অধিক গর্ভপাতের সম্ভাবনা

গর্ভপাতের কারণের মধ্যে রয়েছে মায়ের বিভিন্ন অসুখ যেমন অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস,উচ্চ রক্তচাপ, থাইরয়েড গ্রন্থির অসুখ ইত্যাদি। এছাড়া বাচ্চার জীনগত ত্রুটি বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে বাড়ে যা গর্ভপাতের কারণ ঘটায়।

সিজারের সম্ভাবনা বৃদ্ধি

গর্ভকালীন সময়ে বিভিন্ন জটিলতা দেখা দেয়ার কারণে বয়স্ক মায়েদের সিজারের সম্ভাবনা বেশি থাকে।

ভ্রূণের জীনগত ত্রুটি

বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে ভ্রুনের জীনগত ত্রুটি হবার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। মায়ের বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে ডাউন সিনড্রোম (ক্রোমোজোমাল ত্রুটিপুর্ন বাচ্চা) নিয়ে বাচ্চা জন্মানোর হারও বেড়ে যায়। গবেষণায় দেখা গেছে দেখা গেছে ২৫ বছর বয়সী মায়েদের ডাউন সিনড্রোম বাচ্চা হওয়ার ঝুঁকি থাকে প্রতি ২৫০০ জনের মধ্যে একজনের,যা ৪০ বছর বয়সী মায়েদের ক্ষেত্রে গিয়ে দাঁড়ায় প্রতি ১০০ জনে একজন। এমনিয়টিক ফ্লুইড (গর্ভস্ত বাচ্চার চারিদিকের পানি) নিয়ে পরীক্ষা করে কনসিভের তিন থেকে চার মাসের মধ্যে ভ্রুনের জীনগত ত্রুটি সনাক্ত করা সম্ভব।

অন্যান্য জটিলতা

এছাড়াও মাল্টিপল প্রেগনেন্সি (একাধিক বাচ্চা গর্ভধারণ), সময়ের আগেই বাচ্চা হওয়া, গর্ভস্থ বাচ্চার মৃত্যু, কম ওজনের বাচ্চা জন্মদান ইত্যাদি জটিলতা বয়েসের সঙ্গে সঙ্গে বাড়ে। তবে এ সম্পর্কে সচেতনতা এবং পূর্ব সতর্কতা অনেক জটিলতা এড়াতে সাহায্য করতে পারে। কিছু পূর্ব প্রস্তুতিও পারে আপনার সন্তান ধারণের পথটি সহজ করতে।

প্রথমত শরীরের উচ্চতা অনুযায়ী ওজন ( BMI) নরমাল রাখতে হবে। মাসিকের যেকোনো অনিয়ম যেমন- অনিয়মিত মাসিক, অধিক রক্তপাত কিংবা মাসিকের সময় প্রচণ্ড ব্যাথা কিছু প্যাথোলজির কারণে হতে পারে, যা পরবর্তীতে কনসিভের ক্ষেত্রে ঝামেলা করে। তাই এ লক্ষণগুলো থাকলে অবশ্যই ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ করুন।

এছাড়া ডায়াবেটিস, প্রেশার বা থাইরয়েডের সমস্যা থাকলে প্রেগন্যান্সির আগেই ঔষধের মাধ্যমে কন্ট্রোলে রাখতে হবে।সবশেষে, কনসিভ করার পরপরই একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে থাকুন, যাতে একটি সুস্থ বাচ্চার জন্মদান সহজ হয়।

ডা. নুসরাত জাহান, সহযোগী অধ্যাপক (অবস-গাইনি), ডেলটা মেডিকেল কলেজ, মিরপুর ১, ঢাকা।

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ



রে