ঢাকা, রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১

মালয়েশিয়ার লেংগিং ক্যাম্পের কমান্ডারের সঙ্গে জরুরি বৈঠক করেছেন বাংলাদেশ দূতাবাসের কাউন্সিলর

বিশ্ব ডেস্ক . ২৪আপডেট নিউজ
২০১৮ ডিসেম্বর ১৩ ০১:০১:৪০
মালয়েশিয়ার লেংগিং ক্যাম্পের কমান্ডারের সঙ্গে জরুরি বৈঠক করেছেন বাংলাদেশ দূতাবাসের কাউন্সিলর

বৈঠকে শ্রম কাউন্সিলরের সঙ্গে ছিলেন দূতাবাসের শ্রম শাখার প্রথম সচিব মো. হেদায়েতুল ইসলাম মন্ডল, প্রথম সচিব কন্স্যুলার মো. মাসুদ হোসাইন, শ্রম শাখার কল্যাণ সহকারী মুকছেদ আলী ও জাহাঙ্গীর আলম। এ ছাড়া নেগরি সেম্বিলান ইমিগ্রেশন বিভাগ ও লেংগিং ক্যাম্পের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে গত ৩ ডিসেম্বর সিমুনিয়া ক্যাম্প পরিদর্শন করেন মালয়েশিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার মহ. শহীদুল ইসলাম। এ সময় সিমুনিয়া ক্যাম্প কর্মকর্তাদের নিয়ে এক মতবিনিময় সভা করেন রাষ্ট্রদূত। সভায় রাষ্ট্রদূত ক্যাম্পে থাকা বাংলাদেশের নাগরিকদের দ্রুত দেশে ফেরত প্রেরণ করার জন্য অনুরোধ করেন।

এ দিকে বৈঠক শেষে দূতাবাসের শ্রম কাউন্সিলর মো. সায়েদুল ইসলাম বলেন, অহেতুক বন্দী না রেখে দ্রুত দেশে পাঠানোর জন্য অনুরোধ করা হয়। তিনি জানান, চলতি বছরের গত ১৭ জুলাই দূতাবাসেও লেংগিং ক্যাম্পের কমান্ডারের সঙ্গে অবৈধ কর্মীদের দ্রুত দেশে পাঠাতে অনুরূপ বেঠক করেছি।

সায়েদুল ইসলাম বলেন, ‘ক্যাম্পে থাকা বাংলাদেশের নাগরিকদের দেশে ফেরত প্রেরণ এবং অহেতুক বাংলাদেশি কর্মীদের হয়রানি না করার আশ্বাস দেন কামান্ডার জুরাইন বিন মো. ইদ্রিছ।’

এক প্রশ্নের জবাবে শ্রম কাউন্সিলর বলেন, কারাগার পরিদর্শনে গিয়ে বন্দিদের নিম্নমানের খাবারের অভিযোগ শুনে কারা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। প্রত্যেকটি ক্যাম্পে কতজন বাংলাদেশি আটক রয়েছে তাদের তালিকা দ্রুত মিশনে পাঠাতে বলা হয়েছে।

দূতাবাসের শ্রম শাখার প্রথম সচিব হেদায়েতুল ইসলাম মন্ডল এ প্রতিবেদককে জানান, অহেতুক বন্দী না রেখে দ্রুত দেশেফেরত পাঠাতে বলা হয়েছে। ক্যাম্পে ২৪৪ জনের সাক্ষাৎ শেষে বন্দীদের মাঝে শুকনো খাবার বিতরণ করেন দূতাবাসের কর্মকর্তারা।

তিনি বলেন, ‘যাদের সাজার মেয়াদ শেষ হয়েছে এই ক্যাম্পে থেকে তাদের দেশে পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে। আগামী সপ্তাহে ১২ জন বাংলাদেশি দেশে ফেরত যাবেন। বাকিদের দেশে পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে। এ ছাড়া দুইজন একটি বাংলাদেশি হত্যা মামলায় সাক্ষী হিসেবে ক্যাম্পে রয়েছেন। ক্যাম্প কর্মকর্তাদের অনুরোধ করা হয়েছে- এ দুইজনকে যেন সেফ হাউসে রাখা রাখা হয়।’

অনুসন্ধানে জানা গেছে, ভাগ্য ফেরানোর নেশায়, দালালদের প্রলোভনে পরিবারে স্বচ্ছলতার স্বপ্ন নিয়ে বাংলাদেশের অনেক যুবক লুফে নেন স্বল্প খরচে মালয়েশিয়া যাওয়ার সুযোগ। তবে মালয়েশিয়া যাত্রা শুরুর আগে তারা উপলব্ধি করতে পারেননি, কী আছে সামনে। ভাগ্য বদলের নেশায় তারা বিভোর তখন।

সোনার হরিণ হাতে পেতে মালয়েশিয়া যাত্রা শুরুর পরপরই খুলতে থাকে তাদের চোখ। কিন্তু ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে গেছে। দুর্গম সাগরপথে ক্ষুধা, তৃষ্ণা, অবর্ণনীয় অত্যাচারে হঠাৎ চোখ খুলে যাওয়া এই যুবকদের সামনে তখন না আছে সামনে যাওয়ার পথ, না আছে পেছনে ফেরার পথ।

সমুদ্র পথ, থাইল্যান্ডের জঙ্গল আর মালয়েশিয়ায় বন্দিজীবন কাটিয়ে চলতি মাসে পিকে নানাস ক্যাম্পের ১৩৭ জন ও সিমুনিয়া ক্যাম্প থেকে ১২ জন মোট ১৪৯ জন ফিরেছেন বাংলাদেশে। এসব বন্দী বাংলাদেশিরা দেশের অর্থনৈতিক চাকাকে সচল করতে এবং পরিবারের সদস্যদের মুখে হাসি ফোটাতে ভিটেমাটি, সহায়-সম্বল বিক্রি করে স্বপ্নের দেশ মালয়েশিয়ায় পাড়ি জমিয়েছিলেন। ভাগ্যের নির্মম পরিহাস পরিবারে হাসি ফোটানো তো দূরে থাক, পুলিশের হাতে ধরা পড়ে বন্দিশিবিরে অসহায়ত্বের গ্লানি টেনেছেন তারা।

জীবিকার তাগিদে স্বজনদের ফেলে জীবনবাজি রেখে কত লোক সাগর পাড়ি দিতে নৌকায় চড়েছে? তাদের মধ্যে পথেই মারা গেছে কতজন? এসব প্রশ্ন এখন ঘুরেফিরে আসছে। এদিকে অবৈধ অভিবাসীদের ধরতে ইমিগ্রেশন ও অন্যান্য বিভাগের প্রতিদিনের মেগা-থ্রি অভিযানে কতজন বাংলাদেশিকে আটক করা হয়েছে- এ রিপোর্ট লিখা পর্যন্ত তার সঠিক পরিসংখ্যান পাওয়া যায়নি।

তবে দেশটির সিমুনিয়া, লেঙ্গিং, জুরুত, তানাহ মেরায়, মাচাম্বু, পেকা নানাস, আজিল, কেএলআইএ সেপাং ডিপো, ব্লান্তিক, বুকিত জলিল ও পুত্রজায়ায় সাম্প্রতিক অভিযানে আটককৃত বাংলাদেশির সংখ্যা প্রায় আড়াই হাজারের ও বেশি বলে ধারণা করা হচ্ছে।

এদিকে দূতাবাসের একটি নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানায়, এসব ক্যাম্পে ৭ শর অধিক বাংলাদেশি রয়েছেন যাদের সাজা শেষ হচ্ছে, তাদের দেশে পাঠানো হচ্ছে।

মালয়েশিয়ার ইমিগ্রেশন সূত্র জানায়, বিভিন্ন কারাগার ও ক্যাম্পে যারা আটক আছেন, তাদের বেশিরভাগই অবৈধভাবে মালয়েশিয়ায় প্রবেশ কিংবা অবৈধভাবে থাকার কারণে গ্রেফতার হয়েছেন। এদের বিরুদ্ধে মালয়েশিয়ার অভিবাসন আইন, ১৯৫৯-এর ধারা ৬(১) সি/১৫ (১) সি এবং পাসপোর্ট আইন, ১৯৬৬-এর ১২(১) ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অবৈধপথে বিদেশে পাড়ি দিতে গিয়ে অহরহ প্রাণহানি ঘটছে, কেউ ধরা পড়ছেন নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে। কেউবা প্রতারকদের হাতে জিম্মি হচ্ছেন। সহায়-সম্বল বিক্রি করে টাকা দেয়ার পর মুক্তি মিলছে কারও।

এদিকে হাইকমিশনের শ্রম শাখার প্রথম সচিব হেদায়েতুল ইসলাম মন্ডল জানান, বন্দিশিবিরে যারা আটক রয়েছেন, তাদেরকে দ্রুত দেশে পাঠানোর সব রকম ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। এর মধ্যে দূতাবাসের শ্রম শাখার সচিবরা প্রত্যেকটি বন্দিশিবির পরিদর্শন করে বাংলাদেশিদের নাগরিকত্ব যাচাই এবং সনাক্ত করে পর্যায়ক্রমে তাদের দ্রুত দেশে পাঠানোর ব্যবস্থা করছেন। এক প্রশ্নের জবাবে এ কর্মকর্তা বলেন, ‘কারাগার পরিদর্শনে গিয়ে বন্দিদের নিম্নমানের খাবারের অভিযোগ শুনে কারা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। প্রত্যেকটি ক্যাম্পে কতজন বাংলাদেশি আটক রয়েছে, তাদের তালিকা দ্রুত মিশনে পাঠাতে বলা হয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘অনেক সময় দেখা যায়, একটি ক্যাম্প থেকে তালিকা দিতে এক থেকে দুই সপ্তাহ বিলম্ব হওয়ায় দূতাবাস থেকে ট্রাভেল পাস ইস্যু করতে সমস্যা হয়। আবার ক্যাম্প থেকে তালিকা পাঠানো হলেও ব্যক্তির ফরম থাকে না। পরে ক্যাম্পে যোগাযোগ করে তা নিয়ে আসতে হয়। তারপরও দ্রুত বন্দিদের দেশে পাঠাতে আমরা প্রাণপণ চেষ্টা করছি। যাদের কেউ নেই অথবা টিকিটের ব্যবস্থা হচ্ছে না, তাদের দূতাবাসের পাশাপাশি জনহিতৈষী কাজে নিয়োজিতদের সহযোগিতায় বিমান টিকিট দিয়ে তাদের দেশে পাঠানো ব্যবস্থার করা হচ্ছে।

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ



রে