ঢাকা, সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১

তত্ত্বাবধায়ক নয়, নির্বাচনকালীন সরকার করবে ঐক্যফ্রন্ট

রাজনীতি ডেস্ক . ২৪আপডেট নিউজ
২০১৮ ডিসেম্বর ০২ ০৮:০৭:২৯
তত্ত্বাবধায়ক নয়, নির্বাচনকালীন সরকার করবে ঐক্যফ্রন্ট

জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে নির্বাচনী ইশতেহার নিয়ে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে। নেতৃবৃন্দ জানান, ঐক্যফ্রন্টের ইশতেহার প্রণয়নের কাজ ইতোমধ্যেই শেষ হয়েছে। আগামী সোম বা মঙ্গলবারের মধ্যেই তাঁরা বৈঠক করে ইশতেহার চূড়ান্ত করবেন। তবে বিএনপির সঙ্গে ইশতেহারের কিছু বিষয় নিয়ে দ্বিমত রয়েছে বলেও জানান তাঁরা। তাই ঐক্যফ্রন্ট, বিএনপি ও ২০ দলীয় জোটের আলাদা ইশতেহারও হতে পারে বলে মনে করেন তাঁরা।

ঐক্যফ্রন্টের নির্বাচনী ইশতেহার প্রণয়ন কমিটির একজন সদস্য প্রথম আলোকে বলেন, ঐক্যফ্রন্টের ইশতেহারই সবার সম্মতিতে করা হবে। তবে বিএনপি আলাদাভাবে দলীয় ইশতেহার ঘোষণা করতে পারে।

এ সম্পর্কে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যরিস্টার মওদুদ আহমদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের ভিশন ২০৩০ আছে, আর ঐক্যফ্রন্ট গঠনের সময় ১১ দফা দেওয়া হয়েছে। এর ভিত্তিতেই ইশতেহার প্রণয়ন করা হবে। আগামী সোমবার নাগাদ বিষয়গুলো চূড়ান্ত করা হবে।’ তবে তিনি দলীয় ইশতেহারের বিষয়ে কিছু বলেননি।

ইশতেহার প্রণয়ন কমিটিতে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, বিএনপি থেকে জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক মাহফুজ উল্লাহ, গণফোরামের আ ও ম শফিক উল্লাহ, জেএসডির শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের ইকবাল সিদ্দিকী ও নাগরিক ঐক্যের জাহেদ উর রহমান রয়েছেন। আজকের মধ্যে তাঁরা একটি ঘোষণা দেওয়ার কথা থাকলেও খসড়া ইশতেহারটি চূড়ান্ত না হওয়ায় তা প্রকাশ করেননি নেতৃবৃন্দ।

ইশতেহার প্রণয়ন কমিটির সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তাদের ৭ দফা দাবি ও ১১ দফা লক্ষ্যের ভিত্তিতে এই ইশতেহার প্রণীত হচ্ছে। এখানে ওই ৭ ও ১১ দফার অনেক কিছুই থাকবে। তবে তার বাস্তবায়ন কিভাবে হবে, তা আরও সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হবে।

নির্বাচনকালীন সরকারের বিধানের বিষয়ে খসড়া ইশতেহারে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা না হলেও নেতারা আলোচনার মাধ্যমে সেটা ঠিক করবেন বলে জানান। তাঁরা বলেন, মানুষ যাতে মুক্তভাবে তাঁদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারে সেটি নিশ্চিত করতে এই সরকারের বিষয়টি সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করা হবে। এখন পর্যন্ত সংবিধানে এ ধরনের কিছু না থাকায় সরকার নিজের ইচ্ছামত চালিয়ে যাচ্ছে। আজ শনিবার ঐক্যফ্রন্টের সংবাদ সম্মেলনে ড. কামাল হোসেনকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বিষয়টি এড়িয়ে যান।

খসড়া ইশতেহারে অনাস্থা ও অর্থবিল ছাড়া অন্য যেকোনো ক্ষেত্রে দলীয় সাংসদের বিরুদ্ধে ভোট দিতে সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ সংশোধন করা হবে বলে উল্লেখ রয়েছে বলে জানিয়েছেন একাধিক নেতা। তাঁরা সংসদে প্রাপ্য ভোটের সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিকে নিয়ে উচ্চকক্ষ সৃষ্টি করতে চান। পরপর দুই মেয়াদের বেশি প্রধানমন্ত্রী না থাকার বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করতে চান। নিম্ন আদালতে পুরোপুরি সুপ্রিম কোর্টের অধীনস্ত করার কথাও রয়েছে এতে। সূত্রমতে, বিভাগীয় সদরে হাইকোর্টের বেঞ্চ, পৌর এলাকার সব সেবা সংস্থাকে মেয়রের অধীনে রেখে সিটি গভর্নেন্স চালু করা হবে। প্রশাসনিক কাঠামো প্রাদেশিক পর্যায়ে বিন্যস্ত করার জন্য কমিশন গঠন করার মতো কাজগুলো করবেন বলে ইশতেহারে উল্লেখ করা হয়েছে।

জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সূত্র জানায়, সরকার, সংসদ, রাজনীতি, অর্থনীতি, শিক্ষা, কৃষি, পররাষ্ট্রনীতিসহ সরকারের সবগুলো বিষয় নিয়ে ইশতেহারে সুনির্দিষ্ট আশ্বাস থাকবে। সরকার নিজেদের এক, দুই ও পাঁচ বছরে কি কি করতে চান সেগুলো বর্ণনা থাকবে। তবে দীর্ঘমেয়াদে কী করতে চান, সেগুলো সরকার গঠন করার পর আলোচনায় আনার কথা ভাবছেন নেতারা। সূত্র জানায়, ‘প্রজাতন্ত্রের সকল ক্ষমতার মালিক জনগণ’ এই নীতির ভিত্তিতে সরকার পরিচালনায় পদক্ষেপ নেওয়া হবে। এই মালিকানা নির্বাচনে পরাজিত দলের নেতা–কর্মী ও সমর্থকদের জন্যও থাকার বিষয়টি আশ্বাস্ত করা হবে।

এছাড়া, মতপ্রকাশের অবারিত স্বাধীনতা, ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট বাতিল করা, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, গুম, রিমান্ডে নির্যাতন পুরোপুরি বন্ধ করার মতো বিষয়গুলো থাকবে। রিমান্ডের নামে পুলিশি হেফাজতে যেকোনো প্রকার শারীরিক নির্যাতন বন্ধ করা হবে। সাদা পোশাকে কাউকে গ্রেপ্তার করা হবে না। মামলাজট কমানোর নানা পদক্ষেপের সঙ্গে উচ্চ আদালতের বাৎসরিক ছুটি ছয় সপ্তাহে সীমিত করা হবে।

শিক্ষাব্যবস্থায় পিএসসি ও জেএসসি পরীক্ষা বাতিল, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা, নিয়মিত ডাকসু নির্বাচন দেওয়া, ৩ বছরের মধ্যে সব সরকারি শূন্য পদে নিয়োগ দেওয়া, চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা তুলে দেওয়া, ত্রিশোর্ধ শিক্ষিত বেকারদের ভাতা দেওয়া, প্রতিবন্ধী ছাড়া কোনো কোটা না রাখা, মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের কারিগরি শিক্ষা দিয়ে বিদেশে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলা হয়েছে।

জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ইশতেহার প্রণয়ন কমিটির সদস্য জাফরুল্লাহ চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, রাষ্ট্রের মালিক জনগণ এবং তারা পরিবর্তন চায়। ঐক্যফ্রন্টের ইশতেহারে সংবিধান সংশোধনের বিষয় থাকবে। জনকল্যাণকর রাষ্ট্রের জন্য সাংবিধানিক সংস্কার দরকার। জোটের অন্যান্য শরিকদের আলাদা করে ইশতেহার করার ব্যাপারে জাফরুল্লাহ বলেন, ‘এটা জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ইশতেহার এবং এটাই প্রকাশ হওয়ার কথা। অন্যদলগুলো নিজেদের মধ্যে ইন্টারনাল কিছু করে থাকতে পারে।‘ তিনি আশা করেন, ইশতেহার একটাই হবে এবং তা এই সপ্তাহের মধ্যেই চূড়ান্ত হয়ে প্রকাশ হতে পারে।

এছাড়া, যেসব বিষয় জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ইশতেহারে থাকতে পারে, সেগুলো হচ্ছে— গার্মেন্টস এলাকায় শ্রমিকদের জন্য বহুতল ভবন নির্মাণ করে আবাসনের ব্যবস্থা করা, স্থানীয় সমবায় সমিতির মাধ্যমে কৃষিপণ্যের মূল্য নির্ধারণ, দুর্নীতির বিচার বিশেষ ট্রাইব্যুনালে করা, ন্যায়পাল নিয়োগ করা, দুর্নীতিবাজ সরকারি কর্মকর্তাদের গ্রেপ্তারে সরকারের অনুমতির বিধান বাতিল করা, শেয়ারবাজারে লুটপাটে জড়িতদের বিচার করা, সংরক্ষিত নারী আসনের প্রথার পরিবর্তে সরাসরি নির্বাচনের ক্ষেত্রে বাধ্যতামূলক ২০ শতাংশ মনোনয়ন বিধান করে দুই মেয়াদের পর আর সংরক্ষিত আসন না রাখার মতো বিষয়গুলো রয়েছে।

স্বাস্থ্যখাতে আলাদা পরিকল্পনা আছে ঐক্যফ্রন্টের। এর মধ্যে ৩১ শয্যাবিশিষ্ট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সকে ৫০ শয্যা, সকল জেলায় একটি করে মেডিকেল কলেজ স্থাপন ও ৫০০ শয্যার হাসপাতাল, সিসিইউ, আইসিইউ, এনআইসিইউ, কিডনী ডায়ালাইসিস সেন্টার, ক্যান্সারের কেমোথেপারী সেন্টার গড়ে তোলার আশ্বাস রয়েছে ঐক্যফ্রন্টের। ঔষধ ও ডায়াগনস্টিক পরীক্ষার খরচ কমানোর কথাও রয়েছে।

নিরাপদ সড়ক আন্দোলনকারীদের ওপর হামলার বিচার, গণপরিবহনকে প্রাধান্য দিয়ে পরিবহন নীতি প্রণয়ন, রেলখাতকে গুরুত্ব দেওয়া, এক বছরের মধ্যে ভেজাল ও রাসায়নিকমুক্ত নিরাপদ খাদ্য পাওয়ার নিশ্চয়তা দেওয়া, ইন্টারনেট খরচ অর্ধেকে নামিয়ে আনা, সংখ্যালঘু মন্ত্রণালয় করা, তাদের ওপর হামলার বিচার বিশেষ ট্রাইব্যুনালে করা। অভিন্ন নদীর পানিবণ্টন, রোহিঙ্গা সমস্যাসহ অন্যান্য দ্বিপাক্ষিক সমস্যা আলোচনার মাধ্যমে দ্রুত সমাধান করার কথাও থাকবে বলে সূত্র জানিয়েছে।

সুত্রঃ প্রথম আলো

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ



রে