ঢাকা, সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১

ভোটে না দাঁড়ানোর আসল কারন জানালেন ড. কামাল

রাজনীতি ডেস্ক . ২৪আপডেট নিউজ
২০১৮ নভেম্বর ২৯ ১৩:২৭:৪২
ভোটে না দাঁড়ানোর আসল কারন জানালেন ড. কামাল

বুধবার বিকাল ৫টা পর্যন্ত রিটার্নিং বা সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তাদের কাছ থেকে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ ও জমা দেয়ার শেষ সময় ছিল। সরাসরি ছাড়াও এবারই প্রথম অনলাইনে মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার সুযোগ রাখা হয়। জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শরিক দলগুলোর প্রার্থীরা মনোনয়নপত্র জমা দিলেও তালিকায় নাম নেই সংবিধানপ্রণেতা ড. কামাল হোসেনের।

শোনা যাচ্ছিল ড. কামাল হোসেন নির্বাচন না করলে তার মেয়ে ব্যারিস্টার সারা হোসেন ঢাকার একটি আসনে ঐক্যফ্রন্টের ব্যানারে নির্বাচন করবেন। কিন্তু সেটিও হচ্ছে না। সারা হোসেনও নির্বাচন করবেন না।

এক দশক নির্বাচনী রাজনীতির বাইরে থাকা বিএনপিকে যিনি ভোটে যাওয়ার বিষয়ে উদ্বুদ্ধ করেছেন, সেই কামাল হোসেনেই ভোট করছেন না। এর নেপথ্যে কী-এ নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে নানা আলোচনা চলছে।

ড. কামাল কেন ভোট করছেন না-এ বিষয়ে তার কাছে জানতে চায় বিবিসি। এর উত্তরে ড. কামাল হোসেন যা বলেন, তাতে বয়সটাই তার ভোটে দাঁড়ানোর ক্ষেত্রে বাধা হিসেবে উল্লেখ করেন তিনি।

কামাল হোসেন বলেন, ‘মূল কারণ হল-আমার বয়স এখন আশির ওপরে হয়ে গেছে। পাঁচ বছর আগেও যদি এ নির্বাচন হতো তা হলেও হয়তো বিবেচনা করতাম। কিন্তু তখন যে ইলেকশন হওয়ার কথা সেটি তো হয়নি’।

বাংলাদেশের সংবিধানপ্রণেতা ড. কামাল হোসেনের বয়স ৮০ বছরের বেশি। তার রাজনীতির বয়স ৫৫। জীবনে বহু নির্বাচনেও অংশ নিয়েছেন। কিন্তু বয়সের ভারে এবার নির্বাচন থেকে বিরত থাকছেন। তিনি মনে করেন, তার ভোট করার বয়স বহু আগেই চলে গেছে।

ড. কামালের ভাষায়-আমার নির্বাচন করার সময় চলে গেছে বহু আগে, এ কথা আমি আগেই দলকে বলেছি। প্রকাশ্যেও বলেছি।

তদুপরি গণফোরাম থেকে চাওয়া হয়েছিল যে তিনি একাদশ নির্বাচন করুন- কিন্তু তিনি সাড়া দেননি। ড. কামাল বলেন, ‘এটা আমাদের প্রতিষ্ঠিত করা দরকার যে রাজনীতি এমন একটি কাজ যাতে বয়স-স্বাস্থ্য সবকিছু ঠিক থাকলে মানুষ পুরোপুরি ভূমিকা রাখতে পারে। নির্বাচন তো পরিশ্রমের দিক থেকে খুবই ঝুঁকিপূর্ণ কঠিন একটি কাজ। যেহেতু আমি নির্বাচন করছি না, তাই অন্য ব্যাপারে সবাইকে সহযোগিতা করতে পারছি।’

রাজনীতি করছেন, সভা-সমাবেশে যাচ্ছেন, তা হলে নির্বাচন নয় কেন-এমন প্রশ্নে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা বলেন, রাজনীতির ব্যাপারে যতটুকু যা করার তা আমি করব। কিন্তু বয়সের কারণে নির্বাচন করা হয়ে উঠছে না।

ড. কামাল হোসেনের চেয়ে বেশি বয়সেও দেশে বহু রাজনীতিবিদ নির্বাচন করেছেন এবং করছেন। যেমন-জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। এ ছাড়া ড. কামালের চেয়ে বেশি বয়সে গতবার নির্বাচন করেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।

এ বিষয়ে ড. কামাল হোসেনের বক্তব্য হচ্ছে-আমার দৃষ্টিতে আমি সে রকম কাউকে দেখি না যে, সেই ধরনের রাজনীতি করছেন, হয়তো দু'একজন থাকতে পারেন।

বিএনপিসহ জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতাদের চাওয়া ছিল ড. কামাল খালেদা জিয়া নির্বাচন করতে না পারলে তার একটি আসনে ভোট করুন। তবু কেন কামাল সাড়া দিলেন না এমন প্রশ্নে ড. কামাল বলেন, নির্বাচন ঘোষণার অনেক আগেই আমি বলে দিয়েছিলাম যে আমি রাজনীতিতে আছি-থাকব; কিন্তু আমি নির্বাচনে প্রার্থী হব না।

মন্ত্রী-এমপি হওয়ার ইচ্ছা নেই জানিয়ে ড. কামাল হোসেন আরও বলেন, ‘আমি আগেই বলেছি-ব্যক্তিজীবনে আমার নতুন করে কোনো চাওয়া-পাওয়া নেই। আমি চাই মানুষের মুক্তি। যে মুক্তির জন্য বঙ্গবন্ধু আজীবন সংগ্রাম করে গেছেন, জীবন দিয়েছেন। বঙ্গবন্ধুর একজন ক্ষুদ্র কর্মী হিসেবে আমিও মানুষের মুক্তি চাই। ভোটের অধিকার চাই, গণতন্ত্র চাই-চাই মৌলিক অধিকার। মন্ত্রী-এমপি হওয়ার কোনো ইচ্ছা আমার নেই।’

ড. কামালের রাজনীতির বয়স ৫৫। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বিশ্বস্ত সহচর ছিলেন তিনি। বঙ্গবন্ধুর মন্ত্রিসভায় পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। বহু নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন। কোনোটাতে সফল কোনোটাতে ব্যর্থ হয়েছেন। তিনি মনে করেন তার এই দীর্ঘ রাজনৈতিক অভিযাত্রা থেকে অনেকে উপকৃত হবেন, তিনি সাধ্যমতো সহায়তাও করবেন।

এ বিষয়ে ড. কামাল হোসেন বলেন, ‘আমি চেয়েছি যে দেশে গণতন্ত্র থাকুক, প্রাতিষ্ঠানিকভাবে গণতন্ত্র আরও সুপ্রতিষ্ঠিত হোক। আমি রাজনীতিতে ঢুকেছি ৫৫ বছর আগে, মন্ত্রী ছিলাম, অনেক নির্বাচনে অংশ নিয়েছি। কোনোটাতে সফল, কোনোটাতে বিফল হয়েছি। কিন্তু আমি এখন মনে করি আমার অভিজ্ঞতা থেকে- দেশের মঙ্গলের জন্য যারা রাজনীতি করবে, তারা আমার সহায়তা পাবেন এবং আমি তা করে যাচ্ছি।’

বিএনপি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি), জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া এবং নাগরিক ঐক্য মিলে ১৩ অক্টোবর গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে সাত দফা দাবিতে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠিত হয়। আওয়ামী লীগ নেতাদের সমালোচনার মুখে ড. কামাল বলেছিলেন-ভোটে প্রার্থী হওয়া কিংবা রাষ্ট্রীয় কোনো পদ পাওয়ার ইচ্ছা আমার নেই।

শোনা যাচ্ছিল ড. কামাল হোসেন নির্বাচন না করলে তার মেয়ে ব্যারিস্টার সারা হোসেন ঢাকার একটি আসনে ঐক্যফ্রন্টের ব্যানারে নির্বাচন করবেন। কিন্তু সেটিও হচ্ছে না।

এ বিষয়ে গণফোরামের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য অ্যাডভোকেট জগলুল হায়দার আফ্রিক যুগান্তরকে বলেন, ড. কামাল চূড়ান্তভাবেই নির্বাচন করছেন না। তার মেয়ে সারা হোসেনও নির্বাচন করবেন না। তিনি দেশের বাইরে আছেন। তিনি জানান, গণফোরাম সারা দেশে ১১৩ আসনে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছে।

সুত্রঃ যুগান্তর

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ



রে