ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১

যে কারণে হতাশ জাপা

রাজনীতি ডেস্ক . ২৪আপডেট নিউজ
২০১৮ নভেম্বর ২৬ ১০:০০:৪৯
যে কারণে হতাশ জাপা

রোববার প্রায় ২৩০ আসনের মনোনয়ন চিঠি বিতরণ করেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। এরমধ্যে জাপার হেভিওয়েটদের ৫টি আসনেও নৌকার মনোনয়ন দেয়া হয়েছে। এছাড়া তাদের প্রত্যাশার অর্ধেক আসন দেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।

শনিবার দুপুরে বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে জাপার আসন বণ্টন নিয়ে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদকের বৈঠক হয়। এতে জাপা তাদের চেয়ারম্যানের দেয়া তালিকার ৭০টি আসনের কথা বলে। পরে সেখান থেকে সরে ৬০ পর্যন্ত চায়। কিন্তু এতেও রাজও নয় আওয়ামী লীগ।

বৈঠক শেষে জাপা মহাসচিব রুহুল আমিন হাওলাদার বলেন, 'আবেগে কোনো সিদ্ধান্ত নেয়া যাবে না। জোট ঠিক রেখে আমাদের জয়যুক্ত হতে হবে। এজন্য অনেক ভেবেচিন্তে সিদ্ধান্ত নিতে হচ্ছে৷'

প্রত্যাশা পূরণ নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, 'আমরা পেয়েছি, তবে আরও পাবার আশা নিয়ে চলে গেলাম।'

কত আসন পেয়েছেন বা কত পাওয়ার আশা নিয়ে চলে গেলেন? সেটির জবাব না দিলেও রাতে নিজ বাসায় প্রবেশের সময় অপেক্ষমান নেতাকর্মীদের সঙ্গে তার কথোপকথনে জবাব পাওয়া গেছে । এ সময় হাওলাদার বলেন, 'আমরা আমাদের চেষ্টা করেছি। আমার কোনো ভুল থাকলে মাফ করবেন।’

কেনো মাফ চাইলেন? বা কেনো চুপসে গেছে জাপা? এমন প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে বেশি দূর যাওয়ার দরকার নেই। আওয়ামী লীগ প্রকাশিত মনোনয়ন চিঠিতে এটা অনেকটা স্পষ্ট। জাপার হেভিওয়েট নেতাদের প্রত্যাশিত ৫ আসনে মনোনয়ন দিয়েছে আওয়ামী লীগ। তার মধ্যে দুটি; ঢাকা-১৭ ও নারায়ণগঞ্জ-১ আসন। এতে মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন জাপা চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। কিন্তু ঢাকা ১৭-এ আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে চিত্রনায়ক ফারুককে এবং নারায়ণগঞ্জ-১ আসনে গাজী গোলাম দস্তগীর বীরপ্রতীককে।

এছাড়া ঢাকা-১ এ মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন জাপা প্রেসিডিয়াম সদস্য অ্যাডভোকেট সালমা ইসলাম। এ আসনে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে সালমান এফ রহমানকে। পটুয়াখালী-১ আসনে মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন জাপা মহাসচিব এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার। সেখানে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে আওয়ামী লীগের প্রার্থী সাবেক ধর্মমন্ত্রী শাজাহান মিয়াকে। চট্টগ্রাম-৯ আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন জাপা প্রেসিডিয়াম সদস্য জিয়াউদ্দিন বাবলু; মনোনয়ন দেয়া হয়েছে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলকে।

শীর্ষ নেতাদের আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন দেয়ার পাশাপাশি জাপার কাঙ্খিত আসনও পাচ্ছে না দলটি। দলটিকে ৪০ আসন দিতে সম্মত আওয়ামী লীগ। অন্তত ৫০ হলেও জাপা চায়। কিন্তু সে যায়গায় নাই আওয়ামী লীগ। তারপরও জোট অটুট রেখে সরকার গঠনের মনোভাব দেখালেও কার্যত হতাশ জাপা নেতারা। শেষ পর্যন্ত পরিস্থিতি কী দাঁড়ায় এটা জানার অপেক্ষায় দলটির নেতাকর্মীরাও।

জাতীয় পার্টির এক প্রেসিডিয়াম সদস্য জানান, 'শনিবার ওই বৈঠকে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদককে আমাদের সাধারণ সম্পাদক যখন বললেন আমাদের চেয়ারম্যান ৭০টি আসন চেয়েছেন, অন্তত ৬০টি আসন দেন।

জবাবে কাদের বললেন, আমরা ৭০টি তো জোটের সবাইকে দেবো। একাই সব জাপাকে দিলে অন্যরা? আপনাদের ৩৮টি আসন দিতে পারবো। আপনারা উনার (এরশাদ) সঙ্গে কথা বলেন।'

এরপর শনিবার রাতে জাপা নেতাদের কাছে তাদের মনোনীতদের তালিকা তুলে দেয়া হয়। এর একদিন চলে গেলেও জাপা তার মনোনয়ন চিঠি প্রার্থীদের দেয়নি। অবশ্য আওয়ামী লীগ তাদের চিঠি বিলি করে ফেলেছে। জাপা আগামীকাল সংবাদ সম্মেলনে বিস্তারিত বলা হবে এবং জাপার মনোনয়ন চিঠি দেয়া হবে।

জাপা নেতারা মনে করেন, তাদের জন্য খুব ভালো কিছু অপেক্ষা করছে না।

তবে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের এক নেতা জানান, জাতীয় পার্টির নেতাদের প্রত্যাশিত আসনে মনোনয়ন দেয়া না হলেও যেখানে মনোনয়ন দিলে তারা জয়ী হতে পারবেন, সেখানে ঠিকই দেয়া হচ্ছে। এখনো দর কষাকষি চলছে। আশা করা যায়, ভালোভাবেই তা শেষ হবে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ময়মনসিংহ-৪ আসনে জাপার সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান রওশন এরশাদ, লালমনিরহাট-৩ আসনে জাপার কো- চেয়ারম্যান জি এম কাদের, চট্টগ্রাম-৫ এ আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, রংপুর-১ এ মসিউর রহমান রাঙ্গা, ঢাকা-৬ এ কাজী ফিরোজ রশীদ, ঢাকা-৪ এ সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা, কিশোরগঞ্জ-১ থেকে মুজিবুল হক, খুলনা-১ এ সুনীল শুভ রায়, গাইবান্ধা-১ এ শামীম হায়দার পাটোয়ারী এবং ফেনী-৩ এ জাপায় সদ্য যোগদানকারী লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মাসুদ উদ্দিন চৌধুরী এবং কুমিল্লা-৮ এ অধ্যাপক নূরুল ইসলাম মিলনের মনোনয়ন প্রাপ্তি এখনো পর্যন্ত চূড়ান্ত। এসব আসনে আওয়ামী লীগ বা জোটের কাউকে মনোনয়ন দেয়ার খবর শোনা যায়নি।

সর্বশেষ রোববার রাতে জানা গেছে, দেন দরবারে এবার ৪৫টি পর্যন্ত দিতে সম্মত হয়েছে আওয়ামী লীগ। তবে সোমবার জাপার মনোনয়ন চিঠি প্রদান পর্যন্ত চূড়ান্ত কিছু বলা যাচ্ছে না।

সুত্রঃ পরিবর্তন

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ



রে