ঢাকা, শনিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

যেভাবে নির্বাচনি প্রস্তুতি নিচ্ছেন খালেদা জিয়া

রাজনীতি ডেস্ক . ২৪আপডেট নিউজ
২০১৮ নভেম্বর ২৬ ০১:১৯:১৩
যেভাবে নির্বাচনি প্রস্তুতি নিচ্ছেন খালেদা জিয়া

জানতে চাইলে খালেদা জিয়ার আইনজীবী সানাউল্লাহ মিয়া বলেন, ‘বিচারিক আদালতের দেওয়া সাজার বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে আপিল করেছি, জামিন চেয়েছি। আপিল বিচারাধীন থাকা অবস্থায় খালেদা জিয়া নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন। কোনো সমস্যা হবে না।’

নির্বাচনে অংশ নিতে খালেদা জিয়ার সকল নথিপত্র প্রস্তুত করা হচ্ছে। গুলশান অফিসে এসব কাজ করা হচ্ছে বলে জানান বিএনপির এই আইন বিষয়ক সম্পাদক।

সাজার বিরুদ্ধে আপিল বিচারাধীন থাকা অবস্থায় নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন। খালেদা জিয়ার আইনজীবীর এমন বক্তব্যের প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে দুদকের আইনজীবী মোশারফ হোসেন কাজল বলেন, ‘সাজাপ্রাপ্ত অবস্থায় খালেদা জিয়া নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না।’

তিনি বলেন, ‘নৈতিক পদস্খলনজনিত কারণে খালেদা জিয়া সাজাপ্রাপ্ত হয়ে কারাগারে রয়েছেন। তার সাজা স্থগিত না হওয়া পর্যন্ত নির্বাচনে অংশ নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই।’

তিনি আরও বলেন, ‘নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেবেন রিটানিং কর্মকর্তা।’

আপিল বিচারাধীন থাকা অবস্থায় নির্বাচনে খালেদা জিয়া অংশ নিতে পারবেন কি না, এ বিষয়ে আইনে কী বলা আছে? এমন প্রশ্নের জবাবে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া কে বলেন, ‘আইনে এ রকম ক্লিয়ার (পরিষ্কার) কিছু বলা নাই। ইলেকশন আসলে এ ধরনের একটা তর্ক উঠে।’

তিনি বলেন, ‘আমরা ইতোপূর্বে দেখেছি এ আলোচনাগুলো আসছে। এটা কোর্টে সেটেল্ট হওয়া উচিত। কথাটা আসলে সত্যিই যে, দুই ধরনের ব্যাখা পাওয়া যায়। এক ধরনের ব্যাখা হচ্ছে আপিল হচ্ছে কন্টিনেশন অব দ্য প্রসিডিংস। অর্থাৎ আপনি আমাকে পাঁচ বছরের সাজা দিলেন নিচের কোর্ট। সেই নিচের কোর্টের অর্ডারটা হাইকোর্টে বহাল থাকল। হাইকোর্টে এইটার বিরুদ্ধে আমি আপিল করলাম। আমি তো সাজা ভোগ করতে শুরু করি নাই। তাহলে এইটা হবে। কিন্তু খালেদা জিয়ার ক্ষেত্রে একটি জটিলতা আছে অন্য যেকোনো মামলাগুলার চাইতে।’

তিনি বলেন, ‘সেটা হচ্ছে এমন না যে মাত্র গ্রেফতার হইলেন। উনার (খালেদা) বিরুদ্ধে সাজা দিল। আর উনি সাজা এখনো খাটতে শুরু করেন নাই। সে রকম ব্যাপার না। উনি কিন্তু সাজা খাটছেন। সাজা অলরেডি খেটে ফেলেছেন কয়েক মাস। ফলে তার কথা এখানে কতটা গ্রহণযোগ্য হবে। সেইটা নিয়ে একটা বিতর্ক রয়ে যাচ্ছে।’

‘আমার বিরুদ্ধে মাত্র একটা জাজমেন্ট হলো আপিল করলাম। আপিলটা হচ্ছে পেইন্ডিং আছে। আমার ওই সাজা খাটাটা যেহেতু স্থগিত থাকে আপিল করলে। তাহলে সাজা স্থগিত আছে শুধু মামলার প্রসিডিংটার বিরুদ্ধে বা রায়টার বিরুদ্ধেই আমার আপিলটা পেইন্ডিং। আমি এখনো সাজা খাটছি না। আর কনস্টিটিউশনে বারটা (নিষেধ) যেভাবে আছে। সেটা হচ্ছে আপনি যদি কোনো ফৌজদারি মামলায় অভিযুক্ত হন। তাহলে সেটি সেই সাজার খাটার পরে তিন বছর অতিক্রান্ত না হওয়া পর্যন্ত আপনি প্রার্থী হতে পারবেন না।’

এখন আইনে কী আছে? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমার পরিষ্কার উত্তর হচ্ছে আইনে এসব ব্যাপারে কিছুই লেখা নাই। এটা সেটেল্ট হতে হবে আসলে কোর্টে। আইনে সব সময় সব কিছু থাকেও না। সম্ভব না এটা। পরিবেশ পরিস্থিতি নিয়মিতই আমাদের সামনে আসবে। আদালতের মাধ্যমে হোক বা অন্য মাধ্যমে হোক সেগুলো সমাধান করা। এজন্য আমাদের ল’টাকে বলা হয়, জাজমেন্ট ল। অর্থাৎ জাজদের দ্বারা তৈরি করা আইন। অর্থাৎ মামলা হলো সেখান থেকে আইন হলো, সমাধান হলো।’

মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, আব্দুর রহমান বদি, মহিউদ্দিন খান আলমগীর, হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ সাজা মাথায় নিয়ে নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন। সাজা মাথায় নিয়ে এই নেতারা নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন খালেদা জিয়ার আইনজীবীদের এমন বক্তব্য প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সেটা সত্যি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদেরটা ছিল। বদিরটা আছে। মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, আ ক ম মোজাম্মেল হক দুইজনই তো কনভিকটেট।’

এই আইনজীবী আরও বলেন, ‘উনারা কনভিকটেট থাকা অবস্থায় কনস্টিটিউশনাল সিচুয়েশনকে বৃদ্ধাঙ্গলি দেখিয়ে উনারাতো মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। উনাদেরতো মন্ত্রীত্ব থাকারও কথা না। এই যুক্তিটা তো আছে। এই কথাগুলো সত্যি। এগুলো ল‘য়ের আইনের সাংবিধানিক। বিভিন্ন বিধি-বিধানের ব্যত্যয় আছে আসলে। ফলে এ বিষয়গুলো কোর্টের মাধ্যমে সেটেল্ট হওয়া উচিত।’

অবৈধভাবে সম্পদ অর্জনের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)’র মামলায় বর্তমান ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়াকে ২০০৮ সালের ঢাকার বিশেষ জজ আদালত ১৩ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছিলেন। এই সাজার বিরুদ্ধে তিনি হাইকোর্টে আপিল করেন। তার আপিল বিচারাধীন থাকা অবস্থায় তিনি নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হন, সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। একইভাবে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মহিউদ্দীন খান আলমগীরকেও অবৈধভাবে সম্পদ অর্জনের অভিযোগে ২০০৭ সালে ঢাকার বিশেষ জজ আদালত ১৩ বছরের কারাদণ্ড দেন। এরপর তিনি হাইকোর্টে আপিল করেন। হাইকোর্টে আপিল বিচারাধীন থাকা অবস্থায় নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেন ও এমপি নির্বাচিত হন।

গত ৩০ অক্টোবর জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় হাইকোর্ট খালেদা জিয়ার নিম্ন আদালতের দেয়া ৫ বছরের সাজা বাড়িয়ে ১০ বছর করা হয়। এ মামলার এখনো পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়নি। তবে সাজা স্থগিত ও জামিন চেয়ে গত ১৯ নভেম্বর আপিল বিভাগে সিএমপি (ক্রিমিনাল মিসসেলেনিয়াস পিটিশন) ফাইল করেছেন খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা।

আর ২৯ অক্টোবর জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় খালেদা জিয়াকে ৭ বছরের কারাদণ্ড দেন বিচারিক আদালত। এ মামলায় খালেদা জিয়ার খালাস চেয়ে গত ১৮ নভেম্বর হাইকোর্টে আপিল আবেদন করেন আইনজীবীরা।

গত ৮ ফেব্রুয়ারি বকশীবাজারের অস্থায়ী আদালতের বিচারক ড. মো. আখতারুজ্জামান জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় খালেদা জিয়াকে ৫ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেন। ওইদিন থেকেই কারাগারে আছেন সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী।

সুত্রঃ প্রিয়.কম

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



রে