ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪, ১ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১

সদ্য সংবাদ

অফিসার্স ক্লাবে গোপন বৈঠক

রাজনীতি ডেস্ক . ২৪আপডেট নিউজ
২০১৮ নভেম্বর ২৫ ১১:১৮:৩৮
অফিসার্স ক্লাবে গোপন বৈঠক

রিজভী বলেন, নৌকার প্রার্থীদের বিজয়ী করতে পুলিশ ও প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিদের প্রতিনিয়ত গোপন বৈঠক চলছে। প্রশাসন এবং পুলিশের বিতর্কিত ও দলবাজ কর্মকর্তারা জনসমর্থনহীন আওয়ামী লীগকে ফের ক্ষমতায় বসানোর জন্য নানা চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্রে মেতে উঠেছে। গত ২০ নভেম্বর মঙ্গলবার রাতে ঢাকা অফিসার্স ক্লাবের চার তলার পিছনের কনফারেন্স রুমে এক গোপন মিটিং অনুষ্ঠিত হয়।

এতে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর সচিব সাজ্জাদুল হাসান, জনপ্রশাসন সচিব ফয়েজ আহমদ, নির্বাচন কমিশন সচিব হেলালউদ্দীন আহমদ, পানিসম্পদ সচিব (শেখ হাসিনার অফিসের প্রাক্তন ডিজি) কবির বিন আনোয়ার, বেসামরিক বিমান পরিবহন সচিব মহিবুল হক, ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার ও মহানগরী (রিটার্নিং অফিসার) সদস্য সচিব আলী আজম, প্রধানমন্ত্রীর এপিএস-১ (বিচারক কাজী গোলাম

রসুলের মেয়ে) কাজী নিশাত রসুল। এছাড়াও পুলিশের পক্ষ থেকে উপস্থিত ছিলেন র‌্যাব, ডিএমপি ও কাউন্টার টেররিজমের কর্মকর্তারা। রাত সাড়ে ৭টা থেকে আড়াই ঘন্টা ধরে চলা এ মিটিংয়ে সারাদেশের ইলেকশন ইঞ্জিনিয়ারিং সেট-আপ ও প্ল্যান রিভিউ করা হয়।

বৈঠকে পুলিশের একজন ডিআইজি জানান, পুলিশ সূত্রের খবর অনুযায়ী ৩৩টি সিট নৌকার কনফার্ম আছে এবং ৬০-৬৫টিতে কনটেস্ট হবে, বাকি আর কোনো সম্ভাবনা নেই। কাজেই সাংঘাতিক কিছু করা ছাড়া এটি উতরানো যাবে না। বিস্তারিত আলোচনা শেষে মূল সিদ্ধান্ত নেয়া হয়, নির্বাচন কমিশন থেকে বিএনপি-ফ্রন্টকে চরম অসহযোগিতা করা হবে, যতই চাপ দেয়া হোক প্রশাসনে হাত দেয়া যাবে না, ধরপাকড় বাড়ানো হবে, প্রার্থী গুম-খুন করে এমন অবস্থা তৈরি করা হবে যাতে তারা নির্বাচন থেকে বেরিয়ে যেতে বাধ্য হয়।

সেটির আলামত ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে যশোর জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি ও বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী আবু বকর আবুকে তুলে নিয়ে গিয়ে হত্যা করে বুড়িগঙ্গায় ভাসিয়ে দেয়ার মধ্য দিয়ে। : তিনি বলেন, বৈঠকে আরও বলা হয়, জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট যদি শেষ পর্যন্ত ভোটে থেকে যায় তাহলে ভোটের দিন পর্যন্ত ধরপাকড়ের তান্ডব চালানো হবে নির্দয়ভাবে, যেনো ভোট কেন্দ্রে কেউ হাজির হতে সাহস না করে। আর যদি ধানের শীষের অনুকূলে ভোটের হাওয়া ঠেকানো না যায়, তবে মিডিয়া ক্যু করে নৌকাকে জিতানো হবে, বিটিভির মাধ্যমে ফলাফল ঘোষণা করে সব মিডিয়াতে তা রিলে করার ব্যবস্থা করা হবে। একবার ফল ঘোষণা করতে পারলে তারপরে নির্মমভাবে সব ঠান্ডা করা হবে।

এরপর থেকে এ ধরনের সভা খুব বেশি করা যাবে না, তবে কনসালটেশন করে কাজ করা হবে। এছাড়াও উন্নয়ন প্রকল্প তদারকির নামে আসন্ন একাদশ জাতীয় নির্বাচন নিয়ন্ত্রণ করার লক্ষ্যে ৮ জন আওয়ামী দলীয় কর্মকর্তা দিয়ে মনিটরিং সেল গঠন করে পুলিশ সদর দফতর। এছাড়া বিভিন্ন পর্যায়ের সাবেক ও বর্তমান ৪৫ জন সিনিয়র কর্মকর্তাকে ৬৪ জেলার উপদেষ্টা (মেনটর) নিয়োগ করে একটি নজিরবিহীন সরকারি আদেশ জারি করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। এ নিয়ে বিএনপির লিখিত আপত্তির প্রেক্ষিতে তা বাতিল করতে বাধ্য হয়। কিন্তু গোপনে ঐসব কর্মকর্তা জেলায় জেলায় মনিটরিংয়ের কাজ এখনও চালিয়ে যাচ্ছেন। এর বাইরে সারাদেশের ভোট ইঞ্জিনিয়ারিং করার লক্ষ্যে শেখ হাসিনা প্রথম তালিকার ৬ জন সচিবকে নিয়ে একটি গুপ্ত কমিটি গঠন করেছেন।

সেই কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হলো ঢাকা অফিসার্স ক্লাবে। মূলত এখানে সব ধরনের অফিসারদের গমনাগমন ঘটে থাকে, তাই বিরোধী পক্ষের চোখ এড়ানো সহজ হবে মনে করে অফিসার্স ক্লাবে গুরুত্বপূর্ণ এই সভাটি বসে। : ক্ষমতাসীনরা আসন্ন ভোট নিয়ে কী ভয়ঙ্কর পরিকল্পনায় মেতে উঠেছে বলে অভিযোগ করে রিজভী বলেন, দলবাজ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়ম ও কর্মকান্ড সুনির্দিষ্টভাবে নির্বাচন কমিশনকে লিখিত আকারে জানানো হয়েছে। নির্বাচন নিয়ে সরকারের এজেন্ডা নির্বাচন কমিশন কখনো প্রকাশ্যে কখনো নীরবে-নিভৃতে বাস্তবায়ন করছে-এই অভিযোগ এখন সর্বত্র ভূরিভূরি। কিন্তু নির্বাচন কমিশন তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ নিরসন করতে সক্ষম হয়নি। মোদ্দাকথা তফসিল ঘোষণার পরও আওয়ামী প্রশাসনিক দাপটের ছবিটা মোটেও বদলায়নি।

কিন্তু কে এম নুরুল হুদার নেতৃত্বে কতিপয় কমিশনার তাদেরকে স্বপদে বহাল রাখতে তৎপর। নির্বাচন কমিশন ক্ষমতাসীনদের স্বার্থে কাজ করছে বলেই এই অভিযোগগুলো থেকে ছিটকে আসা কাদা তারা ঠেকাতে পারে না। বিতর্কিত নির্বাচনি কর্মকর্তাদের নির্বাচনি কর্মকান্ড থেকে সরাতে হবে এবং গুরুত্বপূর্ণ পদ থেকে তাদেরকে প্রত্যাহার করতে হবে। : সরকার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সমালোচনা করে তিনি বলেন, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান গিয়াস কাদের চৌধুরী সাবেক সংসদ সদস্য। এজন্য কারাগারে কারাবিধি অনুযায়ী তিনি ডিভিশন পাওয়ার যোগ্য। কিন্তু তাকে আটক করার পর প্রথমে ডিভিশন দেয়া হলেও গতকাল তা বাতিল করে সাধারণ কয়েদিদের সাথে আমদানি ওয়ার্ডে রাখা হয়েছে। কারাগারেও রাজনৈতিক প্রতিপক্ষদের নির্যাতনের মুখে রাখতে হবে,

এটাই হচ্ছে এই সরকারের মুখ্য উদ্দেশ্য। সেই কারণে মানসিক ও শারীরিকভাবে যন্ত্রণা দিতেই কারাগারে গিয়াস কাদের চৌধুরীর ডিভিশন বাতিল করা হয়েছে। জাতীয়তাবাদী যুবদলের সাধারণ সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকুকে নির্বাচন থেকে দূরে রাখার জন্যই আইনি প্রক্রিয়ার নামে বারবার হয়রানি করা হচ্ছে। হাইকোর্ট থেকে জামিন লাভ করার পরও সেই আদেশের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ আদালতে আপিল করেছে সরকার পক্ষ। উদ্দেশ্য টুকুকে আটকিয়ে রাখা, যাতে সে আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে না পারে। রমনা থানা ছাত্রদল নেতা মোঃ জুয়েল রানাকে গত ২১ নভেম্বর কুড়িল বিশ^রোড থেকে গ্রেফতার করে ডিবি পুলিশ, এখনও তার কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি। তার পরিবারসহ দলের নেতাকর্মীরা চরম উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠায় দিন কাটাচ্ছে। অবিলম্বে তাকে জনসম্মুখে হাজির করে তার পরিবারের সদস্যদের কাছে ফিরিয়ে দেয়ার জোর দাবি জানাচ্ছি।

: গ্রেফতার প্রসঙ্গে রিজভী বলেন, ঢাকা মহানগর (উত্তর) : খিলক্ষেত থানাধীন ৪৮ নং ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল হক ভূঁইয়াকে গতকাল সকালে গ্রেফতার করেছে খিলক্ষেত থানা পুলিশ। এছাড়া রুপনগর থানা যুবদলের সহ-সভাপতি মোঃ ফখরুল ইসলাম শিপু, প্রচার সম্পাদক মোঃ জাহাঙ্গীর বিশ^াস, যুবদল নেতা শাহজাহান সিকদার, মিন্টু মিয়া ও স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা মোঃ আলাউদ্দিনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। আমি গ্রেফতারকৃত নেতাকর্মীদের মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করে অবিলম্বে তাদের নিঃশর্ত মুক্তির জোর দাবি জানাচ্ছি।

কিশোরগঞ্জ জেলা : কয়েকদিন আগে ভৈরবে বিএনপির শান্তিপূর্ণ একটি উঠোন বৈঠক চলাকালে পুলিশের সহায়তায় আওয়ামী ছাত্রলীগ-যুুবলীগের সন্ত্রাসীরা হামলা চালিয়ে নেতাকর্মীদের গুরুতর আহত করার ঘটনাকে কেন্দ্র করে উল্টো পুলিশ বাদী হয়ে গত ১৯ নভেম্বর ৪৮ জনকে জ্ঞাত ও ৩৫০ জন বিএনপি নেতাকর্মীকে অজ্ঞাত আসামি করে মামলা দায়ের করেছে। একই ঘটনায় গতরাতে ভৈরবে যুবলীগের পৌর সভাপতি বাদী হয়ে বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের ৯৮ জনকে জ্ঞাত ও ১০০ জন নেতাকর্মীকে অজ্ঞাত আসামি করে আরেকটি মিথ্যা মামলা দায়ের করেছে। বিএনপি নেতা জামাল ডাক্তার ও আলমগীর মেম্বারসহ ইতিমধ্যেই পাঁচ জন নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। কয়েকদিন থেকেই পুলিশ বিএনপি নেতাকর্মীদের বাড়িতে বাড়িতে তল্লাশির নামে তান্ডব চালাচ্ছে।

বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ও বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী শরীফুল আলমসহ নেতাকর্মীরা এখন এলাকাছাড়া। বিএনপির শান্তিপূর্ণ উঠোন বৈঠকে আওয়ামী সন্ত্রাসীদের হামলা হলেও উল্টো বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে পুলিশ ও ভৈরব পৌর যুবলীগের সভাপতি বাদী হয়ে মামলা দায়েরের ঘটনায় আমি তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং অবিলম্বে এই সকল বানোয়াট ও মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের জোর দাবি করছি। পাশাপাশি বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের বাড়িতে বাড়িতে পুলিশি তল্লাশি বন্ধেরও জোর দাবি জানাচ্ছি।

সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবুল খায়ের ভুঁইয়া, হাবিবুর রহমান হাবিব, সহ-দফতর সম্পাদক মো. মুনির হোসেন, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মো. শরীফুল আলম, আবদুল আউয়াল খান, হারুনুর রশীদ, নির্বাহী কমিটির সদস্য আমিনুল ইসলাম প্রমুখ।

সুত্রঃ দিনকাল

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



রে