ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১

নারীদের দাঁড়িয়ে মূত্রত্যাগের পণ্য বানালো ভারত

২০১৮ নভেম্বর ২৩ ১৯:১০:১১
নারীদের দাঁড়িয়ে মূত্রত্যাগের পণ্য বানালো ভারত

জনস্বাস্থ্য খাতের গবেষকরাও বলছেন, স্যানফে জনপ্রিয়তা পেলে ভারতে রাস্তাঘাটে মেয়েদের শৌচাগার ব্যবহারের অভ্যাসটাই আমূল বদলে যেতে পারে।

স্যানফে যারা তৈরি করেছেন, তাদের অন্যতম অর্চিত আগরওয়ালের জবাব, ‘খুব সহজ। আসলে মেয়েদের মূত্রত্যাগ করার দরকার হলেই যে টয়লেট সিটের ওপর বসতে হয়, সেই প্রয়োজনটাই দূর করে দেবে এটা!’

‘ভারতে পাবলিক টয়লেটগুলোর পরিচ্ছন্নতার যে হাল তাতে বেশির ভাগ মহিলা সেগুলো ব্যবহার করতে পারেন না। আর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাই বলছে প্রতি দুজনের মধ্যে একজন মহিলা ইউরিনারি ট্র্যাক্ট বা মূত্রনালীর সংক্রমণে আক্রান্ত হন।’

‘কাজেই শৌচাগারের কোনও অংশ স্পর্শ না-করেই যাতে মহিলারা সহজে মূত্রত্যাগ করতে পারেন, তার জন্য এই ‘স্ট্যান্ড অ্যান্ড পি’ (দাঁড়াও ও প্রস্রাব করো) ডিভাইসটা নকশা করা হয়েছে।’

‘যখনই তাদের শৌচাগার ব্যবহারের দরকার পড়বে, জিনিসটা খুলে নিয়ে মহিলারা দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থাতেই তাদের ফ্লো এরিয়ায় ঠিকমতো বসিয়ে নেবেন। তারপর প্রসাব করে জিনিসটা ছুঁড়ে ফেলে দিলেই, ব্যাস! টয়লেটের কোনও অংশ তাদের টাচ করার দরকারই হবে না!’

দিল্লি আইআইটি-র অধ্যাপক শ্রীনিবাসন ভেঙ্কটরামনও এই প্রোডাক্টটির ডিজাইনিং-য়ের সঙ্গে যুক্ত, যা তৈরি হয়েছে পুরোপুরি বায়োডিগ্রেডেবেল উপাদান দিয়ে।

এই প্রোডাক্টটিকে জনপ্রিয় করে তুলতে বিভিন্ন এনজিও-র সাহায্যে এক লক্ষ স্যাম্পল (নমুনা) সারা দেশে মহিলাদের মধ্যে বিনা পয়সায় বিলিও করা হচ্ছে।

তার আগে গত দুমাস ধরে প্রোডাক্টটির ট্রায়াল চালানো হয়েছে বিভিন্ন বয়সী মহিলাদের মধ্যে – তাদের অভিজ্ঞতাও রীতিমতো তৃপ্তিদায়ক।

দিল্লির কলেজছাত্রী রিমা যেমন বলছেন, ‘এখন জিমে গেলে আমি সব সময় সঙ্গে স্যানফে রাখছি। এতে সুবিধাটা হল ওয়াশরুমে গেলে আমার ব্যাক্টেরিয়াল সংক্রমণের ভয় থাকছে না। তার চেয়েও ভাল জিনিস হল, বারবার টয়লেট সিটটা মুছে নেওয়ার কষ্টও করতে হচ্ছে না।’

মধ্যবয়সী গৃহবধূ নীহারিকা শর্মা আবার বলছেন, ‘যে কোনও পাবলিক টয়লেটে গেলেই মাথার ভেতর একটা ভয় কাজ করে না জানি আবার কী ইনফেকশনে পড়ব। এইটা ব্যবহার করার পর থেকে সেই ভয়টা অনেক দূর হয়েছে।’

লাজপতনগরের রিনা শর্মাও প্রায় এক সুরেই বলছেন, ভারতে পাবলিক টয়লেটগুলো এতই নোংরা ও অপরিচ্ছন্ন যে সেগুলো ব্যবহার করার কথা ভাবাই যায় না। কিন্তু এই নতুন ডিভাইসটা মেয়েদের জন্য দারুণ একটা ব্যাপার – কারণ এখন তারা সেই নোংরা টয়লেটও অনায়াসে ব্যবহার করতে পারছেন।

কিন্তু ভারতে মেয়েদের মধ্যে কতটা জনপ্রিয় হতে পারে এই ধরনের একটি প্রোডাক্ট?

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ পত্রলেখা চ্যাটার্জি মনে করছেন, ‘প্রাইস পয়েন্টের দিক থেকে এগুলোর দাম মোটামুটি একটা স্যানিটারি প্যাডের মতোই। কাজেই সমাজে নারীদের যে অংশটা স্যানিটারি প্যাড ব্যবহার করতে পারেন, ধরে নেওয়া যায় তারা অবশ্যই এটা পরখ করে দেখবেন।’

‘বিশেষ করে যে নারীদের রাস্তাঘাটে প্রচুর সফর করতে হয়- হাইওয়ে, এয়ারপোর্ট, শপিং মল-সহ নানা জায়গায় বারবার টয়লেট ব্যবহার করার দরকার পড়ে, তাদের মধ্যে তো এটা জনপ্রিয় হতে বাধ্য।’

‘ভারতে এই মহিলারা অনেকেই বহুক্ষণ ধরে প্রস্রাব চেপে রাখতে বাধ্য হন – কিংবা তাদের পাবলিক টয়লেট ব্যবহার করতে হয় সেমি-স্কোয়াট পজিশনে। এতে কিডনিতে স্টোন তৈরি হয়, ব্লাডার মাসল দুর্বল হয়ে পড়ে। আশা করা যায় এই ধরনের একটা ডিভাইস সেই সমস্যাটা দূর করতে পারবে।’

স্যানফে-র নির্মাতাদের আশাও ঠিক সেটাই – তাদের এই অভিনব প্রোডাক্ট ভারতে মেযেদের পাবলিট টয়লেট ব্যবহারের ক্ষেত্রেই একটা বিপ্লব এনে দেবে! সূত্র: নয়াদিগন্ত

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



রে