ঢাকা, সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১

আ.লীগের কোন্দলে সহিংসতা হলে ঠেকাবে পুলিশ

রাজনীতি ডেস্ক . ২৪আপডেট নিউজ
২০১৮ নভেম্বর ২৩ ১৪:২৪:২০
আ.লীগের কোন্দলে সহিংসতা হলে ঠেকাবে পুলিশ

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে গতকাল সকালে পুলিশ বাহিনীর সঙ্গে নির্বাচন কমিশনের বৈঠক হয় আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে। ওই বৈঠকের পর পুলিশ সদর দপ্তরে বৈঠক করেন পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) জাবেদ পাটোয়ারী। বৈঠকে যাঁরা মাঠপর্যায়ে নির্বাচনের দায়িত্ব পালন করবেন, শুধু তাঁরা উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়া পুলিশ সদর দপ্তরের কয়েকজন কর্মকর্তা, বিভিন্ন রেঞ্জের ডিআইজি ও মহানগর পুলিশের কমিশনাররা উপস্থিত ছিলেন।

পুলিশ সদর দপ্তর সূত্র জানায়, বৈঠকে দুটি অংশ ছিল। প্রথম পর্বে নির্বাচন কমিশনে বৈঠকে যাঁরা ছিলেন, তাঁদের সবার সঙ্গে কথা বলেন পুলিশের মহাপরিদর্শক। পরে পুলিশের মহাপরিদর্শকের সঙ্গে কথা বলেন বিভিন্ন ইউনিটের প্রধানেরা। দুই ঘণ্টা ধরে এই বৈঠক হয়।

বৈঠকে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীদের ঠেকানোর কৌশল নিয়ে আলোচনার ব্যাপারে জানতে চাইলে পুলিশের পদস্থ কর্মকর্তারা কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে পুলিশ সদর দপ্তরের সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি) মো. সোহেল রানা প্রথম আলোকে বলেন, নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে বৈঠকে যে বিষয়গুলো উঠে এসেছে, মূলত সেগুলোই মাঠপর্যায়ে যাঁরা নির্বাচনের দায়িত্ব পালন করবেন, তাঁদের জানানো হয়েছে। এতে মূলত প্রস্তুতি নিয়েই কথা হয়েছে।

বৈঠকে উপস্থিত একাধিক কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, বৈঠকে নির্বাচনের সময় পুলিশ কীভাবে দায়িত্ব পালন করবে, সে ব্যাপারে দিকনির্দেশনা দেন মহাপরিদর্শক। এ সময় মাঠপর্যায়ের পুলিশ কর্মকর্তারা ক্ষমতাসীন দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দল ও বিদ্রোহী প্রার্থীদের বিষয়টি উত্থাপন করেন। পুলিশের মহাপরিদর্শক বলেন, সব বিদ্রোহী প্রার্থী সম্পর্কে আগে থেকে তথ্য নিতে হবে এবং তাঁদের ব্যাপারে খোঁজখবর রাখতে হবে। যাতে তাঁরা হঠাৎ করেই সড়ক অবরোধ, গাড়ি ভাঙচুর বা অন্য কোনোভাবে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে না পারেন, সে ব্যাপারে পুলিশকে তৎপর থাকতে হবে। বৈঠক সূত্র জানায়, আইজিপি এ সময় আরও বলেন, পুলিশকে মাথা ঠান্ডা রেখে কাজ করতে হবে। বিদ্রোহী প্রার্থীদের বোঝাতে হবে, শান্ত রাখতে হবে। তাঁরা যাতে উত্তপ্ত অবস্থা তৈরি করতে না পারেন, সে ব্যাপারে সজাগ থাকতে হবে। একই সঙ্গে বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থীদের সম্পর্কেও খোঁজখবর রাখতে নির্দেশ দেওয়া হয়।

বৈঠকে আইজিপি রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে পুলিশ কর্মকর্তাদের সুসম্পর্ক রাখতে বলেছেন, যাতে নির্বাচনের সময় কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা দেখা দিলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেতাদের সাহায্য নেওয়া যায়। এ সময় বলা হয়, নির্বাচনে সরকারি সব বাহিনীর সঙ্গে সুসম্পর্ক রেখে ও সমন্বয় করে পুলিশ কর্মকর্তাদের দায়িত্ব পালন করতে হবে। যাতে সমন্বয় নিয়ে কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ না আসে। সংশ্লিষ্ট জেলার প্রশাসক, প্রশাসনের কর্মকর্তারা ও বিচারকদের সঙ্গেও সুসম্পর্ক রাখার পরামর্শ দিয়ে আইজিপি বলেন, সুসম্পর্ক না থাকলে নির্বাচনের কাজ বিঘ্নিত হবে, এর দায় পড়বে পুলিশের ওপর। আর সব পুলিশ কর্মকর্তাকে ভোটকেন্দ্র এলাকার মানচিত্র সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে হবে। কোন সড়ক কোথায় গেছে, এসব জানতে হবে। তা ছাড়া ঝুঁকিপূর্ণ ভোটকেন্দ্র চিহ্নিত করে আগেভাগেই প্রস্তুতি নিয়ে রাখতে হবে, যাতে আপত্কালীন সংকট সমাধানে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া যায়।

এভাবে বিদ্রোহী প্রার্থী ঠেকানোর কাজ পুলিশের কি না—জানতে চাইলে পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক মুহা. নুরুল হুদা প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি তো উদ্দেশ্য খারাপ কিছু দেখি না। যদি কিছু লোক আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটাতে পারে, এমন তথ্য পুলিশের কাছে থেকে থাকে তো পুলিশ ব্যবস্থা নেবে। পুলিশের কাজ আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করা, এর জন্য পৃথক কোনো নির্দেশনারও তো প্রয়োজন নেই। এখন দেখার বিষয় কী নির্দেশনা যাচ্ছে? তার আগে ধারণাপ্রসূত কিছু বলা ঠিক না।’

সূত্র জানায়, সারা দেশে গায়েবি মামলায় যেভাবে ধরপাকড় চলছিল, তা অব্যাহত থাকতে পারে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন কর্মকর্তা বলেন, পরোয়ানার আসামিদের ব্যাপারে সজাগ থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এই নির্দেশের কারণে পুলিশ গ্রেপ্তারি পরোয়ানার আসামি ধরতে অভিযান করবে। বৈঠকে বলা হয়, ভোটকেন্দ্রে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কীভাবে কাজ করবে, সে ব্যাপারে পরিপত্র জারি করবে নির্বাচন কমিশন। সেই পরিপত্র অনুসারে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের মোতায়েন করা হবে।

বৈঠকে উপস্থিত একাধিক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, আইজিপি পুলিশ কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়ে বলেছেন, ভোটাররা যাতে সুষ্ঠুভাবে ভোট দিতে পারেন, সেই পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। নির্বাচনের আগে থেকেই আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। স্থানীয় বা কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে পুলিশকে প্রস্তুত থাকতে হবে। জামায়াত-শিবির, বিএনপি কিংবা আওয়ামী লীগের অন্তর্দ্বন্দ্বের জের ধরে কারা সহিংস ঘটনা ঘটাতে পারে তাদের চিহ্নিত করে তালিকা করতে হবে এবং সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে হবে।

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী শাহদীন মালিক এ নিয়ে প্রথম আলোকে বলেন, যদি এ ধরনের আলোচনা হয়ে থাকে তাহলে বলতে হবে, এই পদক্ষেপের পরিকল্পনা সরকারি কর্মচারী হিসেবে তাঁদের দায়িত্ব–কর্তব্যের শুধু বরখেলাপই না, এটা সম্পূর্ণভাবে শৃঙ্খলাবিধির লঙ্ঘন। দেশে আইনের শাসন থাকলে প্রশাসনিক ও বিচার বিভাগীয় তদন্ত করে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ অবধারিত ছিল। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই যেহেতু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী আইন না মেনে কাজ করতে অভ্যস্ত হয়ে গেছে, সেহেতু আশঙ্কা হলো তারা আইনবহির্ভূত কাজ করলেও আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গৃহীত হবে না এবং এই ধরনের আলোচনা ও পদক্ষেপের সিদ্ধান্ত সুষ্ঠু নির্বাচনকে নিঃসন্দেহে ব্যাহত করবে।

সুত্রঃ প্রথম আলো

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ



রে