ঢাকা, সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১

আসন ভাগাভাগি: শরিকদের অপেক্ষায় রাখল আ’লীগ

রাজনীতি ডেস্ক . ২৪আপডেট নিউজ
২০১৮ নভেম্বর ২৩ ১২:১৩:১৬
আসন ভাগাভাগি: শরিকদের অপেক্ষায় রাখল আ’লীগ

রাজপথের বিরোধী দল বিএনপি ও তাদের জোট নির্বাচনে আসার ঘোষণা দেয়ার পর জাতীয় নির্বাচনের সত্যিকারের আমেজ শুরু হয়ে গেছে দেশজুড়ে।

নির্বাচনী আলোচনায় এখন সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে জোট-মহাজোট কিভাবে তাদের শরিকদের সন্তুষ্ট করবে সেই বিষয়টি।জোট-মহাজোটের আসন ভাগাভাগির দিকেই দৃষ্টি সবার।

ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক দু’দিন আগে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, আওয়ামী লীগ থেকে কারা মনোনয়ন পাবেন সেটি প্রায়ই চূড়ান্ত।বিভিন্ন জরিপের আলোকে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেটি চূড়ান্ত করেছেন।

ওবায়দুল কাদের জানান, ১৪ দলসহ মহাজোটের সঙ্গে আলোচনা করে শিগগিরই আসন ভাগাভাগির বিষয়টি ঠিক করা হবে। জোটের শরিক দলগুলো থেকে প্রার্থী বাছাই করে ইতিমধ্যে প্রধান শরিক আওয়ামী লীগের কাছে পাঠানো হয়েছে।

সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে ১৪ দলের বাইরেও বিরোধী দল জাতীয় পার্টি, বিকল্পধারার নেতৃত্বাধীন জাতীয় যুক্তফ্রন্ট আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোট করে নির্বাচন করবে। জাতীয় পার্টি আসন বন্টন নিয়ে আলোচনা করতে আওয়ামী লীগকে চিঠি দিয়েছে।

জাতীয় যুক্তফ্রন্টও একাধিকবার আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদকসহ নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছে। ওইসব বৈঠকে যুক্তফ্রন্ট জোটভূক্ত হয়ে নির্বাচন করলে আওয়ামী লীগ তাদের কতটি আসন দেবে এই বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে উঠে আসে বলে একটি সূত্র জানিয়েছে।

১৪ দলের শরিক দলগুলোও নিজেদের মতো করে প্রার্থী বাছাই করে রেখেছে। হাসানুল হক ইনুর নেতৃত্বাধীন জাসদ দুই শতাধিক আসনে প্রার্থী চূড়ান্ত করেছে। পিছিয়ে নেই অন্য শরিকরাও।

মহাজোটের শরিক দলগুলোর প্রার্থী তালিকা এখন আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃত্বের হাতে। দু’একদিনের মধ্যেই মহাজোটের শরিকদের নিয়ে আনুষ্ঠানিক বৈঠক করে ঠিক করা হবে কোন দল কতটি আসনে মহাজোটের সমর্থন পাচ্ছে।

আনুষ্ঠানিক বৈঠক না হলেও আসন ভাগাভাগি নিয়ে পর্দার অন্তরালে আলোচনা চলছে। চেষ্টা করা হচ্ছে কোনো ধরণের বিদ্রোহ ছাড়াই আসন সমঝোতার।

আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছে জোট, মহাজোটের শরিক দলগুলো। তবে আগামী দুই-তিন দিনের মধ্যে সব কিছু চূড়ান্ত হয়ে যাবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, জোটগতভাবে নির্বাচনে কোন দলকে কতটি আসন ছাড় দেবে আওয়ামী লীগ ও কোন কোন আসন ছাড় দেওয়া হবে সে বিষয়ে নিশ্চিত হওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছে। আওয়ামী লীগ সভাপতির সঙ্গে দেখা করে আসন ভাগাভাগি নিয়ে কথাও বলছেন দলগুলোর শীর্ষ নেতারাও।

বৃহস্পতিবার রাতে ১৪ দলের শরিক ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি সমাজকল্যাণ মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন এবং পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা গণভবনে যান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করেন।

কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর ব্যস্ততার কারণে কথা বলতে পারেননি বলে জানা গেছে।

এর আগে গত মঙ্গলবার (২০ নভেম্বর) জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ এবং বিকল্পধারার সভাপতি ডা. একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরী গণবভনে গিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন।

তবে আওয়ামী লীগসহ জোটের শরিকদলগুলোর সূত্রে জানা যায়, আসন সমঝোতার বিষয়টি এখনও চূড়ান্ত হয়নি। একাধিক খসড়া করা আছে। সেগুলো থেকেই প্রধানমন্ত্রী চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেবেন।

আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতা ও সংসদীয় বোর্ডের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, জোটের শরিকদের সঙ্গে আসন সমঝোতার বিষয়টি আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেখছেন। তাকে সহায়তা করছেন দলীয় সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ও ১৪ দলের সমন্বয়ক মোহাম্মদ নাসিম।

তবে সিদ্ধান্ত আসবে আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর কাছ থেকেই। তার কথাই শেষ কথা। তিনি জোটনেতাদের সঙ্গে কথা বলছেন। জোটের নেতারা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে তাদের কথা জানিয়ে আসছেন।

আওয়ামী লীগ নিজেদের আসন চূড়ান্ত করলেও কিছু আসনে নানা হিসাব নিকাশ চলছে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পর বিভিন্ন আসনের দলটির তৃণমূলের নেতাকর্মীরা মনোনয়ন নিয়ে তাদের ক্ষোভ-বিক্ষোভের কথা জানাতে গণভবনে এসেছিলেন।

দলের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাদের অনেকের কথা শুনেছেন, তাদের সঙ্গে কথা বলেছেন।

আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটে মোট দলের সংখ্যা ১২। চারটির নিবন্ধন নেই। এ ৪টি দল হল- কমিউনিস্ট কেন্দ্র, গণতান্ত্রিক মজদুর পার্টি, বাসদ (রেজাউর রশীদ খান) ও গণআজাদী লীগ। নৌকার প্রতীক চেয়ে আবেদন করা এসব দলের কোনো নেতাকে এবার মনোনয়ন দেয়া সম্ভব হচ্ছে না।

জোট শরিক নিবন্ধিত ৮টি দলের মধ্যে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ), তরিকত ফেডারেশন, জাতীয় পার্টি (জেপি) মোট ১৫টি আসন নিয়ে সংসদে প্রতিনিধিত্ব করছে। বাকি চারটির মধ্যে একটি আওয়ামী লীগ। অপর তিনটি দল সংসদে কোনো আসন পায়নি। এবারও তাদের মনোনয়ন দেয়া হচ্ছে না।

মহাজোটের শরিক দল বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট (বিএনএফ) চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ ঢাকা-১৭ আসনের বর্তমান এমপি। মহাজোটের কারণে সম্ভবত এ আসনটি বিএনএফকে দেয়া সম্ভব হচ্ছে না।

মহাজোটের অন্যতম শরিক জাতীয় পার্টির নির্বাচিত এমপি ৩৪ জন। দলটি চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের নেতৃত্বে ৫৮ দলীয় সম্মিলিক জাতীয় জোট গঠন করা হয়েছে।

৩০০ আসনে তাদের প্রার্থী চূড়ান্তের পথে। তবে এ জোটের মাত্র ৩টি দল নিবন্ধিত। এ মুহূর্তে মহাজোটগতভাবে নির্বাচনে লড়তে আওয়ামী লীগের সঙ্গে আসন নিয়ে দরকষাকষি করছে জাতীয় পার্টি। তারা একশ’ আসন চেয়েছে। দলটির জন্য এ মুহূর্তে আওয়ামী লীগ ৪৫ থেকে ৫০ আসন নির্ধারণ করে রেখেছে।

সাবেক রাষ্ট্রপতি বি. চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন যুক্তফ্রন্টে ১২টি দল রয়েছে। এর মধ্যে ৫টি নিবন্ধিত। নিবন্ধিত দলগুলো হচ্ছে- বিকল্পধারা বাংলাদেশ, বাংলাদেশ ন্যাপ, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি, ন্যাশনাল পিপলস পার্টি ও সাংস্কৃতিক মুক্তিজোট।

বিকল্পধারার সভাপতি বি চৌধুরী নির্বাচন করছেন না। দলটির মহাসচিব মেজর (অব.) মান্নান নোয়াখালীর একটি আসন থেকে নির্বাচন করতে চাইছেন। আর দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব মাহী বি চৌধুরীর মুন্সীগঞ্জ থেকে নির্বাচন করতে চান। সম্প্রতি যোগ দেয়া শমসের মবিন চৌধুরী সিলেট কিংবা মৌলভীবাজারের একটি আসনে লড়তে চান।

যুক্তফ্রন্টের জন্য দুই থেকে তিনটি আসন বরাদ্দ রাখা হয়েছে। তবে আর একটি আসন নিয়ে দরকষাকষি চলছে। আসনগুলো বিকল্পধারা ও বাংলাদেশ ন্যাপের মধ্যে বণ্টন হবে।

১৪ দলের শরিক ওয়ার্কার্স পার্টির একটি সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগ ওয়ার্কার্স পার্টিকে ৫টি আসন দিতে চাইছে। সেগুলো হলো, সভাপতি ও সমাজক্যল্যাণ মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন (ঢাকা-০৮), সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা (রাজশাহী-২), মোস্তফা লুৎফুল্লাহ (সাতক্ষীরা-১), ইয়াসিন আলী (ঠাকুরগাঁও-৩) ও টিপু সুলতান (বরিশাল-৩)।

এই ৫ জনসহ ওয়ার্কার্স পার্টির বর্তমানে ৬ জন এমপি রয়েছেন। আরেক জন নড়াইল-২ আসনে হাফিজুর রহমান। এই আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাচ্ছেন ক্রিকেটার মাশরাফি বিন মর্তুজা। তবে ওয়ার্কার্স পার্টি এই আসনের পরিবর্তে অন্য আসন চাচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে দরকষাকষিও চলছে।

১৪ দলের আরেক শরিক জাসদের (ইনু) বিষয়টিও এখনও চূড়ান্ত হয়নি। জাসদ ভেঙে যাওয়ার পর তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনুর নেতৃত্বাধীন জাসদে এমপি আছেন তিনজন।

দুই বছর আগে জাসদ ভেঙে যে দুই অংশ হয়ে যায় তার অপর অংশের নামকরণ করা হয়েছে বাংলাদেশ জাসদ। গত নির্বাচনে জাসদের যে ৫ জন এমপি নির্বাচিত হয়েছিলেন তার দু’জন মঈনুদ্দিন খান বাদল ও নাজমুল হক প্রধান বাংলাদেশ জাসদে রয়েছেন।

নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধন না থাকায় বাংলাদেশ জাসদ আওয়ামী লীগের প্রতীক নৌকা মার্কায় নির্বাচন করবে বলে দলটির সভাপতি শরিফ নুরুল আম্বিয়া জানান।

বাংলাদেশ জাসদকে কয়টি আসন দেওয়া হচ্ছে সে ব্যাপারেও কিছু জানানো হয়নি। বাংলাদেশ জাসদ সর্বশেষ তিনটির দাবি জানিয়েছে। এই তিনটি হলো মঈনুদ্দিন খান বাদল (চট্টগ্রাম-৮), শরিফ নুরুল আম্বিয়া (নড়াইল-১) এবং নাজমুল হক প্রধান (পঞ্চগড়-১)।

এদিকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সঙ্গে ঐক্যবদ্ধভাবে নির্বাচন করার আগ্রহ প্রকাশ করেছে ইসলামী ঐক্যজোট, জাকের পার্টি ও ইসলামিক ফ্রন্ট, সম্মিলিত ইসলামী জোট, ইসলামী ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স। দলগুলো থেকে ৪ জন নেতা মনোনয়ন পাচ্ছেন বলে আওয়ামী লীগ সূত্রে জানা গেছে। একাধিক দলের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোট ও জাতীয় পার্টিসহ মহাজোটের সঙ্গে নতুন করে যোগ হয়েছে আরও কমপক্ষে ৮ থেকে ১০টি দল বা জোট। তাদের দাবিও নেহায়েত কম নয়।

মহাজোটের আসন বন্টন নিয়ে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম ও মনোনয়ন বোর্ডের সদস্য কাজী জাফর উল্লাহ যুগান্তরকে বলেন, আমরা দলীয় প্রার্থী চূড়ান্ত করেছি। এখন জোটের আসন বণ্টন নিয়ে কাজ চলছে। শুক্রবারের (আজ) মধ্যে দলের ও মহাজোটের আসন ভাগাভাগি চূড়ান্ত হবে। আমরা আশা করছি ২৪ নভেম্বর (আগামীকাল) দলের ও জোটের তালিকা আলাদাভাবে ঘোষণা করা হবে।

সুত্রঃ যুগান্তর

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ



রে