ঢাকা, সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১

খালেদা জিয়ার ৩ আসনেই বিকল্প ‘হেভিওয়েট’ প্রার্থী

রাজনীতি ডেস্ক . ২৪আপডেট নিউজ
২০১৮ নভেম্বর ২৩ ০৮:৫৮:৫০
খালেদা জিয়ার ৩ আসনেই বিকল্প ‘হেভিওয়েট’ প্রার্থী

এদিকে দলটির মনোনয়নপ্রত্যাশী ২ হাজার ৪২০ জনের সাক্ষাৎকার শেষ করেছে পার্লামেন্টারি বোর্ড। এখন চলছে যাচাই-বাছাই। জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ও ২০ দলের শরিকদের সঙ্গে আসন বণ্টন নিয়ে সমঝোতার পরই দলীয় প্রার্থী চূড়ান্ত করবে বিএনপি। তবে প্রতি আসনে কৌশলগত কারণে তিনজন প্রার্থীকে দলীয় মনোনয়ন ফরম জমা দিতে বলা হতে পারে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর যুগান্তরকে বলেন, দেশনেত্রী খালেদা জিয়া আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন। আমরা বিশ্বাস করি, খালেদা জিয়া নির্বাচনের যোগ্য এবং নিঃসন্দেহে তিনি নির্বাচন করতে পারবেন। ১২ নভেম্বর বিএনপি মহাসচিব ফেনী-১ আসনের জন্য দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার নামে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করে ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টুর হাতে তুলে দেন। এরপর বগুড়া-৬ আসন থেকে খালেদা জিয়ার পক্ষে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেন স্থায়ী কমিটির নেতা নজরুল ইসলাম খান। বগুড়া-৭ আসনে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেন স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য মির্জা আব্বাস।

বিএনপির দফতর সূত্রে জানা যায়, ফেনী-১ আসনটি দীর্ঘদিন ধরে খালেদা জিয়ার জন্য রিজার্ভ থাকলেও এবার দলের আরও ১৩ জন মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন। এ আসনে ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টুও রয়েছেন। এছাড়া রয়েছেন- ভলান্টিয়ার্স অব আমেরিকান কমিউনিটি বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট আবুল হাসেম বুলবুল, অ্যাবের মহাসচিব আনোয়ারুন নবী বাবলা, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবদলের সভাপতি রফিকুল আলম মজনু, ছাগলনাইয়া উপজেলা বিএনপির সভাপতি নূর আহমেদ মজুমদার, জেলা তাঁতী দলের মাহতাব উদ্দিন মিনার, সাবেক ছাত্রদল নেতা মশিউর রহমান খোকন, কারাবন্দি চট্টগ্রাম বিভাগীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক জালাল উদ্দিন মজুমদার, অ্যাডভোকেট আমিনুল হক, পরশুরাম বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবু তালেব, ভিপি ফখরুল আলম স্বপন, ব্যারিস্টার আনোয়ার হোসেন ও নুর নবী ভূঁইয়া।

বগুড়া-৬ আসনে আরও মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন জেলার সভাপতি ভিপি সাইফুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক জয়নাল আবেদীন চাঁন, সাবেক সভাপতি রেজাউল করীম বাদশা, সদর পৌরসভার মেয়র একেএম মাহবুবুর রহমান।

বগুড়া-৭ আসনে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন সাবেক সংসদ সদস্য হেলালুজ্জামান তালুকদার লালু, গাবতলী উপজেলা চেয়ারম্যান মোর্শেদ মিল্টন ও শাহজাতপুর উপজেলা চেয়ারম্যান সরকার বাদল।

বগুড়া জেলার সাংগঠনিক সম্পাদক মীর শাহে আলম যুগান্তরকে বলেন, সরকার ষড়যন্ত্র করে দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে যদি নির্বাচন করতে না দেয় সে কারণে হয়তো হাইকমান্ডের নির্দেশে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করা হয়েছে। তবে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াই নির্বাচন করবেন।

এদিকে পুলিশ প্রশাসনের হয়রানি ও পক্ষপাতমূলক আচরণের কারণে মনোনয়নপ্রত্যাশীদের অনেকে এলাকায় যেতে পারছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। বিষয়টি কোনো কোনো প্রার্থী নির্বাচন কমিশনের পাশাপাশি দলের নীতিনির্ধারকদের কাছেও জানিয়েছেন।

কিশোরগঞ্জ-৬ আসনের সম্ভাব্য প্রার্থী শরীফুল আলম যুগান্তরকে বলেন, বর্তমানে আমিসহ অনেক নেতাকর্মী গ্রেফতার আতঙ্কে এলাকাছাড়া। নেতাকর্মীদের বাড়িতে বাড়িতে তল্লাশিসহ নানা হুমকি দিচ্ছে পুলিশ। মঙ্গলবার নির্বাচনী এলাকায় পুলিশের হয়রানি ও পক্ষপাতমূলক আচরণের প্রতিকার চেয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার বরাবর আবেদনও করেছি। একই সঙ্গে জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তাসহ পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকেও লিখিতভাবে জানিয়েছি।

বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু যুগান্তরকে বলেন, আমার নির্বাচনী এলাকা নাটোর-২ এ যেতে পারছি না। বুধবারও সেখানে একটি দলীয় বৈঠক ছিল। সেই বৈঠক করতে দেয়া হয়নি। বরং বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ও ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদকসহ চারজনকে মারধর করা হয়েছে। মামলা করতে গেলে তাও নেয়নি পুলিশ। কয়েকদিনের মধ্যেই এসব নির্বাচন কমিশনকে লিখিতভাবে জানাব।

এ ব্যাপারে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, নির্বাচনে এখনও সমান সুযোগ সৃষ্টি হয়নি। আমাদের প্রার্থীদের গ্রেফতার করা হচ্ছে, জেলে নেয়া হচ্ছে। বিশেষ করে যারা সম্ভাব্য প্রার্থী, তাদের মামলা দিয়ে গ্রেফতার করা হচ্ছে। আমরা এসব বিষয় নির্বাচন কমিশনের গোচরে দিয়েছি, সরকারের গোচরে দিয়েছি। কিন্তু এসব বিষয়ে এখনও কোনো ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না। শেষদিনের সাক্ষাৎকারে প্রার্থীদের কঠোর নির্দেশনা বিএনপির : দলের নেতাকর্মীদের পাশাপাশি সাধারণ জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করে ভোট কেন্দ্র পাহারা দেয়ার জন্য কঠোর নির্দেশনা দিয়েছে বিএনপির হাইকমান্ড। বুধবার শেষদিনের সাক্ষাৎকারে একাদশ জাতীয় নির্বাচনে দলের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের এ নির্দেশনা দেয়া হয়।

রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে দিনব্যাপী ময়মনসিংহ, ফরিদপুর ও ঢাকা বিভাগের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সাক্ষাৎকার নেয় দলের পার্লামেন্টারি বোর্ড। এদিনও ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বোর্ডে যুক্ত ছিলেন দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।

সাক্ষাৎকার দিয়েছেন এমন বেশ কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, পার্লামেন্টারি বোর্ডের সদস্যরা বলেছেন, অস্বাভাবিক পরিবেশে এই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে হচ্ছে। তাই সবাইকে সজাগ ও সতর্ক থাকতে হবে। গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে আনতে হলে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মনোনয়নপ্রত্যাশীদের দলের স্বার্থে, নেতাকর্মী ও গণতন্ত্রের স্বার্থে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার নির্দেশনা দেন।

মনোনয়নপ্রত্যাশীরা তারেক রহমানকে প্রতিশ্রুতি দেন যে, দল যাকেই মনোনয়ন দেবে তার পক্ষে সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করবেন। দলের প্রার্থীকে বিজয়ী করতে সর্বোচ্চ বিসর্জন দেয়ারও অঙ্গীকার করেন তারা। গাজীপুর-২ আসনের সম্ভাব্য প্রার্থী মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আলহাজ মো. সোহরাব উদ্দিন বলেন, অতীতের কর্মকাণ্ড ও দলের প্রতি যাদের ত্যাগ রয়েছে তাদেরই মনোনয়ন দেয়া হবে বলে আশা করছি। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এবং পার্লামেন্টারি বোর্ডের সদস্যদের বক্তব্যেও সে বিষয়টি ফুটে উঠেছে।

ঢাকা-১৫ আসনের সম্ভ্যাব্য প্রার্থী ও কেন্দ্রীয় যুবদলের সাংগঠনিক সম্পাদক মামুন হাসান কারাগারে থাকায় তার সহধর্মিণী ডলি হাসান সাক্ষাৎকার দেন। তিনি বলেন, এই দলের জন্য তাদের পরিবারকে অনেক ত্যাগ স্বীকার করতে হয়েছে। দলের প্রধান খালেদা জিয়াকে অন্যায়ভাবে কারাগারে রাখা হয়েছে। তাকে মুক্ত করার জন্যই আমাদের আন্দোলন। নরসিংদী-৪ আসনের মনোনয়নপ্রত্যাশী ছাত্রদলের যুগ্ম সম্পাদক সেলিনা সুলতানা নিশিতা বলেন, নির্বাচনের ন্যূনতম পরিবেশ না থাকা সত্ত্বেও আন্দোলনের অংশ হিসেবে আমরা নির্বাচনে যাচ্ছি। দলের দুঃসময়ে যারা ভূমিকা পালন করেছে, আন্দোলন সংগ্রামে যারা রাজপথে থেকেছে এবং অতীতেও থাকবে তাদেরই মনোনয়ন দেয়া হবে। যাকেই মনোনয়ন দেয়া হবে আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করব।

প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করতে নীতিনির্ধারকদের বৈঠক : সাক্ষাৎকার শেষে একাদশ জাতীয় নির্বাচনে দলের প্রার্থীদের তালিকা চূড়ান্ত করতে বৈঠক করেছেন বিএনপির নীতিনির্ধারকরা। বৈঠকে প্রতিটি আসন থেকে প্রাথমিকভাবে তিনজন করে সম্ভাব্য প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার বিষয়ে একমত পোষণ করেছেন নেতারা। আগামী দুয়েক দিনের মধ্যে এসব প্রার্থীর দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করার বিষয়ে জানিয়ে দেয়া হবে বলে জানা গেছে। রাজধানীর গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে বৃহস্পতিবার রাতে বৈঠকে এসব সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, নজরুল ইসলাম খান ও আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী।

সূত্র জানায়, ১৮ নভেম্বর থেকে ২১ নভেম্বর পর্যন্ত সাক্ষাৎকার নেয়া দলের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের তালিকা নিয়ে নেতারা পর্যালোচনা করেন। কোন প্রার্থীর জয়ের ক্ষেত্রে সম্ভাবনা কতটুকু তা নিয়ে তারা মত দেন। একক প্রার্থীর তালিকা চূড়ান্ত করতে আরও একাধিক বৈঠক করবে নীতিনির্ধারকরা।

এ ছাড়াও বৈঠকে বর্তমান রাজনৈতিক ও নির্বাচনী পরিস্থিতি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন নেতারা। এর মধ্যে যশোর জেলা বিএনপির নেতা আবু বকর আবু হত্যার ঘটনায় নির্বাচন কমিশনকে লিখিত অভিযোগ দেয়ার বিষয়ে আলোচনা হয়। এর সঙ্গে সম্প্রতি দলের মনোনয়নপ্রত্যাশী একাধিক নেতাকে আটক ও কারাগারে পাঠানোর বিষয়েও অভিযোগ জানাবে বিএনপি।

সূত্র জানায়, আজ শুক্রবার থেকে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ও ২০ দলীয় জোটের শরিকদের সঙ্গে আসন বণ্টন নিয়ে বৈঠকে বসবেন দায়িত্বপ্রাপ্ত দলের তিন নীতিনির্ধারক। এ বিষয়ে বৈঠকে করণীয় ঠিক করবেন নেতারা।

সুত্রঃ যুগান্তর

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ



রে