ঢাকা, সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১

সব দলকে মনোনয়ন নয়

রাজনীতি ডেস্ক . ২৪আপডেট নিউজ
২০১৮ নভেম্বর ২৩ ০১:৩৯:৫০
সব দলকে মনোনয়ন নয়

এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম ও মনোনয়ন বোর্ডের সদস্য কাজী জাফর উল্লাহ যুগান্তরকে বলেন, আমরা দলীয় প্রার্থী চূড়ান্ত করেছি। এখন জোটের আসন বণ্টন নিয়ে কাজ চলছে। শুক্রবারের (আজ) মধ্যে দলের ও মহাজোটের আসন ভাগাভাগি চূড়ান্ত হবে। আমরা আশা করছি ২৪ নভেম্বর (আগামীকাল) দলের ও জোটের তালিকা আলাদাভাবে ঘোষণা করা হবে।

এ বিষয়ে দলটির অপর প্রেসিডিয়াম সদস্য লে. কর্নেল (অব.) ফারুক খান যুগান্তরকে বলেন, হাতে সময় খুবই কম। আমরা সব গুছিয়ে এনেছি। এখন ঘোষণার পালা। জোটের আসন সমঝোতাও শেষের পথে। শনিবার অথবা রোববার নাগাদ প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করা হতে পারে।

আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারক পর্যায়ের একাধিক নেতা যুগান্তরকে বলেন, আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটে মোট দলের সংখ্যা ১২। চারটির নিবন্ধন নেই। এ ৪টি দল হল- কমিউনিস্ট কেন্দ্র, গণতান্ত্রিক মজদুর পার্টি, বাসদ (রেজাউর রশীদ খান) ও গণআজাদী লীগ। নৌকার প্রতীক চেয়ে আবেদন করা এসব দলের কোনো নেতাকে এবার মনোনয়ন দেয়া সম্ভব হচ্ছে না।

জোট শরিক নিবন্ধিত ৮টি দলের মধ্যে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ), তরিকত ফেডারেশন, জাতীয় পার্টি (জেপি) মোট ১৫টি আসন নিয়ে সংসদে প্রতিনিধিত্ব করছে। বাকি চারটির মধ্যে একটি আওয়ামী লীগ। অপর তিনটি দল সংসদে কোনো আসন পায়নি। এবারও তাদের মনোনয়ন দেয়া হচ্ছে না।

মহাজোটের শরিক দল বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট (বিএনএফ) চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ ঢাকা-১৭ আসনের বর্তমান এমপি। মহাজোটের কারণে এ আসনটি বিএনএফকে দেয়া সম্ভব হচ্ছে না।

মহাজোটের অন্যতম শরিক জাতীয় পার্টির নির্বাচিত এমপি ৩৪ জন। দলটি চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের নেতৃত্বে ৫৮ দলীয় সম্মিলিক জাতীয় জোট গঠন করা হয়েছে। ৩০০ আসনে তাদের প্রার্থী চূড়ান্তের পথে। তবে এ জোটের মাত্র ৩টি দল নিবন্ধিত। এ মুহূর্তে মহাজোটগতভাবে নির্বাচনে লড়তে আওয়ামী লীগের সঙ্গে আসন নিয়ে দরকষাকষি করছে জাতীয় পার্টি। তারা একশ’ আসন চেয়েছে। দলটির জন্য এ মুহূর্তে আওয়ামী লীগ ৪৫ থেকে ৫০ আসন নির্ধারণ করে রেখেছে। এক্ষেত্রে আসন বণ্টন প্রায় শেষ। আজ তা চূড়ান্ত রূপ নিতে পারে বলে সূত্রে জানা গেছে।

সাবেক রাষ্ট্রপতি বি. চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন যুক্তফ্রন্টে ১২টি দল রয়েছে। এর মধ্যে ৫টি নিবন্ধিত। নিবন্ধিত দলগুলো হচ্ছে- বিকল্পধারা বাংলাদেশ, বাংলাদেশ ন্যাপ, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি, ন্যাশনাল পিপলস পার্টি ও সাংস্কৃতিক মুক্তিজোট। যুক্তফ্রন্টের জন্য দুটি আসন বরাদ্দ রাখা হয়েছে। তবে আর একটি আসন নিয়ে দরকষাকষি চলছে। আসনগুলো বিকল্পধারা ও বাংলাদেশ ন্যাপের মধ্যে বণ্টন হবে। বাকি দশ দল কোনো আসন পাচ্ছে না।

এদিকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সঙ্গে ঐক্যবদ্ধভাবে নির্বাচন করার আগ্রহ প্রকাশ করেছে ইসলামী ঐক্যজোট, জাকের পার্টি ও ইসলামিক ফ্রন্ট, সম্মিলিত ইসলামী জোট, ইসলামী ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স। দলগুলো থেকে ৪ জন নেতা মনোনয়ন পাচ্ছেন বলে আওয়ামী লীগ সূত্রে জানা গেছে। একাধিক দলের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোট ও জাতীয় পার্টিসহ মহাজোটের সঙ্গে নতুন করে যোগ হয়েছে আরও কমপক্ষে ৮ থেকে ১০টি দল বা জোট। তাদের দাবি নেহায়েত কম নয়।

জোট শরিকদের এ আকাশচুম্বী আবদার ও তা পূরণে বিকল্প ভাবছে ক্ষমতাসীনরা। আসনের চেয়ে আস্থা, আশ্বাসের ভিত্তিতে শরিকদের পাশে পেতে চায় আওয়ামী লীগ।

আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য লে. কর্নেল (অব.) ফারুক খান যুগান্তরকে বলেন, জোট শরিকদের সঙ্গে নির্বাচনী আসন নিয়েই সমঝোতা হবে। যেখানে যে দলের উইনেবল প্রার্থী থাকবে তাকেই জোটের প্রার্থী করা হবে। তিনি বলেন, সবার সঙ্গে সৌহার্দ্যপূর্ণ আলোচনা হচ্ছে। সবার চাওয়া-পাওয়া শোনা হচ্ছে। আমরাও সবার সুবিধা ও সবার কাছে গ্রহণযোগ্য সিদ্ধান্তের দিকেই যাচ্ছি।

আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের কয়েক নেতা যুগান্তরকে বলেন, মহাজোটের আসন ভাগাভাগি নিয়ে কিছুটা জটিলতা হচ্ছিল। কেউ জোর দিয়ে আসন দাবি করেছেন। আবার কেউ আবদার করছেন। কিন্তু মাঠের হিসাবে এসব দলের প্রার্থীর অবস্থান খুব বেশি ভালো নয়। সব কিছু বিবেচনায় নিয়ে খুব ঠাণ্ডা মাথায় আসন বণ্টনের কাজটি সারতে হচ্ছে আওয়ামী লীগকে।

আওয়ামী লীগ সূত্রে জানা যায়, ১৪ দলীয় জোটে মাত্র ৪টি দল আছে সারা দেশে যাদের ১০ থেকে ১২ জন প্রার্থী জনপ্রিয়। জোটের ব্যানারে এদের জিতিয়ে আনা সম্ভব। বাকিদের অবস্থা নাজুক। অথচ এ ১৪ দল থেকে আওয়ামী লীগের কাছে কমপক্ষে একশ’ আসনে মনোনয়ন চাওয়া হয়েছে।

ওই আসনগুলোতে বর্তমানে যারা এমপি আছেন তাদের সঙ্গে জনপ্রিয়তার বিচারে ১৪ দলের প্রস্তাবিত নামগুলো অনেক পিছিয়ে। এ অবস্থায় আওয়ামী লীগ ঝুঁকি না নেয়ার কথা ভাবছে। সূত্রটি আরও জানায়, নির্বাচনের পর যদি বিজয় নিশ্চিত হয় তখন এসব জোট শরিকদের জন্য টেকনোক্রেট কোটায় মন্ত্রী, সংরক্ষিত মহিলা কোটায় এমপিসহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধার প্রস্তাব থাকছে চূড়ান্ত বৈঠকে। জোটের অনেক শরিক ইতিমধ্যে সরকারি দলের প্রস্তাব মেনে নেয়ার আভাসও দিয়েছে।

আওয়ামী লীগের আরেকটি সূত্র বলছে, খুব বেশি আসন পাবে না মহাজোটের শরিকরা। দশম জাতীয় সংসদে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোটের শরিক জাতীয় পার্টি ৩৪টি আসনে নির্বাচিত হয়। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলটিকে ৪৫-৫০টি আসন দিতে চায় আওয়ামী লীগ। বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির আছে ৬টি আসন। এবার তাদের আসন বৃদ্ধির পক্ষে না আওয়ামী লীগ। তবে আসন পরিবর্তনের সুযোগ থাকছে।

জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) অবস্থাও একই। তারা বর্তমানে ৫ আসন নিয়ে সংসদে প্রতিনিধিত্ব করছে। দলটি ভাগ হয়ে যাওয়ার জাসদ (ইনু) তিনটি এবং জাসদ (আম্বিয়া) দুটি আসন নিয়ে সংসদে আছে।

জাসদ (ইনু) সূত্রে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার রাতে দলটির সভাপতি ও তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এ সময় তার দলের জন্য আসন বৃদ্ধির বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী তাকে বর্তমান আসন তিনটিই বরাদ্দ দেয়ার বিষয়ে জোটের সিদ্ধান্তের কথা জানান। এ ছাড়া ২ আসন নিয়ে জাতীয় পার্টি (জেপি) ও তরিকত ফেডারেশন এবং ১ আসন নিয়ে বিএনএফ জোট।

সুত্রঃ যুগান্তর

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ



রে