ঢাকা, বুধবার, ১৯ মার্চ ২০২৫, ৫ চৈত্র ১৪৩১

চতুর্থ স্টাম্পেই আশঙ্কাজনক মৃত্যুহার

খেলা ডেস্ক . ২৪আপডেট নিউজ
২০১৮ নভেম্বর ২২ ০৮:৪৬:৪৫
চতুর্থ স্টাম্পেই আশঙ্কাজনক মৃত্যুহার

বাংলাদেশের ক্রিকেটে এ যেন স্থায়ী সমস্যা! বোলার যেই হোক ‘ফোর্থ স্টাম্প’ মানে অফ স্টাম্পের একটু বাইরের লেন্থ বলে খোঁচা মারা যেন আমাদের ব্যাটসম্যানদের মজ্জাগত। ডেলিভারি একটু সামনে হলে ড্রাইভ, খাটো লেন্থের হলে পুল, হুক কিংবা আপারকাট খেলার চেষ্টাও থাকে। সেটি হোক টেস্ট, ওয়ানডে কিংবা টি-টোয়েন্টি। সংস্করণ যে মেজাজেরই হোক না কেন, অফ স্টাম্পের বাইরের বলে আমাদের ব্যাটসম্যানদের মেজাজ যেন ‘বিল্ট ইন’ হয় খোঁচা, নয় দ্বিধান্বিত ড্রাইভ আর বড়জোর পুল, হুক। ম্যাচের পরিস্থিতি যা–ই হোক না কেন,এসব ডেলিভারিতে আমরা লোভ সংবরণ করতে পারি না।

ক্রিকইনফো এ নিয়ে বিশেষ একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। ক্রিকইনফোর তথ্য বলছে, অফ স্টাম্পের বাইরের বলে খোঁচা মারার প্রবণতা সামলাতে না পারায় গত জুলাইয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে দুই টেস্টের সিরিজে বাংলাদেশ প্রতি ১৮ বল অন্তর একটি করে উইকেট হারিয়েছে। পরিসংখ্যান বলছে, গত ৬৩ বছরের মধ্যে ব্যাটিং বিবেচনায় ওই সিরিজটা ছিল সবচেয়ে বাজে। তাতে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের অবদানই সবচেয়ে বেশি। দুই টেস্টে চার ইনিংস মিলিয়ে বাংলাদেশ শুধু একবার দেড় শতাধিক রান করতে পেরেছে। এর মধ্যে আছে ৪৩ রানে গুটিয়ে যাওয়ার দুঃস্বপ্ন।

সেই ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে কাল ঘরের মাঠে সিরিজের প্রথম টেস্টে মাঠে নামছে বাংলাদেশ দল। চট্টগ্রামের উইকেট সম্ভাব্য স্পিনবান্ধব হলেও ক্যারিবীয়দের আক্রমণভাগ যথারীতি পেসনির্ভর। শ্যানন গ্যাব্রিয়েল, কেমার রোচদের সঙ্গে আছেন কেমো পল ও শেমরন লুইসরা। স্পিনবান্ধব উইকেটেও পেসারদের উইকেট বিলোনোর অভ্যাসটা আমাদের জন্য নতুন নয়। জিম্বাবুয়ে সিরিজে তা খুব ভালোভাবেই চোখে ধরা পরেছে। প্রতিপক্ষের এই কৌশলের কারণ কিন্তু সেই খোঁচানোর প্রবণতা। আর শর্ট বলে ম্যাচের পরিস্থিতি না বুঝে অযথাই ঝুঁকিপূর্ণ পুল কিংবা হুক শট খেলা।

আসল সমস্যা হলো, টেস্টে ব্যাটসম্যানদের অফ স্টাম্পের বাইরের বল ছাড়ার প্রবণতা খুব কম। হয় খোঁচানো, নয়তো রক্ষণাত্মক (ডিফেন্স) খেলতেই হবে। খোঁচানো বাদ দিন, রক্ষণটাও কিন্তু তেমন জমাট নয়। ক্রিকইনফোর মতে, চার মাস আগে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সেই সিরিজে ব্যাটসম্যানরা অফ স্টাম্পের বাইরের বল ৩০ বার রক্ষণাত্মকভাবে খেলতে গিয়ে ১৫ বারই আউট হয়েছেন। কিংবা গত বছর ফেব্রুয়ারিতে ভারতের বিপক্ষে টেস্টে অফ স্টাম্পের বাইরের ডেলিভারিতে যে পাঁচ ব্যাটসম্যান আউট হয়েছেন তাঁদের মধ্যে চারজনই খেলেছেন রক্ষণাত্মক ভঙ্গিতে। আর গত বছর অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে একইভাবে আউট হওয়ার পাঁচজনের মধ্যে তিনজনই ফিরেছেন রক্ষণাত্মক খেলে। দুই বছর আগে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সংখ্যাটা আরও বেশি। অফ স্টাম্পের বাইরের ডেলিভারিতে আউট হওয়া নয় ব্যাটসম্যানের মধ্যে সাতজনই ফিরেছেন ডিফেন্স করতে গিয়ে।

প্রশ্ন উঠতে পারে, অফ স্টাম্পের বাইরে সব ডেলিভারি কেন খেলতে হবে? মনস্তাত্ত্বিক একটা ব্যাখ্যা হতে পারে এমন, দ্রুত রান তোলার প্রবণতা, বল সুইং করে ভেতরে ঢুকতে পারে—এমন শঙ্কা থেকে জোর করেই খেলার স্বভাবটা বিসর্জন দেওয়া যায় না। বল ছাড়তে পারাও ব্যাটসম্যানদের বিশেষ দক্ষতা। বাংলাদেশের ঘরোয়া ক্রিকেটের স্কুলিংয়ে সেটা হয়েই ওঠে না।

মুশফিকুর রহিম এ ক্ষেত্রে কিছুটা ব্যতিক্রম। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সর্বশেষ টেস্ট সিরিজে তিনি প্রচুর বল ছেড়েছেন এবং ডাবল সেঞ্চুরি তুলে নেওয়ার ইনিংসে প্রতিটি সেশন শুরু করেছেন নতুন করে। আবার এই মুশফিকই চলতি বছর অফ স্টাম্পের বাইরের বলে আটবার আউট হয়েছেন। মুশফিকের ব্যাখ্যা হতে পারে, ব্যাটিং অর্ডারের চার থেকে ছয়ে ব্যাট করলে লোয়ার অর্ডার সঙ্গে নিয়ে লড়তে হয়, তাই ঝুঁকি নেওয়াই স্বাভাবিক।

সাকিব-তামিম-মাহমুদউল্লাহ-লিটন এ বছর চারবার করে আউট হয়েছেন অফ স্টাম্পের বাইরের ডেলিভারিতে। মুমিনুল হক চার মাস আগে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজে তিনবার এভাবে আউট হলেও শ্রীলঙ্কা ও জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজে অটুট ছিল তাঁর অফ স্টাম্পের বাইরের বল খেলার টেকনিক। ঢাকা ও চট্টগ্রামের উইকেটে তেমন বাউন্স নেই, পেসবান্ধবও না। এমন উইকেটে পেসাররা অফ স্টাম্প পুঁজি করে নিখুঁত লাইন-লেন্থে টানা বল করে যেতে পছন্দ করেন। এতে ব্যাটসম্যানদের ধৈর্যচ্যুতি ঘটার শঙ্কা বাড়ে। আর কে না জানে ‘ফোর্থ স্টাম্প’-এ আমাদের ব্যাটসম্যানদের ধৈর্য আর ঝড়ের মধ্যে প্রদীপের আলো—একই কথা।

খেলা - এর সব খবর

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ