ঢাকা, সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১

খালেদা জিয়া খালাস চাইলেন যেসব যুক্তিতে

রাজনীতি ডেস্ক . ২৪আপডেট নিউজ
২০১৮ নভেম্বর ১৯ ০০:১৪:০৮
খালেদা জিয়া খালাস চাইলেন যেসব যুক্তিতে

বহুল আলোচিত জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় সাত বছরের সাজাপ্রাপ্ত হয়ে কারাগারে রয়েছেন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। কারাগার থেকে তিনি এ মামলায় সাজা থেকে খালাস চেয়ে হাইকোর্টে আবেদন করেছেন। একইসঙ্গে তিনি আপিল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যান্ত জামিন প্রার্থনা করেছেন আদালতের কাছে।

১৮ নভেম্বর, রবিবার খালেদা জিয়ার পক্ষে আবেদনটি করেন ব্যারিস্টার নওশাদ জমির। চলতি সপ্তাহেই এ আপিলের ওপর শুনানি হতে পারে। আপিলে তিনি অনেক যুক্তি তুলে ধরেছেন, যাতে করে তিনি খালাস পাবেন বলে মনে করছেন।

যুক্তিতে নওশাদ জমির উল্লেখ করেছেন, জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট একটি প্রাইভেট ট্রাস্ট (ব্যক্তিগত দাতব্য প্রতিষ্ঠান)। এ ক্ষেত্রে খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী থাকার সময় হস্তক্ষেপ করেননি। তিনি যুক্তি দেখিয়েছেন এ মামলায় ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন প্রযোজ্য নয়।

জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট নামে হিসাব খোলার আবেদন ফর্মে খালেদা জিয়ার স্বাক্ষর থাকলেও তার পদবি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে উল্লেখ নেই। কিংবা তার প্রধানমন্ত্রী পদবির কোনো সিল নেই। এই ট্রাস্টের কোনো হিসাবেই প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তার নাম উল্লেখ নেই। এই ট্রাস্ট তিনি তার ব্যক্তিগত ক্ষমতাবলে পরিচালিত করতেন।

এই মামলায় খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে কোনো উপযুক্ত তথ্য-প্রমাণাদি ছিল না। তাকে ধারণার ওপর নির্ভর করে অভিযুক্ত করা হয়েছে। সাজা দেওয়া হয়েছে।

খালেদা জিয়া তার চতুর্থ যুক্তিতে বলেছেন, রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা চ্যারিটেবল ট্রাস্টের ফান্ডে অবৈধ লেনদেনের অভিযোগ প্রমাণে ব্যর্থ হয়েছেন। রাষ্ট্রপক্ষ খালেদা জিয়ার অভিযোগ প্রমাণ করতে পারেননি।

আরেক যুক্তিতে বিএনপি চেয়ারপরসন বলেছেন, মামলার এক কোটি ৩৫ লাখ টাকার পে অর্ডার সম্পর্কিত বিচারিক আদালতের অনুসন্ধানটি মামলার মূল নথির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।

যুক্তিতে সাবেক এ প্রধানমন্ত্রী আদালতকে বলতে চান, ডা. ফারজানা আহমেদ নামের এক ব্যক্তির অভিযোগের ভিত্তিতে এ মামলাটির অনুসন্ধান কার্যক্রম শুরু হয়েছিল। কিন্তু তাকে এই মামলায় রাষ্ট্রপক্ষ থেকে সাক্ষী বা তার কোনো লিখিত বক্তব্য আদালতে উপস্থাপন করা হয়নি।

যুক্তিতে খালেদা জিয়া বলেছেন, দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে এবং পক্ষপাতমূলকভাবে এ মামলার অভিযোগের অনুসন্ধান কার্যক্রম পরিচালনা করেছে, যা রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষীর বক্তব্য থেকে প্রতীয়মান হয়।

এ মামলার বিচারকাজ কারাগারের অভ্যন্তরে কারাগারের ভেতরে স্থাপিত আদালতে অত্যন্ত গোপনীয়ভাবে পরিচালনা করা হয়েছে। সাজা ও অর্থ দণ্ড দেওয়া হয়েছে, যা বে-আইনি।

খালেদা যুক্তিতে আরও বলেছেন, জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট জিয়াউর রহমানের নামে প্রতিষ্ঠিত একটি ব্যক্তিগত ট্রাস্ট, যা ট্রাস্ট আইন ১৮৮২ দ্বারা পরিচালিত হবে। বিধায় এর বিরুদ্ধে মামলা করার ক্ষমতা দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদকের) নেই।

মামলার দালিলিক প্রমাণাদি ও রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষীদের সাক্ষ্য এটা প্রমাণ করে যে, মেট্রো মেকার অ্যান্ড ডেভেলপার্স লিমিটেড মামলাসংশ্লিষ্ট পাঁচটি পে-অর্ডারের আবেদন করেছিল।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তার সাক্ষ্যে প্রমাণিত হয়েছে যে, মেট্রো মেকারস অ্যান্ড ডেভেলপার্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের পাঁচটি পে অর্ডার সম্পর্কিত বক্তব্য সম্পূর্ণরূপে অসত্য ও মিথ্যা।

এসব যুক্তিতে খালেদা জিয়া খালাস পাবেন কি না—এমন প্রশ্নের উত্তরে খালেদা জিয়ার আইনজীবী ব্যারিস্টার নওশাদ জমির প্রিয়.কমকে বলেন, ‘আমরা বিচারিক আদালতের আবেদনটি দেখেছি। পর্যালোচনা করেছি। এরপর হাইকোর্টে সাজা থেকে খালাস চেয়ে আবেদন করেছি।’

‘আমরা আপিল আবেদনে যেসব যুক্তি তুলে ধরেছি, সেগুলো আইন ও বিভিন্ন মামলার রেফারেন্স থেকে নেওয়া। আমরা আশা করছি বিচারিক আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে আমাদের আপিলটি হাইকোর্ট গ্রহণ করে খালেদা জিয়াকে খালাস দিবেন।’

এই আইনজীবী বলেন, ‘২০টি গ্রাউন্ডে আমরা এ আবেদন করেছি।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদুকের) আইনজীবী খুরশীদ আলম খান বলেন, ‘জিয়া চ্যারিটেবল মামলায় বিচারিক আদালতের দেওয়া সাত বছরের দণ্ডের বিরুদ্ধে খালেদা জিয়া আপিল করেছেন। আপিলটি আমরা শুনানির জন্য প্রস্তুত আছি।’

২৯ অক্টোবর ঢাকার সাবেক কেন্দ্রীয় কারাগারে স্থাপিত ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৫-এর বিচারক ড. মো. আখতারুজ্জামান জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় খালেদা জিয়াকে সাত বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেয়। একই সঙ্গে তাকে ১০ লাখ টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও ছয় মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। একই সাজা হয়েছে মামলার অপর তিন আসামিরও।

খালেদা জিয়া ছাড়া দণ্ডপ্রাপ্ত অপর আসামিরা হলেন—সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার তৎকালীন রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী, হারিছ চৌধুরীর তৎকালীন একান্ত সচিব জিয়াউল ইসলাম মুন্না ও ঢাকা সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার একান্ত সচিব মনিরুল ইসলাম খান।

এদের মধ্যে খালেদা জিয়া গত ফেব্রুয়ারিতেই জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় পাঁচ বছর কারাদণ্ড পেয়ে বন্দী। পরবর্তী সময়ে আপিলের পর হাইকোর্টে সাজা বেড়ে ১০ বছর হয়। হারিছ চৌধুরী রয়েছেন পলাতক। অপর দুই আসামি দীর্ঘদিন জামিনে থাকলেও সেপ্টেম্বরের শেষ দিকে মুন্না ও মনিরুলকে কারাগারে পাঠানো হয়।

চার জনের বিরুদ্ধে দণ্ড ঘোষণার পাশাপাশি জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের টাকায় খালেদা জিয়ার নামে কাকরাইলে কেনা ৪২ কাঠা জমি রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত ঘোষণা করেন আদালত।

মামলার বিবরণ থেকে জানা যায়, ২০১০ সালের ৮ আগস্ট তেজগাঁও থানায় জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলা করা হয়। এ ট্রাস্টের নামে অবৈধভাবে তিন কোটি ১৫ লাখ ৪৩ হাজার টাকা লেনদেনের অভিযোগে মামলাটি করে দুদক।

তদন্ত শেষে ২০১২ সালে খালেদা জিয়াসহ চার জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেয় দুদক।

২০১৪ সালের ১৯ মার্চ খালেদাসহ চার আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে আদালত। সাক্ষ্য গ্রহণ কার্যক্রম শেষ হলে দুদকের পক্ষে এই মামলায় যুক্তি-তর্ক উপস্থাপন করা হয়।

সুত্রঃ প্রিয়.কম

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ



রে