ঢাকা, সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১

ঐক্যফ্রন্ট নেতারা কে কোথায় লড়বেন

রাজনীতি ডেস্ক . ২৪আপডেট নিউজ
২০১৮ নভেম্বর ১৭ ২২:৪২:০৯
ঐক্যফ্রন্ট নেতারা কে কোথায় লড়বেন

শরিক দলগুলোর মধ্যে কোন আসনে যোগ্য প্রার্থী কে আছেন, সে বিষয়ে বিএনপিও খোঁজখবর নিচ্ছে। দুই- এক দিনের মধ্যে এ নিয়ে শরিকদের সঙ্গে বিএনপির আলাদাভাবে বসার কথা র‌য়ে‌ছে।

এ‌ বিষ‌য়ে বিএন‌পির স্থায়ী ক‌মি‌টির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হো‌সেন ব‌লেন, ‘আসন বণ্টন নিয়ে ঐক্যফ্রন্ট ও ২০ দলীয় শরিকদের স‌ঙ্গে বিএনপিকে বেশ কিছু বিষয়ে হিসাব মিলাতে হচ্ছে। কোনো কিছুই চূড়ান্ত করা হয়‌নি। খুব শিগ‌গিরই দ‌লের স্থায়ী ক‌মি‌টির মি‌টিং, জোট নেতা‌দের মি‌টিং এবং জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের স্টিয়ারিং কমিটির সভায় বিষয়টি নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে।’

মোশাররফ জানান, জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে বিএনপি ছাড়াও রয়েছে গণফোরাম, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি), নাগরিক ঐক্য, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ। তা ছাড়া জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার ব্যানারেও নির্বাচন করবেন বেশ কয়েকজন।

জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ও ২০ দলের একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তারা শতাধিক আসন দাবি করেছেন বিএনপির কাছ থেকে। জোটের শরিক দলগুলো যেসব আসন দাবি করেছে, সেগুলোর কোনো কোনোটিতে বিএনপির প্রভাবশালী প্রার্থীও রয়েছেন। কোথাও কোথাও জোটের একাধিক দলের প্রভাবশালী প্রার্থীও রয়েছেন একই আসনে। এসব নিয়ে কঠিন পরীক্ষার মুখোমুখি হতে পারে এক দশকের বেশি সময় ধরে ক্ষমতার বাইরে থাকা বিএনপিকে।

বিএনপির এক‌টি দা‌য়িত্বশীল সূত্রের ভাষ্য, জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ও ২০ দলীয় জোটের শরিকরা শতাধিক আসন দাবি করলেও সর্বোচ্চ ৫০ থেকে ৬০ আসন ছাড়তে পারে বিএনপি। যেসব আসনে বিএনপি ও জোটের একাধিক প্রভাবশালী প্রার্থী রয়েছেন, সেখানে অপেক্ষাকৃত গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে। বিএনপি ম‌নে কর‌ছে, জয়ী হওয়ার মতো প্রার্থী থাকলে শরিক দলগুলোকে আসন ছাড়তে তাদের কোনো আপত্তি নেই।

সম্ভাব্য প্রার্থীদের তালিকা তৈরি করতে নিজ নিজ দলের মধ্যে বৈঠক করছে শরিক দলগুলো। এরপর ঐক্যফ্রন্টের স্টিয়ারিং কমিটির বৈঠকে চূড়ান্ত করা হবে প্রার্থী তালিকা। মনোনয়ন হারানোর শঙ্কায় আছেন বিএনপির অনেক প্রার্থী।

ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেনকে নিয়ে আগ্রহ সবচেয়ে বেশি। তবে তিনি জানিয়েছেন, নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার ইচ্ছা নেই তার। যদিও দল ও জোট নেতারা চান, তিনি যেন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন।

গুঞ্জন রয়েছে, আইনি বাধ্যবাধকতায় খালেদা জিয়া নির্বাচন করতে না পারলে ড. কামাল হোসেন তার (খালেদা) আসন থেকে নির্বাচন করতে পারেন। এমনও হতে পারে ঢাকার ধানমন্ডি আসন থেকে নির্বাচন করবেন ড. কামাল। ওই আসনে এর আগেও তিনি একাধিকবার গণফোরাম থেকে নির্বাচন করেন।

আগামী নির্বাচনে ঢাকা-২ ও ঢাকা-৩ আসন থেকে নির্বাচন করার কথা ভাবছেন গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসিন মন্টু। কেরানীগঞ্জ উপজেলা আগে ঢাকা-৩ আসনের অন্তর্ভুক্ত থাকলেও ২০০৮ থেকে এটি ঢাকা-২ ও ঢাকা-৩ আসনে ভাগ হয়ে যায়।

১৯৮৬ সালে মোস্তফা মহসিন মন্টু আওয়ামী লীগের হয়ে ঢাকা-৩-এর সংসদ সদস্য (এমপি) নির্বাচিত হয়েছিলেন। ১৯৯১ সালে আওয়ামী লীগের হয়ে তিনি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে বিএনপির আমানউল্লাহ আমানের কাছে হেরে যান। এ আসনের চার বারের এমপি আমান এবার ঢাকা-২ আসনে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী।

ঢাকা-৩ থেকে বিএনপির মনোনয়ন চাইছেন স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। ২০০৮ সালের নির্বাচনে তিনি হেরে যান আওয়ামী লীগের নসরুল হামিদের কাছে।

টাঙ্গাইলের দুই আসনে কাদের সিদ্দিকী

সখীপুর ও বাসাইল উপজেলা নিয়ে গঠিত টাঙ্গাইল-৮ এবং কালিহাতী উপজেলা নিয়ে টাঙ্গাইল-৪ আসন। এই দুটি আসনে নির্বাচন করতে চান জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের অন্যতম শরিক কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের প্রধান বঙ্গবীর আবদুল কাদের সিদ্দিকী।

টাঙ্গাইল-৮ আসনে ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ এবং ২০০১ সালে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের হয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন কাদের সিদ্দিকী। ২০০৮ সালে নিজ দলের হয়ে লড়ে হেরে যান আওয়ামী লীগের প্রার্থীর কাছে। এবার তিনি দুটি আসনে নির্বাচন করতে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন। দুটি না পেলেও টাঙ্গাইল-১ আসন তিনি হাতছাড়া করতে চাইবেন না।

মান্নার আসন বগুড়া-২

জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতাদের মধ্যে আসন নিয়ে সবচেয়ে সুবিধায় আছেন নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না। বগুড়া-২ আসনে তার মনোনয়ন প্রায় নিশ্চিত বলে জানা গেছে।

১৯৭৩ সালে প্রথম সংসদ নির্বাচনের পর এ আসনে আর কখনো নৌকা জেতেনি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) সাবেক সহ-সভাপতি (ভিপি) মান্না ১৯৯১ থেকে তিনবার এ আসনে নির্বাচন করেছেন। প্রথম বার জনতা মুক্তি পার্টির হয়ে, পরের দুবার ছিলেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী। জিততে পারেননি একবারও। তবে ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী হলে বিএনপি-জামায়াতের সমর্থন কাজে লাগিয়ে আগামী নির্বাচনে তিনি এগিয়ে থাকবেন।

অলি আহমদের আসনে সুব্রত

চট্টগ্রামের চন্দনাইশ উপজেলা ও সাতকানিয়া উপজেলার ছয়টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত চট্টগ্রাম-১৪ আসন ২০০৮ সালের আগে ছিল চট্টগ্রাম-১৩। এ আসনের চার বার এমপি নির্বাচিত হন সাবেক বিএনপি নেতা ও বর্তমানে এলডিপির সভাপতি কর্নেল অলি আহমদ।

২০০৮ সালে এ দুটি আসন থেকেই প্রার্থী হন তিনি। আগামী নির্বাচনেও ২০ দলীয় জোটের হয়ে ধানের শীষ প্রতীকে এ দুই আসনে তার প্রার্থিতা নিয়ে আলোচনা চলছে। তবে গণফোরামের সূত্র বলছে, অলি আহমদ চট্টগ্রাম-১৩ থেকে লড়বেন। চট্টগ্রাম-১৪ আসনে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের হয়ে মনোনয়ন চাচ্ছেন গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি সুব্রত চৌধুরী।

এই এলাকায় জামায়াতেরও প্রার্থী আছে। ১৯৯১ ও ২০০১ সালে শাজাহান চৌধুরী ও ২০০৮ সালে শামসুল ইসলাম জামায়াতের প্রার্থী হিসেবে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এবার দলের নিবন্ধন না থাকায় তারা স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে মনোনয়ন কিনেছেন।

১৯৯৬ সালে জেএসডির সভাপতি আ স ম আবদুর রব লক্ষ্মীপুর-৪ আসনে জয়ী হলেও ১৯৯১, ২০০১ ও ২০০৮ সালের নির্বাচনে বিএনপির কাছে হেরে যান। এবার ঐক্যফ্রন্টের হয়ে এ আসনে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে তিনি লড়তে পারেন।

কুমিল্লার দেবীদ্বারে রতন

জেএসডির সাধারণ সম্পাদক আবদুল মালেক রতন কুমিল্লা-৪ থেকে ঐক্যফ্রন্টের মনোনয়নপ্রত্যাশী। ১৯৯১ থেকে ২০০১ পর্যন্ত এ আসনটি বিএনপির দখলে ছিল। ওই সময়ে চার বারই বিএনপির প্রার্থী ছিলেন মঞ্জুরুল আহসান মুন্সি।

কুমিল্লা উত্তর জেলা বিএনপির সভাপতি মনজুরুল আহসান আইনি জটিলতার কারণে ২০০৮ সালে নির্বাচন করতে পারেননি। এবারও দলের হয়ে মাঠে আছেন তিনি। স্থানীয় বিএনপির নেতাকর্মীরা তাকেই আবার প্রার্থী হিসেবে চান। তাই ঐক্যফ্রন্টের জোটগতভাবে এখানে বিএনপি নাকি জেএসডি প্রার্থী পাচ্ছে, তা বলা যাচ্ছে না।

সুলতান মনসুর মৌলভীবাজারে

কমলগঞ্জ ও কুলাউড়া উপজেলা নিয়ে গঠিত মৌলভীবাজার-২ আসনে এবার ঐক্যফ্রন্টের হয়ে লড়তে পারেন ডাকসুর সাবেক ভিপি সুলতান মোহাম্মদ মনসুর। এ আসনে তিনি আওয়ামী লীগের হয়ে তিন বার প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে এক বার এমপি নির্বাচিত হন।

নারায়ণগঞ্জে আকরাম

নাগরিক ঐক্যের উপদেষ্টা এস এম আকরাম নির্বাচন করতে চান জন্মস্থান নারায়ণগঞ্জ থেকে। আওয়ামী লীগের হয়ে ১৯৯৬ সালে নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে এমপি নির্বাচিত হন তিনি। দলীয় বিবাদে পরে যোগ দেন নাগরিক ঐক্যে। ঐক্যফ্রন্টের হয়ে এ আসনে এবার প্রার্থী হতে চান তিনি। যদিও বিএনপির গত ছয় বারের প্রার্থী আবুল কালাম এবারও বিএনপির মনোনয়ন চাইছেন।

আসনের বিষয়ে আলোচনা

মঙ্গলবার জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের স্টিয়ারিং কমিটির বৈঠক হয়। তাতে আসন সমঝোতা নিয়ে আলোচনা হয়েছে কি না, বৈঠক শেষে এ নিয়ে সাংবাদিকরা প্রশ্ন করেন। জবাবে ঐক্যফ্রন্টের মুখপাত্র ও বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘এ বিষয়ে আরও পরে আলোচনা হবে।’

সুত্রঃ প্রিয়.com

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ



রে