ঢাকা, সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১

যুক্তফ্রন্ট যে কারণে মহাজোটে

রাজনীতি ডেস্ক . ২৪আপডেট নিউজ
২০১৮ নভেম্বর ১৬ ১৫:৩৮:১৫
যুক্তফ্রন্ট যে কারণে মহাজোটে

আবার যারা রাজনৈতিক জ্ঞান হওয়ার পর থেকে জিয়াউর রহমানের আদর্শে বিশ্বাসী ছিলেন, তারাই কিনা আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়ে নির্বাচন করার কথা ভাবছেন।

বলছি-জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ও যুক্তফ্রন্ট নেতাদের সম্পর্কে। জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ড. কামাল হোসেন, মাহমুদুর রহমান মান্না, সুলতান মোহাম্মদ মনসুররা এবার নির্বাচন করবেন ধানের শীষ প্রতীকে।

আর জাতীয় যুক্তফ্রন্টের বদরুদ্দোজা চৌধুরী, মেজর (অব.) মান্নান, শমসের মবিন চৌধুরী, জেবেল রহমান গাণিরা ভিড়ছেন আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোটে। এ জোটের হয়ে নির্বাচন করবেন তারা। এদের প্রত্যেকেই একসময় বিএনপি কিংবা বিএনপি ঘরানার রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।

এতদিন আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোটের বিপরীতে অবস্থান নিলেও এখন তাদের সঙ্গে কেন জোট বাঁধতে চাইছে যুক্তফ্রন্ট?

এ বিষয়ে দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব মাহী বি চৌধুরী বিবিসিকে বলেন, আমরা সবসময় বলেছি-আমরা বিরুদ্ধবাদী রাজনীতির বিরুদ্ধে...। বিকল্পধারা তো জন্মের পর থেকে কখনই বিএনপি বা আওয়ামী লীগ কারও বিরুদ্ধে রাজনীতি করেনি।

তিনি বলেন, আমরা তো একসময় বিএনপি থেকে বেরিয়ে বিএনপির বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছিলাম। পরে সেই বিএনপির সঙ্গে তো আমরা এতদিন আলোচনা করেছি যে আমাদের নীতির ওপর ভিত্তি করে বৃহত্তর ঐক্য গঠন করা যায় কিনা। সেটি হয়নি। কিন্তু আমরা আমাদের চেষ্টা থেকে সরে যাইনি।

রাজনীতির গুণগত পরিবর্তনে আওয়ামী লীগসহ মহাজোটে সম্পৃক্ত হওয়ার ইচ্ছা পোষণ করেন তিনি।

এ ছাড়া দেশবিরোধী শক্তিকে রুখে দেয়ার পাশাপাশি গণতন্ত্রের ধারা অব্যাহত রাখতে এবং গণতন্ত্রবিরোধী সব ধরনের ষড়যন্ত্র রুখে দিতে মহাজোটের সঙ্গে ঐক্যবদ্ধ হওয়া প্রয়োজন বলে মনে করেন মাহী বি চৌধুরী।

গত সপ্তাহে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে বৈঠক করেন যু্ক্তফ্রন্ট নেতা ও বিকল্পধারার মহাসচিব মেজর (অব.) মান্নান, বিকল্পধারার সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব মাহী বি চৌধুরী প্রমুখ।

বৈঠকে মহাজোটের সঙ্গে নির্বাচনে যাওয়ার বিষয়ে তাদের কথা হয়। বৈঠক থেকে বেরিয়ে এসে মাহী বলেন, যুক্তফ্রন্ট আওয়ামী জোটের সঙ্গে মিলে নির্বাচনে যেতে পারে। এর ব্যাখ্যায় বলেন, সাংবিধানিক এ সরকার যেন হঠাৎ হোঁচট না খায়, এজন্য আমরা আওয়ামী লীগের সঙ্গে আলোচনায় বসেছি।

মাহী বলেন, মহাজোট সম্প্রসারিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আমরা নিজেদের দাবি আদায়ে ইতিবাচক মনোভাব নিয়েই এগিয়ে যাচ্ছি। দেশের যে দুটি প্রধান দল তাদের মাঝামাঝি থেকেই দাবি আদায়ের চেষ্টা করেছি আমরা।

মহাজোট সম্প্রসারণের মধ্য দিয়ে যদি শরিকদের একটি প্ল্যাটফর্মের মধ্যে নিয়ে আসা যায়, তা হলে এতে বাংলাদেশের মানুষ উপকৃত হবে বলে তিনি মনে করেন।

ঐক্যফ্রন্টের সামনে যুক্তফ্রন্ট যে দাবি ও লক্ষ্যগুলো রেখেছিল, এবার সেই একই বিষয় নিয়ে মহাজোটের সঙ্গে সুনির্দিষ্টভাবে আলোচনা করার কথা জানান মাহী বি চৌধুরী।

মহাজোটের সম্প্রসারণের ক্ষেত্রে প্রধান তিনটি বিষয়কে বিবেচনায় রাখার কথা জানান তিনি। সেগুলো হল-

এক. গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে অক্ষুণ্ণ রাখা;

দুই. সাংবিধানিক শাসনব্যবস্থাকে অক্ষুণ্ণ রাখা;

তিন. স্বেচ্ছাচারমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে কাজ করা;

মহাজোটের সঙ্গে নির্বাচনে আসার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হলেই আসন নিয়ে আলোচনা করবে বলে জানিয়েছে যুক্তফ্রন্ট।

পাশাপাশি মহাজোটের সঙ্গে এই জোটবদ্ধ হওয়ার বিষয়টি বিফলে যাবে, এমনটি এখনই ভাবতে চান না মাহী বি চৌধুরী।

তিনি বলেন, যখন আমরা কোনো কাজ শুরু করি, তখন তো অকৃতকার্য হওয়ার মানসিকতা নিয়ে শুরু করি না। আমরা এখন পর্যন্ত আশাবাদী বলেই মহাজোট গঠনের বিষয়ে আমাদের প্রত্যাশা রয়েছে।

বিএনপির সঙ্গে ঐক্যফ্রন্টে না যাওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, বিএনপির সঙ্গে যখন আমরা জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া চালাচ্ছিলাম, তখন আমরা পুরো আশাবাদ ব্যক্ত করে আলোচনা চালিয়েছি। ঐক্যফ্রন্ট ভেঙে যেতে পারে, এমন কোনো চিন্তা করিনি। কিন্তু ঐক্যফ্রন্ট ভেঙেছে।

এ ক্ষেত্রে রাজনীতির দেখানো পথে চলার কথা জানিয়েছেন মাহী বি চৌধুরী। তার মতে, পরবর্তী পদক্ষেপ কি হবে সেটি রাজনীতিই বলে দেবে এবং আমরা সে অনুযায়ী এগিয়ে যাব।

রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, যুক্তফ্রন্ট ক্ষমতাকেন্দ্রিক রাজনীতির দিকে ঝুকছে। বিএনপির নেতৃত্বাধীন ঐক্যফ্রন্টে যাওয়া এখন আর তাদের পক্ষে সম্ভব হবে না। কারণ গণফোরামের নানা শর্তে বিএনপি তাদের ব্যাপারে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে। বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলের শরিক দলগুলোও বি চৌধুরীর দলকে মেনে নিতে পারছে না।

এমতাবস্থায় ক্ষমতাকেন্দ্রিক রাজনীতে গুরুত্ব দিলে আওয়ামী লীগ শিবিরে যাওয়া ছাড়া যুক্তফ্রন্টের কোনো পথ খোলা নেই।

প্রসঙ্গত, যুক্তফ্রন্ট এতদিন জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত থাকলেও ১৩ অক্টোবর বি চৌধুরীকে বাদ দিয়েই জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠন হয়। এর পর দল ভেঙে একটি অংশ ঐক্যফ্রন্টে যোগ দেয়।

এদিকে বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দল থেকে বেরিয়ে যায় তিনটি দলের একাংশ। তারাসহ চারটি দল বি চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন যুক্তফ্রন্টে যোগ দেয়।

এগুলো হল- জেবেল রহমান গাণির বাংলাদেশ ন্যাপ, খন্দকার গোলাম মোর্তুজার এনডিপি, লেবার পার্টির একাংশ ও সাবেক মন্ত্রী নাজিমউদ্দিন আল আজাদের বিএলডিপি। এর মধ্যে বাংলাদেশ ন্যাপ ও লেবার পার্টির একাংশ ২০-দলীয় জোটের সঙ্গে ছিল।

সুত্রঃ যুগান্তর

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ



রে