ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪, ১ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১

সদ্য সংবাদ

আগেই ফয়সালা চায় শরিকরা

রাজনীতি ডেস্ক . ২৪আপডেট নিউজ
২০১৮ নভেম্বর ১৬ ১১:৪৮:০০
আগেই ফয়সালা চায় শরিকরা

মনোনয়ন ফরম জমা দেয়ার শেষদিন কিংবা আগের দিন আসন ভাগাভাগি তারা মানতে চান না।

এর আগে কোন কোন আসন জোট-মহাজোটের প্রার্থীদের জন্য ছেড়ে দেয়া হবে তা দ্রুত স্পষ্ট করতে জোর দাবি তুলেছেন জোটের সিনিয়র নেতারা।

উৎসবমুখর পরিবেশে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ যখন ৩শ’ আসনে দলীয় মনোনীত প্রার্থী চূড়ান্ত করতে সাজঘরে ব্যস্ত সময় পার করছে, ঠিক সেই মুহূর্তে নির্বাচনী জোট বন্ধুদের কাছ থেকে এই দাবি ক্রমেই জোরালো হচ্ছে।

তাদের সাফ কথা, কোনোরকম ঝুঁকি কিংবা শঙ্কার মধ্যে তারা থাকতে চান না।

অবশ্য রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এ দাবির যথেষ্ট যুক্তিও রয়েছে। কেননা, ২০১৪ ও ১৮ সালের নির্বাচন পরিস্থিতি এক নয়।

তাই আগেভাগে আওয়ামী লীগ ও জোট-মহাজোটের শরিকদের আসন প্রকাশ না করলে শেষ মুহূর্তে অনেকে সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের মতো ঘোষণাও দিতে পারে।

যেহেতু রাজনীতিতে শেষ কথা বলে কিছু নেই, তাই এ রকম আশঙ্কা উড়িয়ে দেয়া যায় না।

‘আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী ঘোষণার আগেই জোটের জন্য ছেড়ে দেয়া আসনের নাম ঘোষণা হওয়া উচিত’ বলে মন্তব্য করেছেন ১৪ দলীয় জোটের অন্যতম শরিক বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি ও সমাজকল্যাণমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বুধবার যুগান্তরকে আরও বলেন, জোটের জন্য ছেড়ে দেয়া আসনগুলোর নাম আগে ঘোষণা করা না হলে সমস্যা বাড়বে। কেননা দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাহার করা নিয়ে নেতাদের মধ্যে দ্বিধাবিভক্তির সৃষ্টি হয়। কর্মীরা বিভক্ত হয়ে পড়ে। ভোটারদের মধ্যে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। সবার মনে নানাবিধ প্রশ্ন ওঠে। তাই এবার আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জোটের শরিকদের আসনগুলো আগেই নিশ্চিত করতে হবে। বিশেষ করে আওয়ামী লীগ জোট মহাজোটের শরিকদের জন্য যেসব আসন ছেড়ে দেবে তা এখনই ঘোষণা দেয়া প্রয়োজন।

দশম জাতীয় সংসদের দৃষ্টান্ত উল্লেখ করে রাশেদ খান মেনন বলেন, দশম জাতীয় নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী ঘোষণার সময় ঢাকা-৮ আসনে তারা (আওয়ামী লীগ) কোনো প্রার্থী ঘোষণা করেনি। এতে জোটের কোনো পক্ষের নেতাকর্মীদের মধ্যে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়নি। কারও নতুন করে নির্বাচনের আশাও জাগেনি। দলের বা জোটের বাইরে গিয়ে কেউ নির্বাচনের ইচ্ছাও পোষণ করেনি। এবার আমরা জোটের সব আসনে এমন ঘোষণা চাই।

মহাজোটের অন্যতম শরিক জাতীয় পার্টির মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার বুধবার যুগান্তরকে বলেন, প্রার্থী বাছাইয়ে সবাইকে আন্তরিক হতে হবে। প্রার্থী ঘোষণার পর তা প্রত্যাহারেও দলের নির্দেশ মানতে হবে। তবে কিছু কথা থেকেই যায়। আলোচনা সাপেক্ষে ও সবার মতামত নিয়ে মহাজোটের আসন বণ্টন আগেই করা যেতে পারে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জাতীয় পার্টির একজন সিনিয়র নেতা যুগান্তরকে বলেন, আমাদের আসন বরাদ্দের বিষয়টি দ্রুত আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে ঘোষণা দিতে হবে। জাতীয় পার্টির প্রার্থীরা এবার এ বিষয়টি আগেভাগে নিশ্চিত হতে দলের মধ্যেও জোরালোভাবে দাবি তুলেছেন। মনোনয়ন প্রত্যাহার নিয়ে নানা নাটকের গতবারের সেই তিক্ত অভিজ্ঞতার পুনরাবৃত্তি চান না তারা।

১৪ দলীয় জোটের অন্যতম শরিক জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদের সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতার যুগান্তরকে বলেন, আমরা ১৪ দলের পক্ষে সংলাপের দিন প্রধানমন্ত্রীর কাছে প্রস্তাব করেছি- একইদিনে ৩শ’ আসনে দলীয় ও জোটগত প্রার্থীর নাম ঘোষণার। কারণ ব্যাখ্যা করে ওইদিন নেতারা বলেছেন, এতে প্রার্থিতার বাড়তি চাপ থাকবে না, প্রার্থিতা প্রত্যাহারের চাপও থাকবে না। কারও মধ্যে কোনো হা-হুতাশেরও সুযোগ নেই। ফলে সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে নির্বাচন করবে। তবে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, এবার বিদ্রোহী হওয়ার সুযোগ নেই। আমরা দলীয়ভাবে কঠোর অবস্থানে আছি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির অন্যতম সদস্য ও দলটির প্রেসিডিয়ামের সদস্য লে. কর্নেল (অব.) ফারুক খান যুগান্তরকে বলেন, আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে আমরা আওয়ামী লীগের প্রার্থী ঘোষণা করব। এরপর ২৫ নভেম্বরের আগে-পিছে জোটগত প্রার্থীর নাম ঘোষণা করা হবে।

তিনি বলেন, তখন যেসব আসনে জোট শরিকদের প্রার্থী থাকবে সেখানে আওয়ামী লীগ তাদের দলীয় প্রার্থী প্রত্যাহার করে নেবে। এতে তো কোনো সমস্যা দেখছি না। তাছাড়া এবার দলীয় সভাপতির নির্দেশের বাইরে কারও যাওয়ার সুযোগ নেই।

এদিকে জোটের আসন বণ্টন ও ঘোষণা নিয়ে আগে থেকেই ঘোর আপিত্ত ছিল শরিকদের। জোট শরিকদের ছেড়ে দেয়া আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ঘোষণায় আপত্তি তুলেছেন। ৪ নভেম্বর ১৪ দলের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর সংলাপে সেই আপত্তির কথা জানিয়েছেন নেতারা।

সেদিন তারা বলেছেন, সব আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর নাম ঘোষণা করে পরবর্তীকালে জোটের প্রার্থী দিলে বড় ধরনের সংকট তৈরি হয়। সে সময় আওয়ামী লীগ থেকে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করতে বললে নানা সংকট ও দ্বন্দ্ব-সংঘাত হয়। হামলা-মামলার ঘটনা ঘটে। শত্রুতা বাড়ে। অনেকে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে থেকে যান। এর ফলে প্রচার-প্রচারণা কমে যায়। এমনকি এই পরিস্থিতিতে জোটের প্রার্থীকে জিতিয়ে আনা দুঃসাধ্য হয়ে পড়ে। তাই তারা এবার এ সংকটের ফয়সালা এখনই চান।

প্রসঙ্গত, ২০১৪ সালের নির্বাচনে শরিকদের আসনসহ প্রায় ৩শ’ আসনে দলীয় প্রার্থী ঘোষণা করে আওয়ামী লীগ। পরে জোট শরিকদের আসন দিতে গিয়ে দলীয় প্রার্থীদের মনোনয়ন প্রত্যাহার করতে নির্দেশ দেয় কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ।

আর এতেই বিপত্তি ঘটে জোট প্রার্থীর সঙ্গে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর। জোটের অনেক আসনে নৌকা প্রার্থী থাকায় নির্বাচনে ভালো করতে পারেনি শরিকরা। শরিকদের আসনে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী থাকায় হারতেও হয়েছে কয়েকটি আসনে।

আবার জোটের অনেক আসনে দলের নির্দেশে মনোনয়ন প্রত্যাহার করতে বাধ্য করায় চাপা ও ক্ষোভ অসন্তোষ ছাড়াও উল্টো তারা জোটের প্রার্থীর বিরুদ্ধে মাঠে নেমে পড়ে।

জানা যায়, সেদিন সংলাপে এই আপত্তির কথা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে তুলে ধরেন তরিকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী।

তাকে সমর্থন দেন ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি ও সমাজকল্যাণমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদের সভাপতি ও তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু।

ওইদিন প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে নেতারা আসন্ন নির্বাচনে জোটের আসনসহ ৩শ’ আসনের প্রার্থী একসঙ্গে ঘোষণার দাবি জানান। না হলে যেসব আসন জোট শরিকদের জন্য বরাদ্দ রাখা হবে সেসব আসনে যেন দলীয় প্রার্থীর নাম ঘোষণা করা না হয়। মূলত সবশেষে সবাই একবাক্যে এ রকম প্রস্তাবে অনড় ছিলেন।

কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে সব আসনে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়নপ্রত্যাশীদের নানামুখী তৎপরতা জোটের শরিকদের ভাবিয়ে তুলেছে। এমনকি যেখানে জোটের সিটিং এমপি রয়েছেন সেখানেও আওয়ামী লীগের প্রার্থী হওয়ার জন্য অনেকে অপচেষ্টায় লিপ্ত।

এজন্য জোট-মহাজোটের শরিকরা এবার এ বিষয়টি আর ছাড় দেবে না। অনেকে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। জোটের আসন বণ্টনে কালক্ষেপণকে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী কৌশল হিসেবে দেখছেন কোনো কোনো শরিক দলের নেতা।

তাদের মতে, আমরা মহা অন্ধকারে পড়ে আছি। আমাদের কোনো নির্দেশনা দিচ্ছে না আওয়ামী লীগ। পরে তড়িঘড়ি করা হবে। মনোনয়ন না পেলে যাতে কিছু বলতে বা করতে না পারি সেদিকেই হাঁটছে নেতৃত্বদানকারী দলটি। কিন্তু আমরা তা মানব না।

১৪ দলীয় জোট সূত্রে আরও জানা যায়, আওয়ামী লীগের জোটের আসন বণ্টন কৌশল জটিল ও ধোঁয়াশাচ্ছন্ন মনে হচ্ছে শরিকদের কাছে। কোনো আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী মনোনয়ন প্রত্যাহার না করলে তখন কিছুই করার থাকবে না।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে জোট শরিক ন্যাপের সেক্রেটারি ইসমাইল হোসেন যুগান্তরকে বলেন, আমরা হতাশ। এখনও আমাদের আসন নিয়ে পরিষ্কার কোনো ধারণা দেয়া হচ্ছে না। শোনা যাচ্ছে, মনোনয়ন প্রত্যাহারের আগে আগে আমাদের নিয়ে সিদ্ধান্ত হবে। তাহলে আমরা কোন ব্যানারে মনোনয়ন কিনব? বিষয়টি স্পষ্ট করা দরকার। এখনি জোটের আসন প্রকাশ করা উচিত। সুত্রঃ যুগান্তর

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



রে