ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪, ১ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১

সংসারের সুখে সৌদিতে কেটেছে যৌবন

বিশ্ব ডেস্ক . ২৪আপডেট নিউজ
২০১৮ নভেম্বর ১৪ ০১:৪৫:৫৭
সংসারের সুখে সৌদিতে কেটেছে যৌবন

‘দীর্ঘ ১৩ বছর প্রবাসে কাটিয়ে দিলাম সংসারের ঘানি টানতে টানতে। এক কথায় সংসারের সুখের জন্য নিজেকে বিলিয়ে দিলাম নির্লজ্জ, অসহায় হয়ে প্রবাসের মাটিতে। সংসারের সুখের পিছনে ছুটতে ছুটতে কখন যে জীবনের ৩৪ বসন্ত শেষ হলো বুঝতে পারিনি।’

‘প্রথম দিকে প্রবাসে যা বেতন পেতাম সবই সংসারে মাসে মাসে পাঠিয়ে দিতাম। এরই মাঝে বাবা হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়ায় সংসারের পুরো চাপ আসে আমার ওপর।’

একদিন বাবা বেশি অসুস্থ হয়ে পড়ায় সকাল বেলায় না খেয়ে এক বন্ধুর বাড়ি গিয়ে এক লাখে বছরে ৩০ হাজার টাকা সুদে ৪ লাখ টাকা ঋণ নিলাম। বাকি ২ লাখ টাকা প্রবাসী বন্ধুদের কাছ থেকে ধার নিয়ে বাবাকে দেশে পাঠালাম। এদিকে ছোট ভাই-বোনের স্কুল কলেজের মাসিক ফি মাস শেষ হবার আগেই দিতে হতো।

নিজেকে বিলিয়ে দিলাম কাজের মধ্যে। ঋণ শোধের চিন্তায় কত রাত যে নির্ঘুম কেটেছে। অপেক্ষা ছিল কখন শেষ হবে ঋণ। আর মর্মে মর্মে বুঝতে পারলাম ঋণ থাকলে প্রবাস জীবনটা কত যন্ত্রণার ও কষ্টের। মাসে মাসে যা বেতন পাই তার বেশিরভাগই ঋণ শোধ করতে বেরিয়ে যেত।

এ সময়টা আগের মতো টাকা বাড়িতে দিতে পারতাম না বলে বাড়ির সবাই আমাকে নানা কথা বলতে লাগে। খুব খারাপ লাগতো তখন। শূন্য অনুভূতি হতো।

অভিমানে মনে হতো দেশ ছেড়ে কেন একা একা জ্বলছি দূর প্রবাসে। আমি তো চেয়েছিলাম সবাইকে নিয়ে সুখে থাকতে। কী পেলাম আপনজনদের থেকে যন্ত্রণা ছাড়া? কাদের জন্য জীবনের অনেকগুলো বছর যন্ত্রণার প্রবাসে ঘাম ঝরিয়েছি। কাদের সুখের জন্য তবে কবর দিয়েছি সৌদি মরুতে আমার যৌবন!

একটা সময় ঋণ শোধ হলো। দীর্ঘ সৌদি প্রবাসে থাকার কারণে আরবি ভাষাটাও বলতে পারলাম ভালোই। ফলে ভালো কাজ জুটলো। আর অবস্থার পরিবর্তন হতে থাকল।

প্রবাসে থাকার শেষ বছরটা কিছুটা ভালো কাটছিল আমার। নিজের লেখালেখিতে ফিরে যেতে পেরেছিলাম। বাংলাদেশের একটি চালু অনলাইন পত্রিকায় লেখা শুরু করেছিলাম। ওই পত্রিকায় সংবাদ প্রতিনিধি হিসেবেও কাজ করছিলাম।

এ সময়ে গৃহকর্মী হিসেবে কাজ করতে আসা বাংলাদেশি নারীদের ওপর নির্যাতনের বেশ কয়েকটি সংবাদ পাঠাই। খবরগুলো খুব আলোচিত হয়। সাংবাদিকতা যেহেতু নেশা ছিল, আস্তে আস্তে সৌদি প্রবাসী শ্রমিকদের মানবেতর জীবনের সংবাদগুলো ছাপাতে থাকি।

প্রচুর মানুষের সঙ্গে পরিচিত হই। সৌদি প্রবাসী বাংলাদেশি সাংবাদিকদের সঙ্গে। আমরা এখানে যৌথভাবে কাজ করতাম। আমি মূলত একটি আন্তর্জাতিক চেইন শপের ম্যানেজার হিসেবে কাজ করতাম।

এদিকে থিতু হওয়ার পর থেকেই আমার স্ত্রী দেশে স্থায়ীভাবে ফেরার তাগিদ দিতে থাকে। তাছাড়া এর মধ্যে বেশ কয়েকবার দেশে গিয়েছি স্বল্প সময়ের জন্য। আর এ কারণে আমার সন্তানও হয়েছে। তাকেও খুব দেখতে ইচ্ছা করে। তার শৈশবের দিনগুলোতে পাশে না থাকার যন্ত্রণাও আমাকে কুঁড়ে কুঁড়ে খায়। এদিকে দেশে ফিরে কী করবো, সে চিন্তাও আমাকে পেয়ে বসেছিল। এটা ছিল একটা প্যারাডক্স। ফেরা আর না ফেরার দোলাচল।

কিন্তু আমার সিদ্ধান্ত যেন প্রকৃতি নিয়ে নিলো। সৌদি সরকারের অথর্নৈতিক সংস্কার উদ্যোগের কারণে সব ধরনের দোকানে সৌদি নাগরিক ব্যতীত অন্য দেশের কর্মীদের নিয়োগে আইনগত নিষেধাজ্ঞা এলো। ফলে চাকরি ছেড়ে নতুন চাকরির পেছনে ছুটতে হচ্ছিল।

ঠিক এ সময়েই সিদ্ধান্ত নেই, ‘অনেক হয়েছে, দেশে ফিরে যাবো। নতুন করে সেখানেই কিছু করার চেষ্টা করবো।’ গত এপ্রিলে দেশে ফিরে আসি। পেছনে পড়ে থাকে যৌবন আর পরাহত প্রবাস জীবন।

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ



রে