ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৮ মার্চ ২০২৫, ৪ চৈত্র ১৪৩১

যে কারণে টেস্ট ক্রিকেটে এমন ‘ভরাডুবি’

খেলা ডেস্ক . ২৪আপডেট নিউজ
২০১৮ নভেম্বর ০৭ ১০:২৪:৪২
যে কারণে টেস্ট ক্রিকেটে এমন ‘ভরাডুবি’

এই সময়ে বাংলাদেশের পক্ষে কেউ সেঞ্চুরি করতে পারেনি, হাফ সেঞ্চুরি আছে মাত্র দুটি। জঘণ্য ব্যাটিংয়ের বিশ্রী ধারাবাহিকতা দেখা গেলো সিলেট টেস্টে। জিম্বাবুয়ে দলে নেই ভালো মানের কোনো স্পিনার। পেস বোলিংয়ে কাইল জার্ভিসই যা একটু বলার মতো। কিন্তু এই বোলিং আক্রমণের বিপক্ষে বাংলাদেশ প্রথম ইনিংসে দেড়শ'র আগেই শেষ। দ্বিতীয় ইনিংসে টেনেটুনে দেড়শ' পার! এমন ব্যাটিং নিয়ে কী আর টেস্ট জেতা যায়!

নিঃসন্দেহে ব্যাটিংটাই ডুবাচ্ছে বাংলাদেশকে। প্রশ্ন হচ্ছে ওয়ানডেতে যে দল এতো সুন্দর ব্যাটিং করছে তাদের টেস্টে এই হাল কেন? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গেলে অনেক কিছুই চোখে পড়বে-

টেস্ট স্পেশালিস্টদের অযত্ন: কম বেশি বিশ্বের প্রতিটা দলেই টেস্ট স্পেশালিস্ট হিসেবে কিছু ক্রিকেটার থাকেন। বাংলাদেশেও অবশ্য আছে। তবে 'কিছু ক্রিকেটার' নয়, হাতে গোনা দু-একজন। কথা হচ্ছে অন্য দেশগুলোর মতো টেস্ট স্পেশালিস্টদের যত্ন নেওয়া হচ্ছে কী? ব্যাটিংয়ে মুমিনুল হককে মনে করা হয় টেস্ট স্পেশালিস্ট। আবার বোর্ডেরই আরেক অংশ মুমিনুলকে সব 'ফরম্যাটেই ফিট' বানানোর চেষ্টায় ব্যস্ত। মুমিনুলও 'সব ফরম্যাটে ফিট' হতে ব্যস্ত। হবেন না-ই বা কেন। টেস্ট ক্রিকেটার বনে যাওয়া মানেই ক্রিকেট বাণিজ্য থেকে অনেকটা দূরে থাকা। বোর্ডের পক্ষ থেকে সে বিষয়টিতে 'বিশেষ দৃষ্টি' দেয়া হলে মুমিনুল হয়তো 'সব ফরমেটে ফিট' হতে চাইতেন না!

এদিকে, মুমিনুল হকও যেনো নিজেকে হারিয়ে খুঁজছেন। ক্যারিয়ারের শুরুর দিকে মুমিনুলের গড় স্যার ডন ব্যাডম্যানকে মনে করিয়ে দিত। কিন্তু সাম্প্রতিক ফর্ম রীতিমতো ভয়াবহ। সর্বশেষ আট ইনিংসে মুমিনুলের মোট রান ৬৯! অর্থাৎ গড় নয়েরও কম।

শুধু মুমিনুল হক নয়, তাইজুল ইসলাম বা অন্য টেস্ট স্পেশালিস্টদের দিকেও 'সু-নজর' দিতে অনীহা। অভিষেকের পরপরই তারকা বনে আবার ছিটকে পড়া জুবায়ের হোসেন লিখনও সম্প্রতি বেশ ভালো বোলিং করছেন। কিন্তু ঘরোয়া ক্রিকেটে নিয়মিত বোলিং করার সুযোগই পাচ্ছেন না তিনি। ক্লাবের স্বার্থ বড় করে দেখার জন্যই এই অবস্থা। ফিসফাস শোনা যাচ্ছে, লিখনের নিয়মিত খেলার সুযোগ না পাওয়ার পেছনে নাকি দেশীয় ক্রিকেটের এক 'রাঘব বোয়ালে'র হাত আছে! মমিুনলদের খেয়াল রাখা হচ্ছে না, আবার নতুন কোনো টেস্ট স্পেশালিস্টকেও তুলে আনতে পারছে না বোর্ড। এক কথায় টেস্ট স্পেশালিস্ট তৈরি করতে বোর্ড ব্যর্থ।

ওয়ানডে মেজাজে ব্যাটিং: টেস্ট ক্রিকেট অার ওয়ানডে ক্রিকেট যে এক নয় সেটা ক্রিকেট কম বোঝা লোকেরও বুঝতে কষ্ট হবে না। কিন্তু ব্যাটিংয়ে নেমে বাংলাদেশি ব্যাটসম্যানরা এই কথাটি যেন ভুলে যান! সম্প্রতি সময়ে দেখা যায়, আক্রমণাত্মক খেলতে গিয়েই বেশিরভাগ উইকেট হারাতে হচ্ছে বাংলাদেশকে। সাকিব আল হাসান, মেহেদি হাসান মিরাজ, সৌম্য সরকারদের ব্যাটিংয়ের ধরণই হয়তো আক্রমনাত্মক। কিন্তু যাদের রক্ষণাত্মক খেলার সামর্থ্য আছে তারাও কেন জানি আক্রমণাত্মক হয়ে উঠতে চান। ওয়ানডের ব্যাটিংটা বুঝি আর ভুলতে পারেন না ব্যাটসম্যানরা!

অভিজ্ঞরা বাতিলের খাতায়: মুত্তিয়া মুরালিধরন ৩৮ বছর বয়সেও আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলেছেন। রঙ্গনা হেরাথ যেখানে ৪১ বছর বয়সে ক্যারিয়ারের শেষ টেস্ট খেলতে আজ মাঠে নামছেন। সেখানে বাংলাদেশের ক্রিকেটে ত্রিশ পেরুলেই যেন 'বাতিলে'র খাতায় নাম উঠে যায়! এই কথার পক্ষে উদাহরণ খুঁজতে গেলে বহু নাম সামনে চলে আসবে। আব্দুর রাজ্জাককে অফ ফর্মের কথা বলে ২০১৪ সালে এক রকম ছেঁটে ফেলা হয়। কিন্তু তারপর ঘরোয়া ক্রিকেটে উইকেটের বন্যা বইয়ে দিলেও অভিজ্ঞ এই স্পিনারকে সুযোগ দেওয়া হয়নি। ২০১৪ সালে ছেঁটে ফেলার পর চলতি বছর শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে একটি টেস্ট খেলানো হয়েছে রাজ্জাককে। তারপর আবারও বাদ।

তুষার ইমরানও এই কথার উজ্জল উদাহরণ। ঘরোয়া ক্রিকেটে সেঞ্চুরির পর সেঞ্চুরি করে যাচ্ছেন ৩৪ বছর বয়সী এই ক্রিকেটার। ঘরোয়া ক্রিকেটের সব রেকর্ডই নিজের দখলে নিয়ে নিয়েছেন। প্রথম শ্রেনির ক্রিকেটে তুষারের গড় ৪৪.০৯, সেঞ্চুরি ৩১টি, হাফ সেঞ্চুরি ৫৭টি। মোট রান ১১,১১১। কিন্তু ২০০৭ সালে সেই যে বাদ পড়েছেন তারপর আর তুষারের ডাকই পড়ল না।

অপরদিকে মোহাম্মদ আশরাফুল নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে ফিরেছেন। তাকে নিয়ে ক্রিকেটের সর্ব মহলেই আগ্রহ। কিন্তু একটু বয়স হয়ে যাওয়া ক্রিকেটারদের প্রতি বরাবরই অনীহা নির্বাচকদের। বলা হয়, একজন ক্রিকেটার যতো অভিজ্ঞ হবেন টেস্টে ততো ভালো করবেন। কিন্তু বাংলাদেশে অভিজ্ঞদেরই 'কদর' কম!

খেলা - এর সব খবর

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ