ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৮ মার্চ ২০২৫, ৪ চৈত্র ১৪৩১

টাইগারদের সামনে যে কঠিন চ্যালেঞ্জ 

খেলা ডেস্ক . ২৪আপডেট নিউজ
২০১৮ নভেম্বর ০৫ ২৩:৩৮:৫৪
টাইগারদের সামনে যে কঠিন চ্যালেঞ্জ 

তবে আগের সব ব্যর্থতাকে ঝেড়ে ফেলে এবার রেকর্ড গড়ার সুযোগ পাচ্ছে বাংলাদেশ। কারণ দলটা জিম্বাবুয়ে। এই সুযোগ বারবার আসবেনা। সেশন বাই সেশন খেলেই এই টেস্ট জেতা অসম্ভব না। যদিও কাজটি কঠিন, তবে অসাধ্য না।

তৃতীয় দিনে ১৪০ রানে এগিয়ে থেকে শুরু করেছিল জিম্বাবুয়ে। সেখান থেকে তারা লিড নিয়েছে ৩২০ রানের। একই উইকেটে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের যেখানে হিমশিম খেতে হয়েছে, সেখানে জিম্বাবুয়ের ব্যাটসম্যানরা খেলেছে সাবলীল ভঙ্গিতে। তৃতীয় দিন লাঞ্চের আগে ভালোই খেলছিল জিম্বাবুয়ে, কিন্তু লাঞ্চের পরেই তাইজুল ক্যারিশামায় তছনছ হয়ে গেল সফরকারীরা। তাইজুলের ৫ উইকেট শিকারে ৬৫.৪ ওভারেই অলআউট হয় জিম্বাবুয়ে। ৩২১ রানের টার্গেটে দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে তৃতীয় দিনশেষে কোন উইকেট না হারিয়ে স্বাগতিকদের সংগ্রহ ২৬ রান।

সিলেটে তৃতীয় দিনে প্রথম উইকেট হিসেবে ব্রায়ান চারিকে হারায় সফরকারী জিম্বাবুয়ে। মেহেদি হাসান মিরাজের বলে বোল্ড হয়ে ফেরেন এই ওপেনার। দলীয় ৪৭ রানের মাথায় তাইজুল ফিরিয়ে দেন ব্রেন্ডন টেইলরকে (২৪)। ইমরুল কায়েসের দুর্দান্ত এক ক্যাচে সাজঘরের পথ ধরেন টেইলর।

ইনিংসের ১২.২ ওভারে মিরাজের ঘূর্ণিতে পরাস্ত হয়েছেন জিম্বাবুয়ের দলপতি হ্যামিল্টন মাসাকাদজা। ফেরার আগে নিজের ঝুলিতে পুরেছেন ৪৮ রান। এরপর তাইজুলের জোড়া আঘাত। নিজের দ্বিতীয় উইকেট তুলে নেন শেন উইলিয়ামসকে বোল্ড করে। বিদায়ের আগে উইলিয়ামস করেন ২০ রান। ৪২তম ওভারের পঞ্চম বলে উইলিয়ামসকে ফেরানোর পরের বলেই পিটার মুরকে নিজের তৃতীয় শিকার বানান তাইজুল। এরপর জিম্বাবুয়ে শিবিরে আবারো তাইজুলের আক্রমণ। ইনিংসের ৪৩.৩ ওভারে ফেরালেন সিকান্দার রাজাকে।

এরপর রেগিস চাকাভাকে (২০) ফিরিয়ে দেন নাজমুল অপু। আর ১৭ রান করা ওয়েলিংটন মাসাকাদজাকে বিদায় করেন মিরাজ। ব্রেন্ডন মাভুতা নাজমুল অপুর শিকারে সাজঘরে ফেরেন। শেষ ব্যাটসম্যান তেন্দাই চাতারাকে ফেরান তাইজুল। এই উইকেটের মধ্যদিয়ে ৫ উইকেট তুলে নেন তিনি। মোট ১১ উইকেট দখল করেন তাইজুল।

তাইজুলের ঘূর্ণিতে প্রথম ইনিংসে জিম্বাবুয়েকে ২৮২ রানে আটকালেও নিজেদের ব্যাটিং বিপর্যয়ে মাত্র ১৪৩ রানেই থামলো বাংলাদেশের ইনিংস। ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতায় দ্বিতীয় দিনটি হয়ে থাকলো জিম্বাবুয়ের। বাংলাদেশের হয়ে সর্বোচ্চ ৪১ রান এসেছে অভিষিক্ত আরিফুলের ব্যাট থেকে।

দ্বিতীয় দিন সফরকারীদের পেসাররা ভালোই চেপে রেখেছিল স্বাগতিকদের। মাত্র ১৯ রানেই বাংলাদেশ হারিয়েছে চার টপঅর্ডার ব্যাটসম্যান। দলীয় ৮ রানেই প্রথম ধাক্কা খেল বাংলাদেশ। ইনিংসের ৩.৫ ওভারে চাতারার বল ডিফেন্ড করতে গিয়ে বোল্ড হন ওপেনার ইমরুল কায়েস(৫)। দলীয় ১৪ রানে জার্ভিসের বলে চাকাভার ক্যাচ হয়ে ফেরেন লিটন দাস। দুই উইকেট হারিয়ে বাংলাদেশ এখন ব্যাকফুটে। এরপর দলীয় ১৯ রানে চাতারার বলে চাকাভার ক্যাচ হয়ে ফেরেন নাজমুল হোসেন শান্ত(৫)। যদিও প্রথমে নট আউটের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন ফিল্ড আম্পায়ার, তবে মাসাকাদজার রিভিওতে সাজঘরের পথ দেখতে হয়েছে শান্তকে।

এরপর মাহমুদউল্লাহ আসলেন আর গেলেন। দলীয় স্কোরকার্ডে কোন রান জমা না হতেই সেই চাতারার বলেই শূন্য রানে প্যাভিলিয়নের ফিরলেন তিনি। দলীয় ১৯ রানেই টপঅর্ডারের চার ব্যাটসম্যানকে হারিয়ে ধুঁকতে থাকে বাংলাদেশ। সেখান থেকে কিছুটা প্রতিরোধ গড়েন মুশফিক-মুমিনুল। তবে, দলীয় ৪৯ রানের মাথায় মুমিনুলের (১১) বিদায়ে আবারো বিপাকে পড়ে বাংলাদেশ। সিকান্দার রাজার বলে মাসাকাদজার হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন মুমিনুল। চা-বিরতি থেকে ফিরে মাত্র দুই বল খেলতে পারেন মুশফিকুর রহিম। বিরতি থেকে ফিরে প্রথম বলে বাউন্ডারি হাঁকানোর পরের বলেই মুশফিককে ফিরিয়ে দেন কাইল জার্ভিস। ৫৪ বলে ব্যক্তিগত ৩১ রান করেন মুশফিক।

ইনিংসের ৩৯তম ওভারে বিদায় নেন মেহেদি হাসান মিরাজ। শেন উইলিয়ামসের বলে তারই হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরার আগে মিরাজ ৩৩ বলে করেন ২১ রান। দলীয় ১০৮ রানের মাথায় বাংলাদেশ সপ্তম উইকেট হারায়। দলীয় ১৩১ রানের মাথায় বিদায় নেন তাইজুল ইসলাম। ব্যক্তিগত ৮ রান করে রাজার বলে চাকাভার হাতে ধরা পড়েন তাইজুল। সিকান্দার রাজার তৃতীয় শিকারে বিদায় নেন নাজমুল ইসলাম অপু (৪)। ১৪৩ রানের মাথায় বাংলাদেশ নবম উইকেট হারায়। শেষ ব্যাটসম্যান আবু জায়েদ রাহি রানআউট হন। অভিষেক ম্যাচে অপরাজিত থাকেন ৯৬ বলে ৪১ রান করা আরিফুল হক।

প্রথম দিনের ৫ উইকেটে ২৩৬ রানের সঙ্গে দ্বিতীয় দিন আর ৪৬ রান যোগ করতেই শেষ হয়েছে জিম্বাবুয়ের প্রথম ইনিংস। ২১ রানে শেষ ৫ উইকেট হারিয়ে তারা অলআউট হয়েছে ২৮২ রানে। স্পিনার তাইজুল ইসলাম একাই ৬টি উইকেট তুলে নেন। নাজমুল ইসলাম অপু দুটি উইকেট পান। একটি করে উইকেট তুলে নেন আবু জায়েদ রাহি এবং মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। প্রথম ইনিংসে উইকেট শূন্য থাকেন আরিফুল হক এবং মেহেদি হাসান মিরাজ।

প্রথম ইনিংসে সিলেট আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামের অভিষেক টেস্টে সফরকারীরা সংগ্রহ করে সবকটি উইকেটে হারিয়ে জিম্বাবুয়ে তুলে ২৮২ রান। শুরু থেকেই বাংলাদেশের বোলিংয়ের বিপক্ষে সাবধানী খেলছিলেন দুই ওপেনার ব্রায়ান চারি ও হ্যামিল্টন মাসাকাদজা। ইনিংসের ১০.৪ ওভারে তাইজুলের ঘূর্ণিতে বোল্ড হয়ে ফিরে যান ব্রায়ান চারি(১৩)। ইনিংসের ১৬.২ ওভারে জিম্বাবুয়ে শিবিরে ফের আঘাত হানেন তাইজুল। এবার তার শিকারে পরিণত হলেন সফরকারী দলের নির্ভরযোগ্য ব্যাটসম্যান ব্রেন্ডন টেইলর। মুমিনুলের ক্যাচ হয়ে ফেরার আগে ১৫ বল খেলে ৬ রান তুলেন তিনি।

দলীয় ৮৫ রানে ভয়ংকর হয়ে উঠা হ্যামিল্টন মাসাকাদজাকে (৫২) সাজঘর পাঠান আবু জয়েদ রাহী। এরপর প্রতিরোধ গড়ে তোলেন জিম্বাবুয়ের মিডল অর্ডারের দুই তারকা শন উইলিয়ামস ও সিকান্দার রাজা। তবে তাদের সেই জুটি বড় হতে দিলেন না অভিষিক্ত নাজমুল ইসলাম অপু। দলীয় ১২৯ রান রাজাকে সরাসরি বোল্ড করে সাজঘরে পাঠিয়েছেন এই স্পিনার।

দ্বিতীয় দিনেও বাংলাদেশের বিপক্ষে সাবধানী ব্যাট চালিয়ে যাচ্ছিলেন আগের দিন শেষ করা দুই ব্যাটসম্যান। অবশেষে তাইজুলের বোলিংয়ে জুটি ভাঙলো বাংলাদেশ। ইনিংসের ১০২.১ ওভারে তাইজুলের ডেলিভারিতে শান্তর ক্যাচ হয়ে ফেরেন চাকাভা। সাজঘরে ফেরার আগে ৮৫ বল খেলে ২৮ রান তুলেছেন এই জিম্বাবুয়েন।

জিম্বাবুয়ের শিবিরে আবারো আঘাত হেনেছেন তাইজুল। ইনিংসের ১০৯.৩ ওভারে তাইজুলের বলে মুশফিকের ক্যাচ হয়ে ফেরেন ওয়েলিংটন মাসাকাদজা। দলীয় ২৭৩ রানে অপুর ঘূর্ণিতে পরাস্ত হয়ে এলবির শিকার হন মাভুতা। টেস্ট ক্যারিয়ারে চতুর্থবারের মতো পাঁচ উইকেট তুলে নিতে এরপর তাইজুল ফিরিয়ে দেন কাইল জারভিসকে (৪)। পরের বলেই তাইজুল ফিরিয়ে দেন তেন্দাই চাতারাকে। পিটার মুর ৬৩ রান করে অপরাজিত থাকেন।

এই টেস্টের মধ্যে দিয়ে অভিষেক হয়েছে আরিফুল হক ও নাজমুল ইসলামের। এছাড়া মূল একাদশে সুযোগ পেয়েছেন বাম-হাতি ব্যাটসম্যান নাজমুল হাসান শান্ত। অন্যদিকে ওপেনার হিসেবে থাকছেন ইমরুল কায়েস আর লিটন দাস। ওয়ান ডাউনে আছেন মুমিনুল হক। মিডল অর্ডারে রয়েছেন অভিজ্ঞ মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ও মুশফিকুর রহিম।

এই টেস্ট দিয়েই অষ্টম ভেন্যু হিসেবে শুরু করলো সিলেট। এখন পর্যন্ত যে সাতটি ভেন্যুতে টেস্ট হয়েছে বাংলাদেশে, তার প্রতিটিতেই প্রথম ম্যাচে হেরেছে স্বাগতিকরা। এবার ইতিহাস বদলানোর অপেক্ষায় স্বাগতিকরা। সিলেটে প্রতিপক্ষ জিম্বাবুয়ে অবশ্য গত ওয়ানডে সিরিজে বাংলাদেশের সামনে দাঁড়াতেই পারেনি।

টেস্টে দুই দলের শেষ চারটি লড়াইয়েই বাংলাদেশ জয় পেয়েছে। এর মধ্যে ২০১৪ সালে বাংলাদেশ সফরে তিন ম্যাচের সিরিজে হোয়াইটওয়াশ হয়েছিল জিম্বাবুয়ে। তবে অতীতের সাফল্যে এখনও এগিয়ে অতিথিরা। দুই দলের আগের ১৪টি টেস্টে বাংলাদেশ জিতেছে ৫টি, জিম্বাবুয়ে ৬টি, বাকি ৩ ম্যাচ ড্র।

বাংলাদেশ একাদশ: লিটন দাস, ইমরুল কায়েস, নাজমুল হোসেন শান্ত, মুমিনুল হক, মুশফিকুর রহিম (উইকেটরক্ষক), মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ(অধিনায়ক), আরিফুল হক, মেহেদী হাসান মিরাজ, তাইজুল ইসলাম, নাজমুল ইসলাম, আবু জায়েদ।

জিম্বাবুয়ে একাদশ: হ্যামিল্টন মাসাকাদজা (অধিনায়ক), ব্রায়ান চারি, ব্রেন্ডন টেলর, শন উইলিয়ামস, সিকান্দার রাজা, পিটার মুর, রেগিস চাকাভা (উইকেটরক্ষক), ব্র্যান্ডন মাভুতা, কাইল জারভিস, ওয়েলিংটন মাসাকাদজা, তেন্দাই চাতারা।

খেলা - এর সব খবর

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ