ঢাকা, শনিবার, ১৫ মার্চ ২০২৫, ১ চৈত্র ১৪৩১

অবহেলার বেড়াজাল থেকে মুক্তি পাচ্ছে না নারী দল

খেলা ডেস্ক . ২৪আপডেট নিউজ
২০১৮ অক্টোবর ০৬ ১২:৪৫:৫৪
অবহেলার বেড়াজাল থেকে মুক্তি পাচ্ছে না নারী দল

এরপর আয়ারল্যান্ডের মাটিতে সিরিজ জয়। তারপরই আবার বিশ্বকাপ বাছাই পর্বের টুর্নামেন্টে চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ নারী দল। দল হিসেবে সফলতার গ্রাফটা প্রতিনিয়ত উপরের দিকে নিয়ে যাচ্ছেন নারীরা।

বলতে গেলে যার ৯০ ভাগই তাঁদের নিজেদের অক্লান্ত, হার না মানা চেষ্টার ফসল। বেতন-ভাতা থেকে শুরু করে সব জায়গায়ই অবেহেলিত বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দল। অনুশীলনের জন্য তাঁরা কখনও পায়নি ভাল কোন মাঠ, পায়নি ভাল মানের ক্রিকেটীয় উপকরণ যাকে বলে 'কিট'।

এক কথায় বলা যায় আন্তর্জাতিক পর্যায়ের তো অনেক দূরের কথা, ছেলেদের ঘরোয়া ক্রিকেটের কাছাকাছিও সুবিধা পায় না তাঁরা। বাংলাদেশ ক্রিকেটের সর্বোচ্চ সংস্থা বলা হয় যাকে 'বিসিবি' সেখানেও এখন অবধি অবহেলিত আমাদের নারী ক্রিকেট দল।

নিজেদের চেষ্টায় দেশকে প্রথম কোন শিরোপা এনে দেয়ার পর নারী দল ভেবেছিল হয়ত এবার বোর্ডের সুদৃষ্টিতে পড়বে তাঁরা। কিন্তু না, একদমই পাল্টায়নি। যেমনটি ছিল সে রকমই রয়ে গেল নারী ক্রিকেটের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি।

এখনও পাড়ার ক্রিকেটের মতোই সুবিধা পাচ্ছেন তাঁরা। তা না হলে বিশ্বকাপের প্রস্তুতি হিসেবে দেখা পাকিস্তানের বিপক্ষে টি-টুয়েন্টি সিরিজের এমন হাল হতো না। খুলনায় সিরিজটি হওয়ার কথা থাকলেও ওয়েস্ট ইন্ডিজের কন্ডিশনের কথা চিন্তা করে কক্সবাজারে খেলার আয়োজন করা হয়।

বোর্ড থেকে বলা হয়েছিল সব ধরনের সুযোগ সুবিধা দেয়া হবে এখানে। কিন্তু হল তার উল্টো, সিরিজের প্রথম ম্যাচই পরিত্যক্ত হল মাঠের ভেজা অবস্থার কারণে। যে মাঠে পানি নিস্কাশনের ব্যবস্থা ভাল নয় সেখানে হালকা বৃষ্টিতে পানি জমে থাকা তো স্বাভাবিকই।

সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচেও একই অবস্থা। বিসিবির ভারতীয় কিউরেটর এবং শেখ কামাল স্টেডিয়ামের প্রধান কিউরেটর প্রবীণ হিংগানিকার চট্টগ্রামে যুব এশিয়া কাপের ম্যাচ নিয়ে ব্যস্ত।

কিন্তু কক্সবাজার মাঠের পরিস্থিতি শুনে চট্টগ্রাম থেকে সরাসরি মাঠে এসেছেন তিনি। অনেক চেষ্টার পর প্রায় দেড় ঘণ্টা পর খেলা শুরু করার অনুমতি দেয় ম্যাচ রেফারি।

মাঠের অবস্থা নিয়ে প্রধান কিউরেটর বলেন, ‘আসলে এই মাঠে ড্রেনেজ ব্যবস্থা নেই। এছাড়াও কাছেই সমুদ্র, মাঠের উচ্চতাও বেশি নয়। যে কারণে পানি নিষ্কাশন কঠিন। তবে আশা করি বৃষ্টি না হলে খেলা হতে কোনো সমস্যা নেই।’

এছাড়া অনুশীলন করার মতো ভাল কোন জায়গাও নেই এই মাঠে। সবচেয়ে দুঃখজনক হল, যে জায়গাটুকু অনুশীলনের জন্য পাওয়া গেছে সেখানকার নেটের অবস্থাও ছিল ভয়াবহ। পেছনের ছেঁড়া অংশ দিয়ে বল বের হয়ে যাচ্ছিল, পড়ছিল কাঁদাবালি মাখা জায়গায়।

আবার ক্রিকেটার কিংবা কোচ নিজেরাই নিয়ে আসছিলেন বল। নিজেদের মতো মুছে আবার করছিলেন অনুশীলন। এখানেই শেষ নয়, দুই দলের ক্রিকেটারদের জন্য ড্রেসিং রুমটাও যে আন্তর্জাতিক মানের নয়।

অন্যদিকে ছোট্ট দুটি রুমে ব্যবস্থা করা হয়েছে ম্যাচ রেফারি ও আম্পায়ারদের জন্য। ম্যাচের ব্যবস্থাপনা দেখে আন্তর্জাতিক নয়, মনে হচ্ছিল নিচু সারির ঘরোয়া কোনো খেলা চলছে।

শেখ কামাল স্টেডিয়ামে বর্তমানে দুটি মাঠ রয়েছে। একাডেমির মাঠের পাশেই রয়েছে মূল স্টেডিয়ামটি। আগামী ৮ই অক্টোবর থেকে সেখানে শুরু হবে জাতীয় ক্রিকেট লীগের (এনসিএল) খেলা। এ কারণে সেখানে রাখা হয়নি নারী দলের খেলা।

অথচ এই সিরিজ মূলত চলতি বছরের নভেম্বরে শুরু হতে যাওয়া নারী দলের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের প্রস্তুতি ঘিরেই। যা চলছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) চরম অবহেলায়।

এত অবহেলার পরও দিন শেষে এদের কাছেই ভাল কিছু পাওয়ার আশায় চেয়ে থাকব। দিতে পারলে তো ভালই, না পারলে সমালোচনার অন্ত নেই।

কিন্তু একবার ভেবে দেখা দরকার তাঁরা যে অর্জন দিয়েছে, যে সাফল্য এনে দিয়েছে তার বিনিময়ে তাঁদেরকে কতটুকু সুবিধা দেয়া হচ্ছে!

খেলা - এর সব খবর

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ