‘পঞ্চপান্ডবের’ এশিয়া কাপ স্বপ্ন পূরণের শেষ সুযোগ…

বাংলাদেশ ক্রিকেটের পঞ্চপান্ডব খ্যাত সেরা পাঁচ ক্রিকেটার মাশরাফি, সাকিব, তামিম, মুশফিক এবং মাহমুদুল্লাহর একসাথে খেলা শেষ এশিয়া কাপ হতে যাচ্ছে এবারের এশিয়া কাপ। এই পাচজন ক্রিকেটার সেই ২০০৭ সাল থেকে। একসাথে আছে বাংলাদেশ ক্রিকেটে।দীর্ঘ ১১ বছর ধরে দেশের ক্রিকেটের সাথে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িয়ে আছেন তাঁরা। আর এই পঞ্চপান্ডবের হাত ধরেই বাংলাদেশ ক্রিকেট আজ বিশ্ব দরবারে এত সুপরিচিত।
এদিকে সবকিছু ঠিক থাকলে এবারের এশিয়া কাপে বাংলাদেশের জার্সিতে খেলবেন এই পাঁচ ক্রিকেটার। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্যি এই আসরই তাদের একসাথে খেলা এশিয়া কাপের শেষ আসর। ২০১০ সালের এশিয়া কাপে সর্বপ্রথম একসাথে মাশরাফি, সাকিব, তামিম, মাহমুদুল্লাহ এবং মুশফিককে পায় বাংলাদেশ দল।
অবশ্য এর আগেও এশিয়া কাপ খেলেছিলেন বর্তমান বাংলাদেশ দলের ওয়ানডে কাপ্তান মাশরাফি বিন মর্তুজা। শুধু তিনি একা নন, মাহমুদুল্লাহ, তামিম এবং মুশফিকও খেলেছিলেন ২০০৮ এর আসর। আর এই চারজনের জন্য সেটি ছিল এশিয়া কাপে বাংলাদেশের জার্সিতে প্রথম খেলার সুযোগ।
সেই আসরে মোট পাঁচটি ম্যাচ খেলেছিল টাইগাররা। এর মধ্যে মাত্র একটিতে জয়ের স্বাদ গ্রহণ করতে পেরেছিল তাঁরা। সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিপক্ষে ৯৬ রানের সেই জয় বাংলাদেশকে প্রথমবারের মতো পৌঁছে দিয়েছিল সুপার ফোরের নকআউট পর্বে।
পাকিস্তানে আয়োজিত ঐ টুর্নামেন্টে এই চারজন যার যার জায়গা থেকে ভালোই পারফর্ম করেছিলেন। টাইগার ওপেনার তামিম ইকবাল সে আসরে সংগ্রহ করেছিলেন ১৫৭ রান। যেখানে সর্বোচ্চ ৫৫ রানের একটি ইনিংস ছিল তাঁর। মিডেল অর্ডারে ব্যাটিং করে পাঁচ ম্যাচে ১০৫ রান সংগ্রহ করেছিলেন বাংলাদেশ দলের উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান মুশফিকুর রহিম।
আর মাহমুদুল্লাহর সংগ্রহ ছিল ৫৭ রান এবং বল হাতে তিনি কুড়িয়েছিলেন তিনটি উইকেট। আর পেসার মাশরাফি বিন মর্তুজা নিয়েছিলেন চার উইকেট এবং ৪০ রান। এর দুই বছর পর বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিবকে দলে পান তাঁরা। আর সেবারই এই পাঁচ রত্নকে একসাথে এশিয়ার বৃহৎ এই টুর্নামেন্টে পায় বাংলাদেশ।
সেই আসরে দলের কাপ্তান ছিলেন বাঁহাতি ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান। বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান,এবং শ্রীলঙ্কার অংশগ্রহণে আয়োজিত ঐ আসরে একদমই ভাল খেলেনি সাকিবের দল। তাদের খেলা তিনটি ম্যাচের মধ্যে একটিতেও জয়ের মুখ দেখেনি তাঁরা।
বিশেষ করে এই পাঁচ আইকনের পারফর্মেন্স ২০১০ আসরে তেমন সন্তোষজনক ছিল না। তবে সবার তুলনায় ভালো করেছিলেন তামিম। তিন ম্যাচে ১০৭ রান ছিল তাঁর সংগ্রহে। এশিয়া কাপে নিজের প্রথম আসরে ব্যাট হাতে অনুজ্জ্বল ছিলেন অধিনায়ক সাকিব। সর্বমোট ৫২ রান নিয়েছিলেন তিনি। অবশ্য বল হাতে পাঁচ উইকেট নিয়ে আসরের সেরা দশ বোলারের তালিকায় ছিল তাঁর নাম।
শুধু সাকিব-তামিম নন ব্যর্থ ছিলেন মুশফিক, মাহমুদুল্লাহ এবং মাশরাফিও। যথাক্রমে মাত্র ৩৭, ৩২ এবং ১৫ রান করেছিলেন এই তিন জন। ঐ আসরে পেসাররা সবচেয়ে বেশি সফল হলেও সফল ছিলেন না মাশরাফি। তিন ম্যাচ খেলে মাত্র দুটি উইকেট নিতে সক্ষম হয়েছিলেন দেশের এই ডানহাতি পেসার।
তবে এরপর ২০১২ সালের এশিয়া কাপে সবচেয়ে বড় সাফল্য পায় বাংলাদেশ। এই পাঁচ ক্রিকেটারের কল্যাণেই সেবার প্রথমবারের মতো এশিয়া কাপের ফাইনাল খেলার গৌরব অর্জন করে স্বাগতিকরা।
সেবার ব্যাট হাতে দুর্দান্ত ফর্মে ছিলেন তামিম এবং সাকিব। চার ম্যাচ খেলা বাঁহাতি ওপেনার তামিমের সংগ্রহ ছিল ২৫৩ রান। কোন শতকের দেখা না পেলেও টানা চারটি অর্ধশতক করেছিলেন তিনি। অন্যদিকে সাকিবের সংগ্রহে ছিল ২৩৭ রান।
যেখানে তাঁর তিনটি অর্ধশতক ছিল। সেবার তামিম-সাকিব দু’জনে ছিলেন সেরা রান সংগ্রহের তালিকায় দ্বিতীয় এবং চতুর্থ অবস্থানে। তবে মুশফিক এবং মাহমুদুল্লাহ ছিলেন অনুজ্জ্বল। দুজনে চার ম্যাচ খেলে যথাক্রমে করেছেন মাত্র ৬০ এবং ৫৩ রান।
এশিয়া কাপের সেই আসরে ব্যাটের পাশাপাশি বল হাতেও অসাধারণ পারফর্মেন্স করেছেন বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব। মাত্র ৪.৯৭ ইকোনমিতে বোলিং করে নিয়েছিলেন ছয় উইকেট। শুধু সাকিব একা নন, বল হাতে পেসার মাশরাফিও ছিলেন অনন্য।
২০১২ এশিয়া কাপে মাত্র ৪.৪৪ ইকোনমিতে বল করে লুফে নিয়েছিলেন ছয় উইকেট। যার সুবাদে সেরা বোলারের তালিকায় পাঁচে ছিলেন তিনি। আর সাকিব ছিলেন তাঁর পরেই ষষ্ঠ স্থানে। ঘরের মাঠে সেবার হাতের কাছেই ছিল শিরোপা। কিন্তু ভাগ্য সাথে ছিল না টাইগারদের।
পুরো টুর্নামেন্টে দাপটের সাথে খেলেও অল্পের জন্য হাত ফসকে গিয়েছিল এশিয়া কাপের মুকুট। ফাইনালে পাকিস্তানীদের কাছে শেষ ওভারের খেলায় দুই রানে পরাজিত হয়ে আনন্দের পাশাপাশি নতুন দুঃখের জন্ম দেয় মুশফিকুর রহিমের দল ।
সেবার ক্রিকেট বিশ্ব দেখেছিল বাংলাদেশীদের ক্রিকেট প্রেম। ঐদিন কেঁদেছিল পুরো দেশ। বাকি ছিলেন না কেউই। মুশফিক, সাকিব থেকে শুরু করে প্রায় দলের সকলের চোখেই ছিল দুঃখের পানি। এমন হারের হতাশা যেন চেপেই ধরেছিল টাইগারদের।
যার প্রমাণ মিলেছে ২০১৪ আসরে। পাঁচটি দলের অংশগ্রহণে আয়োজিত এশিয়া কাপের ঐ আসরে একটি ম্যাচও জিততে পারেনি মুশফিক বাহিনী। তবে সে আসরে মুশফিক ছাড়া মোটামুটি পঞ্চপাণ্ডবের সবাই দলে ছিলেন অনিয়মিত। যা অনেক বড় একটি কারণ ছিল বাংলাদেশ দলের ব্যর্থতার।
ইনজুরির কারণে নির্ভরযোগ্য ওপেনার তামিম ছিলেন না দলের সাথে। এবং ফর্ম হীনতার কারণে প্রথম দুই ম্যাচে দলে জায়গা পাননি মাহমুদুল্লাহ। আর অশোভন আচরণের অভিযোগে সাকিবকে নিষিদ্ধ করার ফলে ভারত ও আফগানিস্তানের বিপক্ষে প্রথম দুটি ম্যাচ খেলতে পারেননি।
এছাড়া পেসার মাশরাফি আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে প্রথম ম্যাচের পর আর খেলতে পারেননি সেই আসরে। তবে ঘরের মাঠে আয়োজিত সে আসরে বাকিদের তুলনায় উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান মুশফিক ছিলেন নিয়মিত। চার ম্যাচ খেলে সর্বমোট ১৯৫ রান করেছিলেন তিনি। যেখানে ১১৭ রানের একটি দুর্দান্ত ইনিংস ছিল তাঁর।
দুই ম্যাচ খেলা সাকিব-মাহমুদুল্লাহ সংগ্রহ করেছিলেন যথাক্রমে ৬৪ এবং ৩০ রান। আর বল হাতে সাকিব নিয়েছেন একটি এবং মাহমুদুল্লাহ নিয়েছেন দুটি উইকেট। সেবার দেশ সেরা এই পাঁচ তারকা ক্রিকেটারের অনুপস্থিতি ভালোই অনুভব করেছিল বাংলাদেশ।
তবে এরপর ২০১৬ সালে অধিনায়ক মাশরাফির অধীনে নতুন করে পথ খুজে পায় বাংলাদেশ। টি-টুয়েন্টি ফরম্যাটে আয়োজিত গতবারের এ আসরে আবারও নিজেদের জাত চিনিয়ে দিতে সক্ষম হয়েছিল টাইগাররা। কিন্তু সেবার ট্রফির কাছে গিয়েও ছুঁয়ে দেখার সৌভাগ্য আর হয়ে উঠেনি তাদের।
ফাইনালে ভারতের বিপক্ষে আট উইকেটের পরাজয় আবারও দেশের কোটি মানুষের স্বপ্ন ভেঙ্গে দিয়েছিল। তবে টি-টুয়েন্টি ফরম্যাটে বাংলাদেশ কতটা শক্তিশালী ২০১৬ সালের এশিয়া কাপে প্রমাণ পেয়েছে পুরো বিশ্ব।
টি-টুয়েন্টিতে শক্তিশালী দল পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা এবং আফগানিস্তানকে হারিয়ে ফাইনাল খেলেছিল বাংলাদেশ। ২০১৪ সালে ফর্মের কারণে দলে জায়গা না পাওয়া মাহমুদুল্লাহ ২০১৬ সালে ছিলেন সম্পূর্ণই অন্যরকম।
চার ম্যাচ খেলে ১৬৫ স্ট্রাইক রেটে ব্যাটিং করা এই ব্যাটসম্যান রান সংগ্রহ করেছিলেন ১২১টি। পাশাপাশি বল হাতে নিয়েছিলেন চার উইকেট। এদিকে প্রথম সন্তানের মুখ দেখতে লন্ডনে অবস্থানের কারণে ঐ আসরের প্রথম তিনটি ম্যাচ খেলেননি ওপেনার তামিম ইকবাল।
পরবর্তীতে পাকিস্তানের বিপক্ষে গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচ এবং ভারতের বিপক্ষে ফাইনাল খেলেছিলেন তিনি। ঐ দু’ম্যাচে মোট ২০ রান করেছিলেন দেশের এই নির্ভরযোগ্য ওপেনার। টুর্নামেন্টের সবগুলো ম্যাচ খেলা অলরাউন্ডার সাকিব ব্যাট হাতে ছিলেন একেবারেই নিস্প্রভ।
পাঁচ ম্যাচে সর্ব সাকুল্লে তাঁর সংগ্রহ ছিল মাত্র ৭৭ রান। তবে বল হাতে নিজের ঝুলিতে কুড়িয়েছিলেন পাঁচ উইকেট। পাঁচ পাণ্ডবের আরেকজন, উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান মুশফিকুর রহিম ছিলেন ২০১৬ আসরের সবচেয়ে বেশি ব্যর্থ ক্রিকেটার। পাঁচ ম্যাচ খেলে মাত্র ৪০ রান নিয়েছিলেন তিনি।
তবে অধিনায়ক মাশরাফি ছিলেন অসাধারণ। বোলিংয়ের পাশাপাশি অধিনায়কত্ব পালন করেছিলেন অসাধারণ দক্ষতায়। খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে বোলিং করেও পাঁচ ম্যাচে নিয়েছিলেন পাঁচ উইকেট।পাঁচ পাণ্ডবের হাত ধরে ২০১৪’র ন্যায় সেবারও শিরোপার কাছ থেকে ঘুরে এসেছে টাইগাররা।
তবে আসন্ন এশিয়া কাপে গত দুইবারের ভুল ঘুরনাক্ষরেও করতে চাইবে না সাকিব-তামিমরা। পঞ্চপাণ্ডবের একসাথে খেলা এই শেষ এশিয়া কাপের ট্রফি নিজেদের ঘরে তোলাই একমাত্র লক্ষ্য থাকবে মাশরাফি বাহিনীর।
এদিকে ২০০১ সালে জাতীয় দলে অভিষেক হওয়া পেসার মাশরাফি ২০১৭ সালের এপ্রিলে হঠাৎ করেই টি-টুয়েন্টি ফরম্যাট থেকে অবসর নিয়েছিলেন। সুতরাং বলাই যায়, এশিয়া কাপের পরবর্তী আসর টি-টুয়েন্টি হওয়ার দরুণ মাশরাফিকে আগামী আসরে পাবে না বাংলাদেশ দল।
আর চার বছর পর ওয়ানডে ফরম্যাটের সেই এশিয়া কাপ না খেলার সম্ভাবনাই বেশি ৩৪ বছর বয়সী এই ক্রিকেটারের। তাই এটা অনেকটাই নিশ্চিত যে, ২০১৮’র এশিয়া কাপই হবে দেশের হয়ে এখন অবধি ১৭১ ওয়ানডে খেলা এই পেসারের শেষ এশিয়া কাপ।
তাহলে এটাও নিশ্চিত যে, দেশের ক্রিকেটের এই পাঁচ নক্ষত্রের জন্য এক সাথে খেলা এটাই শেষ এশিয়া কাপ। আর পঞ্চপাণ্ডবের জন্য এশিয়ার শ্রেষ্ঠত্ব লড়াইয়ে নিজেদের প্রমাণ করার এটাই শেষ সুযোগ।
পারবে কি টাইগার এই পঞ্চপান্ডব নিজেদের সেরাটা দিয়ে দেশের জন্য শিরোপা আনতে?
(সংগ্রহিত লেখা)
খেলা - এর সব খবর
আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ
- বিসিবির নতুন কেন্দ্রীয় চুক্তি থেকে বাদ ৫ জন
- প্যারোলে মুক্তি পেল আওয়ামী লীগ নেতা
- নির্বাচনী আসন ভাগাভাগি করলো এনসিপির প্রার্থীরা
- মেহেদী হাসান মিরাজের নতুন নাম দিল আইসিসি
- সুখবর: দীর্ঘ অপেক্ষার পর আরব আমিরাতের ভিসা চালু
- নতুন ওয়ানডে অধিনায়ক হওয়ার দৌড়ে ৩ ক্রিকেটার
- বিনিয়োগকারীদের মাঝে আতঙ্ক, জরুরি পদক্ষেপ নিলেন ডিএসই চেয়ারম্যান
- শেয়ারহোল্ডারদের জন্য নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা
- শান্ত বাদ, তবে নতুন অধিনায়ক মিরাজ নয়
- শেখ হাসিনা ও মার্কিন গোয়েন্দা প্রধানের তুলসীর বৈঠক নিয়ে যা জানা গেল
- আওয়ামী লীগ নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে কিনা সরাসরি জানালেন প্রধান উপদেষ্টা
- দুই আসন থেকে নির্বাচন করবেন নাহিদ ইসলাম
- স্বাস্থ্য খাতে বড় সংস্কার: ২৬ মেডিকেল কলেজ বন্ধের সিদ্ধান্ত
- আজকের সৌদি রিয়াল রেট বিনিময় হার
- আজ বাড়লো সৌদি রিয়াল রেট বিনিময় হার