ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪, ১ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১

ফুলবাড়ী ট্রাজেডি দিবস আজ

জাতীয় ডেস্ক . ২৪আপডেট নিউজ
২০১৮ আগস্ট ২৬ ১৪:২২:৫৬
ফুলবাড়ী ট্রাজেডি দিবস আজ

বিক্ষুব্ধ জনতার উপর পুলিশ ও তৎকালীন বিডিআর গুলিবর্ষণ করলে ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারায় তিনজন। গুলিবিদ্ধ হয়ে দুই শতাধিক মানুষ আহত হন। আহতদের কয়েকজন পঙ্গুত্ব বরণ করেছে। কিন্তু ছয় দফা ফুলবাড়ী চুক্তি আজও কার্যকর হয়নি। প্রত্যাহার হয়নি এশিয়া এনার্জি অফিসও। বরং একাধিক মামলা মাথায় নিয়ে বেড়াতে হচ্ছে ফুলবাড়ীবাসীকে।ওই উন্মুক্ত পদ্ধতিতে কয়লা খনি প্রকল্প বাতিল, জাতীয় সম্পদ রক্ষা এবং বিদেশি কোম্পানি এশিয়া এনার্জিকে ফুলবাড়ী থেকে প্রত্যাহারের দাবিতে সকাল থেকেই ফুলবাড়ীর ঢাকা মোড়ে ফুলবাড়ী, বিরামপুর, নবাবগঞ্জ ও পার্বতীপুর উপজেলার হাজার হাজার মানুষ জমায়েত হতে থাকে।

দুপুর ২টার দিকে তেল, গ্যাস, খনিজসম্পদ ও বিদ্যুৎ, বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটি ও ফুলবাড়ী রক্ষা কমিটির নেতৃত্বে বিশাল প্রতিবাদ মিছিল নিমতলা মোড়ের দিকে এগোতে থাকলে পুলিশ ও তৎকালীন বিডিআর তাতে বাধা দেয়।

কিন্তু পুলিশ-বিডিআরের ব্যারিকেড ভেঙে মিছিলটি এগোতে থাকলে মিছিলে টিয়ারশেল, রাবার বুলেট নিক্ষেপ এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে একপর্যায়ে গুলিবর্ষণ করা হয়। গুলিতে নিহত হন আল আমিন, সালেকীন ও তরিকুল। আহত হন দুই শতাধিক। আহতদের মধ্যে অনেকেই পঙ্গুত্ব বরণ করে দুর্বিসহ জীবন যাপন করছেন।

এই ঘটনায় উত্তেজিত জনতা ওই দিনই ফুলবাড়ীতে অবস্থিত এশিয়া এনার্জির অফিস ভেঙে দেয়। শুরু হয় লাগাতার হরতাল। ফুলবাড়ীর সঙ্গে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় অন্যান্য জেলা ও উপজেলার যোগাযোগ ব্যবস্থা।

এরপর ৩০ আগস্ট আন্দোলন কমিটির সাথে তৎকালীন বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের ৬ দফা সমঝোতা চুক্তির পর ধীরে ধীরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসে।ওই ৬ দফা চুক্তির মধ্যে ছিল বিদেশি কোম্পানী এশিয়া এনার্জিকে দেশ থেকে বহিষ্কার, দেশের কোথাও উন্মুক্ত পদ্ধতিতে কয়লা উত্তোলন করা যাবে না, নিহত ও আহতদের ক্ষতিপূরণ প্রদান, নিহতদের স্মরণে স্মৃতি সৌধ নির্মাণ, গুলিবর্ষণে দায়ীদের শাস্তি এবং আন্দোলনরতদের বিরুদ্ধে দায়ের করা সব মামলা প্রত্যাহার।আহতদের মধ্যে গুলিবিদ্ধ বাবুল রায় শরীরের অধিকাংশই অবশ হয়ে যাওয়ায় পঙ্গুত্ব জীবন নিয়ে বেঁচে আছে। নিহত পরিবারগুলো স্বজন হারানোর বেদনা নিয়ে এখনও মানবেতর জীবন যাপন করছে।

ফুলবাড়ীবাসী বলছে, ওই সময় চুক্তির প্রতি পূর্ণসমর্থন জানিয়েছিলেন তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা এবং বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওই চুক্তির এক সপ্তাহ পর শেখ হাসিনা ফুলবাড়ীতে এসে আন্দোলনরত মানুষের প্রতি সমর্থন জানিয়ে তৎকালীন চারদলীয় জোট সরকারের কাছে চুক্তি বাস্তবায়নের দাবিও জানান। কিন্তু সেই চুক্তি চার দলীয় জোট সরকার বাস্তবায়ন করেনি। এমনকি এখনো বর্তমান সরকারও বাস্তবায়ন করেনি সেই ৬ দফা চুক্তি।

খনি বিরোধী গণআন্দোলনের নেতা ও সম্মিলিত পেশাজীবী সংগঠনের আহ্বায়ক ফুলবাড়ী পৌরসভার মেয়র মুর্তুজা সরকার মানিক বলেন, ২০০৬ সালের ২৬ আগস্ট ফুলবাড়ীসহ পার্শ্ববর্তী বিরামপুর, নবাবগঞ্জ ও পার্বতীপুর উপজেলার অধিকাংশ এলাকার মানুষ শান্তিপূর্ণভাবে মিছিল করার সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের মিছিলের উপর নির্বিচারে গুলি চালায়।

তিনি বলেন, ঘটনার পর তৎকালিন বিরোধীদলীয় নেতা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ফুলবাড়ীতে এসে ফুলবাড়ীর মানুষকে স্যালুট জানিয়েছিলেন এবং ৬ দফা চুক্তির সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করে বলেছিলেন- তিনি ক্ষমতায় গেলে ৬ দফা চুক্তির পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন করবেন। কিন্তু ১২ বছরেও সেই চুক্তি বাস্তবায়িত হয়নি।

মর্তুজা সরকার বলেন, পরবর্তীতে খনি বিরোধী আন্দোলন করতে গিয়ে ফুলবাড়ীবাসীর বিরুদ্ধে একাধিক মামলা দায়ের করা হয়েছে। এখনও এই মামলা ফুলবাড়ীবাসীকে মাথায় নিয়ে বয়ে বেড়াতে হচ্ছে।

তেল গ্যাস খনিজসম্পদ ও বিদ্যুৎ, বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির ফুলবাড়ী শাখার আহ্বায়ক সৈয়দ সাইফুল ইসলাম জুয়েল ৬ দফা চুক্তি বাস্তবায়নের দাবি জানিয়ে বলেন, চুক্তি বাস্তবায়নে প্রয়োজনে আবারো গণআন্দোলন গড়ে তোলা হবে।

তেল, গ্যাস, খনিজসম্পদ ও বিদ্যুৎ, বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটি আজকের দিনটিকে ‘জাতীয় সম্পদ রক্ষা দিবস’ এবং সম্মিলিত পেশাজীবী সংগঠন ও ফুলবাড়ীবাসীর পক্ষ থেকে ‘ফুলবাড়ী শোক দিবস’ পালন উপলক্ষে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহন করেছে।

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



রে