বিশ্ববরেণ্য চিত্রশিল্পী এসএম সুলতানের ৯৪তম জন্মবার্ষিকী আজ
বিদ্যালয়ে পড়াশোনার মতো সামর্থ্য তার পরিবারের না থাকলেও ১৯২৮ সালে নড়াইল ভিক্টোরিয়া কলেজিয়েট স্কুলে তাকে ভর্তি করানো হয়। তবে মাত্র পাঁচ বছর অধ্যয়নের পর তিনি সেই বিদ্যালয় ছেড়ে বাড়ি ফিরে বাবার সহযোগী হিসেবে রাজমিস্ত্রীর কাজ শুরু করেন। এ সময় বাবার ইমারত তৈরির কাজ সুলতানকে প্রভাবিত করে এবং তিনি রাজমিস্ত্রীর কাজের ফাঁকে আঁকা-আঁকি শুরু করেন।
১০ বছর বয়সে, যখন তিনি বিদ্যালয়ে পড়তেন তখন আশুতোশ মুখার্জির ছেলে ড. শাম্যপ্রসাদ মুখার্জি নডাইল ভিক্টোরিয়া কলেজিয়েট স্কুল পরিদর্শনে এলে সুলতান তার একটি পেন্সিল স্কেচ আঁকেন। শাম্যপ্রসাদ তার আঁকা স্কেচ দেখে বিশেষভাবে আকৃষ্ট হন এবং এই পেন্সিল স্কেচের মাধ্যমেই শিল্পী হিসেবে সুলতানের প্রথম আত্মপ্রকাশ ঘটে।
সুলতানের খুব ইচ্ছা ছিল ছবি আঁকা শেখার। কিন্তু দরিদ্র রাজমিস্ত্রী পরিবারের সন্তান হওয়া আর্থিক অসঙ্গতি ইচ্ছা পূরণে প্রধান বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল। ১৯৩৮ সালে এই এলাকার জমিদার ধীরেন্দ্রনাথ রায়ের পৃষ্ঠপোষক হিসেবে সুলতানকে কলকাতায় নিয়ে যাওয়া হয়। কলকাতায় সুলতান প্রায় তিন বছর ধীরেন্দ্রনাথের বাসায় থেকে লেখাপড়া চালিয়ে যান।
এ সময় তৎকালীন সময়ের প্রখ্যাত শিল্প সমালোচক এবং কলকাতা আর্ট স্কুলের পরিচালনা পরিষদের সদস্য, শিল্পাচার্য শাহেদ সোহরাওয়ার্দীর সাথে পরিচয় ঘটে সুলতানের। সোহরাওয়ার্দী সুলতানকে সব ধরনের পৃষ্ঠপোষকতা করতে থাকেন। তার অসাধারণ সমৃদ্ধ গ্রন্থাগার সুলতানের জন্য সব সময় উন্মুক্ত ছিল।
১৯৪১ সালে প্রয়োজনীয় যোগ্যতার অভাব সত্ত্বেও কোলকাতা আর্ট কলেজে ভর্তি পরীক্ষা দিয়ে প্রথমস্থান লাভ করেন। কয়েক বছর পর এক ঘেঁয়েমি শিক্ষা জীবন তাকে দুর্বিসহ করে তোলে।
এরপর ১৯৪৩ সালে তিনি খাকসার আন্দোলনে জড়িয়ে পড়েন। এক বছর পর ১৯৪৪ সালে শিক্ষা জীবনের ইতি টেনে শুরু করলেন বোহেমিয়ান জীবনের। চলে গেলেন কাশ্মীর। সেখানে উপজাতিদের সঙ্গে শুরু করেন বসবাস। ফ্রিল্যান্স আর্টিস্ট হিসেবে কাজ শুরু করেন তিনি। সে সময় হার্ডসন নামে এক কানাডিয়ান মহিলার সঙ্গে তার বন্ধুত্ব হয়। তার সহযোগিতায় ১৯৪৬ সালে কাশ্মীরের সিমলায় তার প্রথম চিত্র প্রদর্শনী হয়।
দেশ বিভাগের পর ১৯৪৭ সালে তিনি কাশ্মীর ছেড়ে লাহোরে চলে যান। সে সময় শিল্পী ও পন্ডিত নাগী চুগড়তাই, শাকের আলী, শেখ আহম্মদের সঙ্গে সখ্য গড়ে ওঠে তার। ১৯৪৮ সালে লাহোর ও ১৯৪৯ সালে করাচির ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল এডুকেশনের চিত্র প্রদর্শনীতে তিনি শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করেন।
শিল্পী সুলতান ১৯৫০ সালে নিউইয়র্কে এক্সচেঞ্জ প্রোগ্রামে আমন্ত্রিত হয়ে সেখানে ব্রকলিন ইনস্টিটিউট অব আর্ট প্রতিযোগিতায় পাকিস্থানের পক্ষে অংশ নিয়ে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করেন। ১৯৪৬ সাল থেকে ১৯৫০ সাল পর্যন্ত ইউরোপ, আমেরিকা এবং এশিয়ার বিভিন্ন দেশে প্রায় ২০টি প্রদর্শনীতে অংশ নেন তিনি।
১৯৫৩ সালে তিনি ফের দেশে ফিরে আসেন। প্রয়োজনীয় পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে ১৯৫৪ সাল থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত তিনি কোনো প্রদর্শনী করতে পারেননি। তবে ১৯৭৬ সালে ঢাকায় তার একটি প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়।
এই ২২টি বছর তিনি নড়াইলের পথে-প্রান্তরে ঘুরে বেড়িয়েছিলেন। বিভিন্ন বিদ্যালয়ে গিয়ে তিনি ছাত্রছাত্রীদের ছবি আঁকায় উদ্বুদ্ধ করেছেন।
পাশাপাশি নিজ গ্রামে নন্দন কানন প্রাইমারি স্কুল, হাইস্কুল, ফাইন আর্ট স্কুল, ১৯৬৯ সালে নড়াইল শহরের কুড়িগ্রামে ফাইন আর্ট স্কুল এবং স্বাধীনতা-পরবর্তী ১৯৭৩ সালে যশোরে একাডেমী অব ফাইন আর্ট স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন। যশোরের ফাইন আর্ট স্কুলটি পরে চারুপীঠ নামে পরিবর্তন করা হয় এবং কুড়িগ্রামের ফাইন আর্ট ইনস্টিটিউটের নাম পরিবর্তন করে শিশুস্বর্গ নামকরণ করা হয়।
জীবনের শেষ কটা দিন তিনি তার প্রিয় মাতৃভূমি নড়াইলেই কাটান তার প্রিয় পশুপাখি ও ভালবাসার মানুষদের নিয়ে। হেয়ালী শিল্পী শিশুদের জন্য গড়ে তোলেন তার স্বপ্নের শিশুস্বর্গ।
১৯৮৩ সালে প্রথম তিনি সরকারের সহযোগিতা পান। সরকারি সহযোগিতায় নড়াইল শহরের কুড়িগ্রামে চিত্রা নদীর পাড়ে ২ বিঘা জমিতে তার বাসভবন নির্মাণ করা হয়েছে। নড়াইলের মাটি, প্রকৃতি আর মানুষের সঙ্গে একাত্ম হয়ে জীবনের শেষ কটা দিন অতিবাহিত করেন তিনি।
কালোত্তীর্ণ এই শিল্পী ১৯৮২ সালে একুশে পদক, ১৯৮৪ সালে বাংলাদেশ সরকারের রেসিডেন্সিয়াল আর্টিস্ট হিসেবে স্বীকৃতি, ১৯৮৬ সালে চারুশিল্পী সংসদ সম্মাননা এবং ১৯৯৩ সালে রাষ্টীয়ভাবে স্বাধীনতা পদকে ভূষিত হন।
১৯৯৪ সালের এই দিনে শিল্পী সুলতান তার অগণিত ভক্তদের কাঁদিয়ে যশোর সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুর পর তাকে চিত্রা নদীর পাড়ে সবুজ-শ্যামল ছায়া ঘেরা বাড়ির পাশে চিরনিদ্রায় শায়িত করা হয়।
শিল্পী সুলতানের মৃত্যুর পর তার স্বপ্ন বাস্তবায়নের লক্ষ্যে নড়াইলবাসীর দাবির প্রেক্ষিতে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে সুলতানের বসতবাড়ি সংলগ্ন ২ একর ৫৭ শতক জমিতে ২০০১ সালের জুলাই মাসে শিশুস্বর্গ ও সুলতান স্মৃতি সংগ্রহশালা নির্মাণ শুরু হয়। ২০০৩ সালের জুলাই মাসে নির্মাণ কাজ শেষ হয়।
স্মৃতি সংগ্রহশালায় শিল্পীর আঁকা বেশ কিছু দুর্লভ ছবি ও ব্যবহার্য জিনিসপত্র রয়েছে। শিল্পীর জীবদ্দশায় ভাসমান শিশু স্বর্গটি (নৌকা) বর্তমানে ডাঙ্গায় তুলে রাখা হয়েছে। সেটি সংরক্ষণের জন্য উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। দর্শনার্থীদের জন্য এসএম সুলতান স্মৃতি সংগ্রহশালার পাশেই চিত্রা নদীতে নির্মাণ করা হচ্ছে একটি দর্শনীয় সিঁড়ি ঘাট। এখান থেকে দর্শনার্থীরা চিত্রা নদীর সৌন্দর্য উপভোগ ও নৌকায় চিত্রা নদীতে ভ্রমণের সুযোগ পাবেন।
জেলা প্রশাসক মো. এমদাদুল হক চৌধুরী জানান, শিল্পী সুলতানের স্মৃতি সংরক্ষণ, স্মৃতি সংগ্রহশালাকে ঘিরে পর্যটন কেন্দ্রে রূপান্তরের চিন্তা-ভাবনা চলছে।
শিল্পী সুলতানের ৯৪তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে নড়াইল জেলা প্রশাসন ও এসএম সুলতান ফাউন্ডেশন বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে শিল্পীর প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ, কোরআন খানি, মিলাদ ও দোয়া মাহফিল, শিশুদের চিত্রাংকন প্রতিযোগিতা এবং আলোচনা সভা ও পুরস্কার বিতরণী।
আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ
- ব্রেকিং নিউজ: বাংলাদেশে নেমে এলো শোকের কালো ছায়া, ৪৯৭ জন নি*হ*ত, আ*হ*ত ৭৪৭
- বাড়লো সৌদি রিয়াল রেট, দেখেনিন আজকের রেট কত
- আজ ১৮/১২/২০২৪ তারিখ, দেখেনিন আজকের ১৮ ক্যারেট, ২১ ক্যারেট, ২২ ক্যারেট সোনা ও রুপার দাম
- ৪৩ বলে ৮৩ রান: ২০০ স্ট্রাইক রেটে ব্যাটিং ঝড় তুলে দলকে জিতে মাঠ ছাড়লেন সাব্বির
- বোর্ড মিটিং শেষ, চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির জন্য বাংলাদেশের ১৬ সদস্যের স্কোয়াড ঘোষণা
- ঢাকার অবস্থা ভ*য়া*ব*হ খারাপ
- অবশেষে দুই দিন পর বাড়লো সৌদি রিয়াল রেট, দেখেনিন আজকের রেট কত
- সৌদি রিয়াল রেটের বিশাল লাফ, দেখেনিন আজকের রেট কত
- এইমাত্র পাওয়া: খুলে গেল চোখ মুস্তাফিজকে দলে নেওয়ার জন্য চিঠি পাঠিয়েছে চেন্নাই সুপার কিংস
- ব্রেকিং নিউজ: নি*হত ৮৫৮ জন, আ*হত ১১ হাজার ৫৫১ জন
- ব্রেকিং নিউজ: হেলিকপ্টার দু*র্ঘ*ট*না*য় ভারতের সেনা প্রধান নি*হ*ত
- সৌদি রিয়াল রেটের বিশাল লাফ, দেখেনিন আজকের রেট কত
- ব্রেকিং নিউজ: ব্যাপক উ*ত্তেজ*না, শত শত সে*নাসহ জে*নারেল আ*টক
- ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ৩-০তে উড়িয়ে দিয়ে আইসিসি রেটিংয়ে বড় লাফ বাংলাদেশের, দেখেনিন সর্বশেষ তালিকা
- চট্টগ্রামের পরিস্থিতি থমথমে: ব্যাপক সং*ঘ*র্ষ, ১৫ জন আ*হ*ত